আমাদের সেক্যুলার মিডিয়া এবং বুদ্ধিজীবীদের ইসলামোফোবিয়া
লিখেছেন লিখেছেন আবু আঈশার ব্লগ ১৪ জুলাই, ২০১৬, ০৩:৩৫:৩৩ দুপুর
ঈদের ছুটিতে যখন গুলশানের ঘটনার খবর পেলাম ঘুমোতে যাওয়ার আগে, খুব মন খারাপ হয়েছিল। এর কিছুক্ষন আগেই মসজিদে একদল টিনএজ ছেলেপিলেকে ইসলামের ব্যাপারে উপদেশ দিয়ে আসলাম। উপদেশের বেশির ভাগ অংশ জুড়েই ছিল ইন্টারনেট ভিত্তিক জীবন থেকে দূরে থাকা এবং নিজেদেরকে ইসলামী সমাজ বা কমিউনিটি থেকে দূরে সরিয়ে না নেওয়ার কথা । আরো বলছিলাম কোনো কনফিউশানে যেন বড়দের সাথে আগে আলোচনা করে নেয়; সবচেয়ে বড় কথা ছিল সবাই যেন আন্তর্জাতিক ভাবে গ্রহণযোগ্য দারুস-সালাম পাব্লিকেশনের "History of Islam" (লেখক শফিউর রহমান মুবারকপুরী যিনি " আর-রাহীকুল মাখতুম " এর ও লেখক এবং এটি একটি পুরস্কারপ্রাপ্ত সীরাহগ্রন্থ) বইটি পড়ে। এটিতে রাসূল (সা এর জীবন থেকে একেবারে মোঙ্গলদের শাসন পর্যন্ত ইতিহাস এবং বিভিন্ন ক্রান্তিলগ্নে মুসলিমরা কি করেছিল তা আছে। এতে করে বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আমাদের কি করণীয় হতে পারে তা আমরা আমাদের পূর্বসূরিদের নিকট থেকেই জানতে পারি। গুলশানের ঘটনার চরম ভয়াবহতা একদম সকালে উঠে মৃতের সংখ্যা আর তাদের হত্যার ধরণ দেখে টের পেলাম। যাই হোক; ঘটনার ভয়াবহতার কারণেই আশায় বুক বাধলাম এইবার আর দোষারোপের রাজনীতি কেউ করবেনা। এই ঘটনার পর যদি আমরা ঐক্যে না আস্তে পারি তবে আমাদের বিপদ খুবই সন্নিকটে। রাজনীতিকরাও এর থেকে বাদ যাবেন না।
কিন্তু একদিন না যেতেই দেখি হঠাৎ peace tv কে দোষ দিয়ে এক আকাশ কুসুম খবর ছাপানো হলো। আর সাথে সাথেই যারা কেবল শুনেই সমালোচনা করতে অভ্যস্ত এবং ইসলাম কে একটি বর্বর ধর্ম মনে করে- তারা সব আদা জল খেয়ে লেগে গেলো। প্রথম যারা এই খবর চাপিয়েছিলো , তারা ডা: জাকির নায়েকের আত্মপক্ষ সমর্থনের পর তা সরিয়ে নিলেও অন্য মিডিয়াগুলো একে পুঁজি করেই মিথ্যাচার চালাতে লাগলো। এই কথাগুলো সবারই জানা। আমার যেটা দুঃখ, তা হলো- সেক্যুলার মিডিয়া এবং বুদ্ধিজীবীরা ইসলামের যেই জিনিসগুলোকে নিয়ে ভয় পায় , তার বেশির ভাগই এই উপমহাদেশের মুসলিম নামধারী কিছু বিপথগামীদের আবিষ্কার। উদাহরণ হিসাবে হিল্লা বিয়ে , মেয়েদের সম্পদের উত্তরাধিকার না দেয়া, মেয়েদের অমতে বিয়ে দেয়া, স্ত্রী নির্যাতন কে দ্বীনদারী মনে করা, মেয়েসন্তানকে বোঝা মনে করা, নিষ্পাপ মানুষ হত্যা করা। peace tv এর কারণেই এই জিনিসগুলো একে একে দূর হচ্ছিলো। যে কেওই কয়েকটি অনুষ্ঠান দেখলেই তা টের পাবেন। অথচ যেসব মুসলিম নামধারী লোকেরা সরকারকে তেল দিয়ে peace tv বন্ধ করে ফায়দা লুটতে চাচ্ছে, তারা সবাই উপরের উল্লেখ করা কোনো না কোন ভুলধারণা লালনকারী। এরা peace tv এর কারণে মাজার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়াতে খুব ব্যথিত ছিল। তারই পথ এরা আরো পরিষ্কার করে নিলো। অথচ দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে peace tv এবং তাতে অংশ গ্রহণকারী আলেমরাই সরকারের সব চেয়ে বড় সাহায্যকারী হতে পারতেন।
আর যদি ভেবে নেই, সেক্যুলার মিডিয়া এবং বুদ্ধিজীবীরা জেনে বুঝেই এগুলো করছেন, তাহলে বলতে হবে তারা চাননা সঠিক ইসলামেরে ধারণা সবার কাছে পৌঁছে যাক। বরং ভুল ধারণা গুলো প্রতিষ্ঠিত থাকুক এবং উচ্চ শিক্ষিত জনগোষ্ঠী ইসলামকে ভুল বুঝে একে ত্যাগ করুক। আর গরিবরা দিবে মাজারে ধন্না। এতে করে তাদের স্বপ্নের সমাজ প্রতিষ্ঠা হবে যেখানে থাকবে সমকামিতা, যেকোনো সম্পর্কে যৌনতা, পরকীয়া, বাবা-মাকে বৃদ্ধ বয়সে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসা, টিনএজ বয়সে যৌন সম্পর্কের ফসল অবৈধ ক্লিনিকে গিয়ে নষ্ট করা এবং আরো অনেক কিছু। গুলশান ঘটনার প্রতিটা ছেলে খুব একা ছিল এবং এর পিছনেও আধুনিক জীবন ব্যবস্থা যা পিতামাতাকে কেবল ক্যারিয়ার নিয়ে চিন্তা করতে শিখায়; সন্তানের লালনপালনে নয়। তারপরো সেক্যুলার মিডিয়া এবং বুদ্ধিজীবীরা পুরো জিনিসটাকে peace tv এর ঘাড়ে চাপালো। কয়েকজন আবার বলছে এখন নাকি মুভি দেখে কাটানোর দিন, এখন ইসলামের লেকচার শুনলে তো জঙ্গি হবেই। আশ্চর্য্য! একবারও মনে এলোনা এসব ভায়োলেন্স তারা মুভি দেখে শিখেছে। এরপর ইন্টারনেটে কারো কাছে মগজ ধোলাই হয়ে নেমে পড়েছে নিজেদের হতাশা ঝাড়তে। এরপর একজন বলছে খুৎবা ঠিক করা চাই; যেন সমাজ-মোতাবেক কোন ইমাম চাইলেও ভালো কোনো উপদেশ দিতে না পারেন। যেই কিচ্ছা কাহিনীর খুৎবা শুনে লোকেরা বিরক্ত হয়েছে- তার এখন রাষ্ট্রীয় রূপ চায় এরা। এরকম একটা ক্রান্তিলগ্নে ইসলাম কে টার্গেট না করে সহচর হিসাবে নিলেই এই দুর্গম পথ সহজ হতো। আল্লাহ তা'আলা সবাইকে সঠিক উপলব্ধি দান করুন।
বিষয়: বিবিধ
৯২১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন