গল্প - কবিতা এবং আমি
লিখেছেন লিখেছেন আবরার আকিব ২৯ এপ্রিল, ২০১৭, ০৪:২২:১৯ বিকাল
কলিংবেল বাজতেই দরজা খুলে দিলেন প্রফেসর শীলা জাহান।
বাইরে দাড়িয়ে আছে বিশিষ্ট কবি শামীম উসমান।
দির্ঘ ২৮ বছর পর তাদের দেখা হয়েছে।
শীলা জাহান আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক।
আর শামীম উসমান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক।
দুজনেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একসময় ক্লাসমেট ছিল।পারিবারিক সম্মতিতে তাদের বিয়ে হয়, বিয়ের ৩ ঘন্টা পর শামীম উসমান সাহেব নিরুদ্দেশ হোন।
দুজনেই একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। ড্রয়িংরুমে শামীম উসমান সাহেব বসলেন, তার সামনে বসে আছেন প্রফেসর শীলা জাহান।
শীলা জাহান জিজ্ঞেস করলো শামীম উসমান সাহেব কে
'কেমন আছ?'
'ভাল আছি, তুমি কেমন আছ ? '
'ভাল আছি, কতদিন পর দেখা হল বলতে পারবে?'
'২৮ বছর, তিন মাস,১১ দিন পর।
' তুমি তো সেই আগের মত হিসেবী আছ, একটু ও বদলালে না।'
' কই বদলালাম না, কাচা চুলে পাক ধরেছে,
মুখের চামড়া ঝুলে পড়েছে।'
' তবুও তুমি সেই ২৮ বছর আগের তরুনের মতন ই আছ। বিয়ের দিন অমন করে পালালে কেন? তিন ঘন্টা টিকেছিলো আমাদের সংসার। আমার কাছে আজ ও অজানা এমন টি কেন করলে তুমি..
ইচ্ছা হয়েছিলো গলায় ফাঁস দিবো ; কিন্তুু পরে বুঝতে পারলাম, একজন প্রতারকের জন্য কেন আমার জীবন নষ্ট করবো। বেশ কিছু দিন পর আল -মাকসুদ নামের ভদ্রলোক আমাকে দ্বিতীয় জীবন দান করলো।'
' তুমি তো তবুও দ্বিতীয় জীবন পেলে। আমি তো আজ ও একাই রয়ে গেলাম। '
' কী বলছ তুমি, তুমি বিয়ে করনি?
নিজেকে এত বড় শাস্তি কেন দিলে তুমি? '
' শাস্তি নয়। ও আচ্ছা তোমার ছেলে মেয়ে কজন?
তোমার স্বামী কী করে?'
' আমার স্বামী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজীর অধ্যাপক। এক ছেলে ও এক মেয়ে ছেলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়ে, মেয়ে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।'
' খুব ভাল।'
' তোমার কাব্য সাধনার কী খবর?
যে কবিতার জন্য তোমার মত প্রতারকের প্রেমে
পড়েছিলাম আমি। '
' তুমি আজ ও আমায় ক্ষমা করতে পারলেনা? '
' কোনদিন পারবোনা, আমি তোমার কবিতার প্রেমে পড়েছিলাম, রাত জেগে তোমার কবিতা পড়তাম। তোমার দু পাতা চিঠি বারবার পড়তাম। কেমন অবুঝ বালিকা ছিলাম আমি। '
' কিন্তুু তোমার জন্য কোন কবিতা বা চিঠি আমি লিখতাম না। '
' সেটা আমি জানি, তুমি লিখতে আমার বান্ধবী লীনার জন্য। কিন্তুু লীনা তোমায় পাত্তা দিতনা।
তোমার লীনার পেছন ঘুরা টা আমি পছন্দ করতাম না। তোমার লীনার প্রতি ভালবাসা দেখে হিংশায় জ্বলে যেতাম আমি।
' তার পর ঠিক একদিন আমাকে ফাঁসিয়ে দিলে ।
তোমার বাবা ছিল তখন কার আমাদের ফুলবাড়ীয়ার সংসদ সদস্য।
সেই ক্ষমতা বলে আমার মতন সহজ সরল ছেলে কে তোমায় বিয়ে করতে বাধ্য করলে।'
' হ্যাঁ আমি তাই করেছি। কিন্তুু তুমি পালিয়ে গেছো। কিন্তুু তোমার কবিতা আজ ও ভুলতে পারিনি। আজ ও সযত্নে রেখেছি তোমার সব কবিতা। তো সেদিন কাওকে কিছু না বলে পালিয়েছিলে কেন? '
'লীনার জন্য। '
'কেন লীনা আবার কী করলো? '
' বিয়ের পর আবীরের ফোন পেলাম। লীনা বিষ খেয়েছে। সে আমায় সামনাসামনি দেখতে পারতো না। কারন তার পরিবার এসব পছন্দ করতো না।
লীনা সত্যি আমায় খুব বেশী ভালবেসেছিলো। ফোন কল পেয়েই, কাউকে কিছু না বলে বিয়ের পোশাকেই বের হয়ে পড়লাম। লীনা ছিল বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ভর্তি। আমায় দেখে তার মা বললো, তোমার আর শীলার বিয়ের কথা শুনার পর থেকে লীনা দরজা লাগিয়ে কাঁদতেছিল। পরদিন দরজা ভেঙে লীনা কে উদ্ধার করি আমরা। মেঝেতে একটা বিষের বোতল দেখে নিশ্চিত হই লীনা বিষ খেয়েছে।
আমি লীনার দিকে তাকিয়ে রইলুম, এত প্রেম কোথায় লুকিয়েছিল সে। একটি বার কেন সে বলতে পারল না আমায় সে ভালবাসে।
পরদিন লীনা মারা গেল।
তোমার প্রতি একধরনের ঘৃণা জন্মে গেল আমার। এ জগৎ সংসার মিথ্যা মায়া মনে হচ্ছিল আমার।
এর পর তোমার কোন খোঁজ করিনি কোনদিন '
' লীনা বেচারী একটা বার কী আমাকেও বলতে পারতো না তোমায় যে সে ভালবাসে।আমি লীনার জীবন কেড়ে নিলাম। তোমার জীবন নষ্ট করলাম। আমায় ক্ষমা কর তুমি ।
' দোষ তোমার নয়, দোষ আমার কবিতার। কবিতা লেখার জন্য আমি লীনা কে আমার জীবন থেকে হারিয়েছি।
কলিং বেল বেজে উঠলো,
শীলা জাহান দরজা খুলে দিলো।
তার স্বামী ও তার ছেলে মেয়েরা এসেছে।
আল- মাকসুদ সাহেব হচকচিত হলেন। কবি শামীম উসমান যে। উনার মতন অত বড় মাপের কবি আমাদের বাড়িতে আমি দিবা -স্বপ্ন দেখছি নাতো।
' কেমন আছেন স্যার '
' ভাল আছি। আপনি কেমন আছেন? '
' ভাল আপনার লাস্ট উপন্যাস, 'কবিতা এবং আমি' এটা আমি পড়েছি। উপন্যাসে ট্রাজেডী আমায় মর্মাহত করেছে।'
' হ্যাঁ উপন্যাসের গল্প টা আমার নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া গল্প, এ ক্ষেত্রে এটা আমার আত্মজীবনিমূলক উপন্যাস '
শামীম উসমান আর শীলা জাহান একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে, দুজনের চোখেই জল। তাদের চোখে কেন জল আল- মাকসুদ সাহেব কী তা বুঝতে পেরেছে?
হয়তো বা পেরেছে হয়তো বা না আমি
কলিংবেল বাজতেই দরজা খুলে দিলেন প্রফেসর শীলা জাহান।
বাইরে দাড়িয়ে আছে বিশিষ্ট কবি শামীম উসমান।
দির্ঘ ২৮ বছর পর তাদের দেখা হয়েছে।
শীলা জাহান আনন্দমোহন বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক।
আর শামীম উসমান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক।
দুজনেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একসময় ক্লাসমেট ছিল।পারিবারিক সম্মতিতে তাদের বিয়ে হয়, বিয়ের ৩ ঘন্টা পর শামীম উসমান সাহেব নিরুদ্দেশ হোন।
দুজনেই একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে। ড্রয়িংরুমে শামীম উসমান সাহেব বসলেন, তার সামনে বসে আছেন প্রফেসর শীলা জাহান।
শীলা জাহান জিজ্ঞেস করলো শামীম উসমান সাহেব কে
'কেমন আছ?'
'ভাল আছি, তুমি কেমন আছ ? '
'ভাল আছি, কতদিন পর দেখা হল বলতে পারবে?'
'২৮ বছর, তিন মাস,১১ দিন পর।
' তুমি তো সেই আগের মত হিসেবী আছ, একটু ও বদলালে না।'
' কই বদলালাম না, কাচা চুলে পাক ধরেছে,
মুখের চামড়া ঝুলে পড়েছে।'
' তবুও তুমি সেই ২৮ বছর আগের তরুনের মতন ই আছ। বিয়ের দিন অমন করে পালালে কেন? তিন ঘন্টা টিকেছিলো আমাদের সংসার। আমার কাছে আজ ও অজানা এমন টি কেন করলে তুমি..
ইচ্ছা হয়েছিলো গলায় ফাঁস দিবো ; কিন্তুু পরে বুঝতে পারলাম, একজন প্রতারকের জন্য কেন আমার জীবন নষ্ট করবো। বেশ কিছু দিন পর আল -মাকসুদ নামের ভদ্রলোক আমাকে দ্বিতীয় জীবন দান করলো।'
' তুমি তো তবুও দ্বিতীয় জীবন পেলে। আমি তো আজ ও একাই রয়ে গেলাম। '
' কী বলছ তুমি, তুমি বিয়ে করনি?
নিজেকে এত বড় শাস্তি কেন দিলে তুমি? '
' শাস্তি নয়। ও আচ্ছা তোমার ছেলে মেয়ে কজন?
তোমার স্বামী কী করে?'
' আমার স্বামী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজীর অধ্যাপক। এক ছেলে ও এক মেয়ে ছেলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে পড়ে, মেয়ে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।'
' খুব ভাল।'
' তোমার কাব্য সাধনার কী খবর?
যে কবিতার জন্য তোমার মত প্রতারকের প্রেমে
পড়েছিলাম আমি। '
' তুমি আজ ও আমায় ক্ষমা করতে পারলেনা? '
' কোনদিন পারবোনা, আমি তোমার কবিতার প্রেমে পড়েছিলাম, রাত জেগে তোমার কবিতা পড়তাম। তোমার দু পাতা চিঠি বারবার পড়তাম। কেমন অবুঝ বালিকা ছিলাম আমি। '
' কিন্তুু তোমার জন্য কোন কবিতা বা চিঠি আমি লিখতাম না। '
' সেটা আমি জানি, তুমি লিখতে আমার বান্ধবী লীনার জন্য। কিন্তুু লীনা তোমায় পাত্তা দিতনা।
তোমার লীনার পেছন ঘুরা টা আমি পছন্দ করতাম না। তোমার লীনার প্রতি ভালবাসা দেখে হিংশায় জ্বলে যেতাম আমি।
' তার পর ঠিক একদিন আমাকে ফাঁসিয়ে দিলে ।
তোমার বাবা ছিল তখন কার আমাদের ফুলবাড়ীয়ার সংসদ সদস্য।
সেই ক্ষমতা বলে আমার মতন সহজ সরল ছেলে কে তোমায় বিয়ে করতে বাধ্য করলে।'
' হ্যাঁ আমি তাই করেছি। কিন্তুু তুমি পালিয়ে গেছো। কিন্তুু তোমার কবিতা আজ ও ভুলতে পারিনি। আজ ও সযত্নে রেখেছি তোমার সব কবিতা। তো সেদিন কাওকে কিছু না বলে পালিয়েছিলে কেন? '
'লীনার জন্য। '
'কেন লীনা আবার কী করলো? '
' বিয়ের পর আবীরের ফোন পেলাম। লীনা বিষ খেয়েছে। সে আমায় সামনাসামনি দেখতে পারতো না। কারন তার পরিবার এসব পছন্দ করতো না।
লীনা সত্যি আমায় খুব বেশী ভালবেসেছিলো। ফোন কল পেয়েই, কাউকে কিছু না বলে বিয়ের পোশাকেই বের হয়ে পড়লাম। লীনা ছিল বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ভর্তি। আমায় দেখে তার মা বললো, তোমার আর শীলার বিয়ের কথা শুনার পর থেকে লীনা দরজা লাগিয়ে কাঁদতেছিল। পরদিন দরজা ভেঙে লীনা কে উদ্ধার করি আমরা। মেঝেতে একটা বিষের বোতল দেখে নিশ্চিত হই লীনা বিষ খেয়েছে।
আমি লীনার দিকে তাকিয়ে রইলুম, এত প্রেম কোথায় লুকিয়েছিল সে। একটি বার কেন সে বলতে পারল না আমায় সে ভালবাসে।
পরদিন লীনা মারা গেল।
তোমার প্রতি একধরনের ঘৃণা জন্মে গেল আমার। এ জগৎ সংসার মিথ্যা মায়া মনে হচ্ছিল আমার।
এর পর তোমার কোন খোঁজ করিনি কোনদিন '
' লীনা বেচারী একটা বার কী আমাকেও বলতে পারতো না তোমায় যে সে ভালবাসে।আমি লীনার জীবন কেড়ে নিলাম। তোমার জীবন নষ্ট করলাম। আমায় ক্ষমা কর তুমি ।
' দোষ তোমার নয়, দোষ আমার কবিতার। কবিতা লেখার জন্য আমি লীনা কে আমার জীবন থেকে হারিয়েছি।
কলিং বেল বেজে উঠলো,
শীলা জাহান দরজা খুলে দিলো।
তার স্বামী ও তার ছেলে মেয়েরা এসেছে।
আল- মাকসুদ সাহেব হচকচিত হলেন। কবি শামীম উসমান যে। উনার মতন অত বড় মাপের কবি আমাদের বাড়িতে আমি দিবা -স্বপ্ন দেখছি নাতো।
' কেমন আছেন স্যার '
' ভাল আছি। আপনি কেমন আছেন? '
' ভাল আপনার লাস্ট উপন্যাস, 'কবিতা এবং আমি' এটা আমি পড়েছি। উপন্যাসে ট্রাজেডী আমায় মর্মাহত করেছে।'
' হ্যাঁ উপন্যাসের গল্প টা আমার নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া গল্প, এ ক্ষেত্রে এটা আমার আত্মজীবনিমূলক উপন্যাস '
শামীম উসমান আর শীলা জাহান একে অপরের দিকে তাকিয়ে আছে, দুজনের চোখেই জল। তাদের চোখে কেন জল আল- মাকসুদ সাহেব কী তা বুঝতে পেরেছে?
হয়তো বা পেরেছে হয়তো বা না।
বিষয়: সাহিত্য
১৩১৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন