গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জামায়াতে ইসলামী
লিখেছেন লিখেছেন আমি আল বদর বলছি ২৮ আগস্ট, ২০১৬, ০১:৫৪:৩৯ দুপুর
বাংলাদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে জড়িয়ে
আছে জামায়াতে ইসলামীর নাম। দেশের পক্ষে
জনগনের পক্ষে ভূমিকা পালনে সব সময় সবার আগে থাকে জামায়াতে
ইসলামী। অংশ নিয়েছে জাতীয় সংসদ
থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায়ের প্রতিটি নির্বাচনে। জনগনের পক্ষে
কথা বলেছে প্রতিটি জাতীয় সংসদে। তাই এ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের দেশ ও জনগণের পক্ষে ভূমিকা পালন
করতে গিয়ে নানা জুলুম নিপীড়ণের শিকার হতে
হচ্ছে প্রতিনিয়তই। অকাতরে জীবন বিলিয়ে দিতে হচ্ছে জামায়াতে
ইসলামীর নেতাকর্মীদের। পঙ্গুত্ব বরণ করেছে
জামায়াতের অগনিত নেতাকর্মী। শত জুলুম নির্যাতনের মধ্যেও
গণমানুষের এই আন্দোলন কখনই থেমে থাকবে না। স্বাধীনতা উত্তরকালে হত্যা করা হয় বহুদলীয় গণতন্ত্র। এর আগে
থেকেই নিষিদ্ধ ছিল ইসলামের কথা বলে
রাজনীতি করার অধিকার। একদলীয় শাসন ব্যবস্থা বিলুপ্তি ১৯৭৮ সালের ১৫ ই ডিসেম্বর রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এক ফরমান
জারি করে একদলীয় ব্যবস্থার বাতিল করে
বহুদলীয় ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন। এর আগে ১৯৭৬ সালের ৩রা মে
রাষ্ট্রপতির জারিকৃত একটি অধ্যাদেশের
মাধ্যমে বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৮ নম্বর ও অনুচ্ছেদটি বাতিল
করে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির উপর আরোপিত বিধি নিষেধ তুলে নেয়া হয়। ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ গঠন ১৯৭৭ সালের ৩০ মে গণভোটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর
রহমানের গৃহিত পদক্ষেপগুলো অনুমোদিত হওয়ায়
ইসলামের নামে রাজ‣নতিক দল গঠন করার পথে আর কোন বাধা
রইলো না।
১৯৭৬ সালের ২৪ আগষ্ট ডেমোক্রেটিক পার্টি, নেযামে ইসলাম
পার্টি, খেলাফতে রব্বনী পার্টি এবং জামায়াতে ইসলামীর নেতৃবৃন্দ ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ (IDL) নামে একটি
রাজ‣নতিক প্ল্যাটফরম গড়ে তোলেন।
মাওলানা ছিদ্দিক আহমদকে (নেযামে ইসলাম পার্টি) চেয়ারম্যান,
মাওলানা আবদুর রহীম (জামায়াতে ইসলামী),
মাওলানা আবদুস সুবহান (জামায়াতে ইসলামী), এডভোকেট সা’দ
আহমদকে (জামায়াতে ইসলামী) ভাইস চেয়ারম্যান এবং এডভোকেট শফিকুর রহমানকে (ডেমোক্রেটিক
লীগ) সেক্রেটারি জেনারেল করে এর কেন্দ্রীয়
কমিটি গঠন করা হয়। ১৯৭৩ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ দল
অংশ গ্রহন করে। ২য় জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় ২য় জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
এই নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল
২০৭টি, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ৩৯টি এবং মুসলিম লীগ ১৪টি আসনে
বিজয়ী হয়।
ইসলামিক ডেমোক্রেটি লীগ থেকে মনোনীত জামায়াতে ইসলামীর
৬জন সদস্য জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে জামায়াতে ইসলামীর এটাই প্রথম
উপস্থিতি। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ ১৯৭৯ সালের ২৫,২৬ ও ২৭ মে ঢাকাস্থ ইডেন হোটেল প্রাঙ্গনে
একটি কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়। বিশিষ্ট ইসলামী
চিন্তাবিদ আব্বাস আলী খানের আহ্বানে এই কনভেনশনে উপস্থিত হন
সারা বাংলাদেশ থেকে আগত ৪৫০ জন
সদস্য। এই সম্মেলনে একটি নতুন গঠনতন্ত্র অনুমোদিত হয়। সেই
গঠনতন্ত্রের ভিত্তিতে ১৯৭৯ সালের ২৭ মে থেকে চারদফা পূর্নাঙ্গ কর্মসূচি নিয়ে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ
এর কর্মতৎপরতা শুরু করে। কেয়ারটেকার সরকারের রূপরেখা প্রণয়ন ১৯৮০ সালের মাঝামাঝি আমীরে জামায়াত অধ্যাপক গোলাম আযম
সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য কেয়ারটেকার সরকার
সংক্রান্ত একটি রূপরেখা জামায়াতের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের
অধিবেশনে পেশ করেন। ১৯৮০ সালের ৭ ডিসেম্বর
জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্বাস আলী খান রমনা
গ্রীনে আহুত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই রূপরেখা প্রকাশ করেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে যুগপৎ আন্দোলন আওয়ামীলীগ নেতৃত্বাধীন ১৫ দলীয় জোট এবং বিএনপির নেতৃত্বাধীন
৭ দলীয় জোট কিছু কিছু যুগপৎ কর্মসূচি
দিতে থাকে। ১৯৮৩ সালের ২৮ নভেম্বর ১৫ দলীয় জোট ও ৭ দলীয়
জোট সচিবায়ল ঘেরাও কর্মসূচি দেয়। এ
কর্মসূচিতে জনগনের তেমন সাড়া পাওয়া যায়নি। ‣স্বরাচারী এরশাদ
সরকার তার শাসন আরো দৃঢ় করে। বন্ধ করে দেয় রাজ‣নতিক তৎপরতা। এই সময় জামায়াতে ইসলামীর
লিয়াজো কমিটি দুই নেত্রীসহ অন্যান্য
নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করে অগনতান্ত্রিক পদ্ধতি অনুসরন
করে গনতন্ত্রে উত্তরণ সম্ভব নয় বলে জামায়াতে
ইসলামীর দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে। এই বক্তব্যের প্রতি তারা ইতিবাচব
মনোভঙ্গি ব্যক্ত করেন। তখন থেকে ১৫ দলীয় জোট ও ৭ দলীয় জোটের সাথে জামায়াতে ইসলামীর লিয়াজো
কমিটির ক্সবঠক অনুষ্ঠিত হতে থাকে। ১৯৮৩
সালের ১১ ডিসেম্বর প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হুসেইন মুহাম্মদ
এরশাদ বিচারপতি আহসান উদ্দীন চে․ধুরীকে
সরিয়ে নিজেই রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব গ্রহন করেন। তৃতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৮৬ সালের ৭ই মে জাতীয় সংসদের তৃতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
নিজ নামে জামায়াতে ইসলামীর এটাই ছিলে
জাতীয় সংসদে প্রথম নির্বাচনে অংশ গ্রহন। জামায়াতে ইসলামী
৭৬টি আসনে নমিনী দিয়েছিল। এই নির্বাচনে
ব্যাপক কারচুপি হয়। এরশাদের জাতীয় পার্টি ১৫৮টি, আওয়ামীলীগ
৯৬টি, জামায়াতে ইসলামী ১০টি, জাসদ ৪টি, অন্যান্য দল ১০টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ২২টি আসনে বিজয়ী
হয়।
বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে জামায়াতে ইসলামীর এটা দ্বিতীয়
উপস্থিতি। সংসদ থেকে পদত্যাগ ১৯৮৭ সালে রাষ্ট্রপতি এরশাদের বিরুদ্ধে যুগপৎ আন্দোলন গড়েে
ওঠে। ১৯৮৭ সালের ৩ ডিসেম্বর জামায়াতে
ইসলামীর ১০জন সংসদ সদস্য স্পিকার শামসুল হুদা চে․ধুরীর নিকট
গিয়ে পদত্যাগ পত্র পেশ করেন।
আওয়ামীলীগ সদস্যগনও পদত্যাগ করবেন বলে জানান। কিন্তু তাদের
নেত্রী বিদেশে থাকায় তাদের সিদ্ধান্ত নিতে দেরী হচ্ছিল। ঠিক এই অবস্থায় ৬ ডিসেম্বর এরশাদ জাতীয় সংসদ
ভেঙ্গে দেন। এতে আওয়ামী লীগহ বেশ
বেকায়দায় পড়ে। ৪র্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৮৮ সালের ৩রা মার্চ চতুর্থ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
আন্দোলনরত দলগুলো এ নির্বাচন বর্জন
করে। যুগপৎ আন্দোলন ১৯৮৯ সালের অক্টোবর মাসে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন ৮ দলীয়
জোট, বিএনপির নেতৃত্বাধীন ৭ দলীয় জোট ,
বামদের ৫ দলীয় জোট এবং জামায়াতে ইসলামী কেয়ারটেকার
সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদের নির্বাচনের
দাবীতে আন্দোলন পরিচালনা করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। এর ফলে
চাঙ্গা হয়ে উঠে এরশাদ বিরোধী আন্দোলন। অনেক বিলম্বে হলেও জামায়াতে ইসলামীর কেয়ারটেকার সরকারের
দাবী জাতীয় দাবীতে পরিণত হয়। ১৯৯০
সালের ১৯ নভেম্বের পৃথক পৃথক সমাবেশ থেকে ৮ দলীয় জােট, ৭
দলীয় জোট, ৫ দলীয় জোট এবং জামায়াতে
ইসলামী কেয়ারটেকার সরকারের রূপরেখা প্রকাশ করে। ১৯৯০ সালের
২৭ নভেম্বর দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা হয়। জারি করা হয় কারফিউ। ছাত্র-জনতা কারফিউ ভেঙ্গে
মিছিল করতে থাকে। আন্দোলনের
ধারাবাহিকতায় ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর ক্সস্বরাচারী এরশাদ
পদত্যাগ করেন।
গঠিত হয় প্রধান বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে দেশের
প্রথম কেয়ারটেকার সরকার। পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচন ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ৫ম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
নির্বাচনে বিএনপি ১৪০টি, আওয়ামীলীগ
৮৬টি, জাতীয় পার্টি (এরশাদ) ৩৫টি, জামায়াতে ইসলামী ১৮টি,
অন্যান্যরা ১৯টি আসনে বিজয়ী হয়। এই
নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী ২২২ জন প্রার্থী দিয়েছিল। ১৮জন
বিজয়ী হয়। বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে জামায়াতে ইসলামীর এটা তৃতীয় উপস্থিতি।
......
চলবে
বিষয়: রাজনীতি
৮৬৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন