সাম্প্রদায়িকতা:ভিতরের দর্শন
লিখেছেন লিখেছেন স্বপ্নলোকের সিঁড়ি ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬, ০২:৫৬:৫২ দুপুর
কেস স্টাডি:
১.সাম্প্রতিক মুসল্লি বনাম ইসকনের মধ্যকার ঘটনা।খবরে প্রকাশ, নামাজরত মুসল্লিরা ইবাদতে বিঘ্ন ঘটায় এ ঘটনা ঘটে।ইসকনকে অনুরোধ করলেও তারা এ সময় গান-বাজনা বন্ধ করেনি।
২.রামুর বৌদ্ধমন্দিরে হামলা।এর আসল রহস্য এখনো অনুধঘাটিত রয়ে গেছে।
উপরোক্ত দুটি ঘটনাই শুধু ধর্মীয়রূপ পরিগ্রহ করে মানসপটে হাজির হয়েছে।কিন্তু এর ভেতরের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক দিক আড়ালে থেকে গেছে।
আবার,
১.রোজা ও পূজা এদেশে একসাথে হবারও দৃষ্টান্ত আছে।
২.হিন্দুমন্দির ও বৌদ্ধমন্দির পাহারায় ও তাদের নিরাপত্তাবিধানে মুসলমানদের বিনিদ্র রজনী কাঁটানোর উদাহরণও আছে।
৩.চলন্তবাসে দিদি দাঁড়িয়ে আছেন।সিট খালি নাই।মুসলিম যুবক সিট ছেড়ে দিদিকে বসার সুযোগ করে দিয়েছে।
৪.হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতি রক্ষার্থে যৌথ শান্তিমিছিল হয়েছে গান্ধির নেতৃত্বে নোয়াখালী ও কলকাতায়।
৫.পাকিস্তানের পাওনা পরিশোধে গান্ধির অনশন কর্মসূচি পালিত হবার ইতিহাসও আছে।
এদিকগুলো মোটামুটি অনুল্লেখিত রয়ে গেছে।আর এ সুযোগ কাজে লাগিয়েছে উগ্র গোষ্ঠীগুলো।কালক্রমে বিবর্তন ঘটেছে উগ্রসাম্প্রদায়িকতার।
একটি নিদিষ্টি দর্শনে বিশ্বাসী, একই নিতি-আদর্শ- উদ্দেশ্য একই ধর্মীয় সংস্কৃতি ও সমাজ ব্যবস্থা দ্বারা পরিচালিত বহু সংখ্যক মানুষের মধ্যে ঐক্যতা-সখ্যতা-ভ্রাতৃত্ববোধ গড়ে উঠলে সেই জনগোষ্ঠীকে একটি জাতি বা সম্প্রদায় বলে।
সাম্প্রদায়িকতা বা সাম্প্রদায়িকতা (ইংরেজি: Communalism) হচ্ছে এক ধরনের মনোভাব। কোন ব্যক্তির মনোভাবকে তখনই সাম্প্রদায়িক বলে আখ্যা দেওয়া হয় যখন সে এক বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়ভুক্তির ভিত্তিতে অন্য এক ধর্মীয় সম্প্রদায় এবং তার অন্তর্ভুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধচারণ এবং ক্ষতিসাধন করতে প্রস্তুত থাকে।এ ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তিবিশেষের ক্ষতিসাধন করার মানসিক প্রস্তুতি সেই ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ পরিচয় অথবা বিরুদ্ধতা থেকে সৃষ্ট নয়। ব্যক্তিবিশেষ এ ক্ষেত্রে গৌণ, মুখ্য হলো সম্পদায়।ধর্মনিষ্ঠার সাথে সম্পর্ক আছে ধর্মীয় তত্ত্ব এবং আচার বিচারের। সাম্প্রদায়িকতার যোগ আছে সম্পদায়ের সাথে। অর্থাৎ ধর্মনিষ্ঠার ক্ষেত্রে ব্যক্তির নিজের আচরণ এবং ধর্মবিশ্বাসের গুরুত্ব বেশি।সাম্প্রদায়িকতার ক্ষেত্রে নিজের ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতি বিশেষ এক জাতীয় আনুগত্যের গুরুত্ব বেশি। এ ছাড়া সত্যকার ধর্মনিষ্ঠা পরকালমুখী। পরকালেই তার সত্যকার পুরস্কারের আশা। সাম্প্রদায়িকতার মুনাফা ইহলোকে। ধর্মনিষ্ঠার জন্য অন্যের বিরুদ্ধাচরণের প্রয়োজন নেই।১
যারা ইসলামকে সাম্প্রদায়িক আখ্যা দেয় তাদের সম্পর্কে ইসলামী চিন্তাবিদ ও সাবেক সচিব শাহ আবদুল হান্নান বলেন, “ তবে তাদের সাম্প্রদায়িকতা সম্পর্কিত বক্তব্যগুলো ইঙ্গিতপূর্ণ। আমরা সহজেই সেসব বক্তব্য বা কথাবার্তা থেকে এটা অনুমান করতে পারি যে, এসব সাধারণভাবে ধর্ম ও ধর্মীয় শক্তির বিরুদ্ধে। সেই সঙ্গে বিশেষভাবে তা ইসলামী শক্তির বিরুদ্ধে। তারা কি এর দ্বারা সহনশীলতা বোঝান? অসহিষ্ণুতা দূর করতে চান? প্রকৃতপক্ষে এসব লোকের আচরণই সবচেয়ে অসহিষ্ণু। ধর্ম তো কোনোভাবেই অসহিষ্ণুতা প্রচার করে না, কিংবা অসহিষ্ণুতার সপক্ষে কথা বলে না। অন্তত এ যুগে তো নয়ই। ইসলাম প্রকৃতপক্ষে সহনশীলতা, সহমর্মিতার কথাই বলে। ইসলাম ধর্মীয় স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেয়। স্বাধীন ধর্মচর্চার পক্ষেই কথা বলে। কিন্তু কিছু লোক ‘সাম্প্রদায়িকতা’র বিরুদ্ধে কথা বলে প্রকৃতপক্ষে ধর্মের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন। .....সাম্প্রদায়িকতার স্লোগান মূলত বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ইসলামের বিরুদ্ধে দেয়া হয়ে থাকে। তারা আসলে চান ইসলামী দলগুলো নিষিদ্ধ হোক অফিসিয়াল অর্ডার দ্বারা বা সংবিধানের মাধ্যমেই ইসলামী দল নিষিদ্ধ করে। এটা অনৈতিক ও অগণতান্ত্রিক। এই সেকুলার শক্তিগুলো ইসলামী শক্তিগুলো কাজ করুক তা চান না, তাদের কাজ করতে দিতেও চান না। তারা ভয় পান, ইসলামী দলগুলো যদি কাজ করতে পারে তাহলে ক্ষমতায় না গেলেও তারা সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করবে। তারা কোনো প্রতিযোগিতা বা প্রতিদ্বন্দ্বিতা পছন্দ করেন না।
সেজন্য তারা তাদের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী থাকুক, তা চান না।”
রাসূল (সা বলেন-"লাইছা মিন্না মান দাআ’ইলা আ’সাবিয়্যাহ, ওয়া লায়ছা মিন্না মান কাতালা আ’লা আ’সাবিয়্যাহ ওয়া লায়ছা মিন্না মান মাতা আলা আসাবিয়্যাহ।" অর্থাৎ
“যারা সঙ্কীর্ণ গোষ্ঠীবাদের প্রতি মানুষকে আহ্বান জানায় তারা আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়। যারা সংকীর্ণ গোষ্ঠীবাদের জন্যে লড়াই করে বা যুদ্ধ করে তারা আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়। যারা সংকীর্ণ গোষ্ঠীবাদের জন্যে যুদ্ধ করে মৃত্যুবরণ করে তারা আমার উম্মতের অন্তর্ভুক্ত নয়।” (আবু দাউদ)
কুরআনে ধর্মের ব্যাপারে জোর-জবরদস্তি করতে নিষেধ করা হয়েছে বলা হয়েছে-" লা ইকরাহা ফিদ্বীন।" রাসূল (সা মদিনার সনদ প্রণয়নকালে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার সুস্পষ্ট নিশ্চয়তা দান করেছেন।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে ইসলামমাত্রই সাম্প্রদায়িক যা ধোপে টিকছে না।সাম্প্রদায়িকতার প্রশ্ন তখনই হাজির হবে যখন তা উগ্রতার দিকে ধাবিত হবে।আর সম্প্রদায়চেতনা তো মানুষের মধ্যে থাকাটাই স্বাভাবিক।উগ্রতার দিকে যখনই তা পথ বাড়াবে তখনই তা সমাজবিজ্ঞান বা সমাজবিরুদ্ধ হিসেবে পরিগণিত হবে।
বাংলাদেশের সমাজে সাম্প্রদায়িকতার কারণ আর নাই। আছে উপমহাদেশ ভারতে। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদে যখন আক্রমণ হয়, তখন বাংলাদেশেও সাম্প্রদায়িক সংঘাত শুরু হয়। এখন অনেকেই রামুর বৌদ্ধপল্লীতে হামলার সাথে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নির্যাতনের একটা যোগসূত্র আবিষ্কার করিতেছেন। রোহিঙ্গারাই যে কাণ্ডটা করিয়াছে তাহা অবশ্য কেহ বলিতেছেন না। কিন্তু আমাদের প্রথম শ্রেণীর একটি পত্রিকা হেড লাইন করিয়াছে— রোহিঙ্গাদের দিকে সন্দেহের আঙ্গুলি। সাম্প্রদায়িকতা আর কাহাকে বলে!
ভারতে সাম্প্রদায়িকতা আছে। কিছু রাজনৈতিক দল আছে, যাহারা মনে করেন ‘অখণ্ড ভারত’ প্রতিষ্ঠা করিতে হইবে। কারণ তাহারা ১৯৪৭ সালের দেশভাগ মানিয়া লয়েন নাই। নিজেদের সুবিধার জন্য তাহারা দেশভাগ করিয়াছিলেন। কিন্তু এখন তাহারা বলেন আমাদের মায়ের অঙ্গহানি করা হইয়াছে। বাংলাদেশের অস্তিত্বকেও তাহারা মানিয়া লইবেন না। কারণ তাহাদের নিকট বাংলাদেশের বা পাকিস্তানের অস্তিত্ব সমার্থক। আরেকটি প্রশ্নে তাহারা বাংলাদেশ চাহিতেছেন। ভারতীয় সাম্প্রদায়িক নীতির দ্বিধা একটাই। দেশে হিন্দু মুসলমান ছাড়া কোন সমস্যাই নাই। গোড়ার কথা এইটাই।
১৯৪৭ সালে দেশভাগটা কেন হইল? এই প্রশ্নে যদি আমরা বার বার না ফিরি তো সাম্প্রদায়িকতার মর্ম বুঝিতে পারিব না। ১৯৪৬ সালে বিলাতের মন্ত্রিপরিষদ মিশন ভারতে আসিল। তিনজন মন্ত্রী আসিলেন। তাঁহারা প্রস্তাব করিলেন ভারতের প্রদেশাদি তিন ভাগে ভাগ হইবে। স্বায়ত্তশাসিত তিন ভাগের শরিক রাজ্যও স্বশাসিত হইবে। আর ভারতবর্ষ হইবে ফেডারেশন। গান্ধীজির অনুমোদনক্রমে জওহরলাল নেহরু প্রস্তাবটি শেষতক মানিলেন না। প্রথমে মানিয়াও শেষতক না বলিলেন। ক্যাবিনেট মিশন প্রস্তাব কংগ্রেস গ্রহণ করিল। মুসলিম লীগও গ্রহণ করিলাম বলিয়া ঘোষণা দিলে কংগ্রেস বোকা বনিল। আর মুসলিম লীগও পরিশেষে পাকিস্তানের দাবি ছাড়িল না। বাংলা ও আসাম যোগ করিলে মুসলিম লীগের মেজরিটি হয়। পশ্চিমে পাঞ্জাব আর উত্তর-পশ্চিম প্রদেশেও মুসলিম মেজরিটি। ভারতের তিনটি ভাগের মধ্যে দুইই মুসলিম মেজরিটি অঞ্চল হইতেছে।
তখন কংগ্রেস বলিল আমরা প্রস্তাব মানি, তবে ভবিষ্যতে মানিব এমন গ্যারান্টি দিব না। তো জিন্নাহ পুনরায় পাকিস্তান দাবিতে ফিরিয়া চলিলেন। দেশ ভাগ হইল।২
সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প রচিত হয় ডিভাইড এন্ড রুল পলিসির মাধ্যমে ব্রিটিশ ভারতীয় উপমহাদেশে।এর আগে পাল,সেন আমল থেকে শুরু করে নবাব সিরাজের শাসন পর্যন্ত ছোটখাট বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলেও উগ্রসাম্প্রদায়িকতা প্রাতিষ্ঠানিকরূপ পায়নি।এ সম্বন্ধে এম.এন রায় বলেন-"ব্রাম্মন্য গোঁড়ামী বৌদ্ধবিপ্লবের কন্ঠরোধ করায় প্রচলিত ধর্মবিরোধী অগণিত মানুষ একাদশ ও দ্বাদশ শতাব্দীতে ভারতবর্ষে আশ্রয়হীন নির্যাতীতের মতো দিশেহারা হয়ে পড়েছিল।তারাই ইসলামের বাণীকে সাগ্রহে স্বাগত জানিয়েছিল।ব্রাম্মণ শাসকদের নিপীড়নে পীড়িত জাঠ ও অন্যান্য কৃষিজীবীদের সক্রিয় সহযোগীতায় মোহাম্মদ ইবনে কাসিম সিন্ধু জয় করলেন। রাজ্য জয় করেই তিনি প্রথম আরব বিজেতাদের নীতি গ্রহণ করলেন। ব্রাম্মণদের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে দেশের শান্তি স্থাপনের ভার দিলেন তাদেরই।অবাধ স্বাধীনতা দিলেন তাদের মন্দির মেরামত করার,পুরো অধিকার দিলেন তাদের নিজ নিজ ধর্ম পালনের।রাজস্ব আদায়ের ভার দিলেন তাদের হাতে।"৩
ব্রিটিশ শাসনকালীন সময়ে হিন্দু বুদ্ধিজীবিদের লেখনীও উগ্রসাম্প্রদায়িকতার বিস্তারে ভূমিকা রাখে।বঙ্কিম এক্ষেত্রে সর্বাগ্রে।বন্দেমাতরম রচনা করে তিনি সম্প্রীতির বন্ধনকে ঢিলা করে দিয়েছেন।এক্ষেত্রে রবিন্দ্রনাথের শিবাজি উৎসবের কথাও উল্লেখ করা যায়।তাছাড়া হিন্দু ভাবাদর্শের পত্র-পত্রিকাও বিষবাষ্প ছড়াতে ব্যাপক ক্রিয়াশীল ছিল।
হিন্দু সংগঠনগুলোর উস্কানীমূলক এই ধরনের আচরণের ফলেই দেশব্যাপী দাঙ্গা শুরু হয়ে গেল। এক হিসেবে ১৯২০ থেকে ১৯২৭ পর্যন্ত ১২৭টি দাংড়া সংঘটিত হয়। এই দাংড়ার একটি পরিসংখ্যান দিয়েছেন সুভাস বসু। তিনি লিখছেন, “১৯২২ সালে মহরম উপলক্ষে দাঙ্গা শুরু হয়, ১৯২৩ সলে পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করে এবং ৩০০ জন মারা যায়। ১৯২৪ সালে ছোট বড় ১৮টি দাঙ্গা হয়। ১৯২৫ সালে ইতস্তত কিছু গোলমাল দেখা দেয়, কিন্তু ১৯২৬ সালের দাঙ্গা পূর্বের রেকর্ড ভংগ করে। এ বছর ৩১টি দাঙ্গায় ১৬০০ জন নিহত হয়। ১৯২৯ সালের ফেব্রুয়ারী-মে মাসের দাঙ্গায় বোম্বেতে ২০০ জন মারা যায়। ১৯৩১ সালের কানপুর দাঙ্গা সমগ্র ভারতকে কাঁপিয়ে তোলে। এতে মৃতের সংখ্যা ৪০০/৫০০ জন। বহু সংখ্যক মন্দির ও মসজিদ ধ্বংস করা হয়”।–[“The Indian Struggle’, by Subhash Bose (উদ্ধৃত: ‘উপমহাদেশের রাজনীতি ও স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব, পৃষ্ঠা ২০৪, ২০৫] এই দাঙ্গা প্রসঙ্গে গান্ধী বললেন, “হিন্দু-মুসলিম সমস্যা মানুষের আয়ত্বের বাহিরে চলে গেছে”।–[‘উপমহাদেশের রাজনীতি ও স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব’, পৃষ্ঠা ২০৫।] বাইরে যাবার কথাই। গান্ধী এ সময় রাজনীতি থেকে দূরে সরে গিয় হরিজন সেবায় মন দিয়ে বলা যায় দাঙ্গার জন্যে মাঠটা ফাঁকা করেই দিয়েছিলেন। গান্ধীর কংগ্রেস তো দাঙ্গাকে সহায়তাই দান করেছে। কংগ্রেস তখন দাঙ্গাবাজদেরই দখলে। “১৯২১ সালেও অর্থাৎ গান্ধী যুগেও একটি সুসংগঠিত মুসলমান বিরোধী কর্মী দল কংগ্রেসের সদস্য সংখ্যার অর্ধেক স্থান দখল করে বসলেন এবং কংগ্রেস প্রতিষ্ঠানে তাঁদের গুরুত্ব হয়ে উঠল সংখ্যানুপাতে ঢের
বশী”।–[‘ভারত কি করে ভাগ হলো’,
বিমলানন্দ শাসমল, পৃষ্ঠা ৩৩।]
১৯২৭ সালে ৩১টি মুসলিম বিরোধী দাঙ্গায় ১৬০০ মানুষ জীবন দেয়। আর ইসলাম ও মুসলমান বিরোধী প্রচারণাও এ সময় তুঙ্গে ওঠে। ভারতের কোটি কোটি মুসলমানের হৃদয় আহতকারী ‘রঙ্গিলা রসুল’ বই নিয়ে গণ্ডগোলের ঘটনা এ সময়েই ঘটে। বিচারে গ্রন্থের লেখককে শুধু ছেড়ে দেয়া নয়, তার সাফাই গাওয়া হয়। এই অবিচার মুসলিম বিদ্বেষী তৎপরতাকে আরও উৎসাহিত করে। এ সম্পর্কে ‘মোসলেম দর্পণ’ এর মন্তব্য, “বর্তমান সময় ভারতবর্ষে যে সকল হিন্দু মোসলেম বিদ্বেষ প্রচার করাকে তাহাদের জীবনের একটা মহান কর্তব্য বলিয়া গণ্য করিয়া লইয়াছে এবং অহরহ এই বিদ্বেষ বহ্নি প্রচার করত উভয় সম্প্রদায় তথা সমগ্র ভারতে অশান্তির অনল প্রজ্বলিত করত দিন দিন নতুন ইন্ধন যোগাইয়া দেশের শান্তি ও শৃংখলাকে অচিরে অস্মীভূত করিবার প্রয়াস পাইতেছে, অপিচ তজ্জন্য আনন্দ ও আত্মপ্রসাদ লাভ করিতেছে, তাহাদের মধ্যে আর্য্য নামধারী ভণ্ড সম্প্রদায় যে স্পর্ধার চরম সীমায় উপনীত হইয়াছে, ইহা বর্তমান ‘রঙ্গিলা রসুল’ ও তৎসংক্রান্ত বিচার-বিভ্রাট দ্বারা স্পষ্টই প্রমাণিত হইয়া যাইতেছে। —-এই মোকদ্দমার রায়ে জাষ্টি দিলীপ সিংহ যে সকল যুক্তি ও অভিমত প্রকাশ করিয়াছেন তাহাও মোসলমান সমাজের পক্ষে একান্তই অসহনীয়। তাঁহার মতে, ‘রঙ্গিলা রসুল’ পুস্তকে হজরত মোহাম্মদ (দঃ) এর প্রতি তীব্র শ্লেষ বাক্য ও ঘৃণিত গালাগালি বর্তমান থাকিলেও উহা ব্যক্তিগত এবং উহা দ্বারা নাকি ধর্মের অবমাননা ও আইনের সীমা লংঘন করা হয়না। —তিনি ‘রঙ্গিলা রসুল’ এর গ্রন্থকারকে বেকসুল খালাস দিয়াছেন। —-বিচারক দিলীপ সিংহের এবম্বিধ দৃষ্ট নজিরের ফলস্বরূপ ইতিমধ্যেই দেশের চারদিকে অশান্তির অনল জ্বলিয়া উঠিয়াছে। কোন কোন হিন্দু সংবাদপত্রে এখন প্রকাশ্য ভাবে হজরতের নিন্দা সূচক ও ইসলাম বিদ্বেষমূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হইতেছে”।–[‘মোসলেম দর্পন’, ৩য় বর্ষ, ৭ম সংখ্যা, জুলাই ১৯২৭, উদ্ধৃত, সাময়িক পত্রে জীবন ও জনমত’ মু্সতফা নুরউল ইসলাম, পৃষ্ঠা ২৮৩।]
মুসলমানদের বিরুদ্ধে এই বিদ্বেষ প্রচার অব্যাহত থাকে এবং মুসলিম বিরোধী দাংগা চলে তিরিশের দশকেও অনেকখানি জুড়ে। ১৯৩১ সালের দাংগায় চার পাঁচ’শ লোক নিহত হয়। ঢাকায় বড় দাংড়া হয় ১৯৩০ সালে। এ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে ‘সওগাত’ বলেছিল, “ঢাকায় সম্প্রতি বিষম সাম্প্রদায়িক দাংগা হইয়া গিয়াছে। চিরাচরিত প্রথা অনুসারে এ ব্যাপারে হিন্দুরা মুসলমানদের উপর এবং মুসলমানরা হিন্দুদের উপর সকল দোষ চাপাইয়া দিয়া নিজ নিজ নির্দোষিতা প্রমাণ করিতে চাহিয়াছেন। —-আমরা বরাবর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হাঙ্গামার নিন্দা করিয়াছি এবং ঢাকার ব্যাপারেও দাঙ্গাকারীদের নিন্দা করিতেছি। দুঃখের বিষয় কয়েকখানি হিন্দু চালিত সংবাদপত্র ঢাকার হিন্দুদের ভণ্ডামীকে বীরত্বের পরিচায়ক বলিয়া প্রকারান্তরে তাহার প্রশংসাই করিয়াছেন”।৩
কিছুদিন আগে মিরপুরে বিহারিদের একটি শরণার্থী শিবিরে স্থানীয় এমপি ও পুলিশের উপস্থিতিতে বস্তি উচ্ছেদ অভিযানের সময় দশজনকে একঘরে বদ্ধ রেখে পুড়িয়ে মারা হলেও তার কোনো মামলা নিতে স্থানীয় পল্লবী থানা রাজি হয়নি। তার কোনো প্রতিকারও আজ পর্যন্ত হয়নি। কোনো হিন্দুবাড়ি এভাবে আক্রান্ত হলে এবং দশজনকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারলে ভারতজুড়ে তার কী প্রতিক্রিয়া হতো এটা বলাই বাহুল্য।
বাংলাদেশে হিন্দু জনসংখ্যা শতকরা ৯/১০-এর কাছাকাছি। কিন্তু তাদের চাকরি শতকরা ৯/১০ ভাগের থেকে কম নয়। কিছু বেশিই হবে।(আসলে এই সংখ্যা ২৫% + দেখুনঃ বাংলাদেশের সরকারী চাকুরীতে সংখ্যালঘুদের অবস্থান )। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের এই হিন্দুরা সরকারি ও বেসরকারি অনেক উচ্চপদে অধিষ্ঠিত। গান, নাচ, নাটক, সিনেমা, সাহিত্য, প্রচারমাধ্যম, রাজনীতি ইত্যাদি সর্বক্ষেত্রে হিন্দুদের অবস্থান উল্লেখযোগ্য। সমাজে সব ক্ষেত্রে তাদের অবস্থা সম্মানজনক। অন্য জাতিগত ও ভাষাগত সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে এটা দেখা যায় না বললেই হয়।
অথচ বাংলাদেশে সংখ্যালঘু বলতে বোঝায় শুধু হিন্দুদের এবং সংখ্যালঘুর বিরুদ্ধে নির্যাতন বলতে বোঝায় হিন্দুদের ওপর নির্যাতন! এর থেকে সত্যের বড় অপলাপ আর কী হতে পারে? এই অসত্য ও মিথ্যার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে আজ স্পষ্টভাবে প্রকৃত সংখ্যালঘু সমস্যাকে সামনে আনা দরকার, যে সংখ্যালঘু ধর্মীয় সংখ্যালঘু হিন্দুরা নয়। তারা হলেন জাতিগত ও ভাষাগত সংখ্যালঘু, বিশেষত সারা দেশে ছড়িয়ে থাকা জাতিগত সংখ্যালঘু সাঁওতাল, গারো, রাখাইন, হাজং এবং পার্বত্য চট্টগ্রামের ১৩টি জাতিসহ বাংলাদেশের প্রায় ৪৫টি সংখ্যালঘু অবাঙালি জাতি।
যারা অন্যদের জমি দখল করছে, ঘরবাড়ি লুটপাট করছে, মানুষের ওপর নির্যাতন করছে- তারা চোর, ডাকাত, অপহরণকারী ক্রিমিনাল- কোনো সাম্প্রদায়িক দুষ্কৃতকারী নয়। তাদের এই আক্রমণের সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতা বা বিশেষভাবে হিন্দুদের ওপর নির্যাতনের কোনো ব্যাপার নেই। কিন্তু বাংলাদেশে ভারতের গোয়েন্দা বিভাগের সঙ্গে সম্পর্কিত হাতেগোনা কিছু লোক এবং আওয়ামী লীগের একজন নেতৃস্থানীয় হিন্দু নেতার মতো চরম সাম্প্রদায়িক ব্যক্তিরাই এ ধরনের কথাবার্তা বলছেন। মাদারীপুরে একটি ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে সত্যিই যদি বিজেপি নেতা অরুণ হালদার হিন্দুদের উপরোক্ত বক্তব্য শুনে থাকেন তাহলে তারা হল সেই আওয়ামী লীগ নেতার মতোই সাম্প্রদায়িক হিন্দু। এদেশের সাধারণ হিন্দু নয়। সেক্ষেত্রে ‘হাজার হাজার’ হিন্দুর থেকে এ ধরনের কথাবার্তা শোনার কোনো সুযোগও তার ছিল না। এসব হল পরিকল্পিত ও মিথ্যা সাম্প্রদায়িক প্রচারণা, যে কাজ করাতে বিজেপি সিদ্ধহস্ত।৪
বাংলাদেশ: সাম্প্রদায়িকতা,সংখ্যালঘু ইস্যু ও তার সত্য-মিথ্যা
পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ বাংলাদেশ,গাঙ্গেয় অববাহিকায় তার বেড়ে উঠা।সুপ্রাচীনকাল হতে নানা সংস্কৃতি ও ধর্মীয়ান জনমানসের এক নিরাপদ উদর।কুরআনে,পুরাণে :হিন্দু-মুসলিম সম্পৃতির এক আধার।শান্ত-স্নিগ্ধ পলির বুকে সম্প্রীতির বন্ধন কখনো ঢিলা ছিলনা।কিন্তু বিপত্তি বাঁধে স্বাধীনতা প্রাপ্তির পরে।অপপ্রচারে জর্জরিত হয় বারবার সাম্প্রদায়িকতা ইস্যুতে।অবশ্য এর অন্তর্নিহিত কারণও আছে।যার ইঙ্গিত মেলে নেহেরুর "ডিসকভারি অব ইন্ডিয়া" বইয়ের "অখন্ড ভারত তত্ব"র মাধ্যমে।এক সাম্রাজ্যিক বাসনা নিহিত রয়েছে এ তত্বে।সাতবোন রাজ্যের নিকটতম প্রতিবেশী বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান আর পার্বত্য চট্টগ্রামের অধরা সম্পদরাজি এ সাম্রাজ্যিক বাসনাকে আরো অতৃপ্ত করে তুলেছে।ইনসাইড র বইয়ের লেখক অশোক রায়না বইয়ের "অপারেশন বাংলাদেশ" অধ্যায়ে তার কিঞ্চিত উল্লেখ করেছেন।"র" প্রতিষ্ঠা করা হলো ছোট প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোকে নয়া-সাম্রাজ্যবাদী কৌশলে কব্জা করার জন্য।
এ সাম্রাজ্যবাদী ক্রিয়ার একটি উপক্রিয়া হলো- বাংলার সাম্প্রদায়িকতা ইস্যু।নিম্নে কিছু দালিলিক প্রমাণ হাজির করা হলো-
# বাবরি মসজিদ ভাঙ্গা হয় বিজেপি,শিবসেনা,আরএসএসের নেতৃত্বে ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর।এদেশে এর গঠনমূলক প্রতিক্রিয়া হয় কিন্তু তা সহিংসতায় রূপ নেয়নি।কিন্তু পাক্ষিক দিনকাল পত্রিকার ১৬-৩১ ডিসেম্বর সংখ্যায় হেডলাইন ছিল-"ভয়াবহ হিন্দু নির্যাতনের কাহিনী।" ৮ উল্লেখ্য, এ পত্রিকার উপদেষ্টা হলেন ড.আহমদ শরিফ। এসপিওনাজ তত্বেরও এখানে একটা মিলও দেখা যাচ্ছে।
# বাবরি মসজিদ নিয়ে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে এক নিন্দা প্রস্তাব গৃহীত হয় ২০ জানুয়ারি ১৯৯৩ সালে।ভারত এর প্রতিক্রিয়ায় ২৩ জানুয়ারি বলে -"একটি বিতর্কিত ভবন ভেঙ্গে দেয়ায় বাংলাদেশের দেশের জাতীয় সংসদে যে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে তা আমরা গভীর দু:খের সাথে লক্ষ্য করছি।আমাদের নীতি ও ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকার প্রকাশ্য নিন্দা জ্ঞাপন করে যে নাক গলাচ্ছে এবং যে বিষয়ে তার আইনগত অধিকার নাই সেসব বিষয়েও আমাদের উপদেশ দেয়ার মতো ঔদ্ধত্য প্রকাশ করছে এ বিষয় আমরা কঠোরভাবে বিরূপ দৃষ্টিভঙ্গি থেকে দেখছি...৯
# ভারতের হুমকিদানের মাত্র ৫ দিনের মাথায় একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয় তসলিমা নাসরিনের উপন্যাস "লজ্জা"-যা সংখ্যালঘু নির্যাতনের কল্পকাহিনীতে ভরপুর। এখানেও এসপিওনাজ.......১০
# ২ কোটি মুসলমানকে বিতাড়িত করা ও বাংলাদেশকে অঙ্গরাজ্য বানানোর ক্রমাগত হুমকি দেয় বিজেপি ৯৩-৯৫ সাল পর্যন্ত।মজার বিষয় এ হুমকিদানের ভিত্তি ছিল লজ্জা উপন্যাস। কলকাতা থেকে প্রকাশিত একটি দৈনিকের খবর হলো-"বিজেপি ক্ষমতায় যেতে পারলে ২ কোটি মুসলমানকে ভেঙ্গে ভেঙ্গে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়া হবে।প্রয়োজনে বাংলাদেশের সাথে যুদ্ধ হবে এবং তারপর বাংলাদেশ ভারতের একটি অঙ্গরাজ্যে পরিণত হবে।"১১
# হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের তৎপরতা :
ক. বাবরি মসিজিদের ঘটনার পর এ সংগঠন বাংলাদেশ বিরোধী তৎপরতা শুরু করে।৯২ সালের ডিসেম্বরে বিশ্বসম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরিত এক পত্রে "উদ্ধারের জন্য আকুল আবেদন " শিরোনামে বলা হয়-"বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর ভয়াবহ নির্যাতন চলছে।হাজার হাজার মন্দির ধ্বংস করা হয়েছে।"
খ.১৯৯৩ সালের ২২ জুলাই বাংলাদেশ ছাত্র যুব ঐক্য পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে নেতারা বলেন-" সংখ্যালঘুর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে যদি একটি ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়,কারাগারে নেয়া হয় তবে বাংলাদেশের কবর রচনা করা হবে।"১২
তাছাড়া নিকট অতীতে হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাস গুপ্ত সংখ্যালঘু ইস্যুতে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে নালিশ করেছেন ও ভারতের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।তারপরেও রাষ্ট্রদ্রোহীতার দায়ে তারা অভিযুক্ত হননা।তাদের খুঁটির জোরটা আসলে কোথায় তা বুঝতে অতি বিশ্লেষক হবার দরকার পড়েনা।
মিনা ফারাহ এর অভিমত বাংলাদেশ প্রেক্ষাপটে ধর্তব্য-"একটি দলের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ধরে রাখার জন্য সংখ্যালঘু কার্ডটি লাইফ সাপোর্টের মতো জরুরি কেন, বোঝার জন্য আইনস্টাইন হওয়ার দরকার নেই। সাম্প্রতিক ঘটনাবলিতে প্রমাণ হয়, হিন্দুদের কোনো শত্রু লাগে না, কারণ এরা এদের তিন শত্রু অর্থাৎ ‘ভারতপ্রীতি, আওয়ামী নির্ভরতা, মেরুদন্ডের অভাব’, একটিও বুঝতে অক্ষম।’ সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনায় কিছু মিডিয়া বারবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখালো মন্ত্রী, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ‘কেষ্ট বেটা’ একটাও গ্রেফতার হলো? সুতরাং যা আছে ৯৯ শতাংশ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস। জামায়াত-শিবিরকে সন্ত্রাসী দেখিয়ে নিজেদের সন্ত্রাস অব্যাহত রাখার মূলে, একদলীয় শাসন ভুলিয়ে দেয়া। সংখ্যালঘু বিষয়টি বহুমাত্রিক, দায় একা জামায়াত-শিবিরের ওপর চাপিয়ে ভুল করছে সরকার।’ (নয়া দিগন্ত ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৪,অপারেশন মাইনরিটি)
সংখ্যালঘু হামলার ৮৩ ভাগে আ’লীগ জড়িত : প্রবীর মিত্র
৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর সারাদেশে যেসব সহিংসতা ঘটেছে সেগুলোর শতকরা প্রায় ৮৩ ভাগেই আওয়ামী লীগের সম্পৃক্ততা ছিল বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ মাইনরিটি পার্টি। শনিবার বিকেলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের হলরুমে ‘সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন এবং তাদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ও হামলাকারীদের বিচার দাবি’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক প্রবীর মিত্র এ অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর থেকে সংখ্যালঘুদের ওপর যেসব হামলা হয়েছে তার একটারও বিচার হয়নি। সব রাজনৈতিক দল সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা চালিয়ে শুধু ফায়দা লুটেছে। কোনো সরকারের কাছেই সংখ্যালঘুরা নিরাপদ নয়। বড় বড় রাজনৈতিক দলে যেসব হিন্দু নেতা রয়েছেন তারা শুধু নিজের জন্য সুবিধা ভোগ করছেন। সাধারণ হিন্দুদের জন্য কিছুই করেননি। (সূত্র : ২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ জাস্ট নিউজ)
হিন্দুদের ওপর হামলায় আওয়ামী লীগও জড়িত : হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ
বিভিন্ন জায়গায় হিন্দুদের বাড়িঘর হামলার জন্য সরকারের দিক থেকে জামায়াতে ইসলামীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়। কিন্তু জামায়াতে ইসলামী এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে এসব ঘটনার সাথে সরকারদলীয় সমর্থকরাই জড়িত। বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের একজন নেতা সুব্রত চৌধুরী বলেন, সংখ্যলঘুদের ওপর আক্রমণের ঘটনা ঘটলে সেটা এখন রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরের ওপর দোষ চাপানোর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। হামলাকারীদের বিচারের আওতায় না আনার একটি সংস্কৃতি চালু হয়ে গেছে। এখন যেমন বলা হচ্ছে জামায়াত-শিবির এটা করেছে। এটা একটা শ্লোগান হয়ে গেছে। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে সব জায়গায় জামায়াত-শিবির করেছে বিষয়টি এ রকম না।অনেক জায়গায় আওয়ামীলীগও জড়িত সেটা আমরা দেখেছি।(১০ জানুয়ারি ২০১৪,বিবিসি বাংলা)
দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িকতা ইস্যুটা মোটেই আদর্শিক পরিচয়বাহী নয় বরং এটি দেশক শাসকগোষ্ঠী আশ্রিত মহলের অর্থনৈতিক লাভ-ক্ষতির অংকের ব্যাপার আবার ক্ষেত্রবিশেষে শাসকগোষ্ঠীর তুরুপের তাসও এটি।সাম্রাজ্যবাদী রূপটিও তার জাল বিস্তৃত করে রেখেছে- ব্যবহার করে মওসুম অনুযায়ী। মাঝখানে রাজনীতিরর ক্রীড়াক্ষেত্রে ইসলামপন্থীরা সমসুরে সবার দ্বারা দোষারোপের নির্মম শিকার -যেটা ফরহাদ মজহার ইঙ্গিত দিয়েছেন- ‘এটা পরিষ্কার যে কোনো-না- কোনো অশুভ শক্তি বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগাতে চায়। বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তা খুবই বিপজ্জনক। ইতোমধ্যে অনেকে ঘরে বসে না থেকে রাস্তায় প্রতিবাদ করেছেন, জনগণকে অশুভ বিপদ সম্পর্কে সচেতন করছেন।’ সজীব ওয়াজেদ জয় বলেছেন, বিরোধী দল ক্ষমতায় এলে এ দেশে একটি হিন্দুও থাকবে না। সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ করার সংকল্প ও সাফল্যের ওপর বিরোধী জোটের রাজনৈতিক সাফল্য নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি হুঁশিয়ার হতে হবে ইসলামপন্থীদের। ঘটনা যারাই ঘটাক পুরা দোষ তাদের ওপর চাপানোর চেষ্টা চলবেই। ইতোমধ্যে তা শুরুও হয়ে গিয়েছে। জামায়াত-শিবিরের ওপর দোষ চাপানো সাধারণ ফর্মুলা।
(সূত্র : নয়া দিগন্ত ০৫-১১-২০১৩)
আকর:
১.উইকিপিডিয়া।
২.রবিন্দ্রনাথ:সাম্প্রদায়িকতামুক্ত নন-সলিমুল্লাহ খান।
৩.ইসলামের ঐতিহাসিক ভূমিকা-এম.এন রায়,পৃ-৬০।
৪.প্রকৃত সংখালঘু কারা-বদরুদ্দিন উমর।
৪.একশ বছরের রাজনীতি-আবুল আসাদ।
৫.ফ্রিডম এট মিডনাইট -ল্যারি কলিন্স।
৬.বাংলার মুসলমানদের ইতিহাস-আব্বাস আলী খান।
৭.চেপে রাখা ইতিহাস-ড.গোলাম মর্তুজা।
৮-১২.বাংলাদেশে র-আবু রুশদ,পৃ-১৭৯-১৮৭।
১৩.ইনসাইড র -অশোক রায়না।
১৪.ইন্টারনেট।
বিষয়: বিবিধ
১৫০৯ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন