দরকার হত্যাকান্ডের মাস্টারমাইন্ডদের খুঁজে বের করা

লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নলোকের সিঁড়ি ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ০৯:৪৯:২৮ রাত

কোরিয়ার পর সমগ্র পৃথিবীতে একমাত্র বাংলাদেশেই নৃতাত্বিক পর্যায়ে জনগণের মাঝে সমরুপতা পরিলক্ষিত হয়।কারণ,এদেশের জনগোষ্ঠীর প্রায় ৯৮% ভাগ হলো বাংলাভাষী বাঙালী।কিন্তু তার পরেও সমাজবিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা এখানে কাজ করে।জাতিগতভাবে আমরা কার্যত বিভক্তির চরম পর্যায়ে।জাতীয় ঐক্য বলতে যে জিনিষটা আছে তা আমাদের দেশে নেই বললেই চলে।স্বাধীন বাংলাদেশের শুরুতেই গর্বিত সেনাবাহিনী নিয়ে নানামুখী প্রচারণা অব্যাহত ছিল এক ঘরাণার লোকদের কাছ থেকে।বাংলাদেশকে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড বানানোর স্বপ্নে বিভোর ঐ শ্রেণি সেনাবাহিনী উচ্ছেদের কথা বলে আসছে শুরু থেকেই।তাদের যুক্তি হচ্ছে নিতান্ত দরিদ্র এই দেশের পক্ষে সেনাবাহিনীর ভরণ-পোষণ করা সম্ভব নয়।কথার পক্ষে যুক্তি চাতুর্যপূর্ণ যুক্তি আছে সন্দেহ নাই- কিন্তু বাংলাদেশের ভৌগলিক বাস্তবতা কি তাই বলে?

যদি বিদেশী কোন শক্তিশালী রাষ্ট্রের পরোক্ষ ইন্টেলিজেন্স তৎপরতা বা পরোক্ষ হস্তক্ষেপে সশস্ত্র বাহিনী সংকোচন বা বিলোপের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় তবে তা কোন মতেই গ্রহণযোগ্য নয় এবং পৃথিবীর ইতিহাসে কোন স্বাধীনচেতা জাতিই তা গ্রহণীয় বলে মেনে নেয়নি।

১৯ মার্চ ১৯৭২ সালে শেখ মুজিব-ইন্ধিরা গান্ধীর মধ্যে ২৫ বছর মেয়াদী গোপন যে ৭ দফা চুক্তি হয় তার ৪ ও ৫ দফায় উল্লেখ ছিল-বাংলাদেশের কোন নিজস্ব সেনাবাহিনী থাকবে না ও অভ্যন্তরীণ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য মুক্তিবাহিনীকে কেন্দ্র করে একটি প্যারামিলিশিয়া বাহিনী গঠন করা হবে।হুমায়ূন রশিদ চৌধুরীর সাক্ষাতকারসহ এর বিস্তারিত উল্লেখ করেন মাসুদুল হক তার বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে র ও সি আই এ গ্রন্থে।

ভারতীয় সমর বিশারদ সুব্রানিয়াম স্বামীর স্বাক্ষাতকারের একটি অংশ হতে বুঝা যায় বাংলাদেশকে ভারত কিভাবে দেখতে চায়।তিনি বলেন- '' Its existence constitutes a week point in Indian security in the strategic north east region. Should events in Assam and the other tribal states in that region, or in neighbouring Burma, cause deterioration in India's control of the area,Bangladesh proximity would be a critical factor.'

১৯৭৬ সালে ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশ সীমান্তে ১৩১৬ বার হামলা চালায়।আমাদের সশস্ত্র বাহিনী এসব হামলা বীর বিক্রমে মোকাবিলা করে।কাদেরিয়া বাহিনীর ২৫ হাজার সৈন্য ভারতীয় বাহিনীর প্রত্যক্ষ সহায়তায় সীমান্তে নাশকতামূলক কর্মকান্ড চালিয়েছিল।

ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত নেহেরুর স্বপ্ন ছিল অখন্ড ভারত প্রতিষ্ঠা।যা হবে সুদূর আফ্রিকা হতে ইন্দোচীন পর্যন্ত।এ প্রসঙ্গে তার মন্তব্য ছিল- There are many advanced,highly cultured countries,but if you peep into the future and of nothing goes wrong,wars and the like,the obvious fourth country in the world is India.

তাহলে দেখা যাচ্ছে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ এ বাংলাদেশকে কব্জা করতে বেসামরিকিকরণ করাটা তাদের জন্য খুবই জরুরি।আর এতে তারা কাজে লাগাচ্ছে তার স্বার্থের শিখন্ডী এদেশের কতিপয় পা-চাটা বুদ্ধিজীবিকে।একটা বিষয় খেয়াল করলে দেখা যায় তারা সেনাবাহিনীর যতটা সমালোচনা করে এর কিঞ্ছিতভাগও রক্ষীবাহিনীর বিরুদ্ধে করেনা।

২০০৯ এর নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রীপুত্র জয়ের একটা গবেষণা প্রকাশিত হয় কার্ল সিওভাক্কোর সাথে।এ গবেষণায় বলা হয় বাংলাদেশের সেনাবাহিনীতে মৌলবাদিদের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।মাদ্রাসার ছাত্ররা সেনাবাহিনীতে ব্যাপকহারে ঢুকে যাচ্ছে।এর কিছিদিন পরেই ঘটে ২৫ ফেব্রুয়ারির পিলখানা হত্যাকান্ড।

১/১১ র সেনাসমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান দিপক কাপুর জেনারেল মইনকে ৬ টি ঘোড়া উপহার দেন।সমরক্ষেত্রে ঘোড়ার আলাদা তাতপর্য রয়েছে।এ ঘোড়ার বাচ্ছাগুলোই কি পরবর্তিতে ট্রয়ের সেই ট্রোজান হর্সের মতো কোন কান্ড ঘটিয়েছিল তা একদিন হয়ত জানা যাবে বিস্তারিত।মইন কিছুটা খোলাসা করেছেন তার শান্তির স্বপ্নে বইয়ে।

৫৭ সেনাসহ ৭৩ হত্যাকান্ডের মাধ্যমে অনেকটা সফল ঐ গোষ্ঠী।ভারতীয় পত্র-পত্রিকার বয়ান থেকে জানা যায় ঐদিন নাকি ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রস্তুত ছিল।কেন প্রস্তুত ছিল তার উত্তরও সময়ের ব্যবধানে হয়ত দালিলিক আকারে পাওয়া যেতে পারে একদিন।

দরকার হত্যাকান্ডের মাস্টারমাইন্ডদের খুঁজে বের করা।সেনা পরিবারের অনেকে এ দাবি করেছেন।

তথ্য সহায়কঃ

১।Syed Anwar Hussain,Ethnicity & Security of small states, p 45

২। জাতীয় নিরাপত্তা,রণনীতি ও সশস্ত্রবাহিনী- আবু রুশদ।

৩। কথামালার রাজনীতি- রেজোয়ান সিদ্দিকী।

৪। ইনসাইড র - অশোক রায়না।

৫।ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া- জহরলাল নেহেরু।

৬।বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে র ও সি আই এ - মাসুদুল হক।

বিষয়: বিবিধ

৯৪০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File