প্রসঙ্গ: শিরক-বেদাত (প্রেক্ষিত: সুফী বনাম সালাফী ধারণা)

লিখেছেন লিখেছেন ওবাদা বিন সামেত ২৪ নভেম্বর, ২০১৯, ০৮:২২:৫০ রাত

মুসলিম সমাজে শিরক ও বেদআত সম্পর্কে দুই পরস্পরবিরোধী ধারণা প্রচলিত রয়েছে। একদল মানুষ এ ব্যাপারে এতই লিবারেল যে, জগতের কোন কিছুকেই শিরক মনে করেন না। তারা স্রষ্টা ও সৃষ্টিকে একাকার করে ফেলেন, স্রষ্টা ও সৃষ্টিকে পরস্পরের সাথে তুলনা দেন এবং মিলিয়ে ও গুলিয়ে ফেলেন। যে কাউকে সেজদা করাটাকে তারা অতি সিম্পল বিষয় হিসেবে নেন। তারা মনে করেন, মানুষের অন্তরের মাঝে খোদা আছে, অতএব মানুষকে সেজদা করলেও দোষের কিছু নেই। আমাদের নবী করীম (সা)-কে সম্মান জানাতে গিয়েও তারা তাঁকে আল্লাহর সাথে একীভূত করে ফেলেন- রসূল (সা)-কে তারা হয় আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করেন, অথবা আল্লাহ ও রসূলকে একই সত্ত্বা বলে গণ্য করেন। কেউ কেউ এমনকি পীরকেই আল্লাহ প্রমাণ করে বসে এবং কোরআনের আয়াতের হিজিবিজি আবোল-তাবোল মার্কা ব্যাখ্যা দিয়ে এমন ভাব দেখায় যে, দলীল দিয়ে প্রমাণ করে ফেলেছে, পীরই আল্লাহ! আরেক দল মানুষ আবার এতই গোঁড়া যে, ঢালাওভাবে সকল কিছুকেই শেরেকী ও বেদাতের অন্তর্ভুক্ত করেন। যেকোন মাখলুকের যেকোন শক্তি ব্যবহার ও তা থেকে উপকৃত হওয়াটাকে তারা আল্লাহর উপর বিশ্বাস ও একত্ববাদের পরিপন্থী বলে মনে করেন। তাবিজ, গাছ-গাছড়া ইত্যাদি সমস্ত জিনিসকে তারা আমভাবে শিরক হিসেবে গণ্য করেন; মিলাদ ও মোনাজাতকে বেদাত হিসেবে বিবেচনা করেন। এ উভয় দলই বাস্তবতা থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছেন।

ইসলামের বিশুদ্ধ আকীদা হলো, বিশ্বাস ও ভরসা করতে হবে একমাত্র আল্লাহ তাআলার উপর। আল্লাহকেই শক্তির উৎস হিসেবে গণ্য করতে হবে। তবে আল্লাহর সৃষ্ট বস্তুসমূহকে আল্লাহর দেয়া নেয়ামত হিসেবে গণ্য করে ভোগ-ব্যবহার করা যাবে। আল্লাহর সৃষ্টি মানুষও একে অপরের কাছে সাহায্য চাইতে এবং আদান-প্রদান করতে পারে, তবে যে ভঙ্গিতে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া হয় সেই ভঙ্গিতে নয়। আল্লাহকে যেভাবে একমাত্র আশা-ভরসা হিসেবে গণ্য করে আল্লাহকেই প্রকৃত সাহায্যকারীরূপে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে তাঁর কাছে সাহায্য চাইতে হবে, মানুষের পারস্পরিক সহযোগিতা গ্রহণের ক্ষেত্রে ঐরূপ ধারণা ও বিশ্বাসের দ্বারা প্রভাবিত হওয়া যাবে না, বরং সেটা সাধারণ sense-এ হবে। আর আল্লাহ এ পৃথিবীতে যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, সেই সমস্ত বস্তুর মধ্যে বিরাজমান শক্তিকে আল্লাহ প্রদত্ত হিসেবেই বিশ্বাস করতে হবে এবং আল্লাহর শক্তির তুলনায় সেগুলো যে অতি নগন্য একথাও মাথায় রাখতে হবে। কিন্তু তাই বলে সৃষ্ট বস্তুর মাঝে বিদ্যমান যৎকিঞ্চিত শক্তির অস্তিত্বকে অস্বীকার না করলে যে তাওহীদপন্থী হওয়া যাবে না, তা নয়।

এককথায়, সালাফী মতাদর্শে বিশ্বাসী হলে জীবনটাই অচল হয়ে পড়বে— খাদ্য, ঔষধ বা যেকোন প্রয়োজনীয় জিনিসই গ্রহণ করা যাবে না। খাবার খেতে গেলে খাদ্যের মধ্যে যে জীবনীশক্তি আছে একথা বিশ্বাস করা হয়, ঔষধ খেলে ঔষধের মধ্যে যে নিরাময়শক্তি আছে তা বিশ্বাস করা হয়— এ যে রীতিমতো ভয়ানক শিরক! অপরদিকে সুফীবাদে দীক্ষিত হলে সুস্পষ্ট কুফরীতে নিমজ্জিত হয়ে দুনিয়া-আখেরাত নিশ্চিতভাবে বরবাদ হবে— পীর বা মুর্শিদকেই আল্লাহর আসনে বসিয়ে সেজদা করতে হবে। কারণ, গোঁড়া সুফীবাদীদের মতে, পীরই আল্লাহ। আর একথা তারা কোরআন থেকে দলীল (!) দিয়ে উত্তমরূপে বুঝিয়ে দিয়ে থাকে। D'oh

মুসলিমদেরকে ঈমান-আকীদার দিক থেকে ধ্বংস করবার পাশাপাশি উন্নতি-অগ্রগতি থেকে পিছিয়ে রাখা ও দাবিয়ে রাখার জন্যই একটা দলকে বেদাতের ধুয়া তুলে মুসলিমদের জীবনযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করার কাজে লাগিয়ে দেয়া হয়েছে। আরেকটি দলকে শিরক-বেদাতের ব্যাপারে অতিরিক্ত উদার বানিয়ে মুসলিমদেরকে সত্যিকার শিরক-বেদাতের মাঝে নিমজ্জিত করে ঈমান ধ্বংস করানোর বন্দোবস্ত করানো হয়েছে। একটা দল অতিরিক্ত তাওহীদপ্রেমি সেজে নবীর নামে দরূদ ও কাসিদা পাঠকেও শিরক-বেদাতের পর্যায়ভুক্ত করে ফেলেছে, আরেকটা দল অতিরিক্ত নবীপ্রেমি সেজে নবীকে সরাসরি আল্লাহর আসনে বসিয়েছে। যারা সত্যিকার অর্থেই এক আল্লাহকে মাবুদ হিসেবে মানেন এবং আল্লাহর নবীকে ভালোবাসেন, তারা নবীকে (সা) ভালোবাসার অপরাধে সালাফীদের কাছে মুশরিক ও বেদাতী সাব্যস্ত হচ্ছেন, আর নবী (সা)-কে আল্লাহর সমকক্ষ মানতে অস্বীকার করায় কথিত সুফীদের কাছে নবীর দুশমন হিসেবে আখ্যায়িত হচ্ছেন।

বিষয়: বিবিধ

৪৮০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File