গল্প- অনলাইন অফলাইনের গল্প
লিখেছেন লিখেছেন আবরার আকিব ০৩ মে, ২০১৭, ০২:২৭:৪৯ রাত
গল্প-অনলাইন ও অফলাইনের গল্প -
বাসা পরিবর্তন করতে হবে, তাই সব কিছু গুছাতে শুরু করলো ইভান। দশ মাস ধরে এই মেসে থাকে সে। মেসের সব বর্ডার দের সাথে আত্মিক সম্পর্ক হয়ে গেছে তার। নিতান্ত বাধ্য হয়েই মেসে ছাড়তে হচ্ছে। সে এবার ভর্তি পরীক্ষায় দ্বিতীয় হয়েছে। সে পদার্থবিজ্ঞান এ ভর্তি হয়েছে। রুমের তাকের উপরে বস্তায় পুরাতন বই, খাতা রেখেছিল সেটা সে নামালো। নামাতেই চোখে পড়লো পাঁচ বছর আগের ডায়েরী। সে ভেবেছিল ডায়েরী টা হারিয়ে গেছে। ডায়রীর পাতা উল্টাতে লাগলো সে... তখন নবম শ্রেণীতে পড়তো সে। ক্লাসে ছাত্র ছাত্রী ছিল ত্রিশ জন। ইভানের রোল ছিল এক । নবম শ্রেনীতে ভর্তি হয়েছে নাদিয়া নামের এক মেয়ে।
তার ভর্তি রোল ত্রিশ । ইভানের সাথে নাদিয়ার পরিচয়ের শুরু টা যেভাবে,
একদিন তাদের বাংলার মোতাহার রহমান স্যার বললো,
রোল নং এক আর রোল নং ত্রিশ দাড়াও।
ইভান, নাদিয়া দাড়ালো।
তোমরা দুজনে সামনে এসো।
নাদিয়া তোমার লক্ষ্য আজ থেকে রোল এক নেওয়া। আর ইভান তোমার লক্ষ্য তোমার প্রধান লক্ষ্য তোমার স্থান ধরে রাখা।
স্কুল থেকে বেড়িয়ে ইভানের পেছন পেছন আসছে নাদিয়া ।
-এই ইভান শুনছো আজ থেকে কিন্তুু আমরা বন্ধু।
- কে বললো আমরা বন্ধু?
- স্যার বলছে।
-পাগল হলে, তোমার মতন গাধী ছাত্রী কে আমি বন্ধু বানাব।
-আমি গাধী না আগের স্কুলে আমার রোল ছিল এক ।
- তাই নাকী, একদিন তো তবে সত্যি -সত্যি আমাকে পেছনে ফেলে দিবে।
- না পারব না। আমি ভাল ছাত্রী , কিন্তুু তোমার মতন ভাল ছাত্র না।
নবম শ্রেনীর ফলাফলে সবাই কে চমকে দিয়ে নাদিয়ার রোল হল এক।
দ্বিতীয় হল ইভান। লজ্জায় ইভান পরদিন স্কুলে গেল না ।
এর ঠিক পরের দিন ইভান স্কুলে গেল কিন্তুু নাদিয়া স্কুল এ আসেনি ।
স্যার ইভানের রোল এক ডাকলো।
ইভান স্যার কে বললো স্যার আমার রোল ত দুই ছিল, নাদিয়ার এক ছিল ।
নাদিয়ার বাবা বদলী হয়েছেন। নাদিয়া টি.সি নিয়ে চলে গেছে। তাই তোমার রোল এক হয়েছে। ইভানের সেদিন খুব মন খারাপ হয়েছিল।
ব্যাগ গুছিয়ে ইভান বাসে ঢাকায় গেল।
সে সীট পেলো, সলিমুল্লাহ হলের ২৩৬ নাম্বার রুমে। এক রুমে নয় জন। সেটা ছিল তিন জনের রুম। এক সীটে তিনজন করে শুরুতে তার দম বন্ধ হয়ে আসছিল, কিছুতেই মন বসাতে পারছিল না সে। কিন্তুু ধীরে- ধীরে পরিবেশের সাথে নিজেকে নিল মানিয়ে।
১ অক্টোবর তার প্রথম ক্লাস। সে প্রথম দিনেই বসলো পেছনের ব্রেঞ্চ এ। ক্লাস নিচ্ছেন প্রফেসর শামসুল হুদা। স্যারের বৈশিষ্ট হল স্যার কথা বলেন খুব মজা করে। শুরু থেকেই তার উপদেশ পর্ব শুরু হল যেমন, ইন্টার লেভেলে ছাত্ররা থাকে একটু পাগলাটে স্বভাবের। কিন্তুু ভার্সিটিতে হতে হয় স্থির বুদ্ধির অধিকারী।
ইভানের স্যার কে অনেক ভাল লাগলো।
অর্ধেক ক্লাস যেতেই একটি মেয়ে দাড়িয়ে আছে দরজায়।
- ভেতরে আসবো স্যার?
- হ্যাঁ কেন আসবেনা, ইয়াং লেডী ভেতরে আস।
ইভানের চোখ পড়লো মেয়েটির উপর,
বোরকা পড়া, চশমিশ। চোখ দেখা যাচ্ছে
সে চোখে চোখ পড়তেই ইভানের মনে হল যেন কত যুগ ধরে মেয়েটিকে চেনে সে।
এ চোখের ভাষা বুঝার সে চেষ্টা করেছিল বহুবার।
স্যার মেয়েটিকে দেখিয়ে বললো,
ছাত্র ছাত্রীরা তোমরা কী কেউ নাদিয়া কে চেন। সে ভর্তি পরীক্ষায় ১ম স্থান অধিকার করেছে। মেয়েটি যেন লজ্জা পেল।
ক্লাসে প্রথম দিনেই বেস কয়েক জন বন্ধু জুটে গেল ইভানের।
একদিন মেয়েটি কে দেখলো একা বসে আছে। জিজ্ঞেস করলো সে,
- কেমন আছেন?
- ভাল।
- আমি আপনার ক্লাসমেট।
- হ্যাঁ সেটা আমি জানি। আর আপনি ভর্তি পরীক্ষায় দ্বিতীয় হয়েছেন। আপনার নাম টা বলবেন কী?
- আমি ইভান, আর আপনি?
- জানেন, নবম শ্রেনীতে আমার একটা বন্ধু ছিল নাম ইভান। নবম শ্রেনীর ফলাফলে সে হয়েছে দ্বিতীয় আমি প্রথম।
- তোমার নাম কী নাদিয়া, ভর্তির সময় তোমার রোল ছিল ত্রিশ।
- হ্যাঁ আপনি জানলেন কীভাবে?
-আমি ই তো সেই ইভান। তুমি আমায় কিছু না বলে চলে এসেছিলে কেন?
- আমি তো স্কুলের শেষদিন অনেক খুঁজেছি তোমায় । তুমি তো আসছিলে না সেদিন।তোমার সাথে দেখা হয়ে খুব ভাল লাগলো, আজ উঠি বাসায় চলে যেতে হবে।
- আচ্ছা।
পরদিন নাদিয়ার সাথে ইভানের দেখা হলো। নাদিয়া ইভান কে বললো,
- জানো ইভান অস্টলিয়ার এক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশীপ পেয়েছি আমি।
সামনের মাসে অস্টলিয়া চলে যাব আমি।
- তোমাকে একটা কথা বলার ছিল আমার।
- কী কথা বল?
- কীভাবে বলবো বুঝতে পারতেছিনা।
- দেখো ইভান এমন কিছু বলবেনা, যার জন্য আমাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যায়।
- তোমার অস্টলিয়ার ফ্লাইট কয় তারিখ?
- ৫ ই জানুয়ারি, তুমি আমার ফেসবুক আইডি টা রাখো, নাদিয়া জামান এ নামে খুঁজলে পেয়ে যাবে। নীর শাড়ি পড়া একটা ছবি দেখবে, ডাকনাম হিমুর রুপা। আচ্ছা আমি এখন বাসায় যাব। ভাল থেক।
রাতে ইভান নাদিয়ার আইডি খুঁজে পেল।
সে দেখলো তার আইডিতে নাদিয়া রিকোয়েস্ট দিয়ে রেখেছে। ম্যাসেজ দেখলো সে। মেসেজ রিকুয়েস্ট গ্রহন করলো।
৮ মাস আগে মেসেজ দিয়ে রেখেছে সে।
মেসেজ গুলো এমন
' আপনি কী হুমায়ূন আহমেদ এর হিমু?
জানেন আমি হিমু সব সিরিজ পড়ছি, হিমুদের খুব পছন্দ করি আমি।
কী মেসেজের উত্তর দেন না কেন?
হিমুরা কিন্তুু এমন হয় না, আপনি ফেইক হিমু।'
ইভানের আইডির নাম ছিল হিমাদ্রি হিমু।
নিজের কোন পরিচয়, ছবি ছিলনা আইডিতে। সে ফেসবুকে নক করল নাদিয়া কে।
নাদিয়া তিন ঘন্টা পর উত্তর দিল, নাদিয়া জিজ্ঞেস
করলো
- কেমন আছেন?
- আমি কেমন আছি সেটা বলা যাবেনা।
-কেন বলবেন না।
-আপনাকে কেন বলবো বলেন তো?
আমি আপনার অনেক বড় ভক্ত তাই বলবেন। জানেন আপনার সব পোস্ট আমি পড়তাম, কিন্তুু ফ্রেন্ডলিস্টে ছিলাম না তাই কমেন্ট করতে পারিনি। এত সুন্দর করে কীভাবে লিখেন আপনি?
- ছোটবেলা থেকেই ডায়রী লেখার অভ্যাশ ছিল তো তাই একটু - আধটু লেখালেখি করি।
-আপনার বাসা কোথায়?
- ফুটপাতে, রাস্তায় হাটাহাটি করি খালী পায়ে।
- হলুদ পাঞ্জাবি পড়েন নাকী?
- হ্যাঁ পড়ি।
- আপনার রুপা আছে?
- থাকতে না পারার সম্ভবনা বেশী।
- কেউ যদি কোনদিন বলে সে আপনার রুপা হতে চায় কী করবেন?
- কষে তার গালে চারটা থাপ্পর দিব। বলবো এতদিন কোথায় ছিলি.......
- হা হা হা, আমি আপনার রুপা হতে চাই।
- না, আমি আপনার হিমু হতে পারব না।
-কেন আমি কী আপনার রুপা হওয়ার যোগ্য নই?
-সেটা বলিনি, আমি ও তো আপনার হিমু হওয়ার যোগ্য না ও হতে পারি।
-হিমু কে ভালবেসেই তার রুপা হতে চাই,
তার যোগ্যতা দেখে নয়।
-কাওকে অন্ধ বিশ্বাস করা ঠিক না।
-আমাদের দেখা হবে কবে বলেন?
আমি কিছুদিন পর অস্টলিয়া চলে যাব।
- কেন যাবেন?
- সে দেশের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলার শীপ পেয়েছি। আপনি পড়েন কীসে?
- বলা যাবেনা সেটা ।
আপনার ফ্লাইট কয় তারিখ?
- জানুয়ারির পাঁচ তারিখে। আমাদের দেখা হবে এক জানুয়ারী, দুপুর বারো টায়।
আপনি কিন্তুু হলুদ পাঞ্জাবী পড়বেন সেদিন।
- আচ্ছা দেখা হবে। আপনার কিন্তুু নীল শাড়ি পড়ে আসতে হবে।
- আচ্ছা তাই হবে। রাত দুটা বাজে, এখন ঘুমাতে যাব। আপনিও ঘুমাতে যান।
- আমি ঘুমাব না মহাপূরুষ রা ঘুম কে জয় করতে পারে।
নেপোলিয়ন ৩ ঘন্টার বেশী ঘুমাতেন না।
শেখ সাদী রাত জেগে থাকার জন্য ঔষধ খেতেন।
- আচ্ছা আপনি ও রাত জাগেন, আর পাগল হোন।
- হিমুরা একটু পাগল টাইপের হয়। সেটা কী আপনি জানেন না?
-কিন্তুু আপনি একটা মহাপাগল।
আচ্ছা মি. পাগল সাহেব, আমি ঘুমাব আপনি জেগে থাকেন।
এক তারিখ নাদিয়া সারাদিন অপেক্ষা করলো হিমুর জন্য কিন্তুু ইভান ইচ্ছা করেই দেখা করলোনা।
তার আইডি ডিএক্টিব রাখলো, নাদিয়ার সাথে কোন যোগাযোগ রাখল না। পাঁচ তারিখ নাদিয়া চলে গেল অস্টলিয়ায়।
ক্লাস রুমে ক্লাস নিচ্ছে প্রফেসর মার্সেল।
তিনি সবার পরিচিতি জানতে চাইল ।
নাদিয়া তার পরিচয় দিল।
সবশেষে ইভান দাড়ালো, পরিচয় দিল।
ক্লাস শেষে ইভান নাদিয়া কে ডেকে বললো, কেমন সারপ্রাইজ দিয়ে দিলাম।
নাদিয়া বললো মোটেও না, আমি জানতাম আপনি এখানে আসছেন।
ক্লাসে ইভান রুপে আর ফেইসবুকে হিমু রুপে নাদিয়ার সাথে কথা বলতে লাগলো ইভান।
পাঁচ বছর পর দুজনেই দেশে ফিরলো
আজ হিমু আর রুপার দেখা হবে নুহাশ পল্লি তে।
ইভান হলুদ পাঞ্জাবী পড়ে আসছে আজ।
একটু দূরেই নীল শাড়ি পড়া নাদিয়া আসতেছে।
-এই ইভান তুমি এখানে কেন?
আর হলুদ পাঞ্জাবী কেন পড়ছ?
ইভান কষে নাদিয়া কে চারটা থাপ্পর দিয়ে দিলো।
নাদিয়া হতবম্ভ হয়ে তাকিয়ে আছে ইভানের দিকে। দুজনের চোখেই এখন জল।
দুজনের চোখের ভাষা দুজনেই বুঝতে পেরেছে আজ।
দুজন দুজনার হাত ধরে দূরে কোথাও বহুদূরে আজ তারা হারিয়ে যাবে।
অনলাইন অফলাইনের গল্প এখানেই সমাপ্ত।
বিষয়: বিবিধ
১১১৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
০ এরকম যদি হুমায়ুন আহমেদ লিখতেন তাহলে তাকে নারী নির্যাতনের মামলা খেতে হত ।
মন্তব্য করতে লগইন করুন