আমি নাকি একটু বেশীিই রাগি
লিখেছেন লিখেছেন অন্ধকার জিবন ১৭ জুন, ২০১৬, ১২:৩৬:৪৮ রাত
বালিকা মনে আছে কী তোমার???....একদিন তোমায় প্রপোজ করার
কারণে সবার সামনে আমায় চড় মেরেছিলে ! তার সাথে সবার সামনে
আমাকে ফ্রীতে অপমানও করেছিলে ।
মা-বাবা সব সময়ই বলত আমি নাকি একটু বেশীই রাগি !
তাই হয়ত নিজের রাগকে আর ধরে রাখতে পারিনি সেদিন । তোমাকও
খুব অপমান করেছিলাম ,তার সাথে কয়েকটা চড়ও দিয়েছিলাম আমায় অপমান করার জন্য ।
তোমার মনে আছে কী ? সেদিন তুমি খুব কেদেছিলে ।হ্যা , খুব , খুব !
.
পরের দিন......
.
ক্লাসের মাঝামাঝি মানের ছাত্র ছিলাম ।ক্লাস পরীক্ষায় দু একবার প্রথমও হয়েছি । যে প্রথম হয় তাকে সকল শিক্ষকদের সামনে পুরষ্কার
দেয়া হয় ।
আমাকে কেরাণী স্যার অফিসে ডাকলেন ।
আমি ভাবলাম এইবারও হয়ত প্রথম হয়েছি ।তাই পুরস্কার গ্রহনের সৎ
সাহস নিয়ে
অফিস রুমে প্রবেশ করলাম ।সব স্যার ম্যামরা আমাকে এক নজর দেখে নিলেন ।হঠাৎ গার্ডিয়ান টেবিলের দিকে নজর পড়তেই দেখলাম
একজন লোক মাথা নিচু করে বসে আছেন ,যিনি আমার অর্ধকলিজা ,আমার
জম্নদাতা , যার কারণে আমি পৃথীবিতে এসেছি , আমার বাবা ।
ভয় লাগতে শুরু করল আমার । নাহ ! পরীক্ষা তো ভালই দিলাম ।ফেল
করার প্রশ্নই উঠে না । তাহলে ?
. হঠাৎ , অফিস রুমে তোমার আগমন , তোমাকে খুব অপমান করেছিলাম
গতকাল।
তুমি আমাকে দেখিয়ে বলল ,স্যার এই ছেলেটিই !
তারপর স্যার তোমাকে চলে যেতে বললেন , তুমি চলে গেলে ।
স্যার আমাকে কিছুই বললেন না ,বরং বলা শুর করলেন বাবাকে ।
আপনি আপনার ছেলেক কী স্কুলে ইভটিজিং করতে পাঠিয়েছেন নাকি পড়ালেখা করাতে ?আপনার উচিৎ ছিল ওকে স্কুলে পাঠানোর আগে
ভদ্রতা শেখানো । আপনি জানেন এই কথাটা মেয়েটার বাবার কানে
গেলে কী হতে পারে ?
এই ধরনের আরও অপমানজনক কথা বললেন । বাবার ব্যক্তিত্ব নিয়েও
অনেক প্রশ্ন তুললেন । বাবা তার ব্যক্তি জিবনে এতটা অপমানিত আর
কোন দিন হয়েছিলেন কী না তা আমার জানা নাই । বাবা ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত একজন মেরিন ইঞ্জিনিয়ার ,শিক্ষিত ও
মার্জিত এবং ঠান্ডা মেজাজি । বাবা কথা বার্তা একটু কমই বলতেন ।
ওনি আজ পর্যন্ত ঝগড়া তো দূরের কথা কারও সাথে উচু গলায় কথাও
বলেন নি ।এলাকায় তার অনেক সুনাম ছিল ।
.
এবার বাবা আর বসে থাকতে পারলেন না । স্যারদের অপমান সহ্য করতে না পেরে তিনি উঠে দাড়ান । তিনি হয়ত কোন দিনও ভাবেননি
যে তার আদর্শে গড়া ছেলে কোন দিন এই রকম কাজ করতে পারে । কোন
এক স্যার তো বলেই ফেললেন "লাইক ফাদার লাইক সন" ।
এই কথা শুনার পর বাবা বুকে হাত দিয়ে আবার বসে পরলেন । অবস্থা
খারাপ দেখে আমি বাবার কাছে যেতেই ওনি আমার দিকে ভয়ংকর
চোখে তাকালেন । আমি ভয়ে আর বাবার কাছে যাই নি । ওনার শরীর থেকে প্রচুর ঘাম বের হচ্ছিল । ওনি বুকে হাত নিয়ে আবার উঠে
দাড়াঁলেন । স্যারকে উদ্দেশ্য করে বললেন "আপনার যা কর্তব্য আপনি
তাই করেন "।
তারপর ওনি অফিস রুম থেকে বেরিয়ে সোজা বাইরে চলে গেলেন।
যাওয়ার আগে একবারও পিছন ফিরে থাকাননি ।
অতঃপর............ স্যার আমাকে আমাদের স্কুলের সবচেয়ে ভয়ংকর স্যারের হাতে তুলে
দিলেন। স্যারের নাম হামিম স্যার ।স্যারের নাম থাকা সত্ত্বেও
কাউকে কোন
দিন স্যারের নাম ধরে ডাকতে শুনিনি । স্যারকে আসতে দেখলেই
সবাই বলত , "ঐ দেখ দানব আসতেছে" ।
স্যারের ভেতর দয়া মায়া নেই আগেই জানতাম । স্যার আমাকে আলাদা একটা রুমে নিয়ে গেলেন । .
ঠাস করে একটা দানবীয় চড় মারলেন আমার গালে । আর কোন পথ না
দেখে আমি ওনার পা ধরে ক্ষমা চাইলাম । তারপর ওনি আমাকে
শিখিয়ে দিলেন কার সাথে কেমন ব্যবহার করতে হয় ।
.
স্কুল থেকে বাড়িতে চলে আসতেছিলাম । কয়েকবার নিজেকে শেষ করতে গিয়েও পারি নি । মা বাবার নিষ্পাপ মুখ খানা চোখের সামনে ভেসে
উঠে । . আনমনে হাটতে হাটতে বাড়িতে চলে আসলাম । বাবা এখনো
আসেন নি
তাই মা কিছুই জানেন না । টেবিলে ভাত ভাড়া দেখে খেতে বসে
গেলাম । মা অপর অরেকটা চেয়ারে বসে আমার খাওয়া দেখছেন ।
তখনই বাবা আসলেন ।হাতে অনেক গুলো বেত । এগুলো চিনতে একটুও সমস্যা হয় নাই । কেননা হামীম স্যার প্রায় এসব বেত ব্যবহার
করতেন । .
বাবা আমার হাত ধরে টেনে একটা রুমে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলেন ।
মা বাহির থেকে চিৎকার করছেন । ভয় পেলেও নিজেকে শক্ত করলাম ।
আমার কারনেই বাবা অনেক
অপমানিত হয়েছেন । আর তার অপমানের ঝাল আমার উপর দিয়েই মিটানো দরকার । বাবার রাগ সম্পর্কে এতদিন আমার কোন ধারণাই
ছিল না ।
বাবা একটা একটা করে সব বেত আমার পিঠে ভাঙলেন । চোখ দিয়ে
অনবরত পানি পড়ছিল কিন্তু চিৎকার করতে পারিনি । কেননা আমার
চিৎকার শুনে মা একটু বেশীই কষ্ট পেত ।
বেত গুলো ভেঙে গেলে ওনি ওনার কোমর থেকে বেল্ট খুলে আমাকে মারতে লাগলেন । ঐ সময় আমার চোখ কেমন জানি অন্ধকার হয়ে আসছিল
।
মনে হচ্ছিল জ্ঞান হারাব ।
বাবাকে তখন বলতে ইচ্ছে করছিল "বাবা ক্ষমা করে দাওনা । তোমার
ছেলে তো এই প্রথম কোন অন্যায় করেছে " । কিন্তু বলার মত শক্তি ছিল
না । এরপর আর কিছুই মনে নেই আমার । .
মাঝ রাতে আমার যখন জ্ঞান ফিরে ,তখন আমার সারা গায়ে বেন্ডেজ
জড়ানো ছিল । বুঝতে পেরেছিলাম আমি তখন হাসপাতালে । মা আমার
পায়ের কাছে ঘুমিয়ে রয়েছে । মনে হয় একটু আগে ঘুমিয়েছে ।মার চোখ
গুলা কেমন জানি ফোলা ফোলা লাগছিল । আশে পাশে তাকিয়ে দেখলাম
আমার মত আরও অনেকে নিজেদের বেডে ঘুমিয়ে আছে । আবার কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম ঠিক মনে নেই। সকালে ঘুম থেকে উঠার পর মার
মুখে হাসি দেখতে পেলাম ।কিন্তু
বাবাকে আশে পাশে পেলাম না । মাকে জিজ্ঞেস করলাম ,বাবা
আসেনি ?
বাবার কথা শুনেই মার মুখটা আবার কালো হয়ে গেল । ভাবলাম আমার
উপর রাগ মনে হয় এখনো কমে নি ।তাই আসে নি । .
আমার সুস্থ হতে প্রায় একমাস লেগেছিল । কিন্তু এই একমাস বাবাকে
একবারো দেখেনি । আমার প্রতি বাবার এত রাগ ?
কয়েক দিন পর ডাক্তাররা হাসপাতাল থেকে আমাকে রিলেজ দেয় ।
বাড়ি আসার সময় ভাবছিলাম বাবার সামনে কীভাবে যাব ? কিন্তু
বাড়িতেও বাবাকে খুজে পেলাম । মাকে বাবার কথা বলতেই মা এড়িয়ে যায় । পরের দিন.... সকালে
মাকে জোরপূর্বক বললাম যে বাবা কই ?
মা এবার কেদেই দিল ,বলল চল তোর বাবার কাছে নিয়ে যাই !
মা বাড়ির পিছনের জঙ্গল দিয়ে হাটছে । কিছুক্ষন যাওয়ার পর
দেখলাম আমার দাদুর কবরের পাশে নতুন আরেকটা কবর । মাকে
জিজ্ঞেস করলাম এইটা কার কবর ? মা আবার ডুকরে কেদে উঠল ! আমার আর কিছু বুঝার বাকি রইল না । হাউ
মাউ করে
কেদে উঠলাম ।
বাবা , তুমি এতই রাগ করেছ আমার উপর যে আমাকে ছেড়ে উপরে চলে
গেলে ? বিশ্বাস কর বাবা , তুমি যদিও আমাকে মেরেছ আমি একটু
ব্যাথা পাই নি । বাবা আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও না । কথা দিলাম তোমার ছেলে আরা কোন দিন এমন কাজ করবে না । ও বাবা , তুমি কথা
বলছ না কেন ?
.
মার কাছ থেকে জানতে পারলাম ,আমাকে মারার পর আমি যখন অজ্ঞান
হয়ে যাই তখন তিনি হার্ট অট্যাক করেন । আমাকে আর বাবাকে
একসাথে হাসপাতালে নেয়া হয় । .
কিন্তু ডাক্তাররা বাবাকে মৃত ঘোষনা করে । আমি তখনও জানতাম না।
আর আজ জানলাম ।
.
"বাবা ,বাবা কোথায় তুমি?"
. বিশ্বাস কর ,আমি তোমাকে দোষ দিব না । আমি তোমাকে অপমান
করেছি ,তুমিই তো বিচার দিতে পারই । আসলে দোষটা আমারই । আমার
একটা ভুলের জন্য বাবা আজ নেই ।
.
ছেলেটার যে কী হল ? আজ ওর বাবার ১ম মৃত্যু বার্ষিকি । কিন্তু
এখনও ওর বাবাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে ।
.
Dedicated_to_এমন_ছেলেদের_যাদের_সামান্য_ভুলের_
কারণে_জীবনে_অনেক_ক্ষতি_হয় .
বিষয়: বিবিধ
১৪৭৪ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন