ছোটগল্প- দুঃস্বপ্ন
লিখেছেন লিখেছেন আবরার আকিব ১৭ এপ্রিল, ২০১৭, ১০:২৪:৪১ সকাল
মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেল নীতুর। নাসির কে নিয়ে একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছে সে। নাসির একটি মেয়ে কে নিয়ে দরজায় দাড়িয়ে আছে। নাসির এমন টা করতে পারলো! নীতুর ভালবাসায় অন্য কেও ভাগ বসাবে এটা কেমন করে নীতু সহ্য করবে। মাঝ রাতের স্বপ্ন সত্যি হওয়ার সম্ভবনা কম। দুপুর রাতে ঘুম ভাঙলে আর ঘুম আসতে চায়না। তাই বিছানা ছেড়ে নীতু জানালার কাছে দাড়ালো। আর নাসির কে দেখলো, বিয়ের আগে মেয়েদের পুরুষ দের সম্পর্কে একরকম ধারনা থাকে; বিয়ের পর অন্যরকম। দুই বছর হলো তাদের বিয়ে হয়েছে
তারা দুজনেই ক্লাসমেট ছিলো। নাসির ছিল ভার্সিটিতে সেরা ছাত্রদের মধ্যে একজন। এবং সে সব কাজেই নেতৃত্ব দিতো তাই নাসির কে ভার্সিটির সব শিক্ষকরা তাকে চিনতো। বন্ধুদের সবসময় মাতিয়ে রাখতো। ক্লাসের মেয়েরা নাসির কে খুব পছন্দ করতো। অনেকেই ভাবতো নাসির এর মত কাওকে যদি জীবনসঙ্গী হিসেবে পাওয়া যায়, জীবন টা পরিপূর্ণ। অন্যদিকে নীতু ছিল শান্ত স্বভাবের মেয়ে। প্রয়োজন ছাড়া কারো সাথে কথা বলতো না। নাসির নীতু কেই পছন্দ করে ফেললো। নীতু ছিল ক্লাসের মধ্যে রুপবতী মেয়েদের মধ্যে একজন।
প্রথমদিনেই নীতু কে প্রস্তাব দিয়ে ফেললো
'আচ্ছা আপনার বয়ফ্রেন্ড আছে?'
'না তো নেই।'
'আমাকে কী সেই পদে নিয়োগ দিতে পারবেন?'
'ভালভাবে বুঝিয়ে বলুন।'
'আপনাকে প্রথম দিন দেখেই আমার পছন্দ হয়ে গেছে। আমাকে না ভালবাসলে আপনার অনেক সমস্যা হয়ে যাবে। '
'কী সমস্যা হতে পারে?'
'আপনাকে এই ভার্সিটি ছেড়ে চলে যেতে হবে। ভর্তি বাতিল করে, জাতীয় ভার্সিটির অধীনে কোন কলেজে ভর্তি হবেন । আমি ভর্তি বাতিলের সব ব্যবস্থা করে দিবো। এ কাজের জন্য টাকা খরচ ও করতে হবে আপনার। '
'ফাজলামি করেন। কোনদিন কোন মেয়ের হাতের থাপ্পর খেয়েছেন কী?'
'খাইনি, কিন্তুু সারাজীবনের জন্য আপনার থাপ্পর খাওয়ার অধিকার চাই।'
' ক্লাসে তো অনেক মেয়ে আছে। আমার জানামতে আপনি রোমিও টাইপ ছেলে। আর আপনার জুলিয়েট এর অভাব হবেনা। আমার পিছনে ঘুরে মুল্যবান সময় ব্যয় করবেন না ভাইয়া।'
'আপনার বাবার ফোন নাম্বার দেন তো '
' আব্বুর ফোন নাম্বার দিয়ে কী করবেন? '
' আপনাকে বিরক্ত না করে উনার সাথে সব ঠিকঠাক করে নিব"
' ভাবছিলাম আপনি পাগল। এখন দেখছি মহাপাগল। এসব চিন্তা বাদ দিয়ে পড়ালেখায় মনযোগ দেন ভাইয়া।"
এই বলে নীতু হলের উদ্দেশ্যে হাটতে লাগলো। পেছনে তাকাতেই দেখলো নাসির তার পিছনে।
' এই আপনি আমার পিছন পিছন আসতেছেন কেন?'
' আমি আসবো, আপনার যদি কোন সমস্যা হয়, সামনে থানা আছে, ইভটিজিং এর মামলা দিয়ে দেন। ছয় মাস জেল হবে। জেলে বসে কবিতা লেখবো। একটা উপন্যাস লেখার ও চিন্তা আছে। আচ্ছা বলুন তো উপন্যাসের নামটা কী দেওয়া যেতে পারে। '
' এত কথা বলেন কেন আপনি, আজব মানুষ তো আপনি।'
হলের খুব কাছাকাছি চলে আসছে নীতু। বেগম ফজিলাতুন্নেসা ছাত্রী হল। আগে নাম ছিল মাদার তেরেসা ছাত্রী হল। এখন নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। পেছনে তাকালো নীতু দেখলো নাসির নেই। সে বোরকা খুলে, ফ্রেশ হয়ে, খাবার খেয়ে একটা ঘুম দিলো। ঘুম ভাঙলে জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখলো, নাসির বাচ্চা দের সাথে ক্রিকেট খেলতেছে। এই লোকটি বুঝি ভুলেই গেছে সে এখন অনার্স ১ম বর্ষে পড়ে। কেমন বাচ্চাদের সাথে মিশে বাচ্চা হয়ে গেছে। ছেলেদের কিছু কিছু অভ্যাস ছেলেদের মেয়েদের আকর্ষণ করতে পারে খুব তারাতারী। তিনদির পর নীতু কলেজ গেল। ক্লাসের মেয়েরা নাসির কে ঘিরে আছে। নীতু জিজ্ঞেস করলো ' কেমন আছেন?'
নাসির কোন উত্তর দিলো না। এই নিয়ে অন্য মেয়েরা খুব হাসাহাসি করলো। ক্লাস শেষে হাটতেছে নীতু। পেছনে তাকিয়ে দেখলো নাসির আসতেছে। হাতে একটা খাতা। নাসির বললো, ' এই খাতা টা কী একটু নিবেন '
' কেন নিবো কী আছে খাতায়? '
' আমার কিছু কবিতা আছে। '
' আপনার মত পাগল আবার কবিতাও লিখতে জানে । এই যে শুনেন আমাকে আর বিরক্ত করবেন না। আমি আপনাকে ভাইয়ের দৃষ্টিতে দেখি।'
নাসির কাঁদতে কাঁদতে বললো,
' আমার অনেক গুলো বোন আছে, কাকাত, মামাত, খালাত, ফুপাত। আমার আর বোনের দরকার নেই।'
তারপর নাসির রোজ নীতুর পেছনে ঘুরতো। সে বদলে যেতে লাগলো। নাসির এখন আর আগের মতো ক্লাসের মেয়েদের সাথে কথা বলে না। ধীরে- ধীরে নাসির কেও ভালবাসতে শুরু করলো নীতু।
পাঁচ বছর পর নীতু ৩৫ তম বিসিএসে সারাদেশে ২ য় হলো। আর নাসির ৫ম হলো। দুজন ই আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক। নাসির বাংলাদেশের একজন উঁচুমানের লেখক। আজানের সুমধুর ধ্বনিতে
নাসির এর ঘুম ভাঙলো, দেখলো নীতু জানালার দিকে তাকিয়ে কী যেন ভাবছে।
' কী হয়েছে নীতু, তোমার ঘুম কখন ভেঙেছে, আমায় ডাক দিলেনা কেন? '
' একটা স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে গেছে।'
'কী স্বপ্ন দেখেছেন জাহাপানা, এই দরিদ্র প্রজা কে দয়া করে বলবেন কী সেটা? '
' দেখলাম আমার রাজকন্যার মতন একটা মেয়ে হয়েছে । '
নাসির জানে তাদের কোনদিন সন্তান হবে না। সমস্যা টা নাসিরের। নাসির ভার্সিটি তে গেলো। তার মনটা আজ খুব খারাপ।
গাড়িতে বসে আছে নাসির। হঠাৎ নাসির সামনে একটা জটলা দেখা দিলো। সে গাড়ি থেকে নেমে দেখলো। রাস্তায় যে পাগলী টা প্রতিদিন বসে থাকতো, সে মাঝে মাঝে খাবার কিনে দিতো। সে একটা ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছে। কিন্তুু মেয়ে জন্মের সময় পাগলী টা মারা গেছে। নাসির মেয়ে কে কোলে তুলে নিলো।
কলিংবেল বাজতেছে, নীতু দরজা খুলে দিতেই দেখলো, নাসিরের হাতে একটা বাচ্চা। নীতু জিজ্ঞেস করলো, এ কার বাচ্চা?
নাসির বললো কেন গতরাতে যে স্বপ্নে দেখেছেন ইনি তো সে। নীতু নাসিরের দিকে তাকিয়ে আছে। আজ সে কাঁদবে। নাসিরের বুকে মাথা রেখে সারারাত কাঁদবে।
' এই নীতু কী ভাবছো?
' না কিছু ভাবছি না। মেয়ে কে আমার কোলে দিবেনা, নাকী মেয়ে টা শুধু তোমার একার, মায়ের দায়িত্ব কী পালন করতে দিবেনা।'
নাসির হাসলো, নীতু ও হাসলো।
বিষয়: বিবিধ
১০০৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন