অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী
লিখেছেন লিখেছেন ওবাদা বিন সামেত ২২ এপ্রিল, ২০১৭, ০৪:৫৩:৩৯ বিকাল
মূর্খতা ও চরমপন্থার প্রকৃতি ও স্বরূপ জানার জন্য কয়েকটি শিক্ষামূলক গল্প:-
অল্পবিদ্যা ভয়ঙ্করী
অজপাড়াগায়ের এক মূর্খ দরিদ্র সাধাসিধে মানুষ নুরু মিয়া। জীবনে কোনদিন কোরআন শরীফ শেখার সুযোগ হয়নি। ছেলেবেলায় কোনরকম হুজুরের কাছে আমসেপাড়া পড়ে দু'চারটা সূরা শিখেছিল, যা দিয়ে শুদ্ধ-অশুদ্ধ উচ্চারণে কোনরকমে নামাজটা চালাতে পারে। মধ্যবয়সে একদিন খেয়াল হলো, কোরআন শরীফের অর্থ একটু শেখা দরকার। কিন্তু লোকটা ছিল বেশ একটু অধৈর্য্য প্রকৃতির। পুরো কোরআন শরীফ বুঝে পড়ার মতন ধৈর্য্য বা সময় তার নেই। কৌতুহলবশত: কোরআনের অনুবাদ হাতে নিয়ে পৃষ্ঠা উল্টাতে লাগল। একনাগাড়ে পড়ার ধৈর্য্য না থাকায় বিক্ষিপ্তভাবে চোখ বুলাতে লাগল। কোরআনের একটা কথা কয়েকবার তার চোখে পড়ল, "যাকাত আদায় কর।" দেখে তো তার ভিমড়ি খেয়ে পড়ার অবস্থা। সে তো নেহায়েত দরিদ্র, যাকাত দেবে কোত্থেকে? কিন্তু সে ভেবে কুল পাচ্ছে না, কোরআন শরীফে এতবার যে হুকমটার কথা বর্ণিত হয়েছে, তা কি করে অগ্রাহ্য করা চলে? সে পণ করল, যে করেই হোক, এ হুকুমটা পালন না করে সে মরতে চায় না। কিন্তু তার এই শপথ ও চিন্তাটা যদি সুস্থ চিন্তায় স্বাভাবিক গতিতে পরিচালিত হতো, অর্থাৎ আল্লাহর নির্দেশিত ও অনুমোদিত হালাল পন্থায় নিজের অর্থনৈতিক সামর্থ্য অর্জনের মাধ্যমে মানুষকে যাকাত প্রদানের বাস্তব পন্থাতে অগ্রসর হতো, তাহলে সে সফল হোক বা না হোক, আল্লাহর কাছে সে কবুল হতো। সে যদি সুস্থ চিন্তার কোন হিতাকাঙ্ক্ষী মানুষের কাছে পরামর্শ চাইতো, তাহলেও কোন গঠনমূলক বুদ্ধি পেতে পারত। কিন্তু সে উন্মাদ ও মাতাল হয়ে হন্যেহারা হয়ে দৌড়াতে লাগল দিগবিদিক হয়ে। শেষে গ্রামের শেষ মাথায় গিয়ে পড়ল এক ফটকা লোকের খপ্পরে। উল্লেখ্য, ফটকা লোকটির স্বভাব ছিল গ্রামের মানুষের মধ্যে চোগলখুরীর মাধ্যমে বিবাদ লাগিয়ে দেয়া এবং তারপর তাদের মধ্যে সালিস করে দিয়ে কমিশন গ্রহণ করা। গ্রামের মানুষজন একপর্যায়ে তার ফটকামি ও ফাজলামি ধরতে পেরে তাকে সবাই মিলে বয়কট করে এবং সমাজ থেকে বিচ্যুত করে গ্রামের এক কোণায় জঙ্গলে আশ্রয় নিতে বাধ্য করে। তাই গ্রামবাসীদের উপর প্রতিশোধ নেবার একটা সুপ্ত বাসনা স্বাভাবিকভাবেই তার মনে ক্রিয়াশীল ছিল। উপরন্তু সেই ফটকা লোকটির ফটকামি ধরতে পারা ও তাকে সমাজচ্যুত করবার মূল নায়ক ছিলেন আবার এই নুরু মিয়ারই এক মামা। তাই এই বেচারাকে হাতে পেয়ে ফটকা লোকটি যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির নাগাল পেয়ে গেল। এক ঢিলে কটা পাখি মারা যায়, সেই হিসাব কষতে লাগল। নুরু মিয়ার চিন্তা ও উদ্বেগের সাথে সেও সায় দিল ত্রিগুণ গতিতে। বলল, "ভাই, আসলেই তো এ বড় চ্নিতার বিষয়। আল্লাহ পাকের এত বড় একটা হুকুম- আদায় না করে মরলে যে কাফের হয়ে মারা যাবে, নির্ঘাত জাহান্নামেরই লাকড়ি হতে হবে। তোমাকে তো যে করেই হোক, যাকাত আদায় করতেই হবে। এ কাজে জীবনের পরোয়া করলেও চলবে না।" নুরু মিয়া যেন মনের মত এক গুরু পেয়ে গেল। "বলুন হুজুর, আমি কী করতে পারি? দয়া করে যেকোন একটা উপায় বাতলে দিন ওস্তাদ!" ফটকা লোকটি মনে মনে বলে, "তা করতে কি আর দেরি করি বা কিপটেমি করি!" কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে ভেবে চিন্তে ফটকা লোকটি একটি গলা খাকড়ানি দিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে, "শোন বাছা, যা বলি মন দিয়ে শোন। তুমি কোনদিন আর পাঁচজনের মত সম্পদশালী হয়ে যাকাত দেবার সামর্থ্য অর্জন করতে পারবে, এ সাধ্য তোমার নেই। তোমার যা বয়স হয়েছে, যে কয়টা দিন হায়াত তোমার আছে, এর মধ্যে তুমি যাকাত দেবার মতন বড়লোক হবার কোনই সম্ভাবনা নেই।" শুনে মুষড়ে পড়ল নুরু মিয়া এবং উদ্বেগের সাথে জিজ্ঞাসা করল, "তাহলে?" ফটকা লোকটি উত্তর করল, "উপায় নিশ্চয়ই একটা আছে। তুমি বরং একটা কাজ কর, আজ হতেই বড়লোক হওয়ার কাজে নেমে পড়। তুমি এখনই কানা পলাশের সাথে যোগাযোগ কর এবং তার সাথে কাজে নেমে পড়।" উল্লেখ্য, কানা পলাশ হচ্ছে একজন সর্বহারা সদস্য, যে অতীতে সন্ত্রাস করতে গিয়ে ধরা পড়ে গণপিটুনিতে একটা চক্ষু হারিয়ে নাম হয়েছে কানা পলাশ। যেমন কথা, তেমন কাজ। কানা পলাশের দলে যোগ দিয়ে নুরু মিয়া ডাকাতিতে নেমে পড়ে। উদ্দেশ্য, ডাকাতি করে সম্পদশালী হতে পারলেই সে যাকাত প্রদান করতে পারবে। কিন্তু ডাকাতি শেষে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে যায় সে। পাবলিকের ধোলাই খেয়ে মুমুর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়।
নুরু মিয়ার বড় মামাতো ভাই বাদশা মিয়া থাকেন শহরে। তিনি মোটামুটি ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত। তাকে জানানো হলো তার ভাইয়ের এ দশার কথা। তিনি দেখতে আসতে অস্বীকার করলেন। ভীষণ ক্ষেপে গিয়ে বললেন, "কোন ডাকাত ভাইয়ের মুখদর্শন করতে আমি রাজি নই।" কিন্তু শেষমেষ কৌতুহলবশত যেতে রাজি হয়ে গেলেন। হাসপাতালের বেডে ভাইকে দেখতে এসে বললেন, "এ তুই কী করলি রে ভাই! আমাদের মান-সম্মান সব ধুলায় মিশিয়ে দিলি? তোর কোন অভাব থাকলে আমাদের বলতি, আমরা তোর খাওয়া-পরার ব্যবস্থা করতাম!" নুরু মিয়া জবাব দেয়, "আরে ভাই, ডাকাতি করেছি কি নিজের জন্য নাকি?" বাদশা মিয়া জিজ্ঞেস করলেন, "তাহলে তুই এসব করতে গেলি কিসের জন্য?" আহত ও মরণাপন্ন নুরু মিয়া কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে দৃঢ়তার সাথে জবাব দেয়- "আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।" শুনে বাদশা মিয়ার তো চোখ কপালে উঠে গেল। "ডাকাতি, সেও আবার আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য! তোর মাথা-মুণ্ডু কি খারাপ হয়ে গেল নাকি? কোথায় পাস এসব আজগুবি ভুম-ভাং মার্কা কথা?" নুরু মিয়ার সাফ জবাব- "কোরানে পাইছি।" বাদশা মিয়া তীব্র ক্ষেপে গিয়ে শাসালেন- "ওরে হতভাগা! এসব তুই কী বলছিস? তুই কি সজ্ঞানে বলছিস, নাকি বেহুঁশ হয়ে প্রলাপ বকছিস?" নুরু মিয়া পাল্টা নসীহত করতে শুরু করে বড় ভাইকে, "কেন দাদা! আপনি কি কোরআনে পড়েননি যে, কতবার সেখানে যাকাত প্রদানের কথা বলা আছে? হতভাগা কে; আমি, নাকি আপনি?" বাদশা মিয়া বললেন, "হায়রে পোড়া কপাল! যাকাত কি তোর জন্য? যাকাত দিতে কি তোকে বলা হয়েছে নাকি?" নুরু মিয়া বলে, "তো কাকে বলা হয়েছে? আমি কি মুসলিম নই? আমি কি কোরআনের হুকুমের আওতার বাইরে? আমার জন্য কি আল্লাহর বিধানে কোন ছাড় আছে নাকি? আমি কি কোরআনের বিধান না মানলে গুনাহগার হব না?" আসলে মূর্খ ও গোড়া মানুষদের মধ্যেই বিদ্বান সাজা ও মানুষকে জ্ঞান বিলানোর প্রবণতা বেশি পরিলক্ষিত হয়। এদিক থেকে নাস্তিকরা যেমন, ধর্মের মনগড়া ব্যাখাকারী খামখেয়ালী স্বভাবের লোকগুলোর আচরণও অনেকটা তেমনই। এ ব্যাপারে সুফী-সালাফী, দেওবন্দী-জামাতী, শিয়া-ওহাবী কোন ভেদাভেদ নেই। কোন ব্যাপারে পরিপূর্ণ নিশ্চিত জ্ঞান লাভ না করেই (এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে গণ্ডমূর্খ হয়েও) নিজেকে সবচেয়ে বড় জ্ঞানী মনে করাটাই এদের প্রধান সমস্যা এবং বলতে গেলে মানুষের এই নেচারটাই সর্বযুগে সকল প্রকার জাহেলিয়াতের মূল উৎস।
যাহোক, হাসপাতালের বেডে কাতড়ানো বেয়াড়া ও গোয়ার টাইপের ছোট ভাইটার কথায় আরো কোন কথা বলা, যুক্তি পেশ করা বা নসীহত করবার মতন রুচি ও মানসিকতা না থাকলেও বড় ভাই হিসেবে ছোট ভাইকে হেদায়েত করবার শেষ চেষ্টা হিসেবে বাদশা মিয়া সকল রাগ-ক্ষোভ ও জেদ গলার নিচে চেপে রেখে তার জাহেল ভাইটিকে উদ্দেশ্য করে বললেন, "দেখ ভাইজান! যাকাত তো আসলে তাদের জন্য, যারা সম্পদশালী। আমরা কোরআনে পেয়েছি যাকাত প্রদানের হুকুমের কথা। আর এ হুকুম পালনের পদ্ধতি ও মাসআলা জেনেছি নবীর হাদীস থেকে। কমপক্ষে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদের অধিকারী যে হবে, তার জন্যই যাকাত ফরয হবে। এছাড়া এ ব্যাপারে তোমার কমন সেন্স কী বলে? সবাই যদি শুধু যাকাত দেয়, তাহলে যাকাত নেবেটা কে? আল্লাহ যদি নিজ অনুগ্রহে তোমাকে কখনো সম্পদশালী করেন, তুমি যদি স্বাভাবিক গঠনমূলক হালাল পন্থায় সম্পদশালী হতে পার, তখন যাকাতের বিধান তোমার উপর প্রযোজ্য হবে। এমন কোন বিধান তো আল্লাহ দেননি যে, যেকোন প্রকারে মানুষকে মেরে কেটে ছিনতাই করে হলেও তোমাকে যাকাত দেবার মতন সক্ষমতা অর্জন করতেই হবে!" এবার দমল নুরু মিয়া। ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে রইল বড় ভাইয়ের দিকে। কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে সে। অনুতপ্ত হয়ে বলতে থাকে, "এ আমি কী করলাম রে ভাই! আর কেউ যেন আমার মতন বিটকেলী কাম না করে।"
উপরের গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। যাকাত নিয়ে এরকম আহাম্মকি করবার মতন মানুষ বাস্তবে হয়তো নেই। কিন্তু অন্য অনেক বিষয় নিয়ে ঠিক এ জাতীয় বেক্কলী কাজ করবার প্রবণতা অনেক মানুষের মধ্যেই পরিলক্ষিত হয়। যে বিষয়টা বোঝানোর জন্য আমি এ গল্পটির অবতারণা করেছি, তাহলো, যাকাতের বিষয়টি যেমন, আল্লাহর আইন প্রয়োগের বিষয়টিও ঠিক তেমনই। অর্থাৎ, আইন প্রয়োগের দায়িত্ব আল্লাহ যার হাতে দিয়েছেন, এ দায়িত্বটিও তার উপরই বর্তাবে। রাষ্ট্রক্ষমতায় যারা থাকবে, তাদের দায়িত্ব আল্লাহর আইন অনুসারে বিচার-ফয়সালা করা। এর ব্যত্যয় ঘটলে শাসনক্ষমতায় যারা নিয়োজিত আছেন, তারা গুনাহগার হবেন। রাজার ভুলের জন্য প্রজাদের পাপ হবে না। আল্লাহর আইন উপেক্ষা করার কারণে কাফের, ফাসেক বা জালেম যাই হোক, তারা হবেন; এর জন্য আপনার-আমার কোন পাপ হবে না। এছাড়া কেউ কাফের-ফাসেক হলেই যে তাকে হত্যা করতে হবে, এমনও কোন নির্দেশ নেই। আল্লাহর আইন দিয়ে বিচার-ফয়সালা না করবার কারণে যাদের সম্পর্কে কাফের, ফাসেক ও জালেম সাব্যস্ত করে আয়াত নাযিল হয়েছিল, তাদেরকেও এ কারণে হত্যা বা বড় কোন পার্থিব শাস্তি প্রদান করা হয়েছে এমন কোন তথ্য আমাদের জানা নেই। যাকাত প্রদানের জন্য যেকোন প্রকারে সম্পদের মালিকানা অর্জন করতেই হবে এমন প্রবণতা যেমন হাস্যকর, ঠিক তেমনি আল্লাহর বিধান কার্যকর করার জন্য যেকোন প্রকারে রাজার গদির দখল নিতেই হবে এমন চিন্তারও কোন মানে নেই। আল্লাহর আইন প্রবর্তনের নিয়তে মানুষ হত্যা করে ক্ষমতা দখলের চেষ্টা করা ডাকাতি করে যাকাত প্রদানের সামর্থ্য অর্জন করবার মতই অযৌক্তিক চিন্তা। আর জিহাদের ব্যাপারেও কথা হলো, কোরআনে এর নির্দেশ অবশ্যই রয়েছে, কিন্তু তা কখন কোথায় কিভাবে করতে হবে, তা বিবেচনার বিষয়। একটা কিছু হাতে নিয়ে যখন যেখানে মন চায় ফাটিয়ে বেড়ানোর নাম জিহাদ নয়। জিহাদ হচ্ছে অন্যায়কে প্রতিরোধ করা, অন্যায় কাজে লিপ্ত হওয়া নয়। কোন দেশের শাসক বা কোন সম্প্রদায় যতই ধর্মবিমুখ হোক, যদি আমাদের ধর্মীয় জীবন বা পার্থিব জীবনের নিরাপত্তার জন্য হুমকি বা বাধা সৃষ্টিকারী না হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করার কোন নিয়ম নেই।
কোন কিছু নিয়ে অতি গরজের বশে আমরা যেন কোন সুযোগসন্ধানী ফটকা লোকের খপ্পরে না পড়ি, কোন মতলববাজ মহলের অশুভ মতলব হাসিলের দাবার ঘুঁটি না হই, সে ব্যাপারে আমাদের সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। কোরআন-হাদীসের পূর্ণ জ্ঞান অর্জন করা এবং আল্লাহর কাছে হেদায়েত প্রত্যাশা করা ও ফেতনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করাই আমাদের এসব থেকে মুক্ত থাকার একমাত্র পথ।
অপাত্রে প্রতিশোধ
এলাকার এক শীর্ষ সন্ত্রাসী ট্যাপা জাহাঙ্গীর। আকবর মাস্টারের ছোট্ট একতলা টিনের ঘর নির্মাণ করতে দেখে বাধ সাধে সে। ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে বসে। এতে অপারগতা প্রকাশ করায় আকবর মাস্টারের ছেলে মানিককে ধরে নিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে দেয় ট্যাপা জাহাঙ্গীর ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা। আকবর মাস্টার এর প্রতিশোধ নেবার এবং সন্ত্রাসী লোকটাকে জব্দ করবার উপায় খুঁজতে থাকেন এবং রীতিমতো দিগবিদিক হয়ে পড়েন।
ঘটনার দু'মাস পর একদিন রাস্তায় দেখা হয় ট্যাপা জাহাঙ্গীরের সাথে। তাকে লক্ষ্য করে আকবর মাস্টার বলেন, "জানিস হারামজাদা, আমি তোকে কতখানি ঘৃণা করি! জাহাঙ্গীর নামের একটা ছেলেকে আমি পরীক্ষায় ফেল করিয়ে দিয়েছি। বেচারার আর কোন অপরাধ ছিল না, শুধুমাত্র তোর সাথে নামের মিল থাকার কারণেই আমি তাকে শায়েস্তা করেছি। বুঝলি কিছু?" ট্যাপা জাহাঙ্গীর কোন কথা বলে না। শুধু একটা বিদ্রূপমাখা মুচকি হাসি দিয়ে কেটে পড়ে।
দিন শেষে বাড়ি ফিরে ট্যাপা জাহাঙ্গীর ঘটনাটি তার স্ত্রীর কাছে খুলে বলে। স্ত্রী চমকে উঠে বলে, "এ তো ভারী উদ্বেগের কথা রে বাপু! তোমার উপর যার এতটাই আক্রোশ যে, শুধু তোমার সাথে নামের মিলের কারণে আরেকজনকে বলির পাঠা বানায়, সে তোমাকে হাতের মুঠোয় পেলে না জানি তোমার কী হাল করে বসে!" শান্ত ও হাস্যোজ্জ্বল কণ্ঠে ট্যাপা জাহাঙ্গীর জবাব দেয়, "Don't Worry, My Dear! যে লোক মনের ঝাল বেজায়গায় মিটায়, সে কোনদিন জায়গামত শোধ নিতে আসবে না। এমনকি সুযোগ পেলেও না।"
বেশি ভালো ভালো নয়
সালাম গাজী বাণিজ্য করতে দেশে দেশে ঘুরে বেড়ায়। একটি গ্রামে গিয়ে দেখতে পায়, গৃহবধূ মালেকা বানু এক বুড়ির সেবা-শুশ্রূষা করছে। জিজ্ঞেস করে জানতে পারল, বুড়িটি একটি শিশু পাচারকারী চক্রের সদস্য, যারা শিশুদেরকে ধরে নিয়ে তাদের অঙ্গ বিক্রি করে দেয়। মালেকা বানুর শিশুপুত্রকে অপহরণ করতে এসে গণপিটুনি খেয়ে আহত হয়েছে।
সালাম গাজী এমন মহৎপ্রাণ মহিয়সী নারীকে দেখে যারপরনাই মুগ্ধ হলো। সে জিজ্ঞেস করে জানলো, মালেকা বানুর এক বিবাহযোগ্য বড় ছেলে আছে। সালাম গাজী ভাবলো, যে নারী নিজের শিশুর হত্যার চেষ্টাকারী অপহরণকারী দুর্বৃত্তকে সেবা দিতে পারে, তার কাছে আমার মেয়ে সবচেয়ে সুখে-শান্তিতে ও নিরাপদে থাকবে।
সালাম গাজীর এলাকার এক মুরুব্বী সব শুনে বললেন, "বেশি বালো ভালো নয় রে, বাবা! যার বিচারবোধ নেই, যে অপাত্রে দয়া করে, সে সুপাত্রের কদর বুঝবে না। যে ক্ষমার অযোগ্য অপরাধীকে সেবা দিতে পারে, সে বিনা অপরাধে বা সামান্য দোষত্রুটির জন্য মানুষকে দণ্ডিত করতে দ্বিধা করবে না।" কিন্তু সালাম গাজীর কানে সেই কথা ঢুকলো না। সে তার সিদ্ধান্তে অনঢ়। সে তার মেয়ে হাসনাকে মালেকা বানুর বড় ছেলের সাথেই বিবাহ দিল।
বিয়ের পর কিছুদিন যেতেই শুরু হলো হাসনার দুর্দিন। সাংসারিক কাজে সামান্য ভুল-ভ্রান্তি হলেই, পান থেকে চুন না খসতেই শুরু হলো কথায় কথায় গালমন্দ। একদিন হাসনা রান্নার জন্য তেল নামিয়ে তেলের বোতলটি ভুলবশত যথাস্থানে না রাখায় তার শাশুড়ী রাগের মাথায় গরম তেল ঢেলে দেয় হাসনার গায়ে।
এবার সালাম গাজী বুক চাপড়ে মরে। "হায় আল্লাহ, এ কী করলাম!"
"তাহলে এরা জঙ্গি হতো না"
আইএস জঙ্গি রাস্তায় একটা গাড়ি থামিয়েছে। গাড়ির ভিতরে এক খ্রিস্টান দম্পতি ছিলেন। জঙ্গি তাদের গাড়ি থেকে টেনে বের করে জিজ্ঞেস করল, “মুসলমান নাকি?” ভদ্রলোক উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ’। জঙ্গি এবার বুদ্ধি করে জিজ্ঞেস করল, “কোরআনের একটা আয়াত বলো তো দেখি!” ভদ্রলোক চোখ বন্ধ করে, বাইবেলের একটা বড় প্যারাগ্রাফ বলে গেলেন! জঙ্গি খুশি হয়ে বললেন, “আলহামদুলিল্লাহ্! তোমরা এখন যেতে পারো।” গাড়িতে উঠে ভদ্রলোকের স্ত্রী জিজ্ঞেস করলেন, “তোমার সাহস তো কম নয়! জঙ্গি যদি বুঝে যেত যে, এটা কোরআনের আয়াত না?” ভদ্রলোক উত্তর দিলেন, “যদি সে আসলেই কোরআন জানত, তাহলে আজ সে জঙ্গি হত না।"
খুঁতখুঁতেপনা ও বাছাবাছির পরিণতি
(১) একদল পথিক আহারের সন্ধানে বাড়ি বাড়ি ঘুরছিল। কিন্তু তারা ছিল বড়ই খুঁতখুঁতে। সবার বাড়িতে আহার করে না। বিশেষ করে বেনামাজীর বাড়িতে খায় না। অনেক খুঁজেফিরে একটা মন:পুত বাড়ি পাওয়া গেল। এক বুড়ি তাদেরকে খেতে দিল। খাবার পরিবেশন ও মেহমানদারির দায়িত্ব দেয়া হলো বুড়ির নাতনিকে। খাওয়া শেষে মেহমানরা বুড়ির নাতনিকে জিজ্ঞেস করে, "এত মজার খাবার কোথায় পেলে?" মেয়েটি জবাব দিল, "পাশের হিন্দু বাড়ির ছানা (উচ্ছিষ্ট) ভাত।" শুনে রেগে গিয়ে মেহমানরা খাবারের পাত্রটি ভেঙ্গে ফেলল। বুড়ির নাতিন ডাক দিয়ে বলল, "নানী! বাসনটা ভেঙ্গে ফেলল।" বুড়ি জিজ্ঞেস করল, "কোন্ বাসনটা?" নাতনি জবাব দিল, "যেইডায় আপনে মোতেন (প্রস্রাব করেন)।"
(২) এক লোক বিয়ের ব্যাপারে ছিল খুবই খুঁতখুঁতে। কোন পাত্রীই তার পছন্দ নয়। সে চায় এমন এক পর্দানশীন বউ, যে কিনা কোনদিন সূর্যের মুখ দেখেনি। অবশেষে এমন একজন বউ পাওয়া গেল, যে কোনদিন নাকি ঘর থেকে বের হয়নি। বিয়ের কয়েক বছর পর লোকটি ভাবল, এখন তো এ আমার আপন হয়েই গেছে, এখন একে নিয়ে ঘরের বাইরে বের হওয়া যায়, মানে সূর্যের মুখটা এখন দেখালে সমস্যা নেই। বাইরে গিয়ে রাস্তাঘাটে অসামাজিক কাজের দৃশ্য দেখে মেয়েটি জিজ্ঞেস করল, এসব কী হচ্ছে? লোকটি বলল, "তুমি তো অনেক নিষ্পাপ মেয়ে, তুমি এসব বুঝবে না। এসব মেয়েলোকেরা যা করে, তার বিনিময়ে টাকা পায়।" মেয়েটি জিজ্ঞেস করল, "কত টাকা পায়?" ছেলেটি বলল, "এই ধর একেকবারের জন্য ১০০ টাকা করে পায়।" তখন মেয়েটি উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলে উঠল, "ওমা, তাহলে আমি তো আমার চাচাতো ভাইয়ের কাছে হাজার হাজার টাকা পাই!"
আমাদের বাস্তব জীবনেও দেখা যায়, যারা বেশি খুঁতখুঁতেপনা ও বাছাবাছি করে, তাদের কপালে তুলনামূলক বেশি খারাপটাই জোটে। যারা ছোটখাটো দোষত্রুটির অযুহাত দিয়ে মানুষকে বর্জন করে বা neglect করে, তারা তুলনামূলক বড় কোন অপশক্তিকে নির্দ্বিধায় সাদরে গ্রহণ করে বসে। ব্যক্তিগত জীবনে দেখবেন, যারা এতই পরহেজগারি দেখায় যে, বেনামাজির ঘরে খায় না বা বেনামাজীর গোষ্ঠী উদ্ধারে ব্যস্ত থাকে (এখানে বেনামাজীদের প্রতি সমর্থন বা সহানুভূতি প্রদর্শন করা কিংবা নামাজ না পড়াকে সহজভাবে মেনে নিতে বলা আমার উদ্দেশ্য নয়), এমনকি বোরখা বা স্কার্ফ পড়ায় শৈথিল্য দেখলে নাক ছিটকায়, তারা শেষ পর্যন্ত আরো বড় মাপের কুচক্রী ও ধর্মদ্রোহী ব্যক্তিদের ক্রীড়নকে পরিণত হয়। যারা বিয়ের ব্যাপারে বেশি খুঁতখুঁতে হয়, বেশি পর্দানশীল বউ আনতে চায়, তাদের কপালেও অনেক সময় ভ্রষ্টাচারী ও কুটনী স্বভাবের বউ জুটে যায়। আবার জাতীয় জীবনেও দেখবেন, যারা দেশের শাসন ও বিচার ব্যবস্থা নিয়ে বেশি খুঁতখুঁতে মনোভাব প্রকাশ করে, দেশে ইসলামী রাষ্ট্র না থাকা বা নারী নেতৃত্ব থাকার জন্য মন গোমড়া করে থাকে, তারা ইসলামবিরোধী ও মুসলিমবিদ্বেষী রাষ্ট্রগুলোকেই হয় আশ্রয়ের জন্য বেছে নেয়, অথবা ইসলামের শত্রুদেরই মদদপুষ্ট হয়ে মুসলমানদের মধ্যে হানাহানি ও রক্তারক্তি ঘটাতে উদ্যত হয়। দেশকে বেশি ইসলামী বানাতে গিয়ে ধর্মকর্ম পালনের যেটুকু সুযোগ ও স্বাধীনতা ছিল, সেটুকুও যাতে নষ্ট হয় সেই ব্যবস্থা করে। দেশকে তুলনামূলক অধিক ইসলামবিরোধী অপশক্তির হাতে তুলে দিতে সক্রিয় হয়।
"পাক্কা মুসলিম হ্যায়"
একাত্তরে পাকবাহিনী একটি বাড়িতে তল্লাশি করতে প্রবেশ করে। ঘরের দেয়ালের দিকে তাকিয়ে দেখতে পায় আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইষলামের ছবি। রাইফেলের বেয়নেট দিয়ে ছবিতে গুঁতো মারতে মারতে বলতে থাকে- "ব্যাটা মালাউন হ্যায়"। এরপর তাদের চোখ পড়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ছবির উপর। আনন্দ ও উৎফুল্লভরা কণ্ঠে বলে ওঠে- "পাক্কা মুসলিম হ্যায়।"
বেকুব ও মাথামোটা লোকেরা মানুষের বাহ্যিক সুরত ও বেশভূষা দেখেই মানুষকে বিচার করে। ভাল-মন্দ, আপন-পর ও মুসলিম-অমুসলিম বিচার করে দাড়ি ও বোরখা দেখে। ফলে তারা সহজেই ধোঁকায় পড়ে যায় এবং বিটকিলি মার্কা কার্যকলাপে লিপ্ত হয়। বর্তমান যুগে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তালেবান ও আইএসের রামছাগলগুলো দাড়ি, বোরখা ও পাগড়ী দিয়ে মানুষকে বিচার করে, কখনো বা গায়ের চামড়া ও জাতীয়তা দেখে মানুষকে শত্রুর চর সাব্যস্ত করে গলা কাটে, আর সত্যিকারের শত্রুদেরকে ঠিকই আপন ভেবে মাথায় তুলে জামাই আদরে রাখে। আবার পারিবারিক ক্ষেত্রেও কিছু বেকুব শার্ট বনাম পাঞ্জাবী আর জামা বনাম বোরখা দিয়ে মানুষের ধার্মিকতা বিচার করে, পাঞ্জাবী-টুপি বা বোরখা-হিজাব পড়ায় ত্রুটি দেখলে ছেলেটা বা মেয়েটা বেলাইনে চলে গেল এমন মনোভাব দেখায়, অথচ সত্যিকারের ধর্মদ্রোহী ভ্রষ্টাচারী জালেম ব্যক্তিকে সসম্মানে লালন করে।
"আমি তো কেবল মাথা ঢাকার শর্তে এসেছিলাম"
হাবীব সাহেব ও তার মা-বোনেরা ছিলেন খুবই খুঁতখুঁতে। বউ আনতে হবে এমন, যে বোরখা ছাড়া বের হয় না। আমাদের পরিবারে আসতে হলে পর্দা করতে হবে, নামাজ পড়তে হবে- ইত্যাদি শর্ত। অবশেষে বউ আনা হলো। বউ শর্ত মোতাবেক বোরখা দিয়ে মুখমণ্ডল সম্পূর্ণ বা আংশিক ঢেকে বের হয়। নামাজও পড়ে মানুষজনের উপস্থিতিতে। একদিন এক বিকেলে বিছানায় বউকে পাওয়া গেল এক ধর্মভাইয়ের সাথে। স্বামী ও শাশুড়ী-ননদগণ তো রেগে আগুন! "বেঈমান, বিশ্বাসঘাতক!" ইত্যাদি বলে বউকে শাসাচ্ছেন সবাই মিলে। বউ শান্ত কণ্ঠে জবাব দেয়, "এত ক্ষেপছেন কেন আপনারা? আপনারা বিয়ের সময় আমাকে শুধু মাথা ঢাকার শর্ত দিয়েছিলেন, পাছা ঢাকার শর্ত তো দেননি! আপনারা শুধু আমাকে পর্দা রক্ষা করতে বলেছিলেন, সেই শর্ত আমি পূরণ করেছি, কিন্তু সতীত্ব রক্ষার কোন শর্তের কথা তো আমি জানতাম না!"
এরপর একদিন হাবীব সাহেব তার শিশুপুত্রটিকে জুমার নামাজের জন্য মসজিদে যেতে ডাকলেন। ছেলেটিও উৎফুল্ল ও স্বত:স্ফূর্তভাবে গোসল করে বাবার হাত ধরে মসজিদে রওয়ানা দিতে উদ্যত হলো। এমনি সময় ছেলের মা সামনে এসে দু'হাত দিয়ে পথরোধ করে দাঁড়ালো। "পড়া নাই, লেখা নাই, শুধু সুফিগিরি দেখালে হবে? নামাজে যাবার দরকার নেই, বই-খাতা নিয়ে পড়তে বস।" হাবীব সাহেব থমকে গেলেন। স্ত্রীর পরকীয়া না হয় কোনরকম হজম করা যায়, কিন্তু বাচ্চাকে ভাল হতে বা ভাল থাকতে দেবে না- এ কী মেনে নেবার মতন বিষয়? হাবীব সাহেব অগ্নিশর্মা হয়ে বলে উঠলেন, "তুমি কিন্তু সীমা অতিক্রম করছ। অনেক কিছু আমি সহ্য করে যাচ্ছি, অনেক বিষয়ে ছাড় দিয়েছি, কিন্তু তাই বলে সব ক্ষেত্রে তোমার খবরদারি ও মাতবরি চলবে- এ হতে পারে না" বউ তখন জবা
"কত বড় ত্যাগী মা!"
অতি পরহেজগারির ফল
তাকওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের করণীয় হলো, প্রথমে অধিক গুরুতর বিষয়গুলো পরিহার করতে হবে। গুরুতর হারাম ও ঘৃণ্য বিষয়গুলো থেকে বেঁচে থাকাটা নিশ্চিত করার পর তুলনামূলক ছোটখাটো ভুল-ত্রুটি থেকে বেঁচে থাকায় মনোযোগী হতে হবে। কিন্তু অনেক সময় ছোট বিষয়গুলোতে অধিক সতর্কতা দেখাতে গিয়ে বড় বিষয়গুলোতে লিপ্ত হয়ে পড়ার ঘটনা ঘটে থাকে। এ প্রসঙ্গে কয়েকটি গল্প নিম্নে বর্ণনা করা হলো:-
(১) 'আজল করা মাকরূহ': কোন এক গ্রামে এক লোক অপকর্ম করে এক মেয়েলোকের পেট বাজানোর পরে লোকটির বন্ধুরা ভৎসনা করে বলল, "হতভাগা! তুই আজল করলি না কেন?" লোকটি জবাব দিল, "শুনেছি, আজল করা মাকরূহ।" এখানে লক্ষণীয় যে, লোকটি চরম ও নিশ্চিত হারাম কর্ম ব্যভিচারে লিপ্ত আছে সেদিকে হুঁশ নেই, অথচ আজল করা মাকরূহ এ বিষয়টাতে সে যথেষ্ট সতর্ক ও সচেতন। এছাড়া কেউ যদি জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর ব্যবহারকে নাজায়েয মনে করে পরিহার করে, কিন্তু পরবর্তীতে গর্ভপাত বা সন্তান হত্যায় লিপ্ত হয়, তার অবস্থাও ঐ লোকটির মতই।
আজল বা জন্মনিয়ন্ত্রণ যখন প্রয়োজন হয়, তখন তাকে অন্যায় বা পাপ মনে করে পরিহার করা হলে পরবর্তীতে গর্ভপাত বা শিশুহত্যার মতন আরো অধিক গুরুতর পাপে লিপ্ত হবার আশংকা থাকে। সিজার যখন আবশ্যক হয়, তখন সিজারকে ক্ষতিকর মনে করে ভয় করে পরিহার করলে পরে আরো অধিক মারাত্মক ভয়ংকর ক্ষতির মুখে পড়তে হয়; সেটা হতে পারে মা ও শিশুর মধ্যে যেকোন এক বা দু'জনের প্রাণহানি বা পঙ্গুত্ব, অথবা সিজারিয়ান অপারেশনের চাইতেও অধিক জটিল ও ক্ষতিকর সার্জারীর (যেমন- Episiotomy ইত্যাদি) সম্মুখীন হবার মধ্য দিয়ে। ঠিক একইভাবে, শরীয়তসম্মত তথা শরীয়তে অনুমোদিত বা নির্দেশিত পন্থায় ইসলাম ও মানুষের অধিকার আদায় করা এবং ইসলাম ও মানবতার শত্রুদের প্রতিরোধ করার বিষয়টিকে যখন পরিহার করা হয়, তখন শেষ পর্যন্ত এমন অবস্থায় পড়তে হয় যে, শরীয়তবিরোধী পন্থায় মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়ে সেটাকে আবার শরীয়তের দ্বারা জায়েজ করে নেবার উপায় খুঁজতে হয়।
(২) এক ছেলেকে স্কুল জীবনে একটি মেয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু ছেলেটি নিজের পছন্দে বিয়ে করাটাকে নাজায়েয মনে করত। সে নিজেকে খুবই তাকওয়াশীল ও পরহেজগার ভাবত যে, সব ছেলেমেয়েরা খুব খারাপ, তারা একে অপরের সাথে অবাধে মেলামেশা করে, প্রেম করে বেড়ায়, অথচ আমি এতই ভালো ছেলে যে, কোন মেয়ের সাথে কথাই বলি না। অথচ ছেলেটি নিজের গোপন অঙ্গকে পাপকর্ম থেকে বাঁচিয়ে রাখেনি। সময়মত বিয়ে না করাতে সে আরো অধিক অবক্ষয়ে নিপতিত হয়েছে।
(৩) অনেক সময় কৃচ্ছ্বতাই মানুষকে স্বেচ্ছাচারিতার দিকে নিয়ে যায়, অতি দয়া বা অপাত্রে দয়া নির্দয়তার কারণ ঘটায়। এক লোক এক মহিলাকে বিয়ে করে। বিয়ের পর বউটি বেঁকে বসে, "এ বিয়েতে আমার কোন মত ছিল না, আমাকে জোর করে বিয়ে দেয়া হয়েছে।" লোকটি ভাবল, মেয়েটির অভিভাবকরাও একে জোর করে বিয়ে দিয়েছে, এখন আমিও যদি তার উপর জবরদস্তি করে নিজের অধিকার আদায় করি, তাহলে তো এটা ধর্ষণের মতই হয়ে গেল। তাই সে আর স্ত্রীর দিকে হাত বাড়ালো না। লোকটির এ সরলতা ও উদারতাকে দুর্বলতা ও অক্ষমতা ভেবে সদ্য বিবাহিত বউটি বিদায় নিল। লোকটি আবার বউবিহীন হয়ে পড়ল এবং বয়সের চাহিদা মেটাতে গিয়ে অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ল। নিজের বিয়ে করা বউয়ের উপর জোর খাটানোটাকে সে জুলুম মনে করল, দজ্জাল টাইপের একটা বেয়াদব মহিলাকে কষ্টদান করাটাকে সে পাপ মনে করল; অথচ নিজের জৈবিক চাহিদা পূরণে বিবাহ বহির্ভূতভাবে নিরপরাধ নারীদের ক্ষতিসাধনে সে পিছপা হলো না।
এ গল্পের শিক্ষা হল, যথাস্থানে কঠোর হতে না পারলে ভুল জায়গায় কঠোরতায় লিপ্ত হবার আশংকা থাকে। যারা জালেম ও অপরাধীদের প্রতি মানবিকতা দেখায়, তারা মজলুম ও নিরপরাধ মানুষের উপর খড়গহস্ত হয়। যারা শান্তিবাদী সেজে উদারতার বাণী শুনিয়ে অনিষ্টকারী শত্রুর উপর সহনশীলতা অবলম্বনের উপদেশ দেয়, তারা আপনজন ও ভালো মানুষের উপর নিষ্ঠুরতায় লিপ্ত হয় বা অন্য কাউকে নিষ্ঠুরতা চালানোর সুযোগ করে দেয়। অত্যাচারী ও অনিষ্টকারী শত্রুকে হাতের মুঠোয় পেয়ে যারা ছেড়ে দেয়, তারা তাদের ক্রোধরিপু ও প্রতিশোধস্পৃহা নিরপরাধ মানুষের উপরই চরিতার্থ করবে। আবার যারা শত্রুর সাথে যুদ্ধ-বিগ্রহের মধ্যে যাওয়াটা অশান্তিকর ও নিষ্ঠুর হবে ভেবে শান্তি ও সহনশীলতার মাধ্যমে নিজেদের লক্ষ্য অর্জন করতে চায়, কিংবা কৌশলগত কারণে কথিত হেকমতের খাতিরে শত্রুর সাথে বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা করাকেই নিজেদের লক্ষ্য অর্জনের জন্য উপযোগী পন্থা হিসেবে গ্রহণ করে, তারা এক পর্যায়ে শত্রুর হাত থেকে নিজেরা বাঁচার জন্য নিরীহ নিরপরাধ সাধারণ মানুষকে জিম্মি ও ঢাল হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে, এমনকি চরম নিষ্ঠুর পন্থায় মানুষকে খুন-জখম করতেও পিছপা হয় না।
(৪) পাদ্রীদের কেউ কেউ মনে করেন শিশুদের উপর নির্যাতন চালালে কৌমার্য ব্রত ভঙ্গ হয় না’
মে ২৫, ২০১৬
অস্ট্রেলিয়ার অবসরপ্রাপ্ত একজন ক্যাথলিক বিশপ বলেছেন, যৌন নির্যাতনের সাথে জড়িত কোনো কোনো ক্যাথলিক পাদ্রী মনে করেন চিরকুমার থাকার যে ব্রত তারা গ্রহণ করেছেন শিশুদের উপর যৌন নির্যাতন চালানোর মাধ্যমে তা ভঙ্গ করা হয় না। অস্ট্রেলিয়ার সিডনি নগরীর সহকারী বিশপ জিউফ্রি রবিন্সন সাপ্তাহিক অস্ট্রেলিয়ান উইমেন নামের একটি সাপ্তাহিককে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেছেন বলে ফরাসি বার্তা সংস্থা জানিয়েছে। তিনি বলেন, ক্যাথলিক চার্চে পাদ্রীদের দ্বারা যৌন নির্যাতিত শিশুদের বহু বছর ধরে কাজ করার সময় তিনি এই বিষয়টি লক্ষ্য করেছেন। তিনি জানান, পাদ্রীদের চিরকুমার থাকা অর্থে তারা বিয়ে করবেন এটাই বোঝানো হয়েছে এবং যৌন নির্যাতনের সাথে জড়িত পাদ্রীরা মনে করে, কোনো প্রাপ্ত বয়সী নারীর সাথে সম্পর্ক স্থাপন না করার পর্যন্ত তারা তাদের কৌমার্য ব্রত ভ্ঙ্গ করছেন না। ৭২ বছর বয়সী রবিন্সনও শিশু বয়সে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তবে তিনি চার্চের কারো দ্বারা নির্যাতিত হন নি। যৌন নির্যাতনের ব্যাপারটি চার্চ যে ভাবে মোকাবেলা করেছে সাবেক বিশপ রবিন্সন তার কঠোর সমালোচনা করেছেন। ২০০৮ সালে সিডনী সফরকালে পোপ ষোড়শ বেনডিক্ট অস্ট্রেলিয়ায় ক্যাথলিক পাদ্রীদের কর্তৃক যৌন নিপীড়ন চালানোর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন।
এই জাহেলরা যেমন ধারণা করে, শিশু নির্যাতনের দ্বারা কৌমার্য ব্রত ভঙ্গ হয় না; তেমনি একদল আহাম্মক মনে করে, আল্লাহর রাস্তায় (মানে কথিত ইসলামী আন্দোলনের কাজে) খুন-খারাবি ও নিষ্ঠুরতার আশ্রয় নিলে তাতে আল্লাহর আইন লংঘিত হয় না। উপরে বর্ণিত বিভ্রান্ত খ্রীস্টান পুরোহিত গোষ্ঠীটি শিশুদের সাথে অসদাচরণকে কৌমার্য রক্ষার নিয়মের আওতামুক্ত মনে করে, আর বিভ্রান্ত মুসলিম নামধারী রাজনৈতিক গোষ্ঠীগুলো ইসলাম প্রতিষ্ঠার নামে মানুষ হত্যা করা ও জান-মালের ক্ষতিসাধন করাটাকে ইসলামী আইনের আওতামুক্ত ভাবে।
কিছু লোক আছেন, যারা ইসলামী নয় এমন রাষ্ট্রের অধীনে বসবাস করাটাকে গুনাহ মনে করেন এবং এই গুনাহ থেকে মুক্তি পেতে গিয়ে এমন সব বিটকেলি উদ্ভট কাজকারবার করে বসেন, যা তাদের পাপের বোঝা আর জাতির ভোগান্তি ছাড়া আর কিছুই বৃদ্ধি করে না। তারা রাষ্ট্রকে ইসলামী বানাবার নিয়তে অবাস্তব ও অলীক পন্থায় চেষ্টা-সাধনায় ব্রত হন। এদের মধ্যে একদল আছে সশস্ত্র পন্থায় রাজসিংহাসন লাভ করতে গিয়ে রাজার আসন টলাবার মুরোদ না থাকায় নিরীহ ও সাধারণ মানুষকে বলির পাঁঠা বানায় আর ভাবে, যাক আল্লাহর আইন কায়েম করতে না পারলেও অন্তত চেষ্টা তো করতে পেরেছি। আরেক দল আছে তারা ভাবে, যুদ্ধ-বিগ্রহ করতে গেলে অশান্তি ও ঝামেলা বেশি হবে, তাই ভোট ও নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পন্থায় শান্তিপূর্ণভাবে গদিটা বাগাতে পারলেই ইসলামী আইন জারি করে দেয়া যাবে। কিন্তু এতে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে গণতান্ত্রিক কর্মসূচির নামে বীভৎসতম পন্থায় জনগণের জান-মালের যে ক্ষতিসাধন করেন, তার চেয়ে কিন্তু দেশের সিংহাসনটা রাজার হাতে ছেড়ে দিয়ে যার যার ঘরে বসে ধর্মকর্ম ও রুজি-রোজগার চালিয়ে যাওয়াটাই ভালো ছিল। তারা যে প্রতিপক্ষের সাথে যুদ্ধ-সংঘাত ও হাঙ্গামা পরিহার করবার নীতি গ্রহণ করতে গিয়ে শেষমেষ সাধারণ জনগণের উপর একতরফা বর্বরতা চালানোর পথ গ্রহণ করে বসলেন, এও অনেকটা 'আজল করা মাকরূহ' টাইপেরই ব্যাপার, অর্থাৎ আজলকে মাকরূহ ভেবে পরিহার করলেও ব্যভিচার বা গর্ভপাতকে গ্রহণ করার নামান্তর। কারণ, দুই পক্ষের মুখোমুখি সশস্ত্র যুদ্ধেও ইচ্ছাকৃতভাবে নিরীহ মানুষকে নিশানা বানানোর প্রয়োজন হয় না।
ভালো গুণও অনেক সময় মন্দের কারণ হতে পারে
যাদের চরিত্রে ভালো গুণ নেই বরং মন্দ স্বভাবেরই প্রাবল্য, তাদেরকে নিয়ে শয়তানের কিছু ভাবতে হয় না, বরং মন্দ গুণ তাদেরকে স্বাভাবিকভাবেই মন্দের দিকে নিয়ে যায়। কিন্তু যাদের মন-মানসিকতায় ভালো স্বভাব ও ভালো চিন্তা আছে, তারাও সচেতনতার অভাবে শয়তানের ধোঁকায় পড়ে বিভ্রান্ত হতে পারে এবং সেক্ষেত্রে মানুষের ভালো গুণই তাকে মন্দের দিকে ধাবিত করবার কারণ ঘটাতে পারে। যেমন- একজনের চরিত্রে দয়া-মায়া ও মানবিকতার প্রতি কিংবা ধার্মিকতার প্রতি অনুরাগ বিদ্যমান আছে। এখন সে যদি তার পছন্দনীয় ও কাঙ্ক্ষিত গুণটি তার বিপরীত লিঙ্গের কারো চরিত্রে দেখতে পেয়ে তার প্রতি কোনরূপ দুর্বলতা অনুভব করে, তাহলে তা তাকে মন্দ চিন্তা ও বিকারগ্রস্ততার দিকে ঠেলে দিতে পারে। এভাবে শয়তান মানুষের ভালো চিন্তা ও ভালো মানসিকতাকেও সুকৌশলে মন্দচর্চার দিকে রিডাইরেক্ট করে দেয়। এমনকি যার 'দয়া' গুণটি দেখে তার প্রতি আকৃষ্ট হয় বা যার প্রতি দয়া-মায়া অনুভব করে অগ্রসর হয়, তার প্রতিও দয়া ও মানবিকতা বজায় রাখা হয়ে ওঠে না, বরং সেই কথিত দয়াটি নিষ্ঠুরতায় পর্যবসিত হয়; নিজের দয়া-মায়া ও ভালবাসার পাত্র মানুষটি নিজের সর্বোচ্চ বীভৎসতার শিকার হয়। এছাড়া কেউ যদি সাধারণভাবে সকল মানুষের কল্যাণকামী হয়ে থাকে এবং সেই মানসিকতার কারণে কোন মানুষের বিপথগামিতা দেখলে অন্তরে পীড়া অনুভব করে, তাহলে উক্ত মন্দ বিষয়ের দিকে অতিরিক্ত মনোযোগ দিতে গিয়ে এবং মাথার ভিতর বয়ে বেড়াতে গিয়ে নিজেই মন্দ চিন্তার মাঝে জড়িয়ে পড়ার আশংকা থাকে। আবার ধরুন, নিজের পাপের জন্য অনুতাপ ও আত্মসমালোচনা একটি চারিত্রিক গুণ। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অনুতাপ ও আত্মসমালোচনা নিজের নার্ভের উপর চাপ সৃষ্টির পাশাপাশি পাপের কথা আবার নতুন করে মনে করিয়ে দেয় এবং নতুন করে কুচিন্তামগ্ন হবার পথ তৈরি করে দেয়। শয়তান যেকোন সময় যেকোন ব্যাপার নিয়ে মানুষের যেকোন ভাল চিন্তাকেও মন্দ দিকে ডাইভার্ট করতে সচেষ্ট থাকে।
একইভাবে, সমাজ ও রাষ্ট্রে ধর্ম প্রতিষ্ঠার চিন্তা করা এবং ধর্মের বিধান না থাকবার কারণে দু:খিত ও উদ্বিগ্ন বোধ করা একপ্রকার নির্দোষ ও ভালো চিন্তাই বটে। কিন্তু এসব ভাবতে গিয়ে কোন কোন মানুষ শয়তানের প্রতারণার শিকারে পরিণত হয় এবং দ্বীন কায়েমের ব্যাপারে তার এই দুর্বলতাকে জ্বীন শয়তান বা মানুষ শয়তানদের প্ররোচনায় ইসলাম ও মুসলমানদের চৌদ্দটা বাজানোর উছিলা বানিয়ে দেয়।
একটা অপরাধ রুখতে গিয়ে আরো বৃহত্তর অপরাধ করা
মানুষ অনেক সময় একটা অপরাধ ঠেকাতে গিয়ে তার চাইতে বহুগুণ অধিক গুরুতর অপরাধে জড়িয়ে পড়ে। বিভিন্ন রাজনৈতিক ও জঙ্গি সংগঠন দেশে ইসলামী আইন না থাকার অন্যায়টিকে দূর করতে গিয়ে এমন সব কাণ্ড করে বসে, যা শুধু ইসলামী আইনেরই বিরোধী নয়, বরং সমস্ত বিবেক ও মানবতার পরিপন্থী। কোন অপরাধ প্রতিরোধ করতে গিয়ে তার চাইতে চরম অধিক গুরুতর অপরাধে জড়ানোর একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে চীনের একটি ঘটনাতে। খবরটি নিম্নরূপ:-
বাবার পরনারী আসক্তি রুখতে মেয়ের কাণ্ড
মোড়ল নিউজ, ৩ জুন, ২০১৭
যাদুটোনা চললেও তাবিজ চলবে না
প্রফেসর মওলানা আজমল হোসেন একজন নামকরা বুদ্ধিজীবী। তার বিপুল সম্পদ থাকায় তার হিংসুটে মেয়েরা ভাইয়ের বিয়ের বিরোধিতা করে বাপের সম্পত্তি ভাগ হয়ে যাবার আশংকায়। বিয়ে ঠেকাতে না পেরে ভাবীর সন্তান প্রসবকালে যাদুটোনার মাধ্যমে মা ও শিশু উভয়কে নি:শেষ করে দেবার প্রয়াস চালায়। ভিকটিমরা প্রাণে বেঁচে গেলেও প্রসূতি স্থায়ী শারীরিক ক্ষতির শিকার হয়। যাদুটোনার বিষয়টি তখন ধরা না পড়লেও প্রফেসর সাহেবের ছেলে চিকিৎসায় অবহেলার বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে। আজমল সাহেব তখন কটাক্ষ করে বলেন, "বাচ্চা প্রসবের সময় সে (ছেলের বউ) বাপের বাড়িতে থাকলে কিভাবে প্রসব করানো হতো? নিশ্চয়ই তাবিজ-কবজের আশ্রয় নেয়া হতো! শুনে রাখ, তাবিজের মতন ভয়ংকর শেরেকিকে আমরা কখনো প্রশ্রয় দেই না। তাবিজ আর আমরা একসাথে থাকতে পারি না। যারা তাবিজকে গ্রহণ করবে, তাদের সাথে আমরা একত্রে থাকতে পারব না।" পাঠক দেখুন, যাদুটোনার মতন ভয়ঙ্কর কুফরীর মাধ্যমে মানুষের ক্ষতি করা হচ্ছে, সেদিকে কারো খেয়াল নেই। কিন্তু মানুষের উপকার লাভের জন্য আল্লাহর কালামের দ্বারা সহায়তা গ্রহণ করা হলো কিনা, সেটাকে শেরেকী সাব্যস্ত করে বিদ্রূপ করা হচ্ছে! এছাড়া বর্ণিত ঘটনায় উক্ত পুত্রবধূ নিজ বাপের বাড়িতে থাকলে হয়তো তাবিজের প্রয়োজনই থাকত না, এমনিতেই বৈরী মানুষের অনিষ্ট হতে নিরাপদ থাকত। ওদিকে ঐ মওলানা সাহেবের মেয়েরা যে উক্ত বউ ও তার বাচ্চার জন্য বাস্তবেই তাবিজকে জরুরী করে তুলেছিল, তাই বা কে জানত?
[বর্ণিত গল্পগুলোর মধ্যে প্রথম দুটি আমার নিজের রচিত এবং বাকিগুলো সংগৃহীত।]
বিষয়: বিবিধ
১৩১৫ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন