পিটানে সব হয় না
লিখেছেন লিখেছেন ওবাদা বিন সামেত ৩০ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:১৪:৪৯ দুপুর
আমাদের সমাজের বয়স্ক মুরব্বীদের অনেককেই বলতে শুনবেন:- আগে পিটান ছিল, তাই পড়ালেখা ছিল। এখন পিটান নেই বলেই পড়ালেখার মান কমে গেছে। কারো কোন ছেলেপেলের মাঝে অস্বাভাবিক আচরণ দেখা গেলে মুরুব্বীগণ অনেকেই মন্তব্য করেন, এটা হচ্ছে আহলাদ বা অতি আদরের ফল। প্রয়োজনমত পিটান না পড়াতেই ছেলেটা এমন বেয়াড়া ও উচ্ছৃঙ্খল হয়ে পড়েছে।
কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো, পিটান কোন্ ক্ষেত্রে কার্যকর? শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ, সক্ষম ও বুঝমান মানুষ যখন ইচ্ছাকৃতভাবে কোন অন্যায় ও মন্দ কাজ বা অবাধ্যতা করে, কিংবা দায়িত্ব পালনে অলসতা ও গাফলতি করে, তখন তাকে সোজা রাখার ক্ষেত্রে পিটান একটা কার্যকরী ভূমিকা রেখে থাকতে পারে। যার পকেটে টাকা আছে, তাকে না ভয় দেখালে বা ধমক দিলে টাকা বের করতে পারবেন। কিন্তু যার পকেট খালি, সে বড়জোর মার খেয়ে মরে যেতে পারে, কিন্তু তার পকেট থেকে তো কিছু বের হবে না। বিদ্যুতের ঘাটতি থাকা অবস্থায় বিদ্যুৎ অফিসে ঢিল ছুড়লেও বিদ্যুৎ পাওয়া যাবে না। যদি কোথাও বিদ্যুৎ ইচ্ছাকৃতভাবে জমিয়ে রেখে পাবলিককে ভোগানো হয়, সেক্ষেত্রে হয়তো জোর করে বিদ্যুৎ আদায় করা সম্ভব হতে পারে। স্বামী যদি কৃপণ বা অত্যাচারী-লোভী হয়, তখন তার উপর ভয়ভীতি বা চাপপ্রয়োগ করে স্ত্রী-সন্তানের হক আদায় করা যেতে পারে। কিন্তু যদি গরীব বা অক্ষম হয়, তখন আর আঙ্গুল বাকা করে লাভ হবে না।
এবার আসি আসল কথায়, মূল বক্তব্যে। শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ ও অক্ষম ব্যক্তি ইচ্ছা করলেই মুখে খাবার নিয়ে গিলে ফেলতে পারে না, বইয়ের পড়া মুখস্থ করে ফেলতে পারে না, যখন ইচ্ছা অজু করে মসজিদে দৌড় দিতে পারে না, ঘাড় ধরে কোনমতে একটা দোকানে বসিয়ে দিলেই টাকা উপার্জন করতে পারে না। যে প্রতিবন্ধী, সে ইচ্ছা করলেই তার ভাংচুর ও উচ্ছৃঙ্খল আচরণ থেকে বিরত থাকতে পারে না, এমনকি সব সে সচেতন অবস্থায় করে কিনা তাও নিশ্চিত নয়। সবকিছু যদি বেতের দ্বারাই সম্ভব হতো, তাহলে জগতে আর অন্য কিছুই লাগত না। চিকিৎসাবিজ্ঞান, দেহবিজ্ঞান, মনোবিজ্ঞান কিছুরই প্রয়োজন হতো না। কঠিন রোগীকেও বেতের বাড়িতে সারিয়ে তোলা যেত।
অবাধ্য বা অস্বাভাবিক ছেলেপেলেকে সোজা করতে অভিভাবকরা যে দুটি ভুল ঔষধ প্রয়োগ করে থাকে, তার একটি হলো পিটান, আরেকটি হল বিবাহ। বেত আর বউ এ দুটি জিনিস অনেক রোগের নিরাময়ের ক্ষেত্রে উপযোগী- একথা সত্য। কিন্তু এ দুটি কোনমতেই সর্বরোগের মহৌষধ নয়। পিটালেই সেরে যাবে বা বিয়ে দিলেই ঠিক হয়ে যাবে- এ বিধানটি কিছু মানুষের কিছু রোগের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও সব মানুষের সর্বরোগে প্রযোজ্য নয়। প্রত্যেক মানুষ আলাদা, প্রত্যেক রোগ আলাদা। রোগী ও রোগ বুঝে ঔষধ ও পথ্য নির্বাচন করতে হবে; কোন এক পন্থাকে আমভাবে সকলের উপর সকল ক্ষেত্রে প্রয়োগ করলেই বাধবে গোল। 'খুন্তির জ্বর' আর 'মায়ের জ্বরের' মাঝে পার্থক্য বুঝতে হবে। ছেলের যতই সমস্যা থাকুক না কেন, বউ এসে ছেলেকে ঠিক করে দেবে- এমন চিন্তা ও আশা সবক্ষেত্রে যুক্তিসঙ্গত ও বাস্তবসম্মত নয়।
বিষয়: বিবিধ
৮৪৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন