ধারাবাহিক উপন্যাস - //\\কবিহীন কাব্য//\\ প্রথম পর্ব//\\
লিখেছেন লিখেছেন আবরার আকিব ১৭ মে, ২০১৭, ০৮:১০:৩৬ রাত
\১/
রাত ১১ টা বাজে। শিমুল বসে আছে সোফায়। সামনে তার মামা হামিদ উদ্দীন বসা। হামিদ উদ্দীন পেশায় বেকার। কিন্তুু বিজ্ঞান নিয়ে অগাধ জ্ঞান অর্জন করেন তিনি প্রতিদিন।কিছু একটা আবিস্কার করে অনেক নামীদামী বিজ্ঞানী হয়ে যাবেন, এই চিন্তায় সে চাকরিতে তার মুল্যবান জ্ঞান ও সময় ব্যয় না করে তাঁর বড় বোনের বাসায় স্ত্রী কে নিয়ে উঠেছেন।
- কীরে শিমুল বউমা একা বসে আছে, আর কতক্ষণ এভাবে বসে থাকবে..
- মামা আমার ভয় করে একা যেতে।
- কেন রে ঐ মেয়ে তো আজ থেকে তোর বউ, রক্তচোষা ড্রাকুলা না তো আর।
- মামা রক্তচোষা ড্রাকুলা কী?
- তোর মামী হলো রক্তচোষা ড্রাকুলা।
- মামী কী বিয়ের রাতে তোমার রক্ত চুষে খেয়েছে মামা?
- না তোর মামী বিয়ের পর থেকে প্রতিরাতেই আমার রক্ত চুষে খায়।
আমার রক্ত না খেলে ওর ঘুম হয়না।
-বলতে পারবি রক্তে হিমোগ্লোবিন এর কাজ কী ?
- কী করে মামা?
- হিমোগ্লোবিনের জন্য রক্ত এমন লাল দেখায় ।
তোর রক্তে যদি হিমোগ্লোবিন না থাকতো তোকে কী ডাকতাম জানস?
- কী ডাকতেন মামা?
- টিকটিকি, কারন টিকটিকির রক্তে হিমোগ্লোবিন নাই। তাই টিকটিকির রক্ত সাদা।
বুঝলি শিমুল বিজ্ঞান ছাড়া পৃথিবীর কিছু চলতে পারে না। তাই আমাদের বিজ্ঞান কে নিয়ে গভেষনা করতে হবে। বিজ্ঞান নিয়ে গভেষণা করে যাব আজীবন। কেউ কোনদিন থামাতে পারবে না আমাকে।
- মামা তুমি আমাকে ঐ রুম পর্যন্ত দিয়ে আসবে?
-যা দিয়ে আসছি।
শিমুল দরজায় মিতি বউ সেজে বসে আছে।
শিমুল দরজায় দাড়িয়ে বলতেছে,
- আমি কী ভেতরে আসত পারি?
না একা আসবেন না, আমি কোলে করে নিয়ে আসব দাড়ান।
- আমি কী ছোট নাকী যে কোলে আসব দাড়াও আমি আসতেছি।
তুমি এখনো বউ সেজে বসে আছো কেন?
কালকে কী তোমার আবার বিয়ে হবে?
- না কালকে আমার শ্রাদ্ধ হবে।
- আমি থাকবো কোথায়, মামী বলছে তোমার সাথে আজকে থেকে একসাথে ঘুমাতে হবে আমার।জানো মা কে ছাড়া একা আমার একা ঘুম আসেনা।
-আপনার মামী আর কী বলছে বলেনতো?
- না এসব বললে পাপ হয়। আমি এখন বড় হয়ে গেছিনা।
- হ্যাঁ তাইতো আপনি তো অনেক বড় হয়ে গেছেনন, আপনি খাটের তলায় থাকবেন ঠিক আছে।
- খাটের তলায় মশারী টাঙিয়ে দেও, সেখানেই থাকবো।
- আচ্ছা তুমি উপরেই থাকবে।
- তুমি যে আমার সাথে ঘুমাবে, তোমার লজ্জা করবে না বলো?
- আমি কী আপনার মতন মেয়েমানুষ নাকী যে আমার লজ্জা করবে।
-আপনি তাহলে ছেলে মানুষ। ছেলেরা তো শাড়ি পড়েনা। তুমি শাড়ি কেন পড়ছো?
-তাহলে আপনি আগামীকাল থেকে শাড়ি পড়বেন, আমি প্যান্ট শার্ট। ঠিক আছে?
-না শাড়ি পড়বো না। শাড়ি পড়লে আমার পেট দেখা যাবে। আমার লজ্জ্বা করবে তো।
-আপনার মাথায় তো অনেক বুদ্ধি।
- হ্যাঁ আমি কী তোমার মতন বোকা নাকী?
- আপনি কী নিজেকে খুব চালাব ভাবেন নাকী?
- হ্যাঁ খুব।
- তাহলে এক কাজ করেন আমাকে শাড়ি টা গ্রীলে বেঁধে দিয়ে নীচে নামিয়ে দিন। কী পারবেন না?
- হ্যাঁ পারবো। আমি ধুম-৩ তে দেখেছি আমীর খান শাড়ি প্যাচিয়ে নেমেছিল।
- সেটা শাড়ি নয় দড়ি।
- তুমি নীচে কেন নামবে?
- কেন তুমি দেখনাই, ধুম-৩ ছবিতে দড়ি বেঁধে নামার সময় টাকা উড়ে পড়ে।
-তাহলে টাকা কুড়োবে কে?
- ঐ তাকিয়ে দেখেন, নীচে একটা লোক দাড়িয়ে আছে সে টাকা কুড়োবে।
-তুমি উঠে আসবে পরে কীভাবে?
- কেন শাড়ি দিয়ে উঠে আসবো।
- আচ্ছা ঠিক আছে।
দরজায় টোকা পড়লো। মিতি বললো, কে?
-আমি শিমুলের মা, বউমা একটু বাইরে আসবে?
শিমুলের মা হাজেরা আক্তার পেশায় আদর্শ গৃহিনী। কিন্তুু এ বাড়ির কর্তার দায়িত্ব তিনি পালন করেন।
- মা তুমি কিছু মনে করোনা। শিমুল কে ছাড়া আমি একা ঘুমায়নি কখন ও। তাই ছেলেকে দেখতে আসছিলাম।
- ছেলেকে নিয়ে যান মা, উনার অনেক কষ্ট হচ্ছে।
-না মা কী যে বলো। আমি কী একটু ভেতরে আসবো?
- হ্যাঁ আসেন মা।
হাজেরা বেগম তার ছেলেকে বললো
- শিমুল আমার আদরের দুলদুল।
তোমার নাকী খুব কষ্ট হচ্ছে।
-দেখো মা তোমার বউমার না মাথা খারাপ হয়েছে। খালী শাড়ি খুলতে চায়।
মিতি হাজেরা বেগম কে বললো,
মা আপনি ঘুমাতে যান ।
- মা তুমি কিছু মনে করোনা, শিমুল ছোটবেলা থেকে সহজ সরল। কিন্তুু ওর মন টা খুব ভাল।শিমুল আমি যাচ্ছি।
- আচ্ছা আম্মুু তুমি তারাতারী ঘুমিয়ে পড়ো।
মিতি দরজা লাগালো।
- আপনাকে কী কী করতে বলেছিলাম মনে আছে?
- হ্যাঁ, তবে শাড়ি না খুললে হয় না।
আমি মোটা দড়ি এনে দেই। স্টোর রুম থেকে। আমার কাছে স্টোর রুমের একটা চাবি আছে।
- আচ্ছা যান, তারাতারী ফিরবেন।
স্টোর রুমের দরজা খুললো শিমুল।
বাতি জ্বালালো। দেখলো স্টোর রুমে
তাদের বাসার ড্রাইবার লিটন কাজের বুয়া শেফালীর হাত ধরে বসে আছে।
শিমুল বললো,
- কী লিটন এখানে কী?
আব্বু কে সব বলে দিব কিন্তু।
- ভাইজান কিছুনা, শেফালী বললো আজ রাতে সে আমার সাথে লুডু খেলবে। তাই লুডু খেলার প্রস্তুুতি নিচ্ছিলাম।
- লুডুর ঘর কই?
- মনে মনে খেলা যায় লুডু আপনি জানেননা নাকী?
ভাবী কী করে আপনি এখানে কেন?
- তোর ভাবীর মাথা খারাপ হয়েছে।খালী শাড়ি খুলতে চায়।
হি হি করে হেসে উঠলো শেফালী।
ধমকের সুরে লিটন শেফালীকে বললো, এমন করে হাসবি নাতো। এসব জানাজানি হয়ে গেলে তোর চাকরি ও যাবে সাথে আমারটাও।
লিটন শিমুল কে বললো,
-ভাইজান শাড়ি খুললে সমস্যা কী?
- সমস্যা আছে। দড়ি টা কোথায় বলতো?
- আপনি কী বাসর রাতে গলায় ফাস দিবেন নাকী?
হি হি হি করে হেসে উঠলো শেফালী।
হাসির শব্দে ঘুম ভেঙে গেল হাজেরা বেগমের।
তিনি তাঁর স্বামী প্রফেসর ইউনুস আলীর কাচা ঘুম ভাঙিয়ে দিয়ে স্টোর রুমে চলে এলেন।
সালমা বেগম দেখলো স্টোর রুমে দাড়িয়ে আছে লিটন, শিমুল, শেফালী ।
- কীরে লিটন তোর এখানে কী?
- আম্মু দড়ি শিমুল বললো।
- দড়ি মানে কী?
- দড়ি না । ভাইজানের খিদা পাইছে।
তাই তিনি আমাকে ডেকে তুললো, শেফালী কে ডাকতে।
আমি শেফালী কে ডাকতে গেলাম। দেখি সে রুমে নাই। তারপর এখানে এসে পেলাম।
- শেফালী তুই এখানে কেন আসছস?
হাজেরা বেগম জিজ্ঞেস করলো।
বিষয়: সাহিত্য
১৯১৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন