একজন সুতোমুর গল্প আর আমার মনে জন্ম নেওয়া শত প্রশ্ন!

লিখেছেন লিখেছেন ক্লে ডল ০৪ জানুয়ারি, ২০১৭, ১০:০১:২৯ সকাল



রক্তপাত! এর প্রতক্ষ দর্শন, সংবাদ অথবা স্থিরচিত্র যেকারো মন পাখীকে আহত করতে সক্ষম। এরিখ মারিয়া রেমার্কের "অল কোয়েট অন দ্য ওয়েস্টার্ন ফ্রণ্ট" বইটা পড়েছিলাম। উফ! গা শিউরে ওঠে! কত দুর্বিষহ হতে পারে একটা যুদ্ধ! বইটা পড়ে আমার মনও আহত হয়েছিল, কল্পনার চোখে সে যুদ্ধের ছবি দেখে বাস্তব চোখেও অশ্রু গড়িয়েছিল।

ও! সুতোমুর গল্প বলবো ত!

চাকরীর সুবাদে জাপানিজ এই ভদ্রলোক ৩মাসের জন্য গিয়েছিলেন হিরোশিমাতে। ১৯৪৫ সাল ৬ আগস্ট। সকালে নিজ শহরে ফিরবেন বলে বের হলেন। ডকইয়ার্ডে আসার পর সুতোমুর খেয়াল হলো দরকারি একটি জিনিস ভুলে রেখে এসেছেন। উপায়ন্তর না দেখে তিনি ফিরলেন সেটা আনতে। তখনই সাক্ষাৎ হল লিটল বয়ের সাথে। মিনিটে লক্ষ্য প্রাণ কেড়ে নিতে পারে যে দানব, লিটল বয় নামের সেই পারমাণবিক বোমায় আক্রান্ত হলেন সুতোমু। সাময়িক দৃষ্টিশক্তি হারালেন, শ্রবণশক্তিও ক্ষতি গ্রস্থ হল, ঝলসে গেল শরীরের কিছু অংশ।

চিকিৎসা নিয়ে পরদিন নিজ শহরে ফিরে এলেন সুতোমু। দুইদিন পর ৯ আগস্ট আবার সেই ভয়ংকর আলো! তিনি ভেবেছিলেন হয়ত হিরোশিমার দুঃস্বপ্ন দেখছেন! কিন্তু বিধি বাম। তার নিজ শহর ত নাগাসাকিই। যেখানে নেমে এসেছিল ফ্যাট ম্যান নামের আরেক দানব! কিন্তু সুতোমু এবারে বেঁচে গেলেন অক্ষত অবস্থায়।

পারমাণবিক বোমার প্রথম বাস্তব প্রয়োগ হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে। এ বোমা নিক্ষেপ করেছিল আমেরিকা। জাপানের উপর। মাত্র দুটি বোমাই কেড়ে নিয়েছিল দুই লক্ষাধিক প্রাণ!

হিরোশিমা, নাগাসাকির ট্রাজেডি আজো বিশ্ববাসীকে কাঁদায়। সেই বোমার তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব কয়েক প্রজন্ম বয়ে চলেছে। বিকলাঙ্গ শিশু জন্ম দিয়ে, ক্যন্সারে আক্রান্ত হয়ে।

এ ইতিহাস সকলরেই জানা। সুতোমু কে হয়ত আমরা অনেকেই জানি বিশ্বের ভাগ্যবান ব্যক্তিদের একজন হিসেবে। যিনি কিনা দুটো পারমাণবিক বোমায় আক্রান্ত হয়েও জীবিত ছিলেন।

কিন্তু আজীবন এই বোম্বিং-এর বিভীষিকাময় স্মৃতি সুতোমুকে বয়ে বেড়াতে হয়েছে। তার স্ত্রী এবং ছেলে মারা গেছেন রেডিয়েশন জনিত ক্যান্সারের কারনে। তার জীবিত মেয়েও রেডিয়েশন জনিত ক্যান্সারে আক্রান্ত।

নিজের এবং পরিবারের এই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা থেকে পরমাণু বিরোধী ক্যাম্পেইনার হয়েছিলেন তিনি। পারমাণবিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলে গেছেন, কিন্তু কখনো আমেরিকা বিরোধী বক্তব্য দেননি (বড় মনের দরকার এমন আচারণের জন্য)।

২০০৯ সালের ২৪ মার্চ, জাপান সরকার সুতোমুকে ‘ডাবল সারভাইভর’ হিসেবে স্বীকৃ্তি দেয়(হিরোশিমা এবং নাগাসাকির দুই বোম্বিং থেকেই যারা বেচে যায় তাদেরকে বলা হয় nijū hibakusha বা ‘ডাবল সারভাইভর’)।

তিনি বলেন,আমার দুটো পারমাণবিক বোমায় আক্রান্ত হওয়া এখন সরকারীভাবে স্বীকৃত। যার ফলে আমার মৃত্যুর পরেও নতুন প্রজন্ম এই বোমার ভয়াবহতার ইতিহাস জানতে পারবে।

ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে সুতোমু মারা গেছেন ৪ জানুয়ারি ২০১০ এ।

তিনি এই বোমার মর্মান্তিক অভিজ্ঞতা নিয়ে অনেক বক্তব্য দিয়ে গেছেনে। আশা করে গেছেন এই অস্ত্র কোন একদিন পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হবে।

একটা পারমাণবিক বোমায় কতলক্ষ মৃত্যুযন্ত্রণা লুকিয়ে আছে কেন বিশ্ব বোঝে না? কেন এখনো এই অস্ত্রের উন্নয়ন হয়ে চলেছে?

এ আমার প্রশ্ন নয়, সুতোমুর প্রশ্ন!

এই প্রশ্নটিই আমার মস্তিস্কে শত প্রশ্নের জন্ম দিয়ে গেল!আসলেই কেন মানুষ এই বোমার উন্নয়ন করছে!? স্বার্থের পিপাসা? নাকি থাবার ভিতর খানিকটা ভূমি পাওয়া? নাকি শুধুই ক্ষমতার ডিমে তা দিয়ে সেটা বৃদ্ধির অভিপ্রায়?

বিষয়: বিবিধ

৯৩৬ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

381126
০৪ জানুয়ারি ২০১৭ দুপুর ১২:৫১
মোঃ মাকছুদুর রহমান লিখেছেন : দুঃখজনক! Surprised
০৫ জানুয়ারি ২০১৭ বিকাল ০৫:৩৫
315301
ক্লে ডল লিখেছেন : হায় আগের মন্তব্যটি উত্তরসহ ডিলিট করে ফেললাম! :(

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File