গল্প - অস্তিত্ব
লিখেছেন লিখেছেন আবরার আকিব ২৫ জুন, ২০১৭, ১২:০৭:৩৮ রাত
শরীরের এক ক্ষতস্থান হতে একজনের অস্তিত্ব খুঁজে পেলাম।
মাথায় তখন এলোমেলো ভাবনা কাজ করতেছে। আমার জীবনে কী কেউ ছিল যার শেষ স্মৃতিচিহ্ন এই ক্ষতস্থান!
কেউ হয়তো ধারালো সূচ দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করেছে আমার হাতের তালু।
পায়ে হাড্ডির বদলে লাগানো হয়েছে রডের টুকরো।
মাথার পেছনের কিছু অংশ জুড়ে চুল নেই।
নিতাই নাপিত কতবার জিজ্ঞেস করেছে যে আপনার মাথায় কে এমন নিষ্ঠুর ভাবে আঘাত করেছে। উত্তর আমি দিতে পারিনা কেন?
কিছু যে আমি মনে করতে পারিনা। মাঝে মাঝে মনে হয় আমি হয়তো মানুষ নই এলিয়েন। না হলে পুরনো স্মৃতি গুলো কেন মনে করতে পারিনা আমি। বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং এর ধারনা ভিনগ্রহের প্রাণীরা যদি পৃথিবীতে আসে তবে তা পৃথিবী বাসী দের বিপদ ডেকে আনবে। কিন্তুু তিনি এটা কী জানেন না পৃথিবীর কোন মানুষের রুপ ধারন করে ভিনগ্রহের প্রানীরা আসতে পারে।
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা কে তো অনেকে এলিয়েন দাবী করতো। ভিন গ্রহের প্রাণী রা হয়তো মানুষের সব পুরনো স্মৃতি কে নষ্ট করে দিয়ে দিব্বি মানুষের রুপে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আজ হঠাৎ একজনের হাতের স্পর্শে কারো অস্তিত্ব খুঁজে পেলাম। আচ্ছা আমি কী হিটলারের মতন কোন ইহুদি মেয়ের প্রেমে ব্যর্থ হয়ে লক্ষাধিক ইহুদি হত্যা করেছিলাম, তাঁর জন্য আমাকে শাস্তি দেয়া হয়েছিল।স্মৃতির এ মায়াজাল থেকে আমি চাই মুক্তি পেতে। সময়কে আর কতকাল বেঁধে রাখা যাবে। আমার মন কে নিয়ন্ত্রণ করার অধিকার শুধু আমারি আছে, আর কারো নেই। পুরনো স্মৃতি গুলো কেনইবা যন্ত্রনা দিচ্ছে আমায়। বেশতো সুখেই ছিলাম।সুখ তো সবাই খুঁজে বেড়ায়। কজন ইবা আর জীবনে সুখী হতে পারে। মানুষ বর্তমান আর ভবিশ্যত নিয়ে ব্যস্ত থাকে, অতীতের দুঃসহ স্মৃতি গুলো চাপা দিতে চায়। অতীতের দুঃসহ স্মৃতি গুলো মুছে দিতে চায়। কই কজন আর পারে তা, আমি তো আমার অতীত স্মৃতি গুলো চাপা দিতে পারতেছিনা। আমার স্মৃতি গুলো যে বড় রহস্যময়। রাস্তার ঠিক মাঝখানে দাড়িয়ে আছি আমি। অসংখ গাড়ি আসছে। কেউ আমার ডাকে থামতেছেনা, আবার কেউ তো আমায় গাড়ির নীচে চাপা মেরে ফেলতেছেনা।
কেউ হয়তো আমাকে ভালবাসেনা, কেউ হয়তো আমায় হারাতেও দিবেনা। হঠাৎ পায়ের হাড্ডির ভেতর রডগুলো ভেঙে গেল, ছিটকে পড়লাম আমি। মাথা ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে । রক্তাক্ত হাত বাড়িয়ে দিয়েছি আমি, শেষ জীবনীশক্তি দিয়ে কারো হাত ধরার চেষ্টা করতেছি। সে হাত ধরতে না পারলে হয়তো তার জীবনে নেমে আসবে অন্ধকার।
মাঝরাতে দুঃসপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে গেল
প্রফেসর আজিজুল রহমানের তার হাত ধরে ঘুমিয়ে আছে তাঁর একমাত্র মেয়ে মণি।
আজিজুল রহমান ভাবতে লাগলো, কেমন বড় হয়ে গেছে আমার মেয়েটা। চোখগুলি তার মায়ের মতন হয়েছে। বাবার হাত টি না ধরে থাকলে ঘুম ই আসতে চায়না। , অথচ একসময় আম্মুর হাত না ধরে ঘুমাতে পারতো না মণি। মণি তো ধীরে - ধীরে তাঁর আম্মু কে ভুলে যাচ্ছে, আমি কেন তাকে ভুলতে পারিনা। সেদিনের সে স্মৃতি যে আজ ও ভাসে চোখের সামনে। মুমিনুন্নেসা
মহিলা কলেজে অনার্স ১ ম বর্ষে পড়তো দীপা নামে এক মেয়ে। ক্লাস শেষে হোস্টেল এ ফেরার সময় বখাটেদের নজরে পড়লো সে। বখাটেদের গনধর্ষনের শিকার হল সে। বখাটেরা তারপর ধর্ষনের ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দিবে এই বলে ব্ল্যাকমেইল করে নানা ভাবে বিরক্ত করতে শুরু করলো মেয়েটিকে। মেয়েটি জীবনের সব মায়া ভুলে আত্মহত্যা করলো। মারা যাওয়ার আগে তার কলেজের সবচেয়ে প্রিয় ম্যাডাম মুমিনুন্নেসা মহিলা কলেজের ইংরেজী বিভাগের শিক্ষিকা প্রফেসর শারমীন শীলা কে জানিয়ো দিলো সব।
প্রফেসর শারমীন শীলা ছিল একজন মানবাধিকার কর্মী। আনন্দমোহন কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আজিজুর রহমানের সাথে দীর্ঘ প্রেমের পর বিয়ে হয় তার। তাদের একমাত্র মেয়ের নাম মণি। বিভিন্ন পত্রিকায় বখাটেদের ছবি দিয়ে বিচার চাইলো প্রফেসন শারমীন শীলা। জাস্টিস ফর দীপা মানববন্ধন হলো কলেজের সামনে। বখাটেদের সাথে সম্পর্ক ছিল স্থানীয় প্রভাবশালী এক নেতার। বখাটেরা নেতার প্রভাবে পুলিশের ধরাছোয়ার বাইরে থাকলো। বখাটেরা নানান ভাবে হুমকী দিতে থাকলো, প্রফেসর শারমিন শীলা কে। তারপর ও তিনি পিছিয়ে যাননি। তার মেয়ে তো একদিন বড় হবে সে যদি কখন ধর্ষিত হতে পারে। তিনি এই ভেবে পিছিয়ে যাননি।
হঠাৎ কে যেন দরজায় কড়া নাড়লো। দরজা খুলে দিলেন প্রফেসর আজিজুর রহমান। বখাটেরা ডুকে পড়লো, ঘুমন্ত অবস্থায় প্রফেসর শারমিন শীলা কে রড দিয়ে পেটালো। স্ত্রী কে বাচাতে গেলে আজিজুর রহমান কেও রড দিয়ে পেটালো বখাটেরা। গুরুতর অবস্থায় তাদের ভর্তি করা হলো ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। তিন ঘন্টা মৃত্যুর সাথে লড়াই করে মৃত্যুর কোলে ডলে পড়লো প্রফেসর শীলা জাহান। অথচ পায়ে রড লাগিয়ে, স্মৃতিশক্তি হারিয়ে বেচে রইলো, প্রফেসর আজিজুর রহমান। কিছু দিন পর তার ম্মৃতিশক্তি ফিরে পেয়েছে প্রফেসর আজিজুর রহমান। মণির চোখে চোখ রাখলে সে তার স্ত্রী কে দেখতে পায় সে । শুধু মণির হাতে অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ার জন্যে আজ ও সে বেচে আছে।
বিষয়: সাহিত্য
১০৬১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন