রহস্যময় ফোন ৬ - শেষ।
লিখেছেন লিখেছেন মোহাম্মাদ আবু মুছা ২৯ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০২:৫৫ দুপুর
পরদিন স্কুলে শান্তের সাথে দেখা হয়। অবাক হই তার কথাবার্তা শুনে।
- শান্ত, এবার বল, কি বলতে চাস। প্রথমে জানতে চাইবো তুই এসব জেনেছিস কিভাবে। আর দ্বিতীয়ত কেন ই বা জড়াতে চাচ্ছিস ?
শান্ত বলতে শুরু করে। আমরা তন্ময় হয়ে শুনি।
- আজ থেকে প্রায় বছরখানেক আগে আমাদের বাড়িতে ডাকাত পড়েছিলো। সেদিন রাত দুপুর গড়িয়ে অন্ধকারের ঘনত্ব ক্রমেই বাড়ছে। বাইরের কলাপ্সেবল গেটে ধাতব আঘাতের শব্দ শুনা যায়। কিছু বুঝে উঠার আগেই মুখোশধারী কয়েকজন দরজা ভেঙ্গে ঘরে ঢুকে। ভারী অস্ত্রের মুখে জব্দ করে সবাইকে। চলে লুঠপাট। তারপর চলেযায় তারা। আমাদের চারটা ফোন ছিলো। সবগুলোই নেয়। কিন্তু আশ্চর্য্যের ব্যাপার ঘটে পরদিন। সকালে বাড়ির উঠানে আমার ফোনটি পড়ে থাকতে দেখি। হয়তো পড়ে গেছে হাত ফসকে। অনিষ্ঠের সূচনা হয় তখন থেকেই। পরদিন রাতে একটি আননোন নাম্বারে কল আসলে আমি রিসিভ করি।
- হ্যালো।
- কেমন আছো ?
- জ্বি, কে বলছেন ?
- চিনবে, তুমিই চিনবে।
- আমি চিনতে পারছি না।
- অস্থির হয়ে যাচ্ছ কেন ?
- আপনার পরিচয় না দিলে চিনবো কিভাবে ?
- হ্যা, সেটাই প্রশ্ন। তবে তার উত্তর তুমি শিগগিরই পেয়ে যাবে। তুমার নাম শান্ত না ?
শান্তের কাছ থেকে এতটুকু শুনে বারে বারেই চমকে যাচ্ছিলাম। প্রথম আমার সাথে যখন কথা বলে লোকটা ঠিক এই কথাগুলোই বলেছিলো। তারপর,
- তারপর কথাবার্তা অনেকই হয়। ঘোরে যায় জীবনের মোড়। অপরাধ জগতের সাথে ধীরে ধীরে সম্পর্কিত হয়ে পড়ি। অবশ্য সেটার পেছনে বড় কারনও রয়েছে। ওদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করলে বিপদের আশঙ্খা ছিলো। গত দু'দিন আগে তোর ব্যাপারে আমার সাথে কথা হয় তাদের। ওরা আমার সাহায্য চায়, কিন্তু আমি আর পারছি না। তোদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা আমার পক্ষে কিভাবে সম্ভব ? এখনই আমি এই পাপের ইতি টানতে চাই। তবে এতে আমার জীবনও বিপন্ন হতে পারে। তোদের সাহায্য প্রয়োজন আমার।
- শান্ত, নাম্বারটা কি দেখতে পারি ? - তুহিন।
- কোন নাম্বার ?
- যে নাম্বারে ওরা তোর সাথে যোগাযোগ করে।
- হুম, এইতো।
নাম্বার সেটাই। যেটা দিয়ে আমাকে কল দিয়েছিলো। আচমকা এরকম পরিস্থিতিতে কি করতে পারি ?
- ওরা কি চায় শান্ত ?
- তুইও আমার মতো ওদেরকে এসিস্ট কর এটাই চায় তারা।
অনেক প্রশ্নের জবাব খোজে পাই না। মধ্যবিরতির ঘন্টা বেজে উঠে। উঠেপড়ি সবাই।বিকেল বেলা মাঠ স্বরগরম থাকে। ক'দিন হলো দূর্ঘটনার পর থেকে আমরা খেলি না। আজ শান্ত ও আসছে। মাঠের ঐ কোনাটায় বসে আলাপ করা সুবিধাজনক। কেউ তাতে ডিস্টার্ব করে না। তুহিনই মুখ খোলে প্রথম।
- শান্ত, বল এবার কি করা যায়।
- ব্যাপারটা খুবই স্পর্শকাতর। তবে আমার জানামতে ওদের গ্রুপটি বেশ বড় নয়। শর্ত একটাই, যা করবে শিঘ্রই করতে হবে। যদি কোনমতে তারা টের পেয়ে যায় তাহলে তোমরাও বাঁচবে না, আমিও না।
- আমরা কি পুলিশে জানাতে পারি ? প্রশ্ন করে রাকিব।
- তোমাদের মাথায় কি একটুও ঘিলু নেই ? পুলিশে জানাবা। আরে পুলিশ ওদের পৃষ্ঠপোষক, সে এক ভয়াল জগত। হতে পারে আজ পুলিশে জানালে, কাল তোমার ছিন্ন মস্তক ঐ পুলিশই উদ্ধার করে আনবে। বুঝলে ?
শান্তের কথাগুলো তীরের মতো এফোড় ওফোড় করে গেলো সবাইকে। চুপসে গেলো সবার উদ্যম। শান্ত বলে যায়।
- একটাই পথ খোলা। আমাদের অস্ত্র ধরতে হবে।
- সম্ভব নয়, এ কখনই সম্ভব নয়। তুহিন প্রতিবাদ জানায়।
- ঠিক আছে, আমি গেলাম তাহলে। তবে জেনে রেখো খারাবী আছে তোমাদের কপালে। কঠিন ভাষায় জবাব দেয় শান্ত।
শান্ত উঠে দাঁড়ায়। আমি হাত ধরে বসিয়ে দেই তাকে।
- প্লীজ ভাই এমন করিস না। আমরা বিষয়টি নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি তুই তো বুঝতেই পারছিস। তার উপর এসব কাজ কতটা বিপজ্জনক তা চিন্তা করেছিস শান্ত ?
- রাখ তোদের কথা। এখন কি তাহলে তোমরা বিপদমুক্ত, আর দুশ্চিন্তা আমার নেই ? ওদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আমি নিজেকে যমের মুখে ঠেলে দিচ্ছি না ?
- আচ্ছা মেনে নিচ্ছি তোর কথা। এবার তো বস রে ভাই। হুম এবার বল জিনিসগুলো পাবি কোত্থেকে ? জিজ্ঞেস করি আমি।
- সে তোমাদের অবান্তর চিন্তা। ওগুলোর ব্যাপারে তোমাদের না ভাবলেও চলবে। আমার উপর আস্থা রাখতে পারো।
-ওরা যদি এর পূর্বেই তাদের টার্গেটে পৌছতে চায় ? এতক্ষনে মুখ খোলে তুহিন।
- সেদিক আমি ম্যানেজ করতে পারবো। জবাব দেয় শান্ত।
কথা ওখানেই শেষ হয়। চিন্তিত মনে বাড়ি ফেরে সবাই। অবাক এক আশ্চয্য ঘিরে ধরে আমাকে। ওরা আমার আত্মীয় কেউ নয়। শুধুই বন্ধুত্ব। কিন্তু এত কঠিন অবস্থায়ও সরে পড়ছে না কেউ। কেন এতটা বিশ্বাসী এরা ? কেমনে এতটা সেক্রিফাইস করছে তারা ? আল্লাহ না করুন যদি কিছু হয় তাহলে জীবন বিপন্নও হতে পারে। কিন্তু কই কাউকে তো ভীত হয়ে পিছু হঠতে দেখিনি ? আমি তিনজনকেই বুঝিয়ে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। ব্যর্থ হয়েছি। নানা দ্বিধাদ্বন্দ, নানা ভীতিকর কৌতুহলের আনাগোনা শ্রান্ত করে তুলে আমাকে। নামাজ শেষে বাড়ি ফিরি। রাতের অন্ধকারও যেনো আমার শত্রুতায় উন্মত্ত হয়ে আছে।হয়তো আমার শঙ্কা সঠিক, হয়তো এসবের কোনটিই নয়। নিশ্চয় আমার দুশ্চিন্তার পেছনে সবল যুক্তি আছে, কিন্তু এ ভিন্ন সব পথই রুদ্ধ। আমার চোঁখ কিছুই এড়িয়ে যায় না। ক'দিন ধরে আমার এসব কারবার ফলো করছেন মা। মুখ ফোটে কেবল জিজ্ঞেস করতে পারছেন না, "খোকা, কি হয়েছে তোর ? " আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি বিষয়টি পরিবারে গোপন রাখতে, কিন্তু শান্ত আমাদের যে পথে টেনে নিচ্ছে সেখানে যে যমের বিচরণ অহরহ। প্রতি মুহুর্তেই বিভীষিকার কালো ছায়া।রক্ষা করো মাবুদ। মুক্তি দাও আমায়। একে একে কতগুলো রাত বিনিদ্র কাটাবো আর। শুধু কি আমি ? আমার ঐ তিন সহচরও যে একই শত্রুর তিন ভিন্ন শিকার। কত না বলা কথা চেপে রাখবো মনের গহীনে ? একসময় সব গোমর ফাঁস হয়ে যাবে। সেই ক্ষণে হয়তো আমি থাকবো দূরে, বহু দূরে।
- মুসা, এই মুসা এখনও ঘুমাচ্ছিস ? আযান যে অনেক্ষণ আগে হয়েছে। জলদি উঠ। তোর বাবা অপেক্ষা করছেন।
মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গে। ওজু করে সালাতুল ফজরের উদ্দেশ্যে মসজিদে রওয়ানা হই। আজ জুমাবার। ফজরের নামাজে সচরাচর মসজিদে যাওয়া হয় না। বাড়িতে পড়ে নিই। একা অন্ধকারে ভয় লাগে আমার। বাবা সারাদিনের ক্লান্ত শরীর নিয়ে রাতে ঘুমাতে যান বিছানায়। তাই ফজরে মসজিদে অনেকাংশেই যাওয়া হয় না বাবার। পড়ে নেন বাড়িতে। কিন্তু এ নিয়ে মা যথেষ্ট পীড়াপীড়ি করেন। মা বাবাকে বুঝান, "নামাজ একা পড়ার বিষয় নয়, আল্লাহর আদেশ ভিন্ন। নামাজকে প্রতিষ্ঠিত করতে বারংবার তাকীদ করা হয়েছে।" বাবাকে এই সত্য বুঝাতে মায়ের নিরন্তর প্রচেষ্টা প্রশংসার দাবি রাখে। ইদানিং ছোট্ট ভাইটাকেও মা ফজরে জাগিয়ে দেন। নামাজের আহকাম, আরকান ইত্যাতি শেখানোর চেষ্টা করেন। মা বলেন, "ছোটকালের শেখা পাথরে খোদাইর মতো। তাই ছোট্ট অবস্থায় দ্বিনের তা'আলীম পেলে সে ভ্রষ্ট হবে না কখনও।" মায়ের এই ধর্মনিষ্ঠার পেছনে বড় অবদান আমার নানাজীর। তিনি ছিলেন একজন প্রখ্যাত মাওলানা। আজ নানাজী বেঁচে নাই, কিন্ত তার কর্ম বেঁচে থেকে তাওহীদের জ্যোতীর্ময় আভা ছড়িয়ে যাচ্ছে। প্রতিটা ঘরে যদি আমার মায়ের মতো একজন করে মা থাকতো তাহলে একটি সমাজ হয়ে উঠতো দ্বীনের সুভাসে মাতোয়ারা।
এসব চিন্তা করতে করতে বাড়ি পর্যন্ত এসে পৌছাই। মা ইতোমধ্যে নাস্তা তৈরী করে ফেলেছেন। নাস্তা শেষে পড়তে বসি। লোকদেখানো পড়া। আমার মনে শান্তির ছিটেফোটাও নেই। বিদ্যাপাঠের অধ্যায় সমাপ্ত করে ফোন উঠাই তুহিনকে। দেখা করি চারজন। আমি, তুহিন, রাকিব, আদনান। প্রশ্ন ছুড়ি আমি।
- তুহিন, তুই কি ওর কথা বিশ্বাসযোগ্য মনে করিস ?
- দেখ, বিপদ আমাদের। বিশ্বাসে - অবিশ্বাসে ওর লাভ-ক্ষতি কোথায় ? কিছু ঘটলে আমাদের সাথেই ঘটবে। যদি অবিশ্বাস করি তাহলে সে তার পুরোনো অবস্থান বজায় রাখবে, ক্ষতি হবে আমাদের। আর বিশ্বাস করলে আমাদের ভাগ্যে যা ঘটবে সেটা তার ক্ষেত্রেও ঘটার কথা। সুতরাং, বিশ্বাসটাই নিরাপদ।
কথার রেশ ফুরানোর পূর্বেই শান্তের ফোন আসে।
- হ্যা শান্ত বল।
- মুসা, তুহিন দেখছি পিছে টানছে তোদের। দেখ ভাই, আমি সময় দিতে পারবো না তোদের। কিছু করতে হলে আজই বড়ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। অন্যথায়, ভেস্তে যেতে পারে সব। তোমরাও বাঁচবে না, আমিও না। ওরা মনেহয়, টের পেয়ে গেছে কিছুটা।
আকাশ ভেঙ্গে পড়ে মাথায়। তাড়া দিচ্ছে সে। কি হতে কি হয়ে বসে কে জানে ! এক্ষুণি কিছু না বলে সময় চাই বিকেল পর্যন্ত। সম্মত হয় সে। কানে ধ্বনিত হয় জু'মার আযান। বাড়ি ফিরতে হবে এক্ষুনি। ঘুড়ি হাতছাড়া হচ্ছে প্রায়। বাঁধা শুধু সময়। নিয়তির একটি প্রলয় তুফান যেনো অনিবার্য বাস্তবতায় রুপ বদলাতে যাচ্ছে। আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ফেলছে আমাদের। বুঝতে পারছি কিছু একটা দূর্ঘটনা ঘটতে চলেছে। যদি কোনকিছুর বিনিময়ে হলেও এ বিভীষীকা থেকে রেহাই পেতাম, তাহলে প্রাণপন চেষ্টা করে তা জোগাড় করে দিয়ে দিতাম। কিন্তু আমারর প্রতিপক্ষ তো পর্দার অন্তরালে। রহস্যে ঘেরা বিভীষীকাময় পর্দা।বিকেলে দেখা হয় শান্তের সাথে। ওর প্রস্তাবিত পরিকল্পনামতেই এগুতে হবে। নীলনকশা প্রস্তুত। গ্রীন সিগন্যাল পাওয়া মাত্রই বেরিয়ে পড়তে হবে। স্থির হয়ে বসতেও পারছি না। সময় বাকি নেই বেশি। কিছুক্ষণ তন্ময় হয়ে জানালার দিকে উদাস দৃষ্টি নিক্ষেপ করি। নিকষ কালো আধারে হারিয়ে যায় শূন্য দৃষ্টি।
রাত ঠিক ৮ টা বাজে। শান্তের সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় ছিলাম। ভাইব্রেট করলো ফোন। হুম, সময় হয়ে গেছে। এখনই নিরুদ্দেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করবো। হয়তো ফিরবো, নয়তো নাহ। কঠোর শাসনে মানিয়ে নিলাম নিজেকে। বাঁধাকে সংগ্রাম দ্বারা জয় করাই জীবন। মরন তো নির্ধারিতই। খামাখা ভয় করে কি লাভ ?
একটা সি এন জি পথের মুখে থেমে আছে। পেছনের সীটে বসা শান্ত। উঠে পড়লাম। এরকম সময়ে আবেগকে অগ্রাধিকার দিতে নেই। অন্ধের মতো ছুটে চলতে হয় লক্ষ্য পানে। রাস্তা থেকে আরো তিনজন উঠে সিএনজিতে। তুহিন, আদনান, রাকিব। কেউ কথা বলছে না কারো সাথে। বাতাসের শো শো আওয়াজ পিনপতন নিরবতায় জোরালো লাগছে কানে। কোথায় যাচ্ছি ? জানি না। পরিচিত এলাকা পাড়ি দিয়ে সিএনজি মোড় নিলো দক্ষিন দিকে। চা- বাগানের পাশ দিয়ে চলে গেছে নিভৃত রাস্তা। পথের বাঁকে বাঁকে শিহরণ জাগে। এখনও লোকজন আসছে রাস্তায়। তবে ক্রমশ আমাদের সিএনজি জনপদ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে চললো। চলতে চলতে কতদূর এসেছি জানি না। সামনের মোড়টি পেরিয়ে ডানে থামলো সিএনজি। নামলাম। সিএনজি চলে গেলো। মুখ খোললাম আমি।
- ভাড়া ?
শান্ত জবাব দেয়, "আমি দিয়ে দিছি।"
পিচঢালা রাস্তার মোড়ে পাঁচজন। সাথে অবাঞ্ছিত কিছু সামগ্রী। রাত পৌনে ন'টা বাজে।
- এখানে অপেক্ষা করতে হবে কিছুক্ষণ। - শান্ত।
- কেন ?
- ওরা এখানেই আসবে।
ফেকাসে দেখায় সবার মুখ। প্রত্যেকের হাতেই ভয়ানক কিছু যন্ত্র। হার্টবিট চরমপর্যায় অতিক্রম করছে।দূর থেকে গাড়ির হেডলাইটের আলো দৃশ্যমান হলো। ক্রমশ নিকটবর্তী হচ্ছে। আমরা খানিক আড়ালে। ব্রেক কষলো কালো মাইক্রটি। নেমে এলো মুখোশধারী চারজন। গাড়িতে সম্ভবত আরো কয়েকজন অপেক্ষা করছে। উত্তেজনায় কাঁপছে আমার হাত। তুহিন, আদনান, রাকিব, শান্ত প্রত্যেকের হাতের ধাতব নলগুলো উচো হয়ে লক্ষ্যস্থির করেছে চার মস্তিষ্কে। হাতের ইশারা করলো শান্ত। তার মানে আর দশ সেকেন্ড পরেই গর্জে উঠবে পাঁচটি ভয়াল লক্ষ্যভেদী। এক, দুই, তিন,.........দশ। "ফায়ার"। চিৎকার করে উঠলো শান্ত। চোঁখ বুজে ট্রিগারে চাপ দিলাম বাকি চারজন। এতক্ষণে চারটি তাজা লাশ রাস্তায় লুটে পড়ার কথা। কিন্তু না। গুলি হয় নি। রিভলভারগুলো ফাঁকা। অট্টহাসি শুনতে পেলাম। হুম, শান্ত হাসছে। সাথে চার মুখোশধারীও লুটেপুটে হাসছে। তারা সফল। ঘাতকতা করেছে শান্ত। নির্লজ্জের মতো বিশ্বাসঘাতকতা করেছে সে। তুলে দিয়েছে স্মাগলারদের হাতে। শান্ত বলতে শুরু করে, ততক্ষনে আমাদের চারজনকে পিছমোড়া দিয়ে বেঁধে ফেলা হয়েছে।
- মুসা, ঐ রহস্যময় ফোনটা আমিই করিয়েছিলাম। পত্রিকার রিপোর্টটি ঠিকই ছিলো। ওটা ব্যবহার করি কৌশল হিসেবে। এর আগে মানষিকভাবে তোকে উদ্বিগ্ন করে তুলি। তার পর আমার পাতানো ফাঁদে ফেঁসে যাস তোমরা।
আবারো অট্টহাসি। কিন্তু হাসি বেশিক্ষণ টেকেনি শান্তের মুখে। মুহুর্তের মধ্যেই পনেরোটি ধাতব নল তাক হয় তাদের দিকে। ফেকাসে হয়ে যায় তাদের আবয়ব। প্রথমে চেষ্টা করেছিলো প্রতিরোধের, কিন্তু প্রশিক্ষিত সোয়াতের কাছে হার নিশ্চিত, লড়লে মৃত্যু অনিবার্য। হাত পিছমোড়া দিয়ে বেঁধে ফেলা হয় শান্ত সহ চারজন ও গাড়িতে থাকা আরও তিনজনকে। হ্যা, সত্য সমাগত, মিথ্যা অপসৃত। নিঃসন্দেহে মিথ্যা অপসৃয়মান।এবার রহস্যভেদ। এই ঘটনার মূল নায়ক তুহিন। ওর মামা একজন ডিটেকটিভ। আর্ম ইন্ট্যালিজেন্সের পদস্থ অফিসার। যখন শান্তের ব্যাপারে সবকিছু জেনে গেলাম তখন তাকে ধরিয়ে দিতে পারতাম। কিন্তু সেটা করলে আগাছা পরিষ্কার হতো, কিন্তু শেকড় রয়ে যেতো গভীরে। তাই শেকড়ের সন্ধান পেতে ঝুকি নিলাম। তুহিন, আদনান, রাকিব, আমি একটি সমান্তরাল নীলনকশা আকলাম। তারপর জানালাম তুহিনের মামাকে। তার পরের সবকিছুই তো জানা। ঠিক সময়ে তিনি ফোর্স নিয়ে যেতে পারায় নির্ভিঘ্নেই সাফল্য পেলো আমাদের প্রচেষ্টা। ধরা পড়লো দূর্ধর্ষ স্মাগলারদের একটি এলিট টিম, ধরা পড়লো তাদের ধোসর শান্তও।
.
জ্বি, রহস্যময় ফোন এখানেই সমাপ্ত।
বিষয়: বিবিধ
১৩৩৮ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন