এক অদ্ভুত অনুভব
লিখেছেন লিখেছেন আমি আল বদর বলছি ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০৩:০১:৩৮ দুপুর
রাতে আম্মুর হাতে রান্না করা খাবার খুব মজা করে
খেয়ে রাত ১০টাই ঘুমিয়ে গেলাম ।
সকাল গেলো ঘুম থেকে উঠলাম না। আরামে ঘুমাবো
বলে, আম্মু ডাকলো না। দুপুর হয়ে গেলো ঘুম থেকে
উঠলাম না । এবার আম্মু অনেক ডাকলো আমি
উঠলাম না। আম্মু চলে গেলো। একটু পর আবার
আসলো, আবার আসলো। এবার অনেক ডাকার পরেও
না উঠায়, আম্মু অনেক বকলো আমি তাও উঠলাম
না। এইবার আম্মু একটা থাপ্পড় দিলো, তাও
উঠলাম না। এবার আম্মু হাত ধরে টান দিলো কিন্তু
আমার হাত পুরো শরীর নিয়ে নড়ে উঠলো। শরীর
আমার পাথরের ন্যায় শক্ত হয়ে গেছে । আম্মু কিছু
না বলে চুপ করে রুম থেকে বেরিয়ে আব্বুকে ডেকে
নিয়ে আসলো। কিন্তু আব্বুও অনেক ডাকার পরও
আমি উঠলাম না। এইবার আব্বু চোখের জল ফেলে
বলছে, উঠে আয় তোকে আর কোন দিন কিছু বলবো
না। যেমন করে থাকতে চাস থাক, তাও উঠে আয়
তোকে আজকেই বাইক কিনে দিবো। আমি অবাক হয়ে
দেখছি আব্বু এতো করুণা করে কোনোদিন আমাকে
বলেনা অথচ আজ বলছে। আমি উঠে আসতে চাচ্ছি
কিন্তু কিছুতেই উঠতে পারছিনা। এদিকে আব্বু
নানান রকম লোভ দেখিয়ে বলছে উঠে আসতে । একটু
পর আমার বাড়িতে অনেক মানুষ চলে আসলো ।
ওদিকে আম্মু কাঁদছে কেউ আম্মুকে সান্ত্বনা দিচ্ছে
কেউবা আব্বুকে কেউ ভাই বোনকে নানান কথা বলে
বুঝাচ্ছে । একটু পরেই কয়েকজন এসে আমাকে খুব
যত্ন করে বিছানা থেকে নামিয়ে লোহার শক্ত
খাটিয়াই শুইয়ে দিলো। আমি কাঁদছি আর বলছি
আমার পিঠে খুব ব্যাথা লাগছে নামাও এখান থেকে।
কেউ আমার কথা শুনল না । একটু পর ঐ মানুষ
গুলো গরম পানি নিয়ে এসে আমার শরীরে কিছুটা
পানি ডেলে দিলো। ইস আমার শরীর পুড়ে গেলো বলে
চিৎকার করছি কেউ কথা শুনছে না আমার । আমাকে
পরম যত্নে গরম পানি দিয়ে খুব সুন্দর করে ডলে
ডলে ধুইছে। আমি কাঁদছি আর বলছি আমাকে আর
গরম পানি দিয়ো না, শরীর পুড়ে যাচ্ছে। আমায় আর
ডলা দিয়ো না, খুব ব্যাথা লাগছে কেউ শুনল না ।
অনেক সময় নিয়ে গোসল করিয়ে আমার শরীর
ভালো করে মুছে নিয়ে আসলো আমার বসার
জায়গাতে। আমি খুব খুশি হলাম ভাবলাম আমাকে
এইবার এখানে বসাবে । কিন্তু ওরা আমাকে না
বসিয়ে কাঠের শক্ত একটা খাটে শুইয়ে দিলো। একটা
চাদরও নিচে দিলনা। একটু পরে আব্বু, ভাই আরো
কয়জন মিলে আমাকে একটা সাদা কাপড় পড়ালো।
আব্বু অনেক আদর করে আমার মুখে হাত বুলাচ্ছে
আর কাঁদছে। এতো আদর কোনোদিন করেনি আব্বু
আমাকে। অনেকে বলছে আমাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে,
তার পরেও আম্মু আব্বু খুব কাঁদছে। কিছুতেই
কান্না থামাচ্ছে না। আমি এতো করে বলছি কেঁদো
না আম্মু কিন্তু কিছুতেই শুনছে না আমার কথা ।
একটু পর কয়েক জন এসে আমার পা আর মাথাটা
বেঁধে দিলো কত বললাম একটু খুলে দাও বাঁধন, কেউ
শুনল না। আব্বুকে সরিয়ে দিয়ে আমাকে নিয়ে যেতে
লাগলো। আম্মু কিছুতেই নিতে দিচ্ছে না আমাকে।
ভাই বোন সব চুপ হয়ে কাঁদছে আর কিছু বলছে না।
কত করে বলছি ডিস্টার্ব করিস না আমাকে,
একজনও শুনলো না, কেদেই চলেছে। একটু বেশি
ঘুমালে আব্বু বকা দিতো কিন্তু এখন আব্বু চুপ
করে দাড়িয়ে চোখের পানি মুছতেছে, একটা বকাও
দিলো না আমাকে। আম্মুকে জোর করে সরিয়ে দিয়ে
কয়েক জন আমাকে নিয়ে অনেক মানুষের সামনে
শুইয়ে দিলো একটা ছায়ায়। তার পরেই জানাজা
পড়লো আমার। জানাজা শেষেই নিয়ে গেলো আমায়।
একটু দূরেই একটা মাটির গর্ত করে রাখছে। আব্বু
আর ভাই, ২ জন মিলে মাটির গর্তে নেমে আমাকে
কোলে তুলে নিয়ে ঐ ছোট মাটির গর্তে শুইয়ে দিলো।
একটা বালিশ, চাঁদর কিছু দিলো না। একটা লাইটও
দিলো না। আমার পা আর মাথার কাছের বাঁধন গুলো
খুলে দিয়ে আমার উপর খুব তাড়াহুড়া করে কিছু কাচা
বাঁশ দিয়ে ঢেকে দিলো। তার উপর আরো কি কি
দিলো আমি কিছুই দ্যাখতে পাচ্ছি না। যতই সময়
যাচ্ছে মাটির গর্তটা অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে। আমি
চিৎকার করছি আর বলছি এখান থেকে আমাকে বের
করো, আমার খুব ভয় করছে। কিছু দ্যাখতে পাচ্ছি
না। একটু পরেই আমার উপর মাটি চাপা দিয়ে সবাই
চলে যাচ্ছে, আমি ডাকছি আর বলছি আমাকে একা
রেখে যেওনা। না, কেউ শুনল না। স্বার্থপরের মত
সবাই চলে গেলো । একটু পরেই আমাকে কি যেন খুব
চেপে ধরছে। একটু নড়তে পারছি না। সারারাত
আমাকে খুব কষ্ট দিলো যা আমার সহ্যের সীমার
বাহিরে। পরদিন সকাল ৫টায় আম্মু এসে আমার
কবরের পাশে বসে কাঁদছে। কিছুক্ষণ পর ভাই বোন
আব্বুও আসলো। কিছুক্ষণ কেঁদে চলে গেলো। শুধু
আম্মু থেকে গেলো। সারাদিন আম্মু বসে কান্না
করলো। একসময় চাচা চাচি আম্মুকে ধরে নিয়ে
গেলো।
এভাবে কয়েক দিন অতিবাহিত হলো আস্তে আস্তে।
ভাই-বোনগুলো আর আসেনা আমাকে দেখতে। যারা
এক সময় সকাল বিকাল আমাকে জ্বালাত।
আরো কিছুদিন গেলো এখন আর আব্বুও আসেনা
আমাকে দেখতে ।
আরো কিছুদিন যাওয়ার পর আম্মুও আর আসেনা,
আমাকে দেখতে । দূর থেকে আমি চিৎকার করে ডাকি,
আম্মু আমাকে বাঁচাও, আমি খুব কষ্ট পাচ্ছি ।
আম্মু একটু ফিরেও তাকালো না আমার দিকে । কত
ডাকলাম ভাই বোনদের, আমাকে একটু পানি দে।
একটুও শুনেনা আমার কথা।
বিষয়: বিবিধ
৮৯৫ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন