আমাদের সন্তানদের maturity এবং আমাদের করণীয়
লিখেছেন লিখেছেন আবু আঈশার ব্লগ ১২ জুলাই, ২০১৬, ১০:২৬:১৪ সকাল
আসসালামু আলাইকুম ,
কিছুক্ষণ আগে ঘর থেকে বেরিয়েছিলাম কিছু বাজারের জন্য। আসার পথে দেখলাম একটা ৮-৯ বছরের ছেলে তার বাবার হাত ধরে স্কুলে যাচ্ছে। বাচ্চাটা প্রয়োজনের অতিরিক্ত মোটা ( ইংরেজি তে যাকে আমরা obese বলি, সঠিক বাংলা টা এই মুহুর্তে ঠিক মনে পরছেনা) এবং তার ব্যাগটা বাবার হাতে। একটা লেকচারে শোনা উদাহরণের real time মঞ্চায়ন দেখলাম বাস্তব জীবনে। সাথে কিছু লিখার স্পৃহা পেলাম। এই লিখার শুরুটা হয়ত শেষের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হতে পারে। এই জন্য ক্ষমা চাচ্ছি।
আমাদের দেশের একটা খুব প্রচলিত দৃশ্য বলি- এস. এস. সি বা এইচ. এস. সি পরীক্ষার হলগুলোর সামনে সাধারণত দেখা যায় গৃহিনী মা ডাব হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছেন আর ছেলে পরীক্ষা দিয়ে বের হবার পর তাকে সাধছেন ডাবটা। কিন্তু ছেলের মুখে রাজ্যের বিরক্তি আর মার সাথে যাচ্ছেতাই ব্যবহার। বোরখা পরা গৃহিনী মাকে পাত্তা দেবার কোনো যোক্তিকতা এই শিক্ষা ব্যবস্থা তাকে দেয়নি। কিন্তু মার মন- কি করা! ছেলে বলে কথা! এই ছেলেই যখন আরো বড় হবার পর একের পর এক আল্লাহ বিরোধী কাজে লিপ্ত হয় তখন ভালবাসার খাতিরে মায়ের মুখ থেকে একটা শব্দ ও সরেনা। বাচ্চাদের ঠিক মত আল্লাহর দ্বীনে বড় করার চিন্তাই আমাদের আর থাকেনা। বড়জোর কিছু বাহ্যিক রীতিনীতি। বরং জুমার নামাজের ঠিক আগে বা পরে কায়দা করে schedule করা রাজউক স্কুল এর ভর্তি পরীক্ষাতে ছেলে মেয়েদের নিয়ে দাড়িওয়ালা আর বোরখা পরা বাবা মারা যখন জুমার নামাজের থোরাই care করে দাড়িয়ে থাকেন; তখন মনে হয় খুব কম লোকই এখন সন্তানদের আল্লাহর এই পবিত্র দ্বীনে বড় করতে চান। পরে যখন হালকা উপলব্ধি হয়, তখন বোরখা পরিহিত মেয়ে কে নিয়ে বেরিয়ে এসে সংবাদপত্রের খবরের খোরাক হন অথবা দুনিয়ার জন্য সামান্য compromise করেন আর রাজউক স্কুল এর অধ্যক্ষও বুঝেন এই সব পাতলা মুসলিম কে সামান্য টাইট দিলেই সব ছেড়ে দেবে।
আমি মূল বিষয় থেকে সরে আসছি। মূল কথাতে ফিরে যাওয়া যাক। প্রথমের ঘটনাটি বলার কারণ হলো আমরা প্রায়ই আমাদের সন্তানদের maturity নিয়ে কথা বলি. আমাদের ঘরে অশ্লীলতার পথ বন্ধের সব চেয়ে বড় যে উপায় তা হলো সন্তানদের উপযুক্ত সময়ে বিয়ের ব্যবস্থা করা। কিন্তু ফাস্ট ফুড খাওয়া, মা বাবার কাধে ব্যাগ চাপিয়ে স্কুলে যাওয়া আর সীমাহীন প্রশ্রয়ে বড় হওয়া আমাদের এই সন্তানদের maturity ২৫ এও আসেনা ( ছেলেদের বেলাতে ৩০ বা আরো বেশি)। তাই আমরা অবলীলায় ওই বয়স পর্যন্ত আমাদের সন্তানদের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ ব্যাভিচারের ব্যাপারে অন্ধ হওয়ার ভান করে থাকি। ভালবাসার শিরকে নিপতিত পিতামাতার খুব বেশি কিছু বলার থাকেনা। এসব কিছুই হয়ত সবাই ভাববে আমাদের সেসব মুসলিম ভাইদের জন্য যারা আমাদের মত দ্বীনের পথের সন্ধান পায় নি ( আল্লাহ ভালো জানেন আমরা কদ্দুর সন্ধান পেয়েছি) । কিন্তু ভুলে গেলে চলবেনা, আমরা নিজেরাও অসংখ্য রোগে মধ্যে ভুগছি। এর মধ্যে সব চেয়ে বড় রোগ হলো আভিজাত্য। এই রোগের চিকিত্সা আমরা ঠিক সময়ে শুরু করতে না পারলে আমাদের সন্তানরা হয়ত কেবল বাহ্যিক ভাবে ইসলামের বেশে থাকবে, কিন্তু তাদের দিয়ে দ্বীনের আসল উদ্দেশ্য সাধিত হবেনা। কথায় কথায় সন্তানদের maturity নিয়ে প্রশ্ন তোলা এই আভিজাত্য প্রসূত রোগ। গ্রামের গরিব মুসলিম পরিবার গুলো দেখলে এর ভালো দৃষ্টান্ত পাওয়া যাবে। ঠিকই দেখবেন টিন এজার ছেলে মেয়ে খুব সফলতার সাথে সংসার করে যাচ্ছে ( খেয়াল রাখতে হবে, দারিদ্র ব্যর্থতা নয়, তাহলে ইসলাম শুরুতেই ব্যর্থ ছিল) । আর আমরা শহরে ২৫ এ বিয়ে করলেও সবাই চোখ কপালে তুলে। বিশোর্ধ মেয়ে অন্তস্বত্তা হলে মুসলিম মা দের চিন্তার অন্ত থাকেনা; কি করে সে বাচ্চা পালবে। ছেলে ২৫ এ বিয়ে করলে মা দের চিন্তা থাকে ছেলে সংসারের চাপে বুড়িয়ে যাবে। এই হলো আমাদের মুসলিম সমাজ। আমাদেরকে এই ব্যপারে শীঘ্রই সচেতন হতে হবে। আমার সকল মুসলিম ভাই বোনদের প্রতি আমার অনুরোধ যেন আমরা আমাদের সন্তানদের অপ্রয়োজনীয় প্রশ্রয় দিয়ে বড় না করি। আমরা যেন সঠিক বয়সে সন্তানদের বিয়ের ব্যাপারে সমাজকে ভয় না করি। সামর্থ্যবান পরিবারগুলো চাইলেই তাদের সন্তানদের বিয়ে ব্যবস্থা করতে পারেন উভয় পক্ষের সম্মতিতে। সন্তানদের প্রতি এটুকু ইহসান তো করায় যায় ( আর কয়েক বছর একটু খরচ টানুন যদি সামর্থ্য থাকে। কত অপ্রয়োজনীয় কাজেই না আমরা টাকা নষ্ট করি?)। সরকারকে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই কেননা তাদের কাছে বিয়ে মানে কেবল একটা কাগজ। আমরা যদি সেই কাগজ পত্র তাদের নির্ধারিত সময়ে গিয়ে করি তাহলে তাদের চোখে আমাদের বিবাহিত সন্তানদের মেলামেশা হয়ত living together হবে, কিন্তু আল্লাহ এর চোখে তাদের মিলামিশা পরিপূর্ণ ভাবে হালাল হবে। এমন কি সংসার ও তারা পরে শুরু করতে পারে। কিন্তু এই নষ্ট সমাজে আমাদের সন্তানরা অন্তত বলতে পারবে, হে আল্লাহ আমাদের অবিভাবকরা কেবল বড় বড় মূল্যবোধের বুলি না আওড়ে আমাদের দৃষ্টি অবনত এবং লজ্জাস্থানকে সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে দিরেছেন।
সন্তানদের দায়িত্ব নিতে অভ্যস্ত করি। এই কারণেই ১১ বছরের সাহাবী রা: পিতা হতে পেরেছেন এবং পরে হযেছেন গভর্নর।
আমরা আমাদের সন্তানদের অবিভাবক হওয়ার সাথে সাথে তাদের সব চেয়ে কাছের মানুষ ও যাতে হই। কোনো অশ্লীল কথা বা ঘটনা বন্ধুদের কাছে প্রথম বার শুনে যেন তারা ভুল পথে পরিচালিত না হয়। তারা যেন আমাদের কাছে এসে বুঝে নিতে পারে কোনটা হালাল এবং কোনটা হারাম।
আল্লাহ আমাদের তার পবিত্র দীনের উপর দৃঢ় এবং অটল রাখুন।
আবু আঈশা
বিষয়: বিবিধ
১০৮০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন