ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের দৈনন্দিন জীবনে সময় ব্যবস্থাপনা গুরুত্ব ও কৌশল (১)
লিখেছেন লিখেছেন আমি আল বদর বলছি ১৬ আগস্ট, ২০১৬, ০৫:০৯:৫১ বিকাল
দ্বীনকে জীবনের উদ্দেশ্য হিসেবে গ্রহণ করেই ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা পথ চলে। দ্বীন বিজয়ের মধ্যেই তাদের জীবনের সাফল্য নিহিত। এ বিজয়ের জন্য আন্দোলনের কর্মী হিসেবে নিজেদেরকে গড়ে তোলার সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানোর মধ্যেই আল্লাহর সন্তুষ্টি নিহিত রয়েছে বলে তাঁরা বিশ্বাস করে। কারণ, ঈমানদাররা তাদের জান ও মালকে আল্লাহর পক্ষ থেকে নিজেদের কাছে রক্ষিত আমানত হিসেবেই জানে। এ জান ও মালকে আল্লাহর সন্তুষ্টির কাজে ব্যয় করার জন্য এগুলোর সর্বোচ্চ উৎকর্ষ সাধন করা এবং প্রতি মুহূর্তে সে সময় পর্যন্ত উৎকর্ষিত যোগ্যতাকে কাজে লাগানোর প্রচেষ্টা চালানোই তাদের দায়িত্ব। আল্লাহপ্রদত্ত ও রাসূল সা: প্রদর্শিত বিধান অনুযায়ী এ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে চলতে থাকা দ্বীনের কর্মীরা তাই আল্লাহর সব নেয়ামতের সর্বোচ্চ সুন্দর ব্যবহার নিশ্চিত করতে চায়। আর সদা গতিশীল জীবনের জন্য সুনির্ধারিত সময় সেসব নেয়ামতের মধ্যে অন্যতম। এ সময়ের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার তাই তাদের কাছে আমানত হিসাবেই গণ্য। জীবনে যে ক’টি মুহূর্ত পাওয়া যাচ্ছে, তাকেই পরীক্ষার জন্য ইফেক্টিভলি কাজে লাগানোর কাজে সদা ব্যস্ত কর্মীদের উদ্দেশ্যেই এই লেখা। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবাইকে সময়ের সদ্ব্যবহার করে জীবনটাকে আল্লাহর রঙে রঙিন করে গড়ে তোলার তৌফিক দেবেন, সেই প্রত্যাশাই আমাদের সকলের।
,
আলোচনার শিরোনামের মৌলিক টার্মিনোলজিসমূহ প্রথমেই বিশ্লেষণ করে নিতে চাই।
১. ইসলামী আন্দোলনের কর্মী - যারা তাদের জীবনটাকে আল্লাহর জন্য নিবেদিত করে দিয়েছেন।
২. ব্যবহারিক/দৈনন্দিন জীবন - নিয়মিত জীবন তথা প্রতিদিনের জীবন, সাপ্তাহিক, মাসিক, বার্ষিক, গোটা জীবন।
৩. ‘সুষ্ঠু পরিচালনা’ - যেভাবে জীবন পরিচালনা করলে জীবন সার্থক ও সাফল্যমন্ডিত হয়ে উঠবে।
৪. ‘সময় ব্যবস্থাপনা’ - সময়কে ইফেকটিভলি কাজে লাগানোর পদ্ধতি।
আমাদের ব্যবহারিক জীবন তথা জীবন কিভাবে পরিচালনা করা হবে? সেটা জানার আগে, আমাদের জীবন পরিচালনার টার্গেট কী- এটা আগে জানতে হবে। কারণ উদ্দেশ্যের ওপরই নির্ভর করে কাজের সার্থকতা কাজ বা নিরর্থকতা। যেমন- একজন ক্রিকেটার দীর্ঘক্ষণ ধরে ক্রিকেট প্র্যাকটিস করলে তার সময় কাজে লাগল হিসাবে ধরা হয়। কিন্তু ফুটবলার তার ফুটবল খেলা প্র্যাকটিস না করে শুধু ক্রিকেট প্র্যাকটিস করতে থাকলে তার সময় অপচয় হয়েছে বলে ধরা হয়। মানুষের জীবন পরিচালনার মৌলিক উদ্দেশ্য কী? ১. শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদত করা। আল্লাহ তায়ালা মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্যের ব্যাপারে কুরআনে উল্লেখ করেছেন, “ওয়ামা খালাকতুল জিন্না ওয়াল ইনসা ইল্লা লিয়া’বুদুন।”
২. আল্লাহর খেলাফতের দায়িত্ব পালন করা। আল্লাহ বলেন, “ইন্নি জায়িলুন ফিল আরদ্বি খালিফাহ।” খেলাফতের দায়িত্ব পালনের জন্য মৃত্যুর আগ পর্যন্ত নির্ধারিত সময় পাওয়া যাবে। এই সময়টুকুতে যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন করেছি কি না, সেটার প্রেক্ষিতেই বিচার হবে পরকালে।
৩. আমাদের টার্গেট হচ্ছে দ্বীনকে বিজয়ী করা। আল্লাহ বলেন, “হুওয়াল্লাযি আরসালা রাসূলাহু বিল হুদা ওয়া দীনিল হাক্কি লিইউজহিরাহূ আলাদ্বীনি কুল্লিহি ওয়ালাও কারিহাল মুশরিকিন।” রাসূল সা:-এর উম্মত হিসাবে রাসূল সা: এর রেখে যাওয়া এ কাজ আমাদেরকেও করতে হবে।
৪. ঈমানদার হিসেবে আমরা আমাদের জান-মাল সবকিছু বিক্রি করে দিয়েছি আল্লাহর কাছে। তাই, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য জান- মাল তথা সকল কিছু ব্যয় করতে হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, “ইন্নাল্লহাশতারা মিনাল মু’মিনিনা আনফুসাহুম ওয়া আমওয়ালাহুম বিয়ান্না লাহুমুল জান্নাহ।”
৫. দ্বীন বিজয়ের কার্যক্রম আমাদেরকে সে পদ্ধতিতেই করতে হবে, যে পদ্ধতিতে রাসূলুল্লাহ সা: করে গেছেন। তাঁর পদ্ধতি ও দর্শন মেনেই আমাদেরকে এ কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। সামগ্রিকভাবে সে কার্যক্রমের নামই হচ্ছে ইসলামী আন্দোলন বা জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ। - ইসলামী আন্দোলনের সংজ্ঞা: আল্লাহর জমিনে আল্লাহর দ্বীনকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার জন্য কুরআন সুন্নাহ মোতাবেক সংঘবদ্ধভাবে সুনির্ধারিত প্রক্রিয়ায় প্রচেষ্টা চালানোর নাম হচ্ছে ইসলামী আন্দোলন। - ইসলামী সংগঠন : যে সংগঠন ইসলামী আন্দোলন পরিচালনা করে তাকেই ইসলামী সংগঠন বলে।
৬. অতএব আমাদের জীবন পরিচালনার লক্ষ্য হচ্ছে দ্বীন বিজয়ের প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে আল্লাহর সন্তোষ অর্জন।
৭. এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য নিজেদেরকে সংগঠনের অধীনে এনে আমরা একতাবদ্ধ করেছি। অর্থাৎ আমরা ইসলামী আন্দোলন পরিচালনার জন্য ইসলামী সংগঠনে এসে যুক্ত হয়েছি। এ সংগঠনের পক্ষ থেকে আমাদের জন্য নির্ধারিত দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়েই গোটা সংগঠনের উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য আমাদের
কাজ করা হয়ে থাকে।
৮. সংগঠনের লক্ষ্য উদ্দেশ্য হতে আমরা আমাদের কাজ খুঁজে পেতে পারি-
“আল্লাহ প্রদত্ত ও রাসূল সা: প্রদর্শিত বিধান অনুযায়ী মানুষের সার্বিক জীবনের পুনর্বিন্যাস সাধন করে আল্লাহর সন্তোষ অর্জন।”
সংক্ষেপে বললে, আমরা প্রকৃতপক্ষে ইসলাম অনুসারে মানুষের জীবনকে ঢেলে সাজানোর মধ্য দিয়ে আল্লাহকে খুশি করতে চাই। এখানে ‘মানুষ’ বলতে ব্যক্তি মানুষ থেকে শুরু করে ব্যক্তির সমষ্টি পরিবার, পরিবারের সমষ্টি সমাজ, সমাজের সমষ্টি রাষ্ট্র, রাষ্ট্রের সমষ্টি গোটা মানব সভ্যতাকে বোঝায়। এই গোটা মানবসভ্যতাকে আমরা ইসলাম অনুসারে ঢেলে সাজাতে পারলে গোটা পৃথিবীই সুন্দরভাবে পরিচালিত হবে। সার্বিক জীবনের পুনর্বিন্যাস সাধন > আল্লাহর রঙে জীবনকে রাঙানো > প্রত্যেককে দ্বীন বিজয়ের দক্ষ কারিগর রূপে গড়ে ওঠা।
............চলবে
বিষয়: বিবিধ
১০৯৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন