আল কোরআনে আপনার কথাও আছে শুধু খোঁজে বের করতে হবে......
লিখেছেন লিখেছেন আমি আল বদর বলছি ০৭ মে, ২০১৮, ১২:৫২:৪৪ রাত
আহনাফ বিন কায়েম নামক একজন আরব সর্দারের কথা বলছি ! তিনি ছিলেন একজন বীর যোদ্ধা ! তার সাহস ও শৌর্য ছিলো অপরিসীম! তার তলোয়ার ছিলোর লক্ষ যোদ্ধার জোর ইসলাম গ্রহণ করার পর আল্লাহর নবী (সা.)-কে দেখার সৌভাগ্য তার হয়নি, তবে নবীর বহু সাথীকেই তিনি দেখেছেন! এদের মধ্য হযরত আলীর(রা.) প্রতি তার শ্রদ্ধা ছিলো অপরিসীম!
.
একদিন তার সামনে এক ব্যক্তি কোরআনের এই আয়াতটি পড়লেন "আমি তোমাদের কাছে এমন এক কিতাব নাকি করেছি, যাতে তোমাদের কথা আছে অতচ তোমরা চিন্তা ভাবনা করো না!"( সূরা আল আম্বিয়া ১০ )
.
আহনাফ ছিলেন আরবি সাহিত্যে গভীর পারদর্শী ব্যক্তি। তিনি ভাল করেই বুঝতেন 'যাতে শুধু তোমাদের কথাই আছে' এই কথার অর্থ কি? তিনি অভিভূত হয়ে গেলেন, কেউ বুঝি তাঁকে আজ নতুন কছু
শোনালো! মনে মনে বললেন, 'আমাদের কথা' আছে, কই কুরআন নিয়ে আসো তো? দেখি এতে 'আমার কথা' কি আছে? তার সামনে কুরআন শরিফ আনা হোল, একে একে বিভিন্ন দল উপদলের পরিচিতি এতে পেশ করা হচ্ছে -
.
এক দল লোক এলো, তাদের পরিচয় এভাবে পেশ করা হোল যে,'তারা রাত্রির সামান্য অংশেই নিদ্রা যেত, রাতের শেষ প্রহরে তারা
ক্ষমাপ্রার্থনা করত, এবং তাদের ধন-সম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতের হক ছিল।' (সুরা আয যারিয়াত ১৭-১৯)
.
আবার একদল লোক এলো, যাদের সম্পর্কে বলা হলো,'তারা বিছানা থেকে তাদের পার্শ্ব ত্যাগ করে তাদের প্রভুকে ডাকতে ডাকতে ভয়ে ও আশায়, আর আমরা তাদের যা রিযেক দিয়েছি তা থেকে তারা খরচ করে। '(সুরা হামীম সাজদাহ ১৬)
কিছু দুর এগিয়ে যেতেই তার পরিচয় হল আরক হলো লোকের সাথে। তাদের সম্পর্কে বলে হলো, 'আর যারা রাত কাটিয়ে দেয় তাদের প্রভুর জন্য সিজদাবনত হয়ে ও দাঁড়িয়ে থেকে। ' ( সুরা আল ফুরকান ৬৪)
অতঃপর এলো আরেক দল মানুষ, এদের সম্পর্কে বলা হল, 'যারা খরচ করে সচ্ছল অবস্থায় ও অসচ্ছল অবস্থায়, আর যারা ক্রোধ সংবরণকারী, আর যারা লোকজনের প্রতি ক্ষমাশীল। আর আল্লাহ্ সৎকর্মীদের ভালোবাসেন,' (সুরা আলে ইমরান ১৩৪)
এলো আরেকটি দল, তাদের পরিচয় এভাবে পেশ করা হোল, '... আর তারা তাদের নিজেদের চেয়েও অগ্রাধিকার দেয় যদিও বা তারা স্বয়ং অভাবগ্রস্ত রয়েছে। আর যে কেউ তার অন্তরের কৃপণতা থেকে মুক্ত
রেখেছে তারাই তাহলে খোদ সফলকাম। ' (আল হাশর ৯ )
.
একে একে এদের সবার কথা ভাবছেন আহনাফ। এবার কুরআন তার সামনে আরেক দল লোকের কথা পেশ করলো, 'আর যারা এড়িয়ে চলে পাপাচারের বড়গুলো এবং অশ্লীল আচরণ, আর যারা যখন রেগে যায় তখন তারা ক্ষমা করে দেয়,আর যারা তাদের প্রভুর প্রতি সাড়া দেয়,
এবং নামায কায়েম করে, আর তাদের কাজকর্ম হয় নিজেদের মধ্যে পরামর্শক্রমে, আর আমরা তাদের যা রিযেক দিয়েছি তা থেকে তারা খরচ করে থাকে,' (আশ শুরা ৩৭-৩৮) হজরত আহনাফ নিজেকে ভাল করেই জানতেন। আল্লাহর কিতাবে
বর্ণিত লোকদের কথাবার্তা দেখে তিনি বললেন, হে আল্লাহ তায়ালা, আমি তো এই বইয়ের কোথাও 'আমাকে খুঁজে পেলামনা, আমার কথা কই?' আমার ছবি তো এর কোথায়ও আমি দেখলাম না, অথচ এ
কিতাবে আপনি নাকি সবার কথাই বলেছেন। এবার তিনি ভিন্ন পথ ধরে কুরআনে নিজের ছবি খুঁজতে শুরু করলেন। এ পথেও তার সাথে বিভিন্ন দল উপদলের সাক্ষাত হোল। প্রথমত, তিনি পেলেন এমন একটি দল, যাদের সম্পর্কে বলা হয়েছে,
'নিঃসন্দেহ যখন তাদের বলা হতো -- 'আল্লাহ্ ছাড়া অন্য উপাস্য নেই’,
তখন তারা হামবড়াই করত, আর তারা বলত -- ''কী! আমরা কি আমাদের
উপাস্যদের সত্যিই ত্যাগ করব একজন পাগলা কবির কারণে?’’ ' (সুরা আস সফফাত ৩৫ ৩৬ )
.
তিনি আরও সামনে এগুলেন দেখলেন আরেক দল লোক। তাদের সম্পর্কে বলা হচ্ছে, 'আর যখন আল্লাহ্র, তাঁর একত্বের উল্লেখ করা হয় তখন, যারা পরকালে বিশ্বাস করে না তাদের হৃদয় সংকূচিত হয়,
পক্ষান্তরে যখন তাঁকে বাদ দিয়ে অন্য যারা রয়েছে, তাদের উল্লেখ করা হয় তখন দেখো! তারা উল্লাস করে। '(সুরা আয যুমার ৪৫ ) তিনি আরও দেখলেন কতিপয় হতভাগ্য লোককে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে, ''কিসে তোমাদের নিয়ে এসেছে জ্বালাময় আগুনে?’’ তারা বলবে --''আমরা নামাযীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলাম না, ''আর আমরা অভাবগ্রস্তদের খাবার দিতে চাইতাম না; ''বরং আমরা বৃথা তর্ক করতাম বৃথা তর্ককারীদের সঙ্গে, ''আর আমরা বিচারের দিনকে মিথ্যা
বলতাম, -- '(আল মুদ্দাত্থির ৪২-৪৬ )
.
হযরত আহনাফ কুরআনে বর্ণিত বিভিন্ন ধরনের মানুষের বিভিন্ন চেহারা ছবি ও তাদের কথা দেখলেন। বিশেষ করে এই শেষোক্ত লোকদের অবস্থা দেখে মনে মনে বললেন, হে আল্লাহ, এ ধরনের লোকদের ওপর আমি তো ভয়ানক অসন্তুষ্ট। আমি এদের ব্যপারে তোমার আশ্রয়
চাই। এ ধরনের লোকদের সাথে আমার কোনই সম্পর্ক নেই। তিনি নিজেকে ভাল করেই চিনতেন, তিনি কোন অবস্থায়ই নিজেকে এই শেষের লোকদের দলে শামিল করতে পারছিলেননা। আবার প্রথম শ্রেণির কাতারেও শামিল করতে পারছিলেননা। তিনি জানতেন তাঁকে আল্লাহ ইমানের দৌলত দান করেছেন। তার স্থান যদিও প্রথম দিকের সম্মানিত লোকদের কাতারে নয় কিন্তু তাই বলে তার স্থান
মুসলিমদের বাইরেও তো নয়। তার মনে নিজের ইমানের যেমন দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, তেমনি নিজের গুনাহখাতার স্বীকৃতি সেখানে সমানভাবে মজুদ ছিলো। তিনি কুরআনের
পাতায় এমন একটি ছবির সন্ধান করছিলেন, যাকে তিনি একান্ত নিজের বলতে পারেন। তিনি নিজের নেক কাজগুলোর ব্যাপারে যেমন খুব বেশি অহংকারী ও আশাবাদী ছিলেন না , তেমনিভাবে আল্লাহর তায়ালার রহমত থেকেও তিনি নিরাশ ছিলেন না। কুরআনের পাতায় তিনি এমনি একটি ভাল মন্দ মেশান মানুষের ছবিই খুঁজছিলেন এবং তার একান্ত বিশ্বাস ছিলও এমনি একটি মানুষের ছবি অবশই টি এই জীবন্ত পুস্তকের কোথাও না কোথাও পেয়ে যাবেন। কুরআনের পাতা উল্টাতে উল্টাতে এক জায়গায় সত্যিই তিনি নিজেকে খুঁজে পেলেন - আর কোন কোন লোক রয়েছে যারা নিজেদের পাপ স্বীকার করেছে, তারা মিশ্রিত করেছে একটি নেককাজ ও অন্য একটি বদকাজ। শীঘ্রই আল্লাহ হয়ত তাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। নিঃসন্দেহে আল্লাহ ক্ষমাশীল করুণাময়। (আত তাওবাহ ১০২ )
।
তিনি আনন্দিত হয়ে বললেন, হ্যাঁ, এতক্ষণে আমি আমাকে উদ্ধার করেছি। আমি আমার অপরাধের কথা স্বীকার করি, আমি যা কিছু ভাল কাজ করি তাও আমি অস্বীকার করি না। এটা যে আল্লাহর একান্ত দয়া তাও আমি জানি। আমি আল্লাহর রহমত ও দ্য়া থেকে নিরাশ নই। কেননা এই কিতাবেই অন্যত্র বলছে "আল্লাহর রহমত থেকে
পথভ্রষ্টরা ছাড়া কে নিরাশ হয় ?"(আল হিজর ৫৬) তিনি নীরবে বলে উঠলেন হে মালিক তুমি মহান, তোমার কিতাব মহান সত্যই তোমার এই কিতাবে দুনিয়ার জ্ঞানই গুনই পাপই তাপী ছোট বড় ধনী গরিব সবার কথাই আছে। তোমার কিতাব সত্যই অনুপম।
.
(তাফসীরে ফি যিলালিল কোরআন থেকে নেওয়া
বিষয়: বিবিধ
১০৯৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
ইনশাআল্লাহ সামনে আরও লেখার ইচ্ছা রয়েছে যদি আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখেন, বারাকআল্লাহ ফি হায়াতি
মন্তব্য করতে লগইন করুন