সায়িমের সিয়াম উদযাপন (অনুগল্প)
লিখেছেন লিখেছেন মহামাত্র ২৫ জুন, ২০১৬, ০৪:৩৯:০৯ বিকাল
বাড়ির সবচেয়ে ছোট ছেলে সায়িম আজ রোজা রেখেছে, সে উপলক্ষে বাড়িতে আজ ইফতার পার্টি হবে, বিশাল আয়োজন, পুরো বাড়ি চমৎকার করে সাজানো হয়েছে, দুজন রাঁধুনি হায়ার করে আনা হয়েছে, খাবারের গন্ধে বাড়িতে উৎসবের আমেজ তৈরি হয়েছে, রুনা ঘুরে ঘুরে তদারকি করছি, রুনার তো বসার যো নেই, সে যে কর্ত্রী.........
বড় ছেলেটা এবার এসএসসি দেবে, ওর রুম টা সবসময়ই এলোমেলো, রুমে ঢুকল, কোন সাড়া শব্দ নেই, গায়ে হাত দিতেই ও চমকে উঠল,
Sorry মা, আমি শুনতে পাই নি, একটা জম্পেশ মুভি দেখছিলাম, Terminator Series এর,সময় তো কাটাতে হবে, কেন যে রমজান মাসটা বড় দিনে আসে? ইফতার সেই পৌনে সাতটায়, তিনটা মুভি download করেছি, সন্ধ্যা পর্যন্ত দেখবো।
“তুই এখন এই ঘর থেকে Terminate হ, আমি ঘর গুছাব, আজ কে বাসায় ইফতার পার্টি সে খেয়াল আছে ?”
ঘর গুছিয়ে মেয়েটার ঘরে ঢুকতেই দেখে, মেয়েটা ঘুমাচ্ছে, কি সুন্দর নিষ্পাপ চেহারা, পাশে রাখা মোবাইলে আলো জ্বলে উঠল, মোবাইল টা হাতে নিতেই চমকে উঠল, messenger এর কথোপকথন পড়া শুরু করল...
Hi, Baby….Are you sleeping?
No, I am trying to sleep with a pillow …
Oh! Why it’s pillow? Why not me? Want to hug and kiss you, baby….
Remember, it’s Ramadan, just wait for the Eid day, I’ve bought a Barbie dress, I will look like a Barbie doll…..
Oh, Barbie doll, I will eat you like Barbeque with hot sauce………
এটুকু পড়তেই মাথা ঘুরতে লাগল, নিজের রুমে যেয়ে শুয়ে পরল... বিপুল সাহেবের ফোন এসেছে
“শোন, এতজন কে দাওয়াত দিয়েছ, বাজেট তো ফেল করবে, ভাগ্যিস গত মাসেই সব উপরি ইনকাম করে রেখেছিলাম, এ মাসে তো এসব নেওয়া যায় না, একটা ছোট deposit ছিল, ওটা interest সহ দ্বিগুণ হয়েছে, তুমি ঈদ উপলক্ষে যাদেরকে gift কেনার টাকা দিতে চেয়েছিলে, দিয়ে দিও, আর কিছু কি আনতে হবে? আমি আসছি...।“
বিকেলেই সব মেহমানরা আসা শুরু করেছে, ভাবিরা সব হালকা মেক আপ করেছে, মাথায় শাড়ির আঁচল টা আলতো করে দেওয়া, কেউ কেউ আবার হিজাব পরে এসেছে, হিজাবের উপর মুক্তার মালা সাজান, কারো আবার হিরা বসানো সুদৃশ্য পিন লাগানো, কারো আবার সোনার টায়রা হিজাবের উপর ঝলমল করছে, কি সুন্দরই না লাগছে সবাইকে, একজন শুধু আলাদা আর বেমানান, কালো আবায়ায় আপাদমস্তক ঢাকা, হাতে একটা খেজুরের প্যাকেট, দামী gift এর ভিড়ে খুব বেখাপ্পা লাগছে...
ইফতার সাজানো প্লেট হাতে নিয়ে ইফতারফি তোলা হল, কে যেন সবাইকে Tag করে সাথে সাথে upload দিল, পুরো program টা খুব ভালো চলছিল...
খাওয়ার পর আড্ডা চলছিল সাথে চিরকুট চিরকুট খেলা, গল্প, গান আর কৌতুকে ভরপুর আনন্দময় পরিবেশ... হঠাত চিরকুট পেল সেই আবায়া পরিহিত ভাবী.........চিরকুটের টপিকস “বদলে যাও, বদলে দাও”
ভাবী বলতে শুরু করল........
“আমি আজ একটা গল্প শুনাব......... বদলে যাবার গল্প............ গত রমজানের ঘটনা, এক সন্ধ্যা বেলায় দরজায় কে যেন ধাক্কা দিল, একটা ছোট্ট ছেলে, ৫ বছর বয়স হবে, হাতে একটা পলিথিনের ব্যাগ, ভিতরে ছোলা মুড়ি, আধ খাওয়া কয়েকটা পিঁয়াজু...
-আম্মা কিছু ছুটা ইফতারি দেবেন? সারাদিন না খাওয়া...আমরা সবাই পানি খেয়ে রোজা রাখছি, আব্বার জ্বর, তিন দিন ধইরা কামে যাইতে পায় না......
আমার ওর বয়সী একটা ছেলে মারা গিয়েছিল, আম্মা ডাকটা তে আমি যেন ওর মাঝে আমার সেই ছেলেটা কে খুঁজে পাই...খুব মনোযোগ দিয়ে ওর কথা শুনি...সারা বছর ওরা প্রায় না খেয়েই থাকে...আর রোজা মাসে ওরা ভালো খাবার পায়, কারো কাছে চাইলে কেউ ফেরায় না...ওদের দশ জনের একটা দল আছে, একেকজন একেক বাসায় যায়, তারপর সব এক করে ভাগ করে, তারপর ভাগের ছোট্ট সেই অংশ টা পলিথিনে মুড়িয়ে যার যার বাড়িতে যায়, নিজ-নিজ পরিবারের সাথে খাবে বলে...।
সেই ছোট্ট ছেলেটার ক্ষুধা আর কষ্টের গল্প আমাকে ছুয়ে দিল.........কত অপচয় করেছি............কত দামী রেস্টুরেন্টে খেয়েছি.........কত খাবার ফেলেছি.........কত রমযান পার করেছি.........কখনো তো ক্ষুধার কষ্ট পাই নি...অনুভবও করি নি.........কখনো কোন গরিব মিসকিন কে খাওয়াইনি............একটা টাকাও সদকা করিনি...
আল্লাহ্ আমাকে কত ভালো রেখেছেন......কিন্তু আমি কখনও শুকরিয়া তো করিইনি......বরং একের পর এক আল্লাহ্র আইন ভেঙেছি...অবাধ্য হয়েছি...সব হারামের মধ্যে ডুবে আছি......তবু আল্লাহ্ তাঁর নিয়ামত থেকে আমাকে বঞ্চিত করেন নি......
তারপর...............সেই আত্মশুদ্ধির মাসে আমি পাল্টে যাই......রমযানের প্রতিটা রোজায় আমি একটু একটু করে পাল্টাই......পরহেজগার হবার চেষ্টা করি......বেপর্দা থেকে পর্দানশীল হই.....music, movie, TV এর সিরিয়াল সব দেখা বন্ধ করে দেই....... ব্যাংকের interest হারাম হওয়ায় তা ছেড়ে দেই...আমার স্বামী কেও পাল্টাই...উপরি ইনকাম আনতে নিষেধ করি.........
রমজানের আসল উদ্দেশ্য পরহেজগারিতা অর্জনের জন্য আমরা দুজনেই আস্তে আস্তে সব গুনাহ বর্জন করি, নিজেদেরকে পরিশুদ্ধ করার চেষ্টা করি......।।
অন্তরে আল্লাহ্র ভয় সেই তাকওয়া অর্জনের চেষ্টা করি......কারণ রোজার বিধান দেওয়া হয়েছে তাকওয়া অর্জনের জন্য, গুনাহ বর্জন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে জান্নাতের উপযোগী হওয়া, নিজেকে পরিশুদ্ধ করার জন্য।
এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, “হে মুমিনগণ! তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের প্রতি, যাতে তোমরা আল্লাহভীরু হতে পারো, পরহেজগার হতে পারো।“
অথচ এই আত্মশুদ্ধির মাসটাকে ইফতার পার্টি celebration, হাজারটা মার্কেট চষে জামা-জুতা কেনা, চাঁদ রাতে দল বেঁধে মেহেদি উৎসব, ঈদের সাজসজ্জার প্লান...আরও কত ইহকালিন enjoyment এর বস্তু বানিয়ে ফেলেছি ............সাথে Businessman রাও এই মাসটাকে পুঁজি করে বিভিন্ন advertisement এর মাধ্যমে এটাকে আরও বর্ণিল করে তোলে...আমরাও তার সাথে গা ভাসিয়ে দেই......
এই সংযমের মাসে ক্ষুধার্থ দের কষ্ট কি আসলেই আমরা টের পাই? এই আত্মশুদ্ধির মাসে, আমরা কি আসলেই পাল্টাই না কি শুধু উপবাস থেকে সন্ধ্যাবেলায় পেট পূর্তি করি? মিথ্যাচার, সুদ, ঘুষ, অন্যায়, অবিচার, গান বাজনা, অশ্লীলতা, প্রেম, গীবত, পরচর্চা, খাবারের অপচয় আর দামী কাপড়ের অপচ্য়.........চলতেই থাকে.........।
অথচ, এই মাসটা হওয়া উচিৎ ছিল শুধুই তাকওয়া অর্জনের মাস.........।গুনাহ মাফের মাস.........পরহেজগার হবার মাস.........
অনেক এমন রয়েছে যারা রোজার হাকীকত সম্পর্কে বেখবর। তারা রোজাকে কেবলই খাবার ও পানীয় থেকে বিরত থাকার মধ্যে সীমিত করে দিয়েছে। চোখের ও কানের লাগাম তারা উন্মুক্ত করে দেয়। তারা গুনাহ ও পাপে নিপতিত হতে সামান্যও উৎকণ্ঠিত হয় না।
অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন: { যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা, সে অনুযায়ী কাজ এবং মূর্খতা পরিত্যাগ করল না, তার খাদ্য ও পানীয় থেকে বিরত থাকায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।
আসুন, এই রমযানে আমরা বদলে যাবার প্রতিজ্ঞা করি............
The honourable month 'Ramadan' is running…..
Let's seek forgiveness of Allah.
Let's turn back to Allah.
Let's make changes in ourselves.
বিষয়: বিবিধ
৯৬৪ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন