পীসটিভি ও স্টার জলসা দুটোই প্রয়োজনীয়

লিখেছেন লিখেছেন ওবাদা বিন সামেত ১৭ জুলাই, ২০১৬, ০৫:৫১:৪০ বিকাল

বাংলাদেশে ইদানীং দুটি নতুন ধরনের এলার্জির উপদ্রব ঘটেছে। দুই ধরনের মানুষ দুইটি টিভি চ্যানেল নিয়ে এই এলার্জিতে ভুগছেন। একদল লোকের এলার্জি হল পিসটিভির প্রতি, আরেকদল মেয়েলোকের এলার্জি হলো স্টারজলসার প্রতি। মজার ব্যাপার হল, এই দুই শ্রেণির ব্যক্তিরাই নিজেদেরকে ধার্মিক ও ধর্মদরদী হিসেবে জাহির করে থাকে এবং উক্ত এলার্জির কারণ হিসেবে ধর্ম নিয়ে নিজেদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাকেই পেশ করে থাকে। জাকির নায়েকের প্রতি যারা বিরক্ত, তারা প্রচার করে, জাকির নায়েক কাফের, মানুষের দ্বীন-ধর্ম আকীদা-বিশ্বাস সব লাটে উঠিয়ে দিচ্ছে, অতএব ঐ ব্যাটাকে ঠেঙাতে পারাটাই ইসলাম রক্ষার জন্য সবচাইতে জরুরী কাজ। আর যারা স্টারজলসা তথা কিরণমালার প্রতি ক্ষুব্ধ, তারা প্রচার করে, স্টারজলসা হিন্দুদের চ্যানেল, কিরণমালা একটা শয়তান, কিরণমালা শুধু মূর্তিপুজা করে [সিরিয়ালে কাউকে মূর্তিপূজা করতে দেখলেই যে সেটা অনুসরণ করতে হবে এমন কোন কথা নেই, বরং শুধু শিক্ষণীয় বিষয়গুলো থেকে শিক্ষাগ্রহণ করাই যথেষ্ট], কিরণমালা দেখে দেখে ঘরের বাচ্চা-কাচ্চা সব হিন্দুয়ানী কালচার শিখে যাচ্ছে, ওসব দেখলে সবাই কাফের হয়ে যাবে ইত্যাদি। মোটকথা, আমাদের আলোচ্য এই দুটি শ্রেণি যথাক্রমে বাংলাদেশ থেকে পীসটিভি আর স্টারজলসা বন্ধ করাটাকেই ঈমান-আকীদা ও পারিবারিক শান্তি রক্ষা করার উপায় হিসেবে তুলে ধরছে।

বাংলাদেশে নতুন দেখা যাওয়া এ এলার্জি দুটির বাহ্যিক symptom তথা উপসর্গ হল মুখে ধর্মপ্রেম, চোখে-মুখে উদ্বেগ-অস্থিরতা। তবে এই ধর্মের ওয়াজের সাথে গীবত-পরনিন্দা এবং শিশুদের প্রতি গালাগাল ও দুর্ব্যবহার যুগপৎ যুক্ত হতে দেখে আমাদের Materia Medica-তে (অর্থাৎ নবীর হাদীসে) বর্ণিত একটি লক্ষণের কথা মনে পড়ে গেল। তাহল, ধর্মভাব আর দুর্ব্যবহার এই দুটো লক্ষণ একসাথে দৃশ্যমান হওয়াটা 'নিফাক' নামক মানসিক রোগের লক্ষণ। ফলে দেহের বাহ্যিক উপসর্গের সাথে অভ্যন্তরীণ ব্যাধির একটা সন্ধান পেয়ে গেলাম। তারপর এই রোগীগুলোর মস্তিষ্কে সিটি স্ক্যান করলাম, হৃদয়ে এক্সরে করলাম, পেটে আলট্রাসনো করলাম, blood থেকেও sample নিলাম; কিন্তু কোথাও ধর্মের কোন নামগন্ধ খুঁজে পেলাম না। আল্লাহপ্রেম বা আল্লাহর আনুগত্যের কোন নমুনা ডায়াগনোসিস রিপোর্টে আসল না। বরং এর পরিবর্তে ধরা পড়ল মুনাফেকি ও কুমতলব। উক্ত দুই কিসিমের মানুষের শ্রেণিচরিত্র বিশ্লেষণ করে দেখলাম, মূলত: নিজ নিজ কায়েমী স্বার্থে ব্যাঘাত ঘটাতে এবং নিজেদের চারিত্রিক ও মানসিক বদ খাসলত ও ফাসাদ সৃষ্টিকারী ধ্বংসাত্মক তৎপরতার চিত্র প্রকাশ হয়ে পড়ার ভয়েই তারা চ্যানেল দুটির বিরুদ্ধে কোমর বেঁধে নেমেছেন।

যখন দেখবেন, কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী অপর কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে কিংবা কোন মিডিয়ার বিরুদ্ধে উঠেপড়ে লেগেছে- তা সে প্রিন্ট মিডিয়া তথা সংবাদপত্র, বইপত্র, গল্প-উপন্যাস-নাটক ইত্যাদি হোক; অথবা ইলেকট্রনিক মিডিয়া তথা টিভি চ্যানেল বা টিভি প্রোগ্রাম হোক; কিংবা অনলাইনের কোন ওয়েবসাইট, ব্লগ বা নিউজ পোর্টাল হোক; তাহলে নিশ্চিত ধরে নেবেন, তাতে নিশ্চয়ই তার বা তাদের বিরুদ্ধে কিছু আছে। বিশেষ করে কোন লেখক, বক্তা বা মিডিয়ার বিরুদ্ধে ধর্ম, নৈতিকতা ও শালীনতার পরিপন্থী কোন আচরণ কিংবা নিরাপত্তার জন্য হুমকি সৃষ্টিকারী কোন তৎপরতার সুস্পষ্ট নিদর্শন না থাকা সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে যদি কেউ ক্রোধ ও বিক্ষোভে ফেটে পড়ে, তাহলে বুঝতে হবে, এর মাঝে নিশ্চয়ই তার অন্যায় অপকর্মের কোন বেফাঁস তথ্য আছে অথবা তার অনৈতিক স্বার্থ বিঘ্নিতকারী কোন অপ্রীতিকর বিষয় (disturbing element) রয়েছে।

এবারে আমাদের আলোচ্য চ্যানেল দুটির ক্ষেত্রে আলোচ্য গোষ্ঠী দুটির অ্যালার্জি ও উদ্বেগের প্রকৃত হেতু ও তাৎপর্যটা খতিয়ে দেখা যাক। কেন চ্যানেল দুটির নাম শুনলেই তাদের জলাতঙ্ক রোগীর ন্যায় দিগবিদিগ অবস্থা ও ছটফটানি শুরু হয়ে যায়, সেই ব্যাপারটা খোলাসা করে বলা যাক। পীসটিভির মূল বক্তা জাকির নায়েক ধর্ম সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে ধর্মবিরোধীদের যুক্তিসমূহের দাঁতভাঙ্গা জবাব দানের পাশাপাশি ধর্মের নামে প্রচলিত ভণ্ডামি, ধর্মব্যবসা ও কুসংস্কারেরও বিরোধিতা করে মুসলমানদের আকীদা ও সমাজ সংস্কারের প্রয়াস চালিয়ে থাকেন। কোরআন-হাদীস ও সমসাময়িক সমাজ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে তাঁর আলোচনার মধ্যে প্রসঙ্গত মুসলমানদের অনৈক্য ও ধর্মের মধ্যে অনুপ্রবেশকৃত বিকৃতির জন্য কারা দায়ী এসব বিষয়ও এসে যায়। কারা নিজেদের দ্বীনকে টুকরো টুকরো করেছে, কারা (ধর্মের নাম দিয়ে বা ধর্মের বদৌলতে অর্জিত জনগণের শ্রদ্ধা ও আস্থার সুযোগ নিয়ে) জনগণের সম্পদ অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করেছে, কারা আল্লাহর আয়াতকে স্বল্পমূল্যে বিক্রয় করছে, তাদের পরিচয় কোরআনের রেফারেন্স দিয়ে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছেন জাকির নায়েক। সুতরাং জাকির নায়েক তথা পিসটিভির কথা শুনে যাদের চুলকানি হবে বা জ্বালাপোড়া ধরবে, তারা হয় ঐ শ্রেণিরই অন্তর্ভুক্ত অথবা তাদেরই কারো সমর্থক বা শুভানুধ্যায়ী। অপরদিকে ভাল-মন্দ গ্রহণীয়-বর্জনীয় নানান বিষয় থাকা সত্ত্বেও স্টার জলসা চ্যানেলের সিরিয়ালগুলোর মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হল পারিবারিক অশান্তি, দ্বন্দ্ব ও বিশৃঙ্খলা। পরিবারের ভিতর ঘটমান অপ্রীতিকর ঘটনাবলী ও কর্মকাণ্ডের জন্য কারা দায়ী, পরিবারে একে অপরের বিরুদ্ধে চক্রান্ত ও উষ্কানী প্রদানের তৎপরতায় কারা বেশি জড়িত, কারা পরিবারে বসবাসকারী অপর সদস্যদের বিরুদ্ধে পরিবারের কর্তার কান ভারি করছে, কারা পিতামাতার কাছে অন্যের বিরুদ্ধে লবিং করে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে, তাদের পুরো চেহারা সচিত্রভাবে দর্শকদের চোখের সামনে তুলে ধরছে স্টার জলসা। অতএব স্টারজলসা নিয়ে যাদের অতিরিক্ত উদ্বেগ ও পেরেশানি দেখা দেবে, তারা নিশ্চিতভাবে কুটনী বুড়িদেরই অন্তর্ভুক্ত; কিরণমালার নাম শুনে যারা কটকটির মত আঁতকে উঠবে, তারা কটকটিদেরই দলভুক্ত।

এবার এ দুটি গোষ্ঠীর পরিচয় সুনির্দিষ্টভাবে তুলে ধরা যাক। জাকির নায়েকবিরোধী ধর্মব্যবসায়ী গোষ্ঠীটির মধ্যে দুটি গ্রুপ রয়েছে। একদল হল ফতোয়া ব্যবসায়ী, আরেকদল হল মাজার ব্যবসায়ী। এই দুই দলেরই মনোভাব হল, কোরআন বোঝা অত সহজ ব্যাপার নয়, কোরআনের হাকীকত বোঝা সাধারণ মানুষের কাজ নয়; ধর্মীয় মাসলা-মাসায়েল জনগণ কেবল আমাদের কাছ থেকেই শিখবে, কোরআনের আয়াত আমরা যতটুকু শেখাব ওরা ততটুকুই শিখবে, আমরা যে আয়াত যেভাবে ব্যাখ্যা করব সবাই সে আয়াতের মর্মার্থ সেভাবেই জানবে। কোরআন-হাদীসের কথা যেটুকু প্রকাশ করা নিজেদের স্বার্থ বা অভিলাষের পরিপন্থী নয় সেটুকুই এরা প্রকাশ করে। এদের মধ্যে প্রথম দলটির মূল উপার্জন হল ব্যক্তি বা শ্রেণিস্বার্থে ফতোয়া প্রদান করে অর্থলাভ করা, অবশ্য কোন কোন সময় সঠিক ফতোয়াও টাকার বিনিময়ে প্রদান করা। এছাড়া মাদ্রাসা ও এতিমখানা খুলে কোরবানির চামড়া ও যাকাতের পয়সা উত্তোলন করে নিজেরা আত্মসাৎ করা। আর দ্বিতীয় দলটির মূল উপার্জন হল কবরের উপর লালসালু টানিয়ে মাজার বানিয়ে (সত্যিকার বুযুর্গ ব্যক্তির মাযারও হতে পারে, আবার কোন মানুষের লাশবিহীন কৃত্রিম মাজারও হতে পারে) ওরস শরীফের নামে চাঁদা তুলে সারা বছরের রিজিক একদিনে হাসিল করা। আবর এ দুই দলেরই উপার্জনের অভিন্ন উৎস হলো আলেম বা পীরের প্রতি জনগণের ধর্মীয় আবেগ ও ভক্তি-শ্রদ্ধাকে কাজে লাগিয়ে হাদিয়া-তোহফা লাভ করা, তাবিজ ও পানি পড়া দিয়ে অর্থ গ্রহণ করা। [জাকির নায়েক বা সালাফীগণ তাবিজ ও পানি পড়াকে নাজায়েয মনে করলেও আমি অবশ্য এটা মনে করি না। কিন্তু একে উপার্জনের মাধ্যম বানানো এবং ব্যবসায় পরিণত করাটা নিন্দনীয়।] মুসলিম নামধারী ও ইসলামের দাবিদারদের মধ্যে যারা পীসটিভির প্রতি বিরক্ত, তাদের কমপক্ষে ৯০ ভাগই এই দুই শ্রেণির কোন না কোনটির সদস্য বা সমর্থক।

এবার আসি স্টারজলসা বিরোধিতার প্রসঙ্গে। একটা জিনিসের বিরোধিতা স্বভাবত তাদের দিক থেকেই হবে, যাদের কথা (মানে যাদের সম্পর্কে নেতিবাচক কথা বা তথ্য) ওখানে আলোচিত বা প্রদর্শিত হয়েছে। স্টার জলসার সিরিয়ালগুলোতে যত ভিলেন ও খল চরিত্র দেখানো হয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখানো হয়ে থাকে বিবাহের পর পিতৃগৃহে স্থায়ীভাবে সপরিবারে অবস্থান করা কন্যা ও ঘরজামাইদের। সিরিয়ালগুলোর মূল্য উপজীব্য বিষয় হল, একটা ঘরে (বিশেষ করে একাধিক সন্তানওয়ালা সম্পদশালী পিতার ঘরে) যখন বিবাহিত মেয়ে নিয়মিতভাবে বসবাস করে, তখন সে পরিবারের অন্য সদস্যদের বিরুদ্ধে কুচক্রীপনায় লিপ্ত হবেই। সাধারণত সম্পত্তি হাতছাড়া বা ভাগাভাগি হয়ে যাবার আশংকায় কিংবা সার্ভিস লাভের আকাঙ্ক্ষা পূরণে কমবেশি হয়েছে ভেবে কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী বিবেচনা করতে শুরু করে এবং তাকে দাবিয়ে রাখা বা তাড়িয়ে দেবার জন্য চেষ্টা-তদবির করতে প্রবৃত্ত হয়। এদের মধ্যে যাদের একটু মনুষ্যত্ববোধ আছে বা যাদের কুটিলতা একটা নির্দিষ্ট সীমানার মধ্যে আছে, তাদের শত্রুতা ও তৎপরতা কেবল ভাইয়ের বউয়ের বিরুদ্ধেই সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু যারা আবার একটু প্রকারছাড়া খারাপ, তারা সম্পত্তির সম্ভাব্য উত্তরাধীকারী ভেবে হোক বা অন্য যে কারণেই হোক, ভাইয়ের বাচ্চাকেই হিংসা ও শত্রুতার লক্ষ্যবস্তুরূপে নির্ধারণ করে; বাচ্চার রিযিক নষ্ট করার জন্য এবং বাচ্চার মুখের গ্রাস যথাসম্ভব কেড়ে হাতিয়ে নেবার জন্য সদাতৎপর হয়ে ওঠে। কোন কোন ক্ষেত্রে এ কাজে নিজেদের মাকেও সম্পৃক্ত করে নিতে সক্ষম হয়। স্টার জলসার সিরিয়ালগুলোর মধ্যে "কিরণমালা" সিরিয়ালটা যদিও আর পাঁচটা সিরিয়ালের থেকে আলাদা, ননদ-ভাবী বা বউ-শাশুড়ীর দ্বন্দ্বের গদবাঁধা কাহিনী থেকে মুক্ত; তারপরও উক্ত সিরিয়ালে যেহেতু রাক্ষসী মহিলা কর্তৃক সংশ্লিষ্ট রাজ্যের রাজাকে ছলচাতুরী, কুমন্ত্রণা, লবিং ও প্রতারণার দ্বারা প্ররোচিত ও প্রভাবিত করা এবং রাজ্যের রাজা-প্রজা সবাইকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সম্মোহিত ও বশীভূত করে কিরণমালার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলা ও লেলিয়ে দেবার দৃশ্য দেখানো হয়; সেহেতু লবিং ও ছলনার ধরনের দিক থেকে পরিবারের কর্তা পিতাকে প্রভাবিত করার পদ্ধতি এবং পরিবারের ছোট-বড় সবাইকে উষ্কানী দিয়ে ক্ষেপিয়ে তোলা ও লেলিয়ে দেবার প্রক্রিয়া "কিরণমালা" সিরিয়ালে প্রদর্শিত রাক্ষসীদের অবলম্বিত পন্থার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়ায় এরা কিরণমালাকে সহ্য করতে পারে না। যদি জরিপ করেন তাহলে হয়তো দেখতে পাবেন, স্টারজলসা তথা কিরণমালার প্রতি এলার্জিগ্রস্থদের শতকরা ৭৫ ভাগই হয় ঘরজামাই ও ঘরকন্যা, অথবা ঘরের মধ্যে আশ্রিত বহিরাগত ব্যক্তি। এদের বাইরে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে যারা তুলনামূলক আদৃত ও সুবিধাপ্রাপ্ত এবং ঘরজামাই হিসেবে থাকা দুলাভাই ও বোনদের অনুগত, তাদের কাছে কিরণমালা তথা স্টারজলসা সম্পূর্ণ ফালতু ও বর্জনীয় বলে বিবেচিত। অপরদিকে পরিবারের মধ্যে যারা তুলনামূলক বঞ্চিত, শোষিত ও অবহেলিত, তারা স্টারজলসা বিশেষত কিরণমালা সিরিয়ালে প্রদর্শিত বিষয়গুলোর মাঝে বাস্তবতা খুঁজে পায় এবং এগুলোকে Fact ও প্রণিধানযোগ্য মনে করে।

জাকির নায়েকের কোন ভক্ত সন্ত্রাসী কাজ করল, কিংবা কিরণমালা ড্রেসের জন্য কেউ আত্মহত্যা করল- এটা পীসটিভি বা স্টারজলসা চ্যানেল বন্ধের যুক্তি হতে পারে না। কারণ, সব জিনিসেরই ভাল-মন্দ উভয় দিক আছে, সব ঔষধেরই ক্রিয়ার পাশাপাশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। কোন ঔষধে যদি ক্ষতি বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার তুলনায় প্রয়োজনীয়তা, উপকারিতা ও ইতিবাচক ক্রিয়া বেশি হয়ে থাকে এবং ঐ ঔষধের চাইতে কম ক্ষতি দিয়ে রোগ সারানোর মত বিকল্প ঔষধের কথা যদি জানা না থাকে, তাহলে ঐ ঔষধটি গ্রহণ করে নেয়া ছাড়া উপায় নেই। বৈদ্যুতিক দুর্ঘটনায় অনেক মানুষ মারা যায়, কিন্তু তাই বলে কি বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিতে পারবেন? বিদ্যুৎ ছাড়া কি বর্তমান মানব সভ্যতা ও নাগরিক জীবন চলবে? সড়ক দুর্ঘটনাতেও অনেক মানুষের মৃত্যু ঘটে। কিন্তু তাই বলে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়ে দেশের এ প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্তে সবাই হেঁটে বা ঠেলাগাড়ি ও ঘোড়ার গাড়িতে যাতায়াত করতে পারবেন কি? পরীক্ষায় ফেল করেও তো কত বালক-বালিকা ও কিশোর-কিশোরী আত্মহত্যা করে, এমনকি বাচ্চারা পরীক্ষায় শ্রেণিতে প্রথম হতে না পারায় মা কর্তৃক শিশুদেরকে গলাটিপে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে এ সমাজে। কিন্তু কৈ, কেউ তো লেখাপড়া বন্ধ করার দাবি করে না। অবশ্য এমন দাবি আমিও করি না। কারণ, লেখাপড়া একেবারে বন্ধ করে দিয়ে এ যুগে চলা যাবে না। আমরা কেবল মাতলামি ও বাড়াবাড়ি বন্ধ করার দাবি করতে পারি, মানুষের মন-মানসিকতা পরিবর্তনের পরামর্শ দিতে পারি। কিরণমালা দেখতে গিয়ে অসতর্কতা ও উদাসীনতাবশত: কোন ঘরে অগ্নিকাণ্ড ঘটে শিশুর মৃত্যু হলে সংবাদ শিরোনাম হয়: "কিরণমালায় পুড়ছে দেশ।" অথচ কথিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সম্পূর্ণ ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পিত ও ইচ্ছাকৃতভাবে যানবাহনের ভিতর জ্যান্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারা হলেও এমন কোন শিরোনাম দেখি না: "রাজনীতিতে পুড়ছে দেশ", বা "গণতন্ত্রের যুপকাষ্ঠে বলি হচ্ছে মানুষ"। কারণ, কথিত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা তথা সরকার পরিবর্তনকে একটি জরুরী কাজ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং সেই কারণে আন্দোলনে মানুষ বলি দেয়ার 'প্রয়োজনীয়তা' তারা বোঝেন। এই কারণে এই কাজে কিছু মানুষের বীভৎস মৃত্যু তাদের কাছে দেশের ক্ষতি বা মানবতার ক্ষতি বলে ধর্তব্য হয় না। সম্প্রতি অজপাড়াগায়ে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে এবং একে কিরণমালার কুফল প্রমাণের এক মহা দলীল হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে। ঘটনাটি হল কিরণমালা দেখা নিয়ে দুই গ্রামের মারামারি। কিন্তু ঘটনাটির সূত্রপাত কিভাবে হল, কেন হল, তার কোন সুনির্দিষ্ট বিবরণ কোন খবরেই পাইনি। ঘটনাটি আদৌ কিরণমালা দেখা নিয়ে ঘটেছে, নাকি অন্য কিছু নিয়ে হয়েছে, তাও নিশ্চিত নয়, যেহেতু ঘটনার বিবরণে তার কোন সুস্পষ্ট উল্লেখ নেই। আর যদি কিরণমালা নিয়ে ঘটেও থাকে, তা নিয়েও এতটা চাঞ্চল্য প্রকাশের কিছু নেই। কারণ, টিভি দেখা নিয়ে গণ্ডগোল নতুন কিছু নয়। টিভি যেদিন থেকে এসেছে, টিভি নিয়ে ঝগড়াঝাটি মারামারির সূত্রপাতও সেদিন থেকেই। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একজন যখন খেলাধুলা বা খবর দেখতে চায় আর আরেকজন নাটক দেখতে চায়, তখন তা নিয়ে বিবাদ বহু পুরাতন বিষয়। রিমোট নিয়ে কাড়াকাড়িটাও আমাদের বহু প্রাচীন ঐতিহ্য। সুতরাং শুধু একটা বিশেষ চ্যানেল বা একটা বিশেষ সিরিয়ালকে পাঙ্গাস মাছ বানিয়ে লাভ নেই। এছাড়া মানব সমাজে শুধু টিভি দেখা নিয়ে নয়, আরো অনেক কিছু নিয়েও গণ্ডগোল হয়ে থাকে। একটা খেলার মাঠেও একদল যদি ফুটবল খেলতে চায় আরেকদল ক্রিকেট খেলতে চায়, দ্বন্দ্ব অনিবার্য। সেক্ষেত্রে সকলেরই আপোষ ও সহনশীলতা অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে সহায়ক হতে পারে। রান্না-খাওয়া নিয়েও তো ফ্যাসাদ কম হয় না। একটি সংসারে একজনের পছন্দ ঝাল খাবার, আরেকজনের পছন্দ ঝালছাড়া; একজনের পছন্দ হালকা মসলা, আরেকজনের গাঢ় মসলা। এ নিয়ে যেমন সংসারে পরস্পরের মধ্যে ঝগড়া ও মতভেদ হতে পারে, তেমনি সকলের মনের মত খাবার যোগান দিতে গিয়ে রাঁধুনিরও লেজেগোবরে অবস্থা হতে পারে। এমনকি কোন কোন পরিবারে সকল খাদকের মন রক্ষা করতে গিয়ে রাঁধুনির পেটের বাচ্চা ক্ষতিগ্রস্থ হবার ঘটনাও ঘটেছে। শুধু তাই নয়, (সবার পছন্দমত ১৪ রকম খাবার তৈরি করাতে গিয়ে রাঁধুনিকে খাটিয়ে মারার পরও) রাঁধুনিকে একটা খাবারও নিজের রুচিমত বা নিজের বাচ্চার উপযোগী করে তৈরি করার সুযোগ বা অনুমতি দেয়া হয়নি। তদুপরি বাচ্চার এক-আধ কাপ দুধ খাওয়া নিয়েও কথা শুনতে হয়েছে। রান্না-খাওয়া নিয়ে এ বাড়াবাড়িপূর্ণ অনাচার, অবিচার ও বৈষম্য দেখার পর কি রান্না-খাওয়ার প্রতিই বিতৃষ্ঞা ধরে যায় না? ঘরের চুলা ভেঙ্গে ফেলতে কি মন চায় না? তারপরও বলতে হবে, রান্না-খাওয়া জিনিসটাকে আপনি জীবন থেকে বাদ দিতে পারবেন না। অপরাধ হলো তাদের, যারা রান্না-খাওয়া নিয়ে মানবাধিকার লংঘন ও অসদাচরণ করেছে। এর জন্য তো রান্না-খাওয়া দায়ী নয়। একইভাবে, কোন টিভি চ্যানেল, টিভি প্রোগ্রাম বা টিভি সিরিয়াল দেখতে গিয়ে কেউ যদি অকর্ম বা কুকর্ম ঘটিয়ে থাকে, সেজন্য তারা দায়ী- সংশ্লিষ্ট টিভি চ্যানেলের বক্তা বা প্রযোজক-অভিনেতারা দায়ী নয়। এছাড়া স্টারজলসা নিয়ে আত্মহত্যার যত ঘটনা ঘটেছে, তার সবগুলোর ক্ষেত্রেই যা ঘটেছে তাহল, একজন দেখতে চেয়েছে অপরজন বাধা দিয়েছে, তাই আত্মহত্যা করেছে। এখানে আত্মহত্যার কারণ হিসেবে শুধু স্টারজলসা চ্যানেলটি চালু থাকা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির তা দেখতে চাওয়াকেই তুলে ধরা হচ্ছে, কিন্তু বাধা দেয়াটাকে কেউ কারণ হিসেবে উল্লেখ করছে না। একজন একটা কিছু দেখতে চাইলে আরেকজন কর্তৃক সেটাতে বাধা দেবার কী প্রয়োজন ছিল, সেই প্রশ্ন কেউ তোলে না। তদুপরি যেখানে সবাই জানে যে, এসব ক্ষেত্রে বাধা দিলে অপ্রীতিকর ঘটনার রেকর্ড রয়েছে, তারপরও জেদবশত এতে বাধা দেয়াটা কি হঠকারিতা ও একগুঁয়েমি নয়? কোন কিছুতে বাধা দেয়াটা কেবল তখনই যুক্তিসঙ্গত হবে, যদি সেখানে নৈতিকতা ও মানবতা বিরোধী কিছু থেকে থাকে। কিন্তু এমন কোন ব্যাপার তো এখানে দেখিনি। স্বামীর সময়মত টেবিলে ভাত পেতে একটু দেরি হল, স্ত্রী 'কিরণমালা' দেখা শেষ না করে তা দিতে পারল না, তা নিয়ে স্বামী-স্ত্রী ঝগড়া বেধে গেল, আর পরিণতিতে আত্মহত্যা। এটা হল একে অপরের চাহিদা, প্রয়োজন ও পছন্দের প্রতি পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ ও সহনশীলতার বিষয়। এই জিনিসটা অর্জিত না হলে পারিবারিক বন্ধন এমনিতেই সুন্দর হবে না। কোন টিভি চ্যানেল বন্ধ হলেই এ সমস্যার সমাধান হবে না, তখন আবার অন্য কিছু নিয়েও স্বামী-স্ত্রীর বিবাদ হতে পারে। ঠিক যেমন স্কুল ও লেখাপড়া বন্ধ করে দিলেই শিশু নির্যাতন ও শিশু হত্যা বন্ধ হবে না; বরং মানব চরিত্রের যশপ্রীতি, খ্যাতির মোহ, জুয়াড়ি মনোভাব, মানুষের সন্তুষ্টি কামনা, অসুস্থ প্রতিযোগিতার প্রবণতা এবং দয়া-মায়া ও মমত্ববোধের অভাব- এগুলো হলো মূল সমস্যা; যেগুলো সংশোধন হলে স্কুল ও লেখাপড়া চালু রেখেও শিশুদের পক্ষে মাতৃস্নেহ লাভ করা সম্ভব।

এবারে আমাদের আলোচ্য চ্যানেল দুটির উপকারিতা ও অপকারিতার তুলনামূলক পর্যালোচনা করা যাক। মনে করুন, একদিকে জাকির নায়েকের বক্তব্যের খণ্ডিত উদ্ধৃতি ও ভুল ব্যাখ্যার দ্বারা বিভ্রান্ত হয়ে এক ব্যক্তি সন্ত্রাসী ও চরমপন্থী হয়ে গেল, অপরদিকে জাকির নায়েকের পূর্ণ লেকচার শুনে দশজন মানুষ সন্ত্রাসের পথ থেকে ফিরে আসল অথবা চরমপন্থী হওয়া থেকে বিরত থাকল- পীসটিভির সৌজন্যে ইসলামের শান্তি ও মধ্যপন্থার বাণী না শুনে থাকলে তারা হয়তো বিপথে যেতে পারত। 'ছোট পরিবার সুখী পরিবার' শুনে অর্থ ভুল বুঝে (অর্থাৎ ছোট বলতে অল্পবয়সী ও পরিবারকে বউ অর্থে নিয়ে) ১২ বছরের মেয়েকে বিয়ে করে আনা কিংবা উঁচু জায়গায় বসা ও কোকিলের মত কথা বলার মায়ের উপদেশ ফলো করতে গিয়ে টিনের চালের উপর উঠে কুহু-কুহু করার মত কোন একজন বেকুব হয়তো পীসটিভি দেখে পাঁচজন মানুষকে খুন করে ফেলল; কিন্তু অপরদিকে পীসটিভি দেখে যে লক্ষ লক্ষ মানুষ দুনিয়া ও আখেরাতের বিপর্যয় থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করতে (অর্থাৎ ইসলাম গ্রহণ করতে) সক্ষম হলো; এটা কি পীসটিভির দ্বারা মানবতার ক্ষতির তুলনায় উপকারকেই ভারী প্রমাণ করে না? ডাকাতরা যদি সড়কপথ ব্যবহার করে অথবা নদীপথে বিচরণ করে, তাহলে সেজন্য কি সড়কপথ ও নৌপথ বন্ধ করে দিতে হবে? রাস্তা ও নদী দিয়ে তো শুধু ডাকাতরা চলাচল করে না, বরং সাধারণ মানুষই বেশি চলাচল করে। কাজেই তা বন্ধ করা হলে ডাকাতদের চাইতে সাধারণ মানুষজনই বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে। আবার মনে করুন, একদিকে স্টার জলসার কোন সিরিয়াল দেখে দু'চারজন মানুষ প্রিয় নায়িকার ড্রেস কেনার জন্য বা সিরিয়াল দেখায় বাধাপ্রাপ্ত হবার কারণে আত্মহত্যা করল, টিভি দেখায় ব্যস্ত থাকায় বাচ্চাদের প্রতি অমনোযোগিতা হেতু দু'একটি শিশু দুর্ঘটনায় পড়ে মৃত্যুবরণ করল এবং কয়েক ডজন মানুষ মারামারি করে আহত হলো; অপরদিকে স্টার জলসার বরকতে কয়েক হাজার মানুষ আশপাশের কুচক্রী দুর্বৃত্তদের চিনতে পেরে তাদের অনিষ্ট থেকে নিজেদেরকে এবং নিজেদের বাচ্চাদেরকে রক্ষা করতে সমর্থ হলো। এতে কি অপকারিতার তুলনায় প্রয়োজনীয়তাই বেশি মনে হয় না? আর অপকারিতাও কি প্রতিকারযোগ্য নয়? মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন এবং পারস্পরিক সহনশীলতা স্থাপনের দ্বারা ক্ষয়ক্ষতির মাত্রাটা কমিয়ে আনা যায়। পীসটিভি আর স্টার জলসা এই দুই চ্যানেলের দ্বারা দুই ধরনের ভণ্ড-প্রতারক ও কুচক্রী-দুর্বৃত্তদের চরিত্র ও মানসিকতা প্রকাশ পায়, এদের মুখোশ জনগণের সামনে উন্মোচিত হয়। এদের প্রতারণা ও অনিষ্ট থেকে মানুষকে সতর্ক করা ও নিরাপদে রাখাটা কি প্রয়োজনীয় নয়?

অনেকে বলে থাকেন, স্টার জলসায় শুধু পরিবারের মধ্যে কুটলামি দেখানো হয়, আর এগুলো দেখে দেখে মানুষ কুটিলতা ও কুচক্রীপনায় লিপ্ত হয়ে পড়ার আশংকা থাকে। কিন্তু কথা হল, কুটলামি কাউকে শিখিয়ে দেয়া লাগে না, বরং যারা কুটিল তারা স্বভাবগতভাবেই কুটিল হয়। কুটিল ব্যক্তিরা বড়জোর নাটক-সিনেমা বা সিরিয়ালে এগুলো দেখে কুটিলতার কলাকৌশল একটু ঝালিয়ে নিতে পারে, এ কাজে কিছুটা উন্নতি লাভ করতে পারে। কিন্তু অন্যরা যারা কুটিল বা কুচক্রী নয় বরং কুটিলতা ও কুচক্রের শিকার, তারা তো এগুলো না দেখলে কিছু জানতেই পারবে না। টিভি সিরিয়ালগুলো বরং কুটিলতায় সহায়ক হওয়ার পরিবর্তে কুটিলতার ভিকটিমদের কুটিলদের কুটিলতা থেকে সতর্কতা অবলম্বনেই সহায়ক হয়। পারিবারিক চক্রান্ত মোকাবেলায় এটা একপ্রকার সিগন্যাল ও রাডাররূপেই কাজ করে। এমতাবস্থায় কুটিলতা প্রমোট করবার অভিযোগে টিভি সিরিয়ালগুলো নিষিদ্ধ করা হলে সেটা বসনিয়ার উপর একতরফা অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার মতই হবে, যেখানে যুদ্ধের তীব্রতা বৃদ্ধির আশংকার দোহাই দিয়ে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা জারি রাখা হয়েছিল, কিন্তু তা কেবল আক্রান্ত পক্ষ মুসলমানদেরই অস্ত্র সংগ্রহ বন্ধ করিয়েছিল, আগ্রাসী পক্ষ সার্বীয়দের অস্ত্র সংগ্রহে কোনরূপ বিঘ্ন ঘটায়নি। কেউ হয়তো ভাবতে পারেন, যেসব পরিবারে কোন পারস্পরিক দ্বন্দ্ব-বিভেদ বা কূটচক্রান্ত নেই, সেসব পরিবারের জন্য হয়তো এসব চ্যানেল বা সিরিয়াল নতুন করে ফেতনা সৃষ্টির কারণ হতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে বিবেচ্য বিষয় হল, কেউ তো সিরিয়াল দেখে এমনি এমনি পরিবারের সদস্যদের প্রতি সন্দিহান হয়ে উঠবে না, আন্দাজে কাউকে সন্দেহ বা অবিশ্বাস করবে না; বরং সিরিয়ালে প্রদর্শিত কূটচরিত্রের ভিলেনদের সাথে যার সাদৃশ্য পাওয়া যাবে, যার আচরণ ও মতিগতির সাথে সিরিয়ালের খলচরিত্রের ভাবসাব ও গতিবিধি মিলে যাবে, কেবল তাকেই না সন্দেহ করা হবে। এলার্জি বা চুলকানির ঔষধ যদি খাওয়া হয়, যার শরীরে এলার্জি বা চুলকানি লুকিয়ে আছে, তারটাই কেবল বাইরে বেরিয়ে আসবে; যার চামড়ার নিচে এগুলোর অস্তিত্ব নেই, তার কিছুই হবে না। স্টারজলসা কি শুধু সামাজিক সমস্যারই কারণ হয়, সামাজিক নিরাপত্তার জন্য হুমকিই সৃষ্টি করে? মানুষের নিরাপত্তা রক্ষার ক্ষেত্রে কি এর কোনই ভূমিকা নেই? স্টারজলসা দেখা মেয়েরা আর যাহাই করুক, নিজের বাচ্চাকে অভুক্ত ও অবহেলিত রাখিয়া দেবর-ননদদের রসনাসেবায় সর্বদা নিবেদিত থাকিবে না। মুরগীর স্যুপ রাঁধিয়া ননদকে খাওয়াইয়া আর দুধের সর প্রতিদিন ননদকে তুলিবার সুযোগ প্রদান করিয়া নিজের বাচ্চাকে মুরগীর সাবা (উচ্ছিষ্টাংশ) আর দুধের পানি খাওয়াইবে না। নিজের পিত্রালয় হইতে খাঁটি গরুর দুধ আনিয়া ননদ-দেবরদের কফি খাওয়াইয়া নিজের বাচ্চার ক্যালসিয়ামের অভাব ট্যাবলেটের দ্বারা পূরণ করিবে না। এই ধরুন আমার নিজের পরিবারের কথাই বলি। আমার বউ যদি বিয়ের পূর্বে ৫ বছর স্টারজলসা দেখে আসতো, তাহলে আমার বাচ্চাটা শ্বাসকষ্টের রোগী হতো না।

কিরণমালা তথা স্টারজলসায় যা কিছু দেখানো হয়, তার কোনটাই অমূলক বা অবাস্তব নয়, বরং এগুলোর বাস্তব ভিত্তি রয়েছে। এসব সিরিয়ালে খামাখা যতসব আজেবাজে অবান্তর উল্টোপাল্টা জিনিস দেখিয়ে হিংসা ও বিশৃঙ্খলার কারণ ঘটানো হচ্ছে, সংসারকে কুরুক্ষেত্র বানিয়ে তোলা হচ্ছে- ব্যাপারখানা এমন নয়। স্টারজলসা সংসারে হিংসা-বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে না, বরং হিংসা-বিদ্বেষ সৃষ্টিকারীদের পরিচয় তুলে ধরছে মাত্র। আপনারা জানেন, একটা টিভি চ্যানেল বন্ধ করা হয়েছিল দাঙ্গা ছড়ানোর অভিযোগে। অথচ সেখানে মিথ্যা কিছু দেখানো হয়েছিল বলে কেউ মনে করেন না। বরং সবাই ধারণা করেন, সেখানে বাস্তব ঘটনাই দেখানো হচ্ছিল, যা প্রকাশিত হলে তার প্রতিক্রিয়ায় দাঙ্গা বেধে যাবার আশংকা ছিল। সেই বিচারে দাঙ্গা সৃষ্টির জন্য ঘটনার খবর প্রচারকারী চ্যানেলকে দায়ী না করে দাঙ্গা বাধার মত কাণ্ড যারা

একটা বাচ্চা যখন আরেকটা বাচ্চাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেবার পর কোয়ান্টাম স্টাইলে "বেশ ভাল লাগছে" বলে তৃপ্তির ঢেকুর তোলে, তখন স্বভাবতই তার অভিভাবকদের লজ্জিত ও বিব্রত বোধ করার কথা। কিন্তু ঐরূপ অবস্থায় তার মা-খালা ও নানী (যিনি স্বয়ং ভিকটিম বাচ্চাটিরও দাদী) যখন এ আচরণকে উপভোগ করে, গুণধর ছাওয়ালের কীর্তি দেখে তাদের গর্বে বুকটা যেন ফুলে ওঠে, উল্লাসের হাসি দিয়ে এ ঘটনার কথা বলে বেড়ায়; তখন এ হাসির আসল মাজেযা ও স্বরূপ বোঝা যায় কেবল 'কিরণমালা' সিরিয়ালে রাক্ষসী রাণী কটকটির অট্টহাসি দেখার পর। বাচ্চাদের নেতিবাচক আচরণকে সংশোধনের পরিবর্তে যারা এই নেতিবাচক আচরণকেই ইতিবাচক হিসেবে দেখে এবং এসব ধ্বংসাত্মক প্রবণতাকে প্রমোট করাটাকেই নিজেদের মনছবি বাস্তবায়নের পন্থা হিসেবে গ্রহণ করে, তাদেরকে রাক্ষসী ছাড়া আর কী বলা যায়? উপরন্তু নিজেরা সর্বদা নির্দেশ, প্ররোচনা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে নিজেদের ঘি-ননীপুষ্ট মোটাতাজা বাচ্চাটিকে দিয়ে ভাইয়ের শীর্ণকায় দুর্বল বাচ্চাটাকে রীতিমতো ঠেঙিয়ে আসলেও উল্টো আরো 'ভাইয়ের বাচ্চাটার হাতেই তাদের বাচ্চাটা সারাজীবন মার খেয়েছে' এমন একটা ডাহা মিথ্যা বিকৃত তথ্য মুখস্থ করিয়ে ব্রেনওয়াশ করে নিজেদের বাচ্চার অন্তরে ভাইয়ের বাচ্চার প্রতি চিরস্থায়ী শত্রুতা ও বিদ্বেষ জাগরিত রাখার পদক্ষেপ নেয়। সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢেকে দেবার ও সত্যকে পুরোপুরি উল্টে দেবার এ নোংরা রাজনীতি কেবল কটকটির ছলনার সাথেই তুলনীয়। পরিবারের ভিতর আমার চারিপাশে কিলবিলকারী মানুষরূপী এই রাক্ষসীগুলোকে পরিপূর্ণভাবে চেনার ক্ষেত্রে কিরণমালার তো কোন বিকল্প দেখি না। মূলত: কটকটিরাই যে কিরণমালাকে ভয় পায়, রাক্ষসী স্বভাবের ব্যক্তি বা তাদের অনুচর ছাড়া আর কারো যে কিরণমালা সিরিয়ালের প্রতি এলার্জি বা বিরক্তি বোধ করার কোন হেতু নেই, এ ব্যাপারে আর কোন সন্দেহ বোধ করি না। নিজেদের রাক্ষসী চরিত্রের কথা (ছোট-বড় সকলের কাছে) ফাঁস হয়ে যাওয়া এবং বাচ্চাদেরকে মিথ্যা উষ্কানী দিয়ে বাচ্চাদের মাঝে প্রাণঘাতী হাঙ্গামা লাগানোর পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যাওয়ার আশংকায় এরা কিরণমালার বিরোধিতা করলেও এ বিরোধিতার কারণ হিসেবে নিজেদের ধর্মপ্রীতিকে জাহির করে এবং বিধর্মীদের সিরিয়াল দেখলে বাচ্চাদের ধর্ম নষ্ট হয়ে যাবে এই আশংকার দোহাই দিয়ে 'কিরণমালা' দেখাকে নিষিদ্ধ করে।

কিরণমালার জনপ্রিয়তাকে অনেকে বিজাতীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের প্রভাব হিসেবে গণ্য করছেন। অথচ এটা আদৌ বিজাতীয় কিছু নয়, বরং প্রচলিত লোককাহিনী অবলম্বনে তৈরি, যা আমাদের পল্লী সাহিত্যেরই অংশ (যদিও দুই বাংলার)। সুয়োরানীর (কিরণমালার মা রূপমতী) দু:খ নিয়ে তো সুফিয়া কামালও কবিতা রচনা করে গেছেন, যা আমরা শৈশবে পাঠ করেছি। বিজাতীয় সংস্কৃতি কেবল তখনই বর্জনীয়, যখন তা অনৈতিক বা অশালীন কিছু হয়ে থাকে। কিন্তু কিরণমালাতে অনুরূপ কিছু নেই বললেই চলে। অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলে থাকেন, আমাদের চ্যানেল ওরা দেখায় না, ওদের চ্যানেল আমরা দেখব কেন? কিন্তু কথা হল, আমাদের চ্যানেল যেখানে স্বদেশের মানুষই গচে না, কোয়ালিটির তারতম্যের কারণে দেশের মানুষই দেশের চ্যানেলগুলো বাদ দিয়ে বিদেশী চ্যানেল দেখে, সেখানে বিদেশীরা আমাদের চ্যানেল পয়সা খরচ করে দেখতে যাবে কোন্‌ দু:খে? নিজেদের কোয়ালিটি তথা গুণগত মান না বাড়িয়ে শুধু শুধু অন্যকে হিংসা করে কী লাভ? দেশের চ্যানেলগুলো যেখানে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিদেশীদের তাবেদার হয়েই আছে, সেখানে শুধু সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে দেশপ্রেমের মায়াকান্না নিছক ব্যবসায়িক কারণে বলেই মনে হয়। অর্থাৎ, দর্শক হারানোটাই স্বদেশী মিডিয়াগুলোর ক্ষোভের মূল কারণ। আলগা দেশপ্রেম আর ঠুকনো সংস্কৃতিপ্রেম দেখিয়ে কোন লাভ হবে না। বাংলাদেশী মিডিয়া ও টিভি চ্যানেলগুলো শুধু রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই ভারতবান্ধব হয়নি, দেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্থ করার কাজেও ভারতের সহযোগী হয়েছে- দেশের উৎপাদিত ফল-ফসল ও গবাদি পশুকে ভেজাল আখ্যা দিয়ে নষ্ট করিয়ে বাংলাদেশের মার্কেট দখলে ভারতকে সহায়তা করেছে। কিন্তু সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে নিজেদের পেটে লাথি পড়ায় তাদের দেশপ্রেম ও ধর্মপ্রেম উতলে উঠেছে। এমনকি জীবনভর ধর্মহীনতা ও অশ্লীলতার চর্চা এবং ইসলাম ধর্মের প্রতি বৈরী মনোভাব পোষণ করে আসছেন এমন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরাও অপসংস্কৃতির দোহাই দিয়ে বিদেশী চ্যানেলের বিরোধিতা করছেন। দেশে পরিবার ভাঙ্গার কর্মসূচীর আসল কুশীলব ইহুদী মদদপুষ্ট এনজিওদের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পর্ক রাখেন এমন ব্যক্তিরাও কোন্‌ টিভি চ্যানেল দেখে কত ভাগ বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটছে সেই গবেষণায় নেমেছেন। ধর্ম, নৈতিকতা ও পরিবার ব্যবস্থা রক্ষায় যারা কোনকালেই আন্তরিক ছিলেন না, বরং যাদের অনেকেই বাক স্বাধীনতা ও মুক্তচিন্তার দোহাই দিয়ে ধর্মীয় ও নৈতিক মূল্যবোধ ও পারিবারিক শৃঙ্খলার বিপরীতে কথিত প্রথাবিরোধী চিন্তাবিদদের জয়গান গেয়েছেন; তারাই যখন শালীনতা ও পারিবারিক সংহতির জন্য মায়াকান্না করেন; তখন তার পিছনে যে ব্যবসায়িক প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়া আর কোন কারণ থাকতে পারে না, তা বুঝতে বিশেষজ্ঞ হবার দরকার নেই। আমার মতে, ভারতের কাছ থেকে আমাদের নেয়ার মত কিছু থাকলে ঐ একটা জিনিসই আছে- তাহল কিছু টিভি সিরিয়াল। কারণ, এগুলোর দ্বারা আমাদের পারিবারিক কুচক্রী ব্যক্তিদের পাশাপাশি লোভী মিডিয়াগুলোও শায়েস্তা হচ্ছে। হযরত আলী (রা.) বলেছেন, "প্রজ্ঞা যদি মুনাফিকের কাছেও পাওয়া যায়, তাও নিতে হবে।" অতএব, ভাল ও শিক্ষামূলক কোন কিছু স্বদেশী হোক বা বিদেশী হোক গ্রহণ করতে আপত্তি থাকার কথা নয়।

কোন কিছুকে শুধু সাম্প্রদায়িক বা জাতিগত দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে ধর্ম ও নৈতিকতার মানদণ্ডে বিচার করা উচিত। সাম্প্রদায়িককেন্দ্রিক চিন্তা মানুষকে এতটাই বেকুব বানিয়ে দেয় যে, কোন মুসলিম দেশের মুসলিম নারী উলঙ্গ জিমন্যাস্টিক খেলায় চ্যাম্পিয়ন হলে তাকে নিয়ে গর্ব করতে শুরু করে। কোন মুসলিম দেশ অথবা অমুসলিম দেশের মুসলিম নাগরিকগণ সস্তা প্রেম নিবেদনমূলক উলঙ্গ চলচ্চিত্র

ইদানীং অভিযোগ উঠেছে, স্টার জলসার সিরিয়ালগুলোতে হিংসা ও ঈর্ষার প্রতিযোগিতামূলক আচরণের অভিনয় করানোর দ্বারা শিশুদের মনে হিংসা-বিদ্বেষ ছড়ানো হচ্ছে, যা নাকি শিশুদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। কিন্তু কোন টিভি চ্যানেলকে দোষ দেবার আগে আমাদের দেশের কয়টি পরিবারে শিশুসুলভ চরিত্র ও আচরণ বজায় রাখবার এবং শিশুদের সুস্থ মানসিক বিকাশের মত উপযুক্ত পরিবেশ বজায় আছে, সেই খবর রাখাটাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। একথা তো অস্বীকার করতে পারি না যে, শিশুদেরকে হিংসা-বিদ্বেষ থেকে শুরু করে মারামারি পর্যন্ত উৎসাহিত করবার মত খান্নাস অভিভাবক আমাদের পরিবারে রয়েছে। এ ধরনের পরিবারের প্রেক্ষাপটে আমার দৃষ্টিতে আলোচ্য টিভি সিরিয়ালগুলোর মূল বার্তা ও শিক্ষাটি হল এই যে, শিশুরা যাতে তাদের ঐ সমস্ত শকুনী মামাদের প্ররোচনায় বিভ্রান্ত হয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে হিংসা-হানাহানিতে প্রবৃত্ত না হয়। অর্থাৎ, আমি বলতে চাই, টিভি সিরিয়ালগুলোর প্রকৃত মর্মার্থ উপলব্ধি করতে পারলে তা শিশুদেরকে দুষ্ট ও কুচক্রী অভিভাবকদের কথামতো পারস্পরিক ঈর্ষা-বিদ্বেষে লিপ্ত হওয়া থেকে বেঁচে থাকায় সহায়ক হবে। অবশ্য এগুলো বোঝার মত পরিপক্কতা না থাকলে তা থেকে সুফল গ্রহণ করা শিশুদের পক্ষে কঠিন হবে এবং উল্টো বিভ্রান্ত হবার আশংকা থাকবে। যেসব পরিবারে এ জাতীয় কূটচক্রান্ত এবং আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সকলের মাঝে বিষ ঢালার অপতৎপরতা নেই, সেসব পরিবারে এ বিষয়ক টিভি সিরিয়ালগুলো দেখা অপ্রয়োজনীয়। মহামারী যেখানে নেই, সেখানে টিকা গ্রহণযোগ্য নয়। এখনকার বাংলার মানুষ যদি খলীফা ওমরের (রা.) যুগের মানুষের মতো হতো, তাহলে আমিই বলতাম, স্টার জলসা বন্ধ হোক! কারণ, শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে খামাখা অশান্ত করতে আল্লাহই নিষেধ করেছেন (লা- তুফসিদু ফিল আরদি বা'দা ইছলাহিহা)। অবশ্য সমাজে বাস্তবতা না থাকলে কোন টিভি চ্যানেল এ জাতীয় সামাজিক ও পারিবারিক সমস্যা বিষয়ে সিরিয়াল নির্মাণের উপাদানই খুঁজে পেত না, আর বাস্তবতাবিবর্জিত তথা সম্পূর্ণ অবাস্তব কোন কিছু ওভাবে মার্কেটও পেত না, ওসব নির্মাণের কোন প্রয়োজনই থাকত না। কেউ যদি মনে করে থাকেন, পরিবারে কূটলামি ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার চিত্র শুধু ভারতীয়দের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তাই এ জাতীয় সিরিয়াল শুধু তাদের সামাজিক প্রেক্ষাপটে উপযোগী; আর বাংলাদেশের পরিবারগুলো প্রেম-ভালবাসা ও সম্প্রীতি-সহমর্মিতার বন্ধনে আবদ্ধ, তাই এগুলো এদেশের বেলায় অপ্রাসঙ্গিক ও অনুপযোগী; তাহলে এ চিন্তা বাস্তবসম্মত নয়। যদিও মন্দ ও কুটিল মানুষগুলো সংখ্যায় বেশি নয়, কিন্তু পরিবারে দাপট ও আধিপত্য তাদেরই প্রবল। এ ধরনের যেকোন রিপোর্ট (অর্থাৎ, শিশুদের মাঝে হিংসা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার মনোভাব সৃষ্টির জন্য একতরফাভাবে কোন টিভি চ্যানেলকে দায়ী করে প্রকাশিত যেকোন প্রতিবেদন) এ সংক্রান্ত প্রকৃত অপরাধীদের শাক দিয়ে মাছ ঢাকার কাজেই সহায়ক হবে। পরিবারে শিশুদের মাঝে হিংসা-বিদ্বেষ প্রমোটকারী কুচক্রী দুর্বৃত্তরা শিশুদের মাঝে তাদের সৃষ্ট হিংসাত্মক মনোভাব ও অস্বাভাবিক আচরণকে কোন একটা টিভি চ্যানেল বা টিভি সিরিয়ালের উপর চায়ে নিজেদের ইচ্ছাকৃত অপরাধকে আড়াল করতে পারবে। নিষ্পাপ শিশুর মনে পাপ ঢালার কাজটি মূলত: কুচক্রী মায়েদের দ্বারাই সম্পাদিত হচ্ছে; এর জন্য কোন টিভি চ্যানেলকে দায়ী করে লাভ নেই। টিভি চ্যানেলের সুবাদে পাপ ঢালার বিষয়টি প্রকাশ পাচ্ছে মাত্র। বিশেষ করে 'কিরণমালা' সিরিয়ালে আমরা দেখেছি, কিরণমালার কাছ থেকে অপহরণ করে নিয়ে আত্মপরিচয় ভুলিয়ে দেয়া মেয়ে আলোকমালাকে ব্রেনওয়াশ করে রাক্ষসী রানী কটকটি যখন কিরণমালার বিরুদ্ধে যুদ্ধে উষ্কে দিচ্ছে, তখন শিশুদের মনে বিষ ঢালা ও যুদ্ধ-মারামারির কাজে ব্যবহার করার এ জঘন্য প্রবণতা সম্পর্কে কিরণমালা আক্ষেপ প্রকাশ করছে ও এ হীন কূটকৌশলকে ধিক্কার জানাচ্ছে। তাই আমার কাছে মনে হয়েছে, শিশুদের মধ্যে বিভেদ ও হিংসাত্মক মনোভাব সৃষ্টির তৎপরতার প্রতি নিন্দা জানানোই এসব সিরিয়ালের মূল প্রতিপাদ্য। তবে শিশুরা এগুলো একা দেখলে বিভ্রান্ত হতে পারে। তাদেরকে সরাসরি না দেখিয়ে বড়রা এগুলো থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে তার আলোকে শিশুদেরকে সতর্ক ও সচেতন করতে পারে। আর দেখতে দিলেও বিষয়টা ভাঙ্গিয়ে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিতে পারে।

ধর্মীয় ও নৈতিক দিক থেকে শিক্ষণীয় বিষয়ও রয়েছে "কিরণমালা" সিরিয়ালে।

বিষয়: বিবিধ

২৩৪৭ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

374854
১৭ জুলাই ২০১৬ রাত ০৮:১৮
শেখের পোলা লিখেছেন : এম আর আই টাও করে ফেলুন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File