হাদীস যাচাইয়ের সহজ উপায়
লিখেছেন লিখেছেন ওবাদা বিন সামেত ০৩ জুলাই, ২০১৬, ০৯:২১:১৭ সকাল
হাদীস সংকলনের যুগে মুহাদ্দিসগণ হাদীসের সত্যতা ও বিশুদ্ধতা যাচাইয়ে অনেক সূত্র আবিস্কার করেছিলেন এবং সেই অনুসারে যাচাই-বাছাই করে সংকলিত বিশুদ্ধ হাদীস আমাদের জন্য রেখে গেছেন। তবে আমাদের মত সাধারণ মানুষের পক্ষে সনদ, মতন, বর্ণনাকারীর জীবনী, বর্ণনাসূত্র ইত্যাদি যাচাই করা কষ্টসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ এবং বড় বড় হাদীসগ্রন্থ আর আসমাউর রিজাল গ্রন্থ অধ্যয়ন করাও আমাদের পক্ষে একটু কঠিন মনে হতে পারে। তাই কোন হাদীস পড়লে বা শুনলে উপস্থিতভাবে ও তাৎক্ষণিকভাবে তার সত্যতা যাচাইয়ের জন্য চারটি সহজ ও শর্টকাট পদ্ধতি অবলম্বন করা যেতে পারে; যথা:-
(১) কোরআনের সাথে মিলিয়ে দেখা: আমাদের নবীর (সা.) কোন কথা বা কাজ কোরআনে সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত ও নির্দেশিত কোন তথ্য ও বিধানের সাথে সাংঘর্ষিক হবে না।
(২) কমন সেন্সের সাথে মিলিয়ে দেখা
(৩) বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে দেখা
(৪) উদ্দেশ্য বিবেচনা করে দেখা
এগুলোর মধ্যে প্রথম তিনটি কৌশল আমাদের প্রত্যেকের নাগালের মধ্যে অর্থাৎ আমাদের হাতের মুঠোয়ই আছে। আর চতুর্থটি প্রয়োগের ক্ষেত্রে একটু পারিপার্শ্বিক জ্ঞান ও চিন্তা-গবেষণার প্রয়োজন হয়।
(৪) কোন হাদীসের সত্যাসত্য জানার একটি উপায় হল সংশ্লিষ্ট হাদীসটি প্রচারকারীর উদ্দেশ্য বিচার করা। কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা শ্রেণির ব্যক্তিগত কামনা বা দলীয় এজেন্ডাকে সরাসরি সমর্থনকারী কিংবা এগুলোকে পূরণে প্রত্যক্ষভাবে সহায়ক বর্ণনা সত্য না হবার সম্ভাবনাই বেশি। বিশেষ করে মুসলমানদের মধ্যে বিবদমান কোন ফেরকার প্রচারিত মতবাদের পক্ষে-বিপক্ষে যদি কোন হাদীস দেখেন, অথবা নবীজীর (সা.) ওফাতের অনেক পরে জন্ম নেয়া কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নাম ধরে তাদের পক্ষে-বিপক্ষে কোন বর্ণনা দেখেন, তাহলেও বুঝবেন, সেসব কথার সাথে নবীর (সা.) কোন সম্পর্ক নেই। তবে নবীর (সা.) বর্ণিত সাধারণ সূত্র ও মানদণ্ডের আলোকে যেকোন ব্যক্তি বা সম্প্রদায়কে বিচার করে দেখা যাবে। আর যে সকল ব্যক্তি বা সম্প্রদায়ের আবির্ভাব সংক্রান্ত ভবিষ্যদ্বাণী নবীজীর (সা) সময় থেকেই সর্বসাধারণের মাঝে প্রচারিত হয়ে আসছে এবং সর্বসাধারণ এ সম্পর্কে অবগত আছে, সেই সংক্রান্ত বর্ণনাগুলো সত্য বলেই বিবেচিত হবে। নতুন কোন আকীদা বা মতবাদের পক্ষে বা বিপক্ষে হাদীসের নামে যা শোনা যাবে, তা বানোয়াট হওয়াটাই স্বাভাবিক। যেমন- যারা এরূপ এরূপ কথা বলে বা বিশ্বাস করে, তারা কাফের, ফাসেক বা মিথ্যাবাদী। বিশেষ করে কোন একটা দল বা গোষ্ঠীর সবগুলো আকীদা ও কর্মের বিবরণ যদি একটা হাদীসের মধ্যেই পাওয়া যায়, তা সংশ্লিষ্ট গোষ্ঠীটির পক্ষে হোক বা বিপক্ষে হোক, তা সন্দেহাতীতভাবে মনগড়া হাদীস। যদিও সংশ্লিষ্ট আকীদাগুলো কোরআন ও হাদীসের মূলনীতির আলোকে এমনিতেই বাতিলযোগ্য, কিন্তু তাই বলে সেগুলোর অনুসারীদেরকে আরো অধিক মাত্রায় নাস্তানাবুদ করার জন্য কোন ব্যক্তি বা দলকে সুনির্দিষ্ট করে স্বয়ং নবীর নাম দিয়ে বাক্য রচনা করাটা নবীর সাথে বিশ্বাসঘাতকতারই নামান্তর। ভ্রান্ত আকীদা ঠেকাতে গিয়ে নিজেরাই পথভ্রষ্ট হয়ে গেলাম কিনা, সে ব্যাপারে সকলের সচেতন থাকা উচিত। কারণ, নবী বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার নামে জেনেশুনে মিথ্যা আরোপ করল, সে যেন জাহান্নামে নিজের স্থান ঠিক করে নিল। তবে সাধারণত একদল ভ্রান্ত চিন্তার মানুষই আরেকদল ভ্রান্ত চিন্তার মানুষের নামে জাল হাদীসের অস্ত্র ব্যবহার করে থাকে। কোন সুস্থ চিন্তার নিষ্ঠাবান ঈমানদার মানুষ আল্লাহ ও রসূলের নামে মিথ্যা রচনার দু:সাহস দেখাবে না। সকলের বোঝা উচিত, মিথ্যার মোকাবেলা সত্য দিয়েই করতে হয়- মিথ্যা দিয়ে নয়। আবার ইতিহাসবিখ্যাত কোন বিতর্কিত ব্যক্তির নামে যদি এমন কোন নতুন ও অপরিচিত হাদীস শোনেন যে, অমুক ব্যক্তি ঈমান নিয়ে মরবে না, তাহলে এ বর্ণনাকেও উদ্দেশ্যমূলক বলেই মনে হয়। ইতিহাসে কোন ব্যক্তির বিতর্কিত ভূমিকা, কুটিলতা ও বিশ্বাসঘাতকতার কারণে তার পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা-সমালোচনা হতেই পারে, কিন্তু তাই বলে তাকে বেঈমান প্রমাণের জন্য জাল হাদীসের আশ্রয় নিতে হবে- এমন প্রবণতা সমর্থনযোগ্য নয় মোটেই।
এছাড়া কোন এলাকার নাম ধরে যদি কোন হাদীস থাকে যে, অমুক এলাকার মানুষদের মন্দ বলা যাবে না, শুধু ভাল বলতে হবে; কিংবা অমুক এলাকার মানুষদেরকে ভাল বলা যাবে না, শুধু মন্দ বলতে হবে; তাহলে সেই হাদীসও সহীহ হওয়ার ব্যাপারে কিছুটা সন্দেহ থেকে যায়। কারণ, কোন নির্দিষ্ট এলাকার সকল কালের সকল মানুষ ভাল হবে বা মন্দ হবে, এমন গ্যারান্টি কেউ কোনদিন দিতে পারবে না। সুতরাং এটা সম্ভব যে, কোন নির্দিষ্ট দেশ বা ভূখণ্ডের কোন সম্প্রদায় বা শাসকগোষ্ঠী নিজেদের কর্মকাণ্ডকে সমালোচনার ঊর্ধ্বে রাখবার জন্য রক্ষাকবচ হিসেবে হাদীস তৈরি করে থাকতে পারে। আল্লাহ ভালো জানেন। অবশ্য কিয়ামতের পূর্বে আবির্ভাব হবে এমন একটি সম্প্রদায় তথা ইয়াজুজ মাজুজের সকল লোক জাহান্নামী হওয়া সংক্রান্ত যে বর্ণনা আছে, তা সত্য। এছাড়া বনী ইসরাইলের মধ্যে যারা কাফের, তাদেরকে ঈসা ইবনে মরিয়মের (আ) মুখ দিয়ে অভিসম্পাত করার কথা কোরআনেই বলা হয়েছে, সুতরাং এটা নিয়েও সন্দেহ নেই।
নবীর সময়ে বর্তমান ছিল না এমন কোন ভাল-মন্দ ব্যক্তি বা দলের নামে (পক্ষে বা বিপক্ষে) প্রচারিত কথা যেমন হাদীস হিসেবে মেনে নেয়া কঠিন, তেমনি নবীর সময়ে প্রচলিত ছিল না এমন কোন প্রথা, আমল বা অনুষ্ঠানের ব্যাপারে (অনুকূলে বা প্রতিকূলে) প্রচারিত কথাবার্তাও হাদীস হবার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ। মুসলিম সমাজে পরবর্তীকালে নতুন প্রবর্তিত প্রথা অনুসরণের ফযীলত বর্ণনা বা এর ভূয়সী প্রশংসা সম্বলিত হাদীস যেমন প্রশ্নবিদ্ধ, তেমনি উক্ত প্রথাসমূহ অনুসরণকারীদেরকে হাদীসের রেফারেন্স দিয়ে কাফের-ফাসেক বলাটাও অগ্রহণযোগ্য। নবীর (স আগমন অবশ্যই আমাদের আনন্দের বিষয়, নবীর আগমনের দিন-তারিখে আনন্দিত হওয়াটা ঈমানেরই পরিচায়ক, আনন্দিত না হওয়াটাই বরং ঈমানের
হাদীস জাল হবার কারণ: হাদীস জাল করার কাজটি কারা করেছে এবং কেন ও কি উদ্দেশ্যে করেছে, তা এবার তুলে ধরা যাক।
(১) ইসলাম ও মুসলমানদের ক্ষতিসাধন: ইসলাম ও মুসলমানদের শত্রুরা দ্বীন সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়ানোর মাধ্যমে মুসলমানদের ঈমান-আকীদা বিনষ্ট করা এবং মুসলমানদের মাঝে ফেতনা-ফাসাদ ও হানাহানি সৃষ্টির উদ্দেশ্যে রসূলের (সা.) নামে বিভ্রান্তিকর ও বানোয়াট কথাবার্তা ছড়িয়েছে। এক্ষেত্রে প্রধানত ইহুদী ও তাদের এজেন্টরাই ভূমিকা পালন করেছে।
(২) ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর উদ্দেশ্য চরিতার্থ করা: কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা শ্রেণি নিজেদের কোন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করবার জন্য নবীর নাম দিয়ে কথা রচনা করে নিজেদের পক্ষে ব্যবহার করে থাকে। উদ্দেশ্য চরিতার্থ করবার কাজটি আবার দু'রকম হয়ে থাকে-
(ক) স্বার্থ চরিতার্থ করা:
(খ) নিজেদের নেতা বা দলকে শ্রেষ্ঠ বা সহীহ প্রমাণ করা: নিজেদের নেতাকে অন্য সবার তুলনায় শ্রেষ্ঠ প্রমাণিত করা কিংবা নিজেদের দল, মাযহাব, মতবাদ ও আকীদাকে একমাত্র সহীহ ও সঠিক পথ হিসেবে জাহির করার উদ্দেশ্যে গোঁড়ামি ও একগুঁয়েমিবশত মানুষ জাল হাদীস তৈরি করে থাকে। অধিকাংশ জাল হাদীস সম্ভবত এ উদ্দেশ্যেই এ কাজের জন্যই রচনা করা হয়েছে।
(৩) ভুলবশত: অনেক আরবী প্রবাদ ও মনীষীদের বাণীগুলোকে নবীর হাদীস হিসেবে মনে করা হতে পারে। যেমন- দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ, বিদ্যার্জনের জন্য প্রয়োজনে চীন পর্যন্ত যাও ইত্যাদি। অবশ্য জ্ঞানার্জন ফরয হওয়া সংক্রান্ত হাদীসটি সহীহ।
(৪) সৎ কাজে উৎসাহপ্রদান: অনেক সময় নবীর অনেক দুর্বল ঈমানের উম্মত মানুষকে নেক কাজে উৎসাহ দেয়া আর মন্দ কাজ থেকে ফেরানোর জন্য ভাল নিয়তেই মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে থাকে। এ উদ্দেশ্যে তারা জাল হাদীসও রচনা করে, আবার কোন কোন সময় কবর আযাবের মিথ্যা ছবি ও ভিডিও প্রচার করে। কিন্তু মিথ্যা কথা বা জাল হাদীসের দ্বারা যে উপকার পাওয়া যায় তা সাময়িক, কিন্তু অপকারটা হয়ে থাকে স্থায়ী। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে পারে, অনেক
বিষয়: বিবিধ
১২২৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন