বিয়ের পূর্বে দৃষ্টিভঙ্গি যাচাই করে নিন
লিখেছেন লিখেছেন ওবাদা বিন সামেত ১০ মে, ২০১৭, ০২:৫৩:৪৬ দুপুর
দাম্পত্য সম্পর্কে শান্তি ও সুখের বিষয়টি নিশ্চিত করবার ক্ষেত্রে পারস্পরিক দৃষ্টিভঙ্গির মিল একটি বড় ফ্যাক্টর। এ দুনিয়ায় পরস্পরবিরোধী দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ আছে। একজনের কাছে যে জিনিসটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আরেকজনের কাছে সেটা সবচেয়ে ফালতু। একজন শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করা পর্যন্ত অর্থাৎ মৃত্যুর পূর্বক্ষণ হলেও যে জিনিসটাকে আঁকড়ে থাকবে বা যে জিনিসটি নিশ্চিত করতে চাইবে, আরেকজন কোটি বছর হায়াত পেলেও জীবনের এক মিনিট সময়ও ঐ জিনিসটির পিছনে ব্যয় করতে রাজি হবে না।
বাচ্চা-কাচ্চা যতদিন না হয়, ততদিন হয়তো 'লাকুম দ্বীনুকুম' নীতির ভিত্তিতে সংসার কোনমতে চালিয়ে নেয়া যেতে পারে, তাও আবার পারস্পরিক সহনশীলতা, পরমতসহিষ্ঞুতা ও সমঝোতার মানসিকতা উভয়ের মাঝে বর্তমান থাকা সাপেক্ষে। কিন্তু বাচ্চা হবার পর আর কোনভাবেই আপোষ ও সমঝোতার সুযোগ থাকবে না। কারণ, আদর্শ ও জীবনদর্শনের প্রশ্নে কেউই বিন্দুমাত্র ছাড় দিতে রাজি হয় না। প্রত্যেকেই নিজ নিজ দৃষ্টিভঙ্গি অনুযায়ী সন্তানকে গড়ে তুলতে চাইবে। সেক্ষেত্রে পরস্পরবিরোধী মানসিকতা পরিবারকে কুরুক্ষেত্র বানিয়ে ফেলবে।
সাধারণত যে বিষয়গুলো নিয়ে মানুষের মধ্যে বড় রকমের মতভেদ হতে পারে, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ধর্মনীতি, শিক্ষানীতি, রাজনীতি ও চিকিৎসানীতি। এই সবগুলো বিষয়ে একই দৃষ্টিভঙ্গি মেলানো কঠিন। আপনি হয়তো এমন মানুষ পাবেন, যে ধর্মনীতি ও রাজনীতির বিষয়ে আপনার সাথে একমত, কিন্তু শিক্ষানীতি ও চিকিৎসানীতির বিষয়ে আপনার বিপরীত চিন্তা পোষণ করেন। এ বিষয়গুলোতে পরস্পরবিরোধী চিন্তাধারাগুলো নিম্নে বিশেষণ করা হলো:-
১। ধর্মনীতি: ধর্মীয় ক্ষেত্রে সাধারণত ভিন্নধর্মের মানুষের মধ্যে বিয়েশাদী হবার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু নামধারী স্বধর্মীয়দের মধ্যেও ধর্মবিদ্বেষী বা মুনাফিক থাকতে পারে, কিংবা পারতপক্ষে সেকুলার চিন্তা-চেতনার অধিকারী মানুষ থাকতে পারে। এছাড়া ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী মানুষজনের মধ্যেও বিভিন্ন ফেরকা ও মানসিকতার মানুষজন রয়েছে। আল্লাহকে বাদ দিয়ে মাজারে গিয়ে সেজদা করার মতন গোবর গণেশ যেমন আছে, তেমনি ধর্মের নামে বউ-বাচ্চা নিয়ে ঘরের ভিতর বোমা ফাটিয়ে সপরিবারে আত্মঘাতী হবার মতন হঠকারী উজবুকও রয়েছে। সবচেয়ে চিন্তার বিষয়টি হল, কোন ব্যক্তির ধর্মীয় চিন্তাধারা তার পারিবারিক ঐতিহ্য ও বংশপরিচয় থেকেও আন্দাজ করা যায় না; কারণ একই ঘরে ভিন্নরকম ধর্মীয় চিন্তাধারার মানুষ থাকতে পারে। আর বিয়েশাদীর খাতিরে পরিবারের মুরুব্বীগণও নিজের ছেলে বা মেয়ের ধর্মীয় চিন্তা নিজেদের থেকে ভিন্ন হওয়ার বিষয়টিও গোপন করতে পারেন। বউমা বা জামাইবাবা এসে ছেলেকে বা মেয়েকে ঠিক করে দেবে, এমন অভিলাষও পোষণ করে থাকতে পারেন। আবার সঠিক চিন্তাধারার মুসলিম হলেও ধর্মের ব্যাপারে সবার আন্তরিকতা ও গুরুত্ববোধ একরকম হয় না। একজন হয়তো দ্বীনের কল্যাণ ও আখেরাতের মুক্তিকে অগ্রাধিকার দেয়, আরেকজন দুনিয়ার সম্পদ বা সুনাম কামানোকে বেশি গুরুত্ব দেয়।
২। শিক্ষানীতি: শিক্ষা সম্পর্কে বিভিন্ন রকমের চিন্তাধারার মানুষ রয়েছে। শিক্ষার বিষয়, পদ্ধতি ও লক্ষ্য সম্পর্কে পরস্পরবিরোধী চিন্তাধারা সমাজে বিদ্যমান রয়েছে।
(ক) শিক্ষার বিষয়: বাচ্চাকে শিক্ষাদানের বিষয়বস্তু কি হবে, কোন্ বিষয়ে তাকে শিক্ষাদান করা হবে, তা নিয়ে অভিভাবকদের মধ্যে মতভেদ হতে পারে। কেউ মনে করেন, যে বিষয় শিক্ষা করলে দ্বীন-ঈমান ও আকীদা-বিশ্বাস মজবুত হয়, চরিত্র সুন্দর হয় সে বিষয়কেই অগ্রাধিকার প্রদান করা উচিত। পাশাপাশি পার্থিব জীবনেও যে জ্ঞানগুলো বাস্তবে কোন না কোন কাজে লাগে বা উপকারে আসে, সেগুলোও শিক্ষা দিতে হবে। অপরদিকে কেউ কেউ আবার শৌখিন ও সামাজিক স্ট্যাটাস অর্জনের দিকে বেশি আগ্রহী এবং যে সকল বিষয় শিক্ষা দিলে সমাজের মানুষের কাছে জাতে ওঠা যায়, যেসব বিষয় নিয়ে পরস্পরে গপ্প মারা যায়, সেগুলো শিক্ষা প্রদানকে বেশি জরুরী মনে করেন। এমন যদি হয় যে, বাচ্চার বাবা বাচ্চাকে মসজিদে নিতে চাচ্ছেন, বাচ্চাও মসজিদে যেতে আগ্রহী হলো, কিন্তু বাচ্চার মা তাকে গানের স্কুলে নেবার জন্য টানাহেঁচড়া শুরু করে দিল; কিংবা বাচ্চার বাবা বাচ্চাকে কোরআনের অর্থ শেখাতে চাচ্ছেন, আর বাচ্চার মা তাকে হাতের লেখা বা ড্রইংয়ের জন্য পীড়াপীড়ি শুরু করে দিল; তাহলে এরূপ পরিস্থিতি সংসার জীবনে বড়ই বিব্রতকর ও অপ্রীতিকর হয়ে থাকে।
(খ) শিক্ষার পদ্ধতি: সন্তানকে যে বিষয়ের শিক্ষাই দেয়া হোক, তা কোন্ পদ্ধতিতে দেয়া হবে, তা নিয়েও বিভিন্ন চিন্তাধারার মানুষ রয়েছে। কেউ বিশ্বাস করেন, আল্লাহর নির্দেশিত পন্থা হেকমত ও সুন্দর ব্যবহারের মাধ্যমেই সন্তানকে শিক্ষাদান করা উচিত; আবার কেউ মনে করেন, না পিটালে ছেলেপেলের লেখাপড়া হয় না। কেউ মনে করেন, শিশুকে তার ধারণক্ষমতার মধ্যেই শিখতে দেয়া উচিত; আবার কেউ মনে করেন, "শরীরের নাম মহাশয়, যাহা সহায় তাহাই সয়।" যারা একটু বেশি উগ্রপন্থী, তারা আবার লেখাপড়ার ব্যাপারে এতটাই কঠোর হয়ে থাকেন যে, বাচ্চার প্রাণ যায় যাক তবু লেখাপড়ায় কোনরূপ শিথিলতা বরদাশত করা চলবে না।
(গ) শিক্ষার লক্ষ্য: শিক্ষার লক্ষ্য সম্পর্কেও পরস্পরবিরোধী চিন্তা-চেতনা সমাজে বর্তমান আছে। কেউ মনে করেন, শিক্ষার লক্ষ্য জানা ও শেখা, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষার পাশাপাশি পার্থিব জীবনে চলার জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যা অর্জন করা। আর কেউ মনে করেন, লেখাপড়ার উদ্দেশ্য শুধু সার্টিফিকেট অর্জন করা, নামকরা স্কুল-কলেজে চান্স পাওয়া, ক্লাসের পরীক্ষায় প্রথম হওয়া আর বোর্ডের পরীক্ষায় সোনার জিপিএ পাওয়া; যা দিয়ে আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের কাছে গর্ব ও প্রতিযোগিতা করা যায়।
(ঘ) শিক্ষার মাধ্যম: শিক্ষার মাধ্যম কি হওয়া উচিত তা নিয়ে মানুষজনের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। কেউ মাতৃভাষাকেই শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে উপযোগী মনে করেন; আবার কেউ আছেন ইংরেজির পূজারী, ইংরেজিকেই জাতে ওঠার মাধ্যম মনে করেন এবং ইংরেজি ছাড়া আর কিছু শুনতে বা বলতে রাজি নন। বাচ্চার কষ্ট হোক, বা বাচ্চার শিক্ষা অর্জনে ঘাটতি থেকে যাক, কোন পরোয়া নেই; শুধু ধরে পেড়ে ইংরেজিটা গেলাতে পারলেই হলো। এমতাবস্থায় বাচ্চার শিক্ষার মাধ্যম নির্বাচনের বিষয় নিয়ে মতানৈক্যও দাম্পত্য কলহ আর পারস্পরিক অসন্তোষের কারণ ঘটাতে পারে।
শিক্ষার বিষয়ে পরস্পরবিরোধী নীতি ও পলিসির অনুসারীদের মধ্যে দাম্পত্য সম্পর্ক হলে বাচ্চাদের লেখাপড়া নিয়ে সংসারে চরম তিক্ততা ও রক্তারক্তি পর্যন্ত হতে পারে।
৩। রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি: রাজনৈতিক বিষয়ে পরস্পরবিরোধী চিন্তাধারাও দাম্পত্য জীবনে কম মারাত্মক নয়। ভেবে দেখুন, একই ছাদের নিচে একই বিছানায় শুয়ে থাকা দুই ব্যক্তির একজন যার মৃত্যু কামনা করে, আরেকজন তাকে বাঁচানোর জন্য দোয়া ইউনুস পড়ে; আবার একজন যাকে বাঁচানোর জন্য নফল রোজা রাখে, আরেকজন তার মৃত্যু কামনায় সদকা মানত করে। বাচ্চাদেরকে যদি প্রত্যেকেই নিজ নিজ দলে বা চিন্তাধারায় টানতে চেষ্টা করে, তাহলে বাচ্চার তো হবে নাভিশ্বাস ওঠার অবস্থা।
রাজনৈতিক মতভেদ বিভিন্ন রকম হতে পারে। একজন হয়তো বাম বা সেকুলারপন্থী, আরেকজন হয়তো ধর্মীয় আদর্শবাদী। আবার ধর্মের পক্ষের লোকদের মধ্যেও বিভিন্ন মত ও দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে পারে। একজন হয়তো আল্লাহর বিধান ও বিবেক-মানবিকতা বজায় রেখে দ্বীন প্রতিষ্ঠার পক্ষপাতী। আরেকজন হয়তো ধর্মের নামে বা ধর্মের প্রয়োজনে আল্লাহর হুকুম ও মানবিক দয়ামায়াকে সাময়িকভাবে বিসর্জন দেয়াকেও গ্রহণযোগ্য মনে করেন। কেউ আছেন সামগ্রিকভাবে আল্লাহর দ্বীন ও আল্লাহর বান্দাদের কল্যাণ কামনা করেন এবং এজন্য কোন দলের প্রতি শর্তহীন সমর্থন বা আনুগত্য প্রকাশকে জরুরী মনে করেন না। আবার কেউ আছেন দলের ন্যায়-অন্যায় নির্বিশেষে সকল কর্মকাণ্ডকে অন্ধভাবে সমর্থন করেন এবং দলীয় গণ্ডির বাইরে কিছু চিন্তা করতে পারেন না।
৪। চিকিৎসানীতি: পৃথিবীতে বিভিন্ন রকমের চিকিৎসা পদ্ধতি প্রচলিত আছে এবং অনেক মানুষ আছেন যারা এগুলোর মধ্যে কোন একটি বা দুটিকে গ্রহণযোগ্য মনে করেন এবং বাদবাকিগুলোকে বর্জনীয় মনে করেন। কেউ আছেন শুধু প্রচলিত চিকিৎসাপদ্ধতি তথা অ্যালোপ্যাথিকেই আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত মনে করেন এবং হোমিওপ্যাথি ও আয়ুর্বেদিক চিকিৎসাকে অপাংক্তেয় মনে করেন। আবার কেউ আছেন, হোমিওপ্যাথির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকতে চান এবং প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিকে ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেন। কেউ টিকাকে অমৃত ভাবেন এবং রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায় বলে গ্রহণ করেন। আবার কেউ টিকাকে গরল ও যমতুল্য হিসেবে জানেন এবং সকল রোগের কারণ বলে মনে করেন। আবার যে চিকিৎসা পদ্ধতিই গ্রহণ করুক না কেন, কেউ আছেন ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন পরিপূর্ণরূপে অন্ধভাবে অনুসরণ করেন, আবার কেউ আছেন ডাক্তারের কোন ভুল বা দুর্নীতির আভাস পেলে তা সংশোধন করে নিতে চান। অতএব, চিকিৎসা ক্ষেত্রে বাচ্চার চিকিৎসা নিয়ে দুই জনের দুই রকম অভিমত থাকলে দুইজনই বাচ্চার হিতাকাঙ্ক্ষী হয়ে থাকলেও একজন অপরজনকে বাচ্চার জানের দুশমন ভাবতে শুরু করবেন।
উপরে বর্ণিত বিষয়গুলো ছাড়াও আরো অনেক বিষয় আছে যেসব ক্ষেত্রে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। যেমন- কেউ আছে সব বিষয়ে চরম রক্ষণশীল, আবার কেউ আছে উদার, কেউ আছে উচ্ছৃঙ্খল। কেউ আছে বাচ্চাকে ধরে পেড়ে নাচের স্কুল ও গানের স্কুলে ভর্তি করে নাচ-গানে এক্সপার্ট বানাবে, বাচ্চার পা ও গলার অবস্থা বারোটা বাজাবে, বাচ্চার দ্বীন-ধর্ম সব লাটে উঠাবে; আবার কেউ আছে ঘরের বাইরে নাচ-গান চললে বিনোদন ও খেলার ছলেও তা দেখবার জন্য বাচ্চাদেরকে ঘরের বাইরে যেতে দেবে না। আবার কেউ আছে এ দু'য়ের মধ্যবর্তী পন্থা অবলম্বন করেন, কোন কিছু নিয়ে অনাবশ্যক জবরদস্তি বা কড়াকড়ি পরিহার করেন। অনেক ছোটখাটো বিষয় নিয়েও অনেকের মধ্যে অতিরিক্ত গোঁড়ামি দেখা যায়; যেমন- অনেকে মনে করেন, টিভি দেখলে কাফের হয়ে যায়। কেউ আছে উগ্র ও উচ্ছৃঙ্খল চলাফেরাকেও অনুমোদন করে, আবার কেউ আছে চরম অসুস্থতা ও গরমের মধ্যেও বোরখার ব্যাপারে কোন ছাড় দেবে না। এছাড়া জন্মনিয়ন্ত্রণ সম্পর্কেও আপনার হবু জীবনসঙ্গীর দৃষ্টিভঙ্গি আপনার দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ কিনা, সেটাও কৌশলে জেনে নিতে হবে।
শুধু নিজের জীবনসঙ্গীর দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে জানলেই হবে না, তার অভিভাবকদের দৃষ্টিভঙ্গি ও পারিপার্শ্বিক পরিবেশ সম্পর্কেও খোঁজ নিতে হবে। এছাড়া কোন ব্যাপারে অভিভাবকদের সাথে মতানৈক্য ঘটলে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি কার্যকর করার ব্যাপারে তার সক্ষমতার বিষয়টিও নিশ্চিত হতে হবে। পাত্র বা পাত্রীর পরিবারে কার কার প্রভাব বিদ্যমান, প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের দৃষ্টিভঙ্গি ও মানসিকতা কিরূপ, তাদের কার মধ্যে কি রকম প্রবণতা আছে, ন্যায়পরায়ণতা ও ন্যায়নীতিবোধ সবার মধ্যে আছে কিনা, ন্যায়নীতিবোধহীন কেউ থেকে থাকলে তার প্রভাব ও ক্ষমতা পরিবারে কতটুকু- এগুলো জানতে হবে। এই দুনিয়াতে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির মানুষ আছে। কেউ মনে করেন, মানুষের কাছ থেকে উপকার নেবার পাশাপাশি মানুষের উপকার করাটাও আমাদের কর্তব্য এবং মানুষের কাছ থেকে উপকার গ্রহণ করতে গিয়ে মানুষের ক্ষতি যাতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত। আবার কেউ মনে করেন, মানুষের কাছ থেকে যতটা পারা যায় আদায় করে নেয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। কেউ আছে একটুখানি আন্তরিক সহযোগিতা পেলেই কৃতজ্ঞতার হাসি হাসে, আবার কেউ আছে জানপ্রাণ দিয়ে সেবা করলেও বিনিময়ে অপবাদ ও তিরস্কার ছাড়া আর কিছু দেয় না।
অতএব, সুখী দাম্পত্য জীবন লাভ করতে হলে স্বামী-স্ত্রী দু'জনকে যেমন একই রকম দৃষ্টিভঙ্গির অনুসারী হতে হবে, তেমনি তাদের অভিভাবকদের মধ্যেও তাদের ও তাদের সন্তান-সন্ততিদের জীবনের উপর তাদের চিন্তা-চেতনার বিপরীত দৃষ্টিভঙ্গি চাপিয়ে দেবার মতন কেউ আছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। বিশেষ করে যেখানে পরিবারের মুরব্বী, বিয়ের ঘটক আর কর্মস্থলের প্রধান একই ব্যক্তি হয়, সেখানে তার পক্ষে পারিবারিক বিষয়ে হস্তক্ষেপ করাটা বেশি সহজ হয়। বউয়ের কাজের হিসাব ও বাপের বাড়ি বেড়ানোর হিসাব নেয়া থেকে শুরু করে বাচ্চার ব্রিটিশ কাউন্সিল ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে গমন নিশ্চিত করা পর্যন্ত সব বিষয়ে আগ্রাসী চাপপ্রয়োগের মাধ্যমে পারিবারিক জীবনটাকে দোযখ বানিয়ে ছাড়ে। আর বউটাও যদি তাদের মতের অনুসারী হয়, কিংবা মানুষের সমালোচনা শোনার ব্যাপারে বেশি সেনসিটিভ হয়, তাহলে এসব নিয়ে স্বামী ও বাচ্চার উপর চাপপ্রয়োগ করে সংসার টিকিয়ে রাখাটাই অসম্ভব করে তোলে। অবশ্য স্বামী-স্ত্রী দু'জনের মধ্যে মতের মিল থাকলে এবং এ ব্যাপারে দৃঢ়তা ও ঐক্য থাকলে কোন থার্ড পার্টির দ্বারা বাচ্চার জীবন প্রভাবিত হতে পারবে না।
অবশ্য আপনার লক্ষ্য যদি এটুকু হয়ে থাকে যে, জীবনসঙ্গীর কাছ থেকে জৈবিক শান্তিটুকু পেলেই হলো, সন্তান-সন্ততিকে কিরূপে গড়ে তোলে তুলুক তাতে আমার কিছু যায় আসে না, তাহলে উপরে বর্ণিত বিষয়গুলো নিয়ে আপনার না ভাবলেও চলবে।
বিষয়: বিবিধ
১১২৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন