গুলশান ট্রাজেডী কিছু কথা...........

লিখেছেন লিখেছেন টিস্যু পেপার ০৪ জুলাই, ২০১৬, ১২:২২:৩৪ দুপুর



গুলশানে তান্ডবের পর ফেসবুকজুড়ে একদিকে চলছে শোকের মাতম অন্যদিকে ঘটনার সূত্র খুঁজতে মাঠে নেমে পড়েছেন অনেকে! ঘটনাটি যে জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীর এতে কারও সন্দেহ নেই।যদিও ইতিমধ্যে হামলাকারীরা অধিকাংশ সরকার সমর্থক ধনী,শিক্ষিত পরিবারের এবং নামকরা ব্যয়বহুল নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি ও স্কলাসটিকার মত প্রতিষ্ঠানের ছিল বলে মিডয়ায প্রকাশ পেয়েছে।জঙ্গি বা আইএসের নামের সাথে ইসলামের নাম জড়ানো লেবেল বরাবরের মত এবার ও দেয়া হলেও বাস্তবে তাদের প্রোফাইল ঘেটে ব্যাবহারিক মুসলিম এমন কোন নজির খোদ সমালোচকরা ও দিতে পারেনি।বাংলাদেশের দ্বায়িত্বশীল পর্যায় থেকে অতীকে বারবার মাদ্রাসা গুলোকে জঙ্গীদের আতুড়ঘর বলা হলেও এবার সরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিজে বলতে বাধ্য হলেন গুলশান ট্রাজেডীর কোন জঙ্গী মাদ্রাসা জীবনে মাড়ায়নি পর্যন্ত! কিন্তু এ হামলার পেছনে কোন কোন বিষয় ভূমিকা রেখেছে এনিয়ে কিছু প্রশ্ন দাড়িয়েছে

প্রায় দেড় বছর ধরে পশ্চিমা গোয়েন্দারা বড় ধরনের হামলার বিষয়ে আশঙ্কা করে আসছিলেন। গত বছর কূটনৈতিক বলয়ে জটিল হামলার পরিকল্পনার আভাসে অনেকটা শঙ্কার সৃষ্টি হয়। বিদ্যমান জঙ্গি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য ঢাকার ওপর অনেক পশ্চিমা দেশগুলো থেকেও চাপ আসার পর ও সরকার এই পরিস্থিতি থেকে রাজনৈতিক সুবিধা আদায়ে সচেষ্ট ছিল। তারা উল্টো তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দোষারোপ করেছে। কিংবা দেশে আইএস বা আল-কায়েদার মতো কোনো গোষ্ঠীর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট জঙ্গি নেটওয়ার্কের অস্তিত্ব সরাসরি অস্বীকার করেছে। অথচ এই গোষ্ঠীগুলো হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে।উগ্রবাদী গোষ্ঠীগুলো দমনের পরিবর্তে সরকার রক্ষণশীলদের ছাড় দিয়েছে। হত্যার শিকার হওয়া ব্যক্তিদের দোষারোপ করা হয়েছে।কাদের মদদে!

আইএসের প্রচারণায় বারবার বাংলাদেশের নাম এসেছে। আল-কায়েদার ভিডিও বার্তায় বাংলাদেশে জিহাদের ডাক দেওয়া হয়েছে।আইএসের তৎপরতার কেন্দ্রস্থল মধ্যপ্রাচ্য। সেখান থেকে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক দূরে।২০১৪ সালে আল-কায়েদার নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরি দক্ষিণ এশিয়ায় তার সংগঠনের নতুন শাখা খোলার ঘোষণা দেন। আল-কায়েদার তৎপরতা আফগানিস্তান থেকে বাংলাদেশ পর্যন্ত সম্প্রসারিত করার কথা বলেন তিনি।ইউটিউবে তাদের শপথের ভিডিও দেখা যায় বছর আগের । আইএসের প্রকাশিত দাবিক ম্যাগাজিনে বাংলাদেশ শাখার প্রধারনর সাক্ষাত্কার সহ ফিচার ছাপা হয় বহু আগে।এমনকি গুলশান হামলার টুইট হয় ১০ ঘন্টা আগে! তারপরও হেয়ালিপনা জুজু নিয়ে খেলা কি কাউকে ফায়দা দেয়ার জন্য সিকিমিয় চরিত্রের অনুসরন!

স্বাভাবিক দৃষ্টিতে সবার মনে একটা কমন প্রশ্ন জেগেছে, গুলশান-২ থেকে কূটনৈতিকপাড়া যেতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা এতটা দুর্বল ছিল কেন! জঙ্গিরা ভারী আগ্নেয়াস্ত্র বহন করে রেস্তোরাঁয় পৌছালো কিভাবে!

কয়েক মাস আগেও যখন বাংলাদেশ নিয়ে আমেরিকার সর্বোচ্চ নিরাপত্তা সতর্কতা জারি ছিল, তখন ঢাকার মার্কিন দূতাবাসে কর্মরতদের মাত্র দুটা জায়গায় যাওয়ার অনুমতি ছিল। একটা হলো আমেরিকান ক্লাব। অন্যটা হোলি আর্টিসান বেকারি। সেই বেকারিতে ৬ থেকে ১০ জন জঙ্গি ভারী বন্দুক নিয়ে ঢুকে পড়লো, অনেক গোলাবারুদ আর বোমাসহ। বাঁধা দিলো মাত্র একজন গার্ড। এমন হাই সিকিউরিটি স্থাপনায় মাত্র একজন গার্ড!

রেস্টুরেন্টটির নিরাপত্তা কি শিথিল করা ছিল! নিরাপত্তা শিথিল করা হয়ে থাকলে সেই তথ্য কি জঙ্গিদের জানালো কে! এতজন বিদেশি জিম্মি হলো, তার মধ্যে একজন সরাসরি আমেরিকানও নেই কি করে? বিদেশি জিম্মিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হলেন ইতালি ও জাপানের নাগরিক। অর্থাৎ গতবছর এই গুলশানেই দুর্বৃত্তদের হামলায় নিহত হন ইতালীয় নাগরিক তাবেল্লা সিজার। তখন মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে রংপুরে একই কায়দায় নিহত হন হোশি কুনিও। এটা কি কাকতালীয় মিলে গেছে!

শুক্রবার রাতে আমেরিকাভিত্তিক সাইট ইন্টেলিজেন্স জানিয়েছে, গুলশান তান্ডবের ‘দায় স্বীকার’ করেছে আইএস। কিন্তু মার্কিন সরকার বলছে, এই হামলায় আইএস নয়, আল-কায়েদা জড়িত।বার্তা সংস্থা সিএননের বাড়াবাড়ি ও চোথ এড়ায়নি। আবার রাতেই আইএসের নিউজসাইট ‘আমাক নিউজ’ জানিয়েছে, হামলায় ২০ জন বিদেশি নিহত হয়েছে। তখনও কিন্তু বাংলাদেশের কোনও সংস্থা নিহতের খবর নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে মার্কিন সরকার কিভাবে বলছে, হামলায় জড়িত জঙ্গিরা আল-কায়েদার, আইএসের না! মার্কিন সরকার কি সরাসরি জঙ্গিদের সাথে যোগাযোগ করছে!

বাংলাদেশে চলমান রাজৗনতিক সংকটে বিরোধী দল কোনঠাসা।তথাকথিত ৫ ই জানুয়ারীর নির্বাচনের একমাত্র বিঘ্নস্থল ছিল গুলশানের ৮৬ নম্বর রোডে বেগম জিয়ার রাজনৈতিক অফিস।আর ট্রাজেডীর ঘটনাস্থল গুলশানের ৭৯ নম্বর রোড।এই নৈকট্য কি কোন তথ্য বহন করে!

কিছুদিন আগে মাদারীপুরের কলেজ শিক্ষক রিপন চক্রবর্তীকে হত্যা চেষ্টা করতে গিয়ে ধরা পড়ে সরকারী ভাষ্য মতে হিযবুত তাহরিরের ফাহিম। ফাহিম ক্রসফায়ারে পড়ার পর বেগম জিয়া ফাহিমকে নির্দোষ দাবী করেন। গুলশান আক্রমণের মাত্র একদিন আগে গ্রেপ্তার হয় ফাহিমের পুলিশের মতে নির্দেশদাতা খালেদ সাইফুল্লাহ। আবার, জঙ্গিরা নাকি জিম্মি মুক্তির বিনিময়ে চেয়েছেন সেই খালেদ সাইফুল্লাহরই মুক্তি। এই তথ্যগুলোর মধ্যে কি কোনো যোগসূত্র আছে!

আইএসের প্রতিষ্ঠাতার নাম আবু বকর বাগদাদী। এই জঙ্গি আমেরিকায় বন্দি ছিল বহুবছর। ২০১৪ সালে আইএসের আবির্ভাবের কিছুদিন আগে বাগদাদীকে বেকসুর খালাস দেয় আমেরিকা। লাদেনকে হত্যা করার সময় তার ঘর থেকে অনেক কিছু জব্দ করা হয়। এর মধ্যে ছিল একটা থিসিস। সেই থিসিসে লাদেন তার অনুসারীদের উদ্দেশে লিখেছে, হিংস্র বাগদাদীর গ্রুপ থেকে সাবধান! তাহলে আমেরিকা বাগদাদীকে বেকসুর খালাস দিল কেন?

আইএস গঠনের পর অনেক তেলের ক্ষেত্রও দখলে নেয়। সেই তেল কোন দেশের কাছে বিক্রি করত আইএস? সিরিয়ান আর্মির জন্য আমেরিকা ও ন্যাটো সদস্য দেশগুলো যেই গাড়ি আর অস্ত্র গোলাবারুদ ফ্রী দিতো, সেসব সরঞ্জাম আইএস পেয়ে যেত কি করে? আমেরিকা থেকে চালিত সাইট ইন্টেলিজেন্সের মালিক ইসরায়েল আর্মির সাবেক এক সদস্য। আইএস যখন বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের অপহরণ করে লাইভ ভিডিওতে সবার গলা কেটেছে শুধু বাংলাদেশি ছাড়া। অপহৃত বাংলাদেশিদের ছেড়ে দিয়েছিল আইএস। গোপনে সেই দেশের মানুষের গলা কাটতে লোক পাঠিয়েছে আইএস!এটা বিশ্বাসযোগ্য?......

জঙ্গি নিব্রাসের ফেসবুক আইডি বন্ধ করল কে! গতকাল রাতে ও তো নির্বাস ইসলামের ফেসবুক পেজ চালু ছিল!

সরকারের মন্ত্রীরা হামলাকারীদের প্রশিক্ষিত শিবির,যুদ্ধাপরাধীদের বাচানোর জন্য হয়েছে! আমাদের দেশেই এদের উৎপত্তি! নির্দেশদাতা আমাদের দেশেরই!পূর্বেকার ঘটনার কানেকশন আছে... এমন প্রলাপগুলো কি ভারতীয় মিডিয়ায় গতকাল প্রকাশিত খবর গুলোরই পুনরাবৃত্তি!

বিশ্বের কোন মিডিয়ায় প্রকাশের পূর্বেই ভারতীয় মিডিয়া কিভাবে প্রকাশ করলো নিহতরা দু জন ইতালীয়! আমাদের বিশ্বসেরা রেসকিউ ফোর্স থাকতে এবং সরকার না চাইতে ও ভারত রেসকিউ ফোর্স পাঠাচ্ছে বলে ভারতীয় মিডিয়ার অতি উ্তসাহী প্রচার কি কোন ইংগিত দিচ্ছে!

সম্প্রতি সরকারের ভাষ্য মতে দেশব্যাপী জঙ্গিবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে ১৯৫ ‘জঙ্গি’কে গ্রেফতার করে বলে দাবি করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এখনও নাকি চলছে সেই অভিযান। কিন্তু এতদিন কাদের ধরেছে পুলিশ? বিরোধী দলকে দমনের জন্য ধরপাকড় বানিজ্য কি তাহলে সত্যিই চলছে! এত জঙ্গি কোথায় উৎপাদন হচ্ছে!

বেশকিছু জায়গায় দেখা মিলেছে এক ন্যাড়া মাথার লোকের। ছাদের ওপর ধূমপান করতে দেখা যায়। এ সময় তার পেছনে দুজন বন্দুকধারী সন্ত্রাসীকে দেখা যায়। ফুটেজে তাকেই দেখা যায় ক্যাফের দরজার ভেতরে দাঁড়িয়ে থাকতে।তখন ভেতরে অস্পষ্টভাবে কাঁচের ভেতর দিয়ে দেখা যায়, লোকজন মাথা নিচু করে আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে বসে আছে। কিন্তু ন্যাড়া মাথার লোকটি হাঁটছে এবং কথা বলছে..।অপারেশনের আগে মুক্ত জিম্মিদের সাথে হেটে বেড়িয়ে যায়... ফেসবুকের অনেকেই জানাচ্ছে এই টাক মাথার লোকটার নাম হাসনাত করিম। এই লোক নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির টিচার। জঙ্গি নিবরাস ইসলাম এবং এর আগেও ব্লগার হত্যাকারী জঙ্গীরা ছিল এই ইউনিভার্সিটির-ই!!! সন্ত্রাসীদের সাথে এমন মহব্বত যেই লোকের, যেই লোককে সন্ত্রাসীরা ছেড়ে দিয়েছে, সেই লোকটা কে? এই টাক মাথার লোকের আসল পরিচয় কি? তাকে কেন জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে না? সেতো বেঁচে এসেছিলেন সপরিবারে।সাদা চামড়ার অকুতভয় লোকটি কি বিষাক্ত কুখ্যাত গোয়েন্দাদের কেউ !!!!

বাংলাদেশে আইএস আছে, আইএস নেই বিতর্ক এখনও থেমে নেই। দেশে যে কোনও ধরনের হত্যাকান্ড ও হামলার ঘটনার পর ‘দায় স্বীকার’ করে বিবৃতি দেয় আইএস। এর পর ও সরকারের পক্ষে বলা হয়, দেশে কোনও আইএস জঙ্গির অস্তিত্ব নেই। তাহলে গুলশান হামলা চালালো কারা!

যদি গুলশান ট্রাজেডীর ফলে বাংলাদেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষতির দিকে তাকাই * তেরি পোষাকের ক্রেতা ও সংশ্লিষ্টরা বাংলাদেশ এড়িয়ে অন্য এক দেশ সম্পূর্ণ ভাবে প্রবেশ শুরু করবেন! * ইংল্যান্ড দল অষ্ট্রেলিয়ার মত বাংলাদেশ সফর পরিত্যাগ করবে, তাদের ক্রিকেট বানিজ্যে আরও রমরমা হবে! * ইতালি বাংলাদেশের সামরিক কূটনৈতিক বাধাপ্রাপ্ত হবে,ফলে সমরাস্ত্রের দিক দিয়ে তাকের চেয়ে পিছিয়ে থাকবো ! * জাপানের জাইকা মেট্রো রেলের মত অসংখ্য উন্নয়ন প্রকল্প থেকে মুখ ফিরিয়ে নিবে! আর হাজারটা !! এক কথায় লাভবান কিন্তু এক দিকেই ইঙ্গিত বহন করে!!!

কোন এক নন্দিত ব্যাক্তিত্ব বলেছিলেন বাংলার আকাশে নাকি শকুনের আনাগোনা.... শকুন কি তাহলে চকচকে নয়নে লাশের অপেক্ষায় মাটিতে বসে পড়েছে!!!!!!

বিষয়: রাজনীতি

১০০৩ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

373962
০৪ জুলাই ২০১৬ রাত ১১:৪৪
শেখের পোলা লিখেছেন : শকুনের দৃষ্টিতো ভাগাড়ের দিকে থাকার কথা। তবে কি আমরা মৃত জানোয়ার?

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File