প্রকৃতি প্রেম
লিখেছেন লিখেছেন আবরার আকিব ২৯ এপ্রিল, ২০১৭, ১১:২২:৪৫ সকাল
আমাদের বাড়ির ছাদ নিয়ে কিছু লেখার ইচ্ছে ছিল তাই লিখেই ফেললাম।
প্রকৃতির প্রেম মানুষ কে এত আকর্ষণ করে কেন?
প্রকৃতির সাথে আমাাদের সম্পর্কটা কী আত্মিক? আমাকে কেউ যদি প্রশ্ন করে তুমি কোথায় বারবার ফিরে যেতে চাও?
আমি বলবো, আমার বাড়ির ছাদে ।
প্রকৃতির ছায়াঘেরা রাজমহল যেন আমাদের বাড়ি।
দূরে তাকালেই ধান ক্ষেত। ক্ষেতের সাথে কৃষকের জীবনধারার চিত্র দেখা যায়।
সুবিশাল পুকুর। দেখা যায় মাছরাঙা, বক এর মাছ নিয়ে উড়ে যাওয়ার চিত্র। পুকুড় পাড়ে একটা কদম গাছ, বর্ষায় যেন বধূ সেজে বসে থাকে পুকুর পাড়ে। রেন্টি গাছে একটা কাক সংসার পেতেছে। নিত্যদিন গাছের ডাল সংরহ করে সাজাচ্ছে তার আপন নীড়। কাল বৈশাখী ঝড়ে যেন তার নীড় না ভাঙে। টিকে থাকুক সংসারটা আর তাদের ভাল বাসা। চন্দন গাছ থেকে রক্ত ঝরে পড়তেছে। তাল সুপাড়ি গাছ সন্যাসীর মতন মালা পড়ে ঠায় দাড়িয়ে আছে।
একটা পুরাতন গাছ কে আস্ত গিলে ফেলেছে একটা বট গাছ।
ছাদের পানির ট্র্যাঙ্কের পাশে বেড়ে উঠছে একটা বটগাছ। সে ও কী আমাদের ছাদ কে গিলে ফেলবে। না সে পারবে না কারন বেচে থাকার মতন মাটি নেই তার কাছে।
পিতৃপরিচয় হীন সন্তানের মতন সে বেড়ে উঠতেছে। কেউ যদি বাবার মতন পরম মমতায় তুলে এনে মাটিতে রোপণ করে তাহলে সে একদিন বেড়ে উঠবে। কিন্তুু কেউ হয়তো এমন টি করবে না।নারকেল গাছে নবীন প্রবীন নারকেল সবাই এখন এক পরিবারে বসবাস করতেছে। বুড়ো নারকেল জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ঝড়ে পড়বে। সদ্য জন্ম নেয়া নারকেল তার জায়গা বুঝে নিবে ।
বাঁশ ঝাড়ের সবচেয়ে উঁচু বাঁশটা
দর্পভরে দাড়িয়ে আছে। একটি মৃত প্রায় জাম গাছে বসে আছে অসংখ পাখি।
যে গাছ তাদের অন্নদান করতে সে মারা যাচ্ছে পাখিগুলো হয়তো শোক প্রকাশ করতেছে। জন্ম হতেই সংগ্রামী জীবনে টিকে আছে একটি গাছের আমগুলো ।
একটি আম আমায় কানে কানে বলতেছে, কাল বৈশাখী ঝড় যদি আসে সব আম মারা গেলেও, আমি বাচতে চাই।
একটি ঘাসফরিং নিশ্চুপ বসে আছে
,
আমি বললাম কীরে কী হয়েছে?
আজ তুই একা কেন?
সে উত্তর না দিয়ে চলে গেল।
হয়তো কোন শিশু খেলার ছলে তার সঙ্গীনি কে ধরে, লেজ এ দড়ি বেঁধে উড়িয়েছে। বেচারী কোথায় যেন মরে পড়ে আছে।
বাড়ির সামনেই মশজিদ,
মুয়াজ্জিনের মধুর সুরে আজান শুনা যাচ্ছে। আচ্ছা আজানের চেয়ে মধুর ধ্বনি কী পৃথিবীতে আছে। যত বড় গায়ক যত সুরেই গান করুক না কেন আজানের কাছে তা অতি তুচ্ছ।
পুকুড় জলে এখন মিষ্টি রোদ খেলা করতেছে একটা শালিখ গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, সে কী ভাবতেছে সে যদি পাখি না হয়ে এই পুকুরের মাছ হতো তবে কেমন হতো,
পুকুরের একটা মাছ ও তাকিয়ে আছে শালিখের দিকে, সে যদি মাছ না হয়ে পাখির মত উড়ে বেড়াতে পারতো তবে কেমন হতো।
বিকট গর্জনে আমার ধ্যান ভঙ্গ করার বৃথা চেষ্টা করে যাচ্ছে একটা ধান মাড়াই এর যন্ত্র। কিন্তুু সে কীভাবে পারবে। আমি যে ডুবে গেছি ভিন্ন এক জগৎ এ। সেই জগতটা আমার চিরচেনা। তবুও দেখছি নতুন করে ।
একটি ঠ্যাং ছাড়া দোয়েল এসে বসলো,
আমার ঠিক পাশেই।
আমাকে বললো তুমি কী আমার ঠ্যাং লাগিয়ে দিতে পারবে?
কতো মানুষ তো প্লাস্টিকের পা নিয়ে বেচে আছে।
বড্ডো কষ্ট হচ্ছে যে আমার।
আমি বললাম আমি যে ডাক্তার নই, আমি যে পারবো না। আমায় ক্ষমা করো তুমি।
সে কাঁদতে কাঁদতে চলে গেল।
মূহুর্তেই সে আমায় ধ্যান ভেঙে দিল,
আমি আর লিখতে পারতেছিনা, হাত কাঁপতেছে। আমি আর
লেখবনা। বাড়িতে এখন কারেন্টের তারে ছেয়ে গেছে। দিনের পর দিন গাছের সংখ্যা কমতেছে। গ্রামের মানুষ গুলি শহরে গেলে শহরের দিকে তাকিয়ে থাকে আর বলে ত, আর বেশী দিন নয় আমরা সভ্য হবো, পরিবেশ থাকবে না আর আগের মতন। আর শহরের মানুষ গ্রামে এলে বলে আর যাবনা ঐ যান্ত্রিক কোলাহলের শহরে, আবদ্ধ জীবনে, গ্রামের ধানক্ষেত পাখির কিচির মিচির শব্দ খাল বিল সব যেন ভাল লাগে। তবু তাদের বাধ্য হয়েই ফিরে যেতে হয় জীবিকার টানে।
বিষয়: সাহিত্য
৮৩৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন