নাস্তিকরা যে কারণে হোমিওপ্যাথি বিশ্বাস করে না

লিখেছেন লিখেছেন ওবাদা বিন সামেত ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০১৭, ১০:৩১:৪০ সকাল

হোমিওপ্যাথি একটি অদৃশ্য বিজ্ঞান। কোন বস্তুগত বা রাসায়নিক পরীক্ষায় এর কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায় না, কেবল মানব দেহের বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে এর অস্তিত্ব অনুভব করা যায়। তাই হোমিওপ্যাথির অস্তিত্ব স্বীকার করে নিলে সকল ধরনের অদৃশ্য ও অলৌকিক বিষয়কেই স্বীকৃতি দিতে হয়— অদৃশ্য স্রষ্টার অস্তিত্বকে মেনে নেবার দাবিও সামনে এসে যায়। তাই তারা সতর্কতামূলকভাবে বস্তুগত প্রমাণহীন যাবতীয় অদৃশ্য শক্তি ও ক্ষমতার অস্তিত্বকেই প্রত্যাখ্যান করে থাকে।

ধর্মবিদ্বেষী উগ্রপন্থী নাস্তিকরা ধর্মের পাশাপাশি হোমিওপ্যাথির উপরেও বিষোদগারপূর্ণ আক্রমণাত্মক মন্তব্য ও insulting কথাবার্তা বলে থাকে। এক ফেসবুক পেজে একটি হোমিওপ্যাথিবিরোধী পোস্টের মন্তব্যের ঘরে অভিমত প্রকাশ করতে গিয়ে একজন লিখে বসলো, "ধর্মের মতই এটাও এক প্রমানহীন ক্ষতিকর ভ্রান্ত মতবাদ, মানবতার শত্রু "। আসল ব্যাপারটা হলো, প্রকৃতপক্ষে শয়তানই মানবতার প্রকাশ্য শত্রু — যা আল্লাহ কোরআনে বলে দিয়েছেন। সুতরাং মানুষের ধর্মীয় ও পারলৌকিক কল্যাণের মাধ্যম তথা ধর্মবিশ্বাসের পাশাপাশি জাগতিক ও পার্থিব রোগমুক্তির জন্য কল্যাণকর চিকিৎসাপদ্ধতিও শয়তানের চক্ষুশূল হবে, এটাই স্বাভাবিক। তাই শয়তানের চেলা নাস্তিকরাই ধর্মকে এবং সেই সাথে মানবকল্যাণমূলক সকল উপায়-উপকরণকে শত্রু ভাবে।

নাস্তিকেরা অবশ্য ভালো ও মন্দ উভয় অদৃশ্য শক্তির অস্তিত্বকেই অস্বীকার করে থাকে। ধর্মীয় বিশ্বাসের বিষয় আল্লাহ, ফেরেশতা, পরকাল এগুলোকে যেমন অস্বীকার করে, পার্থিব চিকিৎসা ব্যবস্থার মধ্যে হোমিওপ্যাথিকে যেমন প্রত্যাখ্যান করে, তেমনি অশুভ শক্তির মধ্যে শয়তান, যাদু এগুলোর অস্তিত্বকেও তারা অস্বীকার করে। মজার ব্যাপার হলো, অদৃশ্য শক্তি হিসেবে স্রষ্টা ও ধর্মের পাশাপাশি যাদু ও জিনের অস্তিত্ব তারা অস্বীকার করে আসলেও নিজেদের অশুভ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করবার কাজে ঠিকই এগুলোকে ব্যবহার করে। আপনারা দেখবেন, যে সমস্ত গোষ্ঠী ও সংগঠন তান্ত্রিকতার চর্চা করে, মনের শক্তিকে ব্যবহার করে নিজেকে ও দুনিয়াকে বদলে দেবার দাবি করে, তাদের সাথে ধর্মবিশ্বাসী বিভ্রান্ত মানুষজনের পাশাপাশি ধর্মবিদ্বেষী নাস্তিক মানুষেরাও যোগ দেয়। নাস্তিক ও বাম ধারার লোকেরা বরং শুরু থেকেই এসব তান্ত্রিক জ্যোতিষী ও যাদুকরের সঙ্গে আছে। তাদের কথিত আলোকিত মানুষেরাও ভণ্ড পীরের মুরীদ হয়। বস্তুগত ও দৃশ্যমান সত্ত্বার বাইরে অন্য সবকিছুকে ঢালাওভাবে প্রত্যাখ্যানের নীতি গ্রহণকারীরা যখন এই সমস্ত জ্যোতিষী ও যোগীদের সাথে, তান্ত্রিক ও যাদুকরদের সাথে হাত মেলায়, তখন এ দ্বিচারিতাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করা যায়? এরা ধর্মকে প্রত্যাখ্যান করলেও ধর্মকে কেন্দ্র করে মাজার ব্যবসাকারী কথিত সুফী ও লালসালুওয়ালাদের সাথেও এদের ঠিকই সখ্যতা বিদ্যমান। যাদু বিশ্বাস না করলেও মুসলিমদের ক্ষতি করবার জন্য এরা ঠিকই যাদুকরদের সাহায্য নেয়।

হোমিওপ্যাথির সবচেয়ে বিস্ময়কর বৈশিষ্ট্যটি হলো, সূক্ষ্মকৃত ঔষধে মূল পদার্থের কোন অস্তিত্ব পাওয়া যায় না, কিন্তু তা সত্ত্বেও তা গ্রহণকারীর শরীর ও মনের উপর ভালো-মন্দ প্রভাব ও পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম। চোখে দেখা বা হাতে ধরা যায় না এমন কিছুর যে শক্তি ও প্রভাব থাকা সম্ভব, এ বিষয়টা জনগণের সামনে ব্যবহারিক ও কার্যকরভাবে প্রদর্শিত হয়েছে হোমিওপ্যাথির সুবাদে। আমরা জানি, নাস্তিক দর্শনের মূল তত্ত্বই হলো, যা দেখি না বা ছুঁইতে পারি না, তা বিশ্বাস করি না। আর ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের কাছে এই তত্ত্বটি রীতিমতো কবরস্থ হয়ে যাবে, যদি হোমিওপ্যাথিক ঔষধের গঠন ও কার্যক্ষেত্রে তার ফলাফলের বিষয়টি জনগণের গোচরীভূত হয়।

বি:দ্র: কেউ যেন মনে করে না বসেন, আমি ধর্মের সাথে হোমিওপ্যাথিকে তুলনা দিচ্ছি। ধর্ম স্বয়ং আল্লাহর কাছ থেকে আগত এবং সুনিশ্চিত বিশ্বাসের দাবি রাখে, যা যাবতীয় ভুল-ত্রুটির ঊর্ধ্বে এবং অস্বীকার করা কুফরী। অপরদিকে হোমিওপ্যাথি নিছক মানব আবিষ্কৃত একটা চিকিৎসা পদ্ধতি মাত্র, যা আর দশটা বিজ্ঞানের বিষয়ের মতই, যার মাঝে ঠিক-ভুল সবই থাকতে পারে এবং এটা স্বীকার বা অস্বীকার করবার সাথে ঈমান-কুফরের কোন সম্পর্ক নেই। আমি শুধুমাত্র নাস্তিকদের বিদ্বেষের বিষয়টা ফুটিয়ে তোলা এবং তাদের তত্ত্বকে খণ্ডনের জন্য এ দুটো বিষয় একত্রে আলোচনা করেছি মাত্র। অন্যথায় স্রষ্টা ও ধর্মকে হোমিওপ্যাথি বা বিজ্ঞানের কোন শাখা দিয়ে প্রমাণ বা সত্যায়নের প্রয়োজন আমি বোধ করি না। আল্লাহ এমনিতেই স্বয়ংসম্পূর্ণ, আল্লাহর দ্বীন তার আপন মহিমায় প্রতিষ্ঠিত। শুধুমাত্র অবিশ্বাসীদের কাছে দাওয়াত প্রদানের জন্যই বিজ্ঞান দিয়ে যুক্তি প্রদর্শনের প্রয়োজন হয়।

বিষয়: বিবিধ

৮৩৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File