নাটোরে কয়েকদিন-কারগুজারী

লিখেছেন লিখেছেন কেরানীগঞ্জ বাংলাওয়ালী মসজিদ থেকে বলছি ২৯ মে, ২০১৬, ০৩:৫৪:৩৯ রাত



কিছুদিন আগে একটি দাওয়াত ও তাবলীগ জামাতের নুসরতে গিয়েছিলাম নাটোর। এলাকার সাথীরা আমাদেরকে জানালেন, নাটোরে খ্রিস্টান ও কাদীয়ানীদের অপতৎপরতা চলছে। আমরা কয়েকজন বিষয়টি সরেজমিনে জানার ইচ্ছা করলাম। প্রথমে গেলাম নাটোর বনপারার খ্রিস্টান পল্লীতে। যাওয়ার পথে চারদিকে গ্রামবাংলার চিরচেনা পরিবেশ। খেত-খামার, টিনের ঘর, মাটির ঘর। কিন্তু খ্রিস্টান পল্লীতে পৌঁছার পর মনে হল যেন উন্নত কোনো দেশের রাজধানীতে ঢুকে পড়েছি। চার দিকে পিচ ঢালা রাস্তা, সুউচ্চ প্রাচীরে ঘেরা আলীশান ভবন। বিশাল জায়গা জুড়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি এক গির্জা। চারদিকে অনেক জায়গা নিয়ে উঁচু দেয়ালে ঘেরা। গেটে দাঁড়িয়েই ভেতরে দেখার চেষ্টা করলাম, ভেতরে ঢোকার অনুমতি পাইনি। গির্জার সামনে বেশ উঁচু একটি মূর্তি। জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম এটা মেরী (অর্থাৎ হযরত মারইয়াম আ.)-এর মূর্তি। স্থানীয় এক ভাই বললেন, ‘মূর্তিটি ছেচল্লিশ ফিট উঁচু; বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মূর্তি’। সামনে গিয়ে কিছু খ্রিস্টান তরুণের সাথে সাক্ষাৎ হল। দেখতে উপজাতি বা আদিবাসীদের মত। তাদের বাবা-মা হিন্দু থেকে খ্রিস্টান হয়েছে। তাদেরকে ত্রিত্ববাদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। উত্তরে বুঝা গেল এ ব্যাপারে তাদের ধারণা খুবই অস্পষ্ট। এ বিশ্বাস যে শিরক আমরা তাদের বুঝানোর চেষ্টা করলাম। বললাম, আপনাদের বাবা-মা তেত্রিশ কোটি দেবতায় বিশ্বাসের ধর্ম থেকে তিন উপাস্যে বিশ্বাসের ধর্ম গ্রহণ করেছেন, এবার আপনারা তিন উপাস্য থেকে এক আল্লাহয় বিশ্বাসের ধর্মে চলে আসুন, তাহলেই মুক্তি পাবেন। এভাবে আরো কিছু কথা হল। একপর্যায়ে বাইবেলের অসারতা সম্পর্কে বললাম। এ সময় পাশ থেকে ১২/১৩ বছরের একটি ছেলে বাইবেল নিয়ে আমাদের সাথে তর্ক জুড়ে দিল। আমরা কথা দাওয়াতের আন্দাজে রাখার চেষ্টা করলাম। বললাম,

- যীশুর উপর তোমাদের ঈমান আছে তো?

- জী আছে।

- বাইবেলের বর্ণনামতে যীশু বলে গেছেন, যারা তার উপর ঈমান আনে তাদের মধ্যে এ চিহ্নগুলো দেখা যাবে।

১. আমার নামে ভুত ছাড়াবে।

২. তারা নতুন নতুন ভাষায় কথা বলবে।

৩. তারা হাতে করে সাপ তুলে ধরবে।

৪. যদি তারা ভীষণ বিষাক্ত কিছু খায় তবে তাদের কোনো ক্ষতি হবে না।

৫. আর তারা রোগীদের গায়ে হাত দিলে রোগীরা ভাল হবে। -ইঞ্জিল, মার্ক ১৬ : ১৭-১৮

তো আমাদের মধ্যে কাউকে যেহেতু ভুতে ধরেনি তাই সেটা এখানে পরীক্ষা করা যাচ্ছে না। আশেপাশে সাপও নেই, ভীষণ বিষাক্ত কিছুও সাথে করে আমরা নিয়ে আসিনি। তবে নতুন ভাষায় কথা বলা সম্ভব। আপনাদের জন্য আরবী নিশ্চয়ই নতুন ভাষা, তাহলে আমাদের সাথে আরবীতে কথা বলুন! তারা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে এরপর হেসে দিল। আমরা বললাম, হাসপাতালে কত রোগী শুয়ে আছে মানুষতো আপনাদের কাছে আসলেই ভাল হয়ে যেত। একজন বলে উঠল, ভাই দেখেন এটা বিশ্বাসের ব্যাপার। আমাদের সেরকম বিশ্বাস থাকলে সেটা সম্ভব হত। আমরা বললাম,আপনাদের এ চার্চে এমন কোনো লোক আছে কি যে এ পরীক্ষাগুলো দিতে পারবে?

- নাই।

- আচ্ছা, আপনাদের যীশুর উপর সামান্য পরিমাণ বিশ্বাস আছে তো!

- হাঁ, আছে।

- ইঞ্জিলের মথি ১৭ : ২০-এ আছে, ঈসা. আ. তার শিষ্যদিগকে বললেন, আমি তোমাদের সত্যি বলছি, যদি একটা সরিষার দানার মত বিশ্বাসও তোমাদের থাকে তবে তোমরা এই পাহাড়কে বলবে এখান থেকে সরে ওখানে যাও, তাতে ওটা সরে যাবে। তোমাদের পক্ষে কিছুই অসম্ভব হবে না।

আপনারা আমাদের সামনের গাছটিকে সরে যেতে বলুন, দেখি সরে কি না?

- মুচকি হাসি দিয়ে চুপ করে রইল।

- দেখুন, বাইবেল নামে কোনো কিতাব আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে অবতীর্ণ করেননি। আর এত আজগুবী কথাবার্তা এতে রয়েছে শুনলে লোম হর্ষে ওঠে। এজন্য এত আজগুবী কথাবার্তা এতে রয়েছে। বাইবেলের এক জায়গায় আছে, আল্লাহ তাআলা ইয়াকুব আ.-এর সাথে কুস্তি খেলেছেন এবং আল্লাহ তাআলা হেরে গেছেন। নাউযুবিল্লাহ! আরেক জায়গায় গল্প লিখতে গিয়ে এমন গল্পও লেখা হয়েছে যে, পিতার চেয়ে পুত্রের বয়স কয়েকবছর বেশি হয়ে গেছে। ইত্যাদি

দেখুন, বাইবেলের নতুন নিয়মে ২৭টি চ্যাপটারের মধ্যে ১৪টি পৌলের লেখা চিঠি, তিনি ধর্মের দাওয়াতের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন গোত্রের নিকট যে চিঠি লিখেছেন, তা বাইবেলে সংকলন করা হয়েছে। কারো হাতে লেখা চিঠি আল্লাহর বানী হয় কীভাবে?

একজন বললেন, তিনি তো চিঠিতে আল্লাহর বাণীই লিখেছেন। তাই সেটাকে আল্লাহর বাণী বলা হয়। আমরা বললাম, আপনাকে একটি উদাহরণ দেই, মনোযোগ দিয়ে শুনবেন- প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সরাসরি লিখিত পত্রের মাধ্যমে জনগণকে একটি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পত্রটি প্রধানমন্ত্রীর দস্তখত ও সীলসহ দেশের সকল জনপ্রতিনিধির নিকট পাঠিয়ে দেওয়া হল। এবং এ নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনকে আদেশ করা হল এবং সকলের নিকট সেই লিখিত পত্রটিও পাঠানো হল। আপনি কোনো পরিচিত ব্যক্তিকে ঐ নির্দেশটি জানানোর উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর এ কথার উদ্ধৃতি দিয়ে একটি পত্র লিখলেন। আপনার লেখা পত্রটি কি প্রধানমন্ত্রীর লেখা পত্রের মত মর্যাদা পাবে?

- না।

- আপনি কি বলবেন এটা প্রধানমন্ত্রীর চিঠি।

- না।

- কারণ, এটা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের উদ্ধৃতি, মূল বক্তব্য নয়। আপনার লেখা চিঠিটি যদি কোনো পুলিশকে দেখিয়ে বলেন, অমুক এ আদেশ অমান্য করেছে তাকে গ্রেফতার করুন। আপনার লেখার ভিত্তিতে সে তাকে গ্রেফতার করবে?

- না।

- কেন? এটা কি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নয়?

দেখুন, আমরা সকলেই মানুষ, আমরা আদম আ.-এর সন্তান। আপনাদের প্রতি আমাদের মহব্বত আছে, মানুষ খুবই ব্যস্ত। কেউ কাউকে সময় দিতে রাজি নয়। কিন্তু আমরা বহুদূর থেকে নিজ খরচে এসে আপনাদের সাথে কথা বলছি। আপনাদের সাথে হয়ত এটাই প্রথম এবং শেষ মুলাকাত। আর কোনোদিন হয়ত মুলাকাতের সুযোগ হবে না। আপনাদের একটি আমানত আমাদের কাছে গচ্ছিত রয়েছে, তা আমরা পৌঁছে দিচ্ছি। এরপর তাওহদি, রেসালাত ও আখেরাত সম্পর্কে দাওয়াত দেওয়া হল এবং বলা হল, দেখুন, বাইবেলে আপনাদের গুরুদের কথা অনুযায়ী পঞ্চাশ হাজার ভুল আছে, এর পরও বাইবেলের কোথাও এ কথা নেই যে, যীশু নিজেকে খোদা বলে দাবী করেছেন। বরং একাধিক জায়গায় যীশুর বর্ণনা আছে, তিনি নিজেকে আল্লাহ তাআলার বান্দা ও গোলাম বলে ঘোষণা করেছেন। আপনারা যদি বাইবেলকে মানেন তাহলে সেখানে কোথাও ত্রিত্ববাদের মত শিরকী আকীদা খুঁজে পাবেন না। এটা মূলত পৌলের বানানো ভ্রান্ত বিশ্বাস। শেষে আমরা তাদের মোবাইল নাম্বার চাইলাম, যেন পরবর্তীতে যোগাযোগ রক্ষা করা যায়। তারা বলল, আমরা মোবাইল ব্যবহার করি না।

এরপর আমরা গেলাম তেবাড়িয়া কাদিয়ানী এলাকায়। সেখানে একটি বড় কাদিয়ানী ‘মসজিদ’ (তাদের এবাদতখানা) রয়েছে। তিন তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে দুই তলা করা। ভেতরে ঢুকে দেখি দুইজন মানুষ। একজন মুয়াযযিন অপরজন স্থানীয় এক কাদিয়ানী। ইমাম সাহেব নেই, তিনি কোথাও গিয়েছেন। যোহর নামাযের দশ মিনিট বাকি। মুয়াযযিনকে বললাম, ইমাম যেহেতু নেই তাহলে আমাদের মধ্যে ভাল আলেম আছেন তাদের কেউ ইমামতি করতে পারেন। তার উত্তর,তাহলে আমরা নামায পড়ব না, আপনারা পড়েন। আমরা পরে পড়ব। বললাম, আচ্ছা, আমরা অযু করে আসি আপনারা নামায পড়ে ফেলুন। তাই হল। তাদের নামাযের পর মুয়াযযিন সাহেব বাহিরে গেল। অন্যজন বসা ছিল। তার সাথে কথা বললাম। দেখতে খুবই সহজ সরল। আমাদের মতই লম্বা দাড়ি। মধ্য বয়সী। জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কখন কাদিয়ানী ধর্ম গ্রহণ করেছেন।

- কিছুদিন আগে।

- বুঝে-শুনে হয়েছেন তো?

- চুপ করে হাসল।

- আপনারা মির্জা গোলাম আহমদকে কী জানেন?

- ইমাম মাহদী।

- নবী মানেন না?

- না, নবী তো মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

- আচ্ছা আপনি যেহেতু ইমাম মাহদী মানেন তো তিনি কখন আসবেন এ বিষয়ে কিছু জানেন?

- না।

- আমরা ছোট বেলায় মুরব্বীদের কাছে গল্প শুনতাম, মক্কাতে তাওয়াফ করা অবস্থায় ইমাম মাহদীর আবির্ভাব হবে। এমন গল্প কি আপনি শুনেছেন?

- জ্বী, শুনেছি।

- আমরা হাদীসের কিতাবে দেখেছি, হাদীসে এমন কথা আছে, তখন বুঝেছি আসলে এটা শুধু গল্প নয়, বাস্তবেই। আপনি কি মনে করেন এসব বিষয় ঘটে গেছে? আর গোলাম আহমদ কাদিয়ানী তো কখনো মক্কা যেতে পারেননি। এরপরও কীভাবে তাকে ইমাম মাহদী মানলেন?

- এলাকার অনেকে আহমদী তো, তাই আমিও সেটা গ্রহণ করেছি।

- হাদীসে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের আলামতও বলে গেছেন। তা না পাওয়া সত্ত্বেও কাউকে ইমাম মাহদী মানলে হাদীস অমান্য হবে না?

কিছুক্ষণ নীচে তাকিয়ে চুপ করে রইলেন। এরপর বললেন, ভাই! আমাকে বাজারে যেতে হবে এখন সময় নাই পরে কথা বলব। ইতিমধ্যে ‘মুয়াযযিন’ সাহেব এলেন। তার চুল-দাড়ি সব সাদা হয়ে গেছে। জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার বয়স কত?

- একটা বয়স বলল, তা এ মুহূর্তে মনে নেই।

- আপনার সন্তান কতজন?

- নয় ছেলে।

- সবাই কি কাজ-কর্ম করে?

- জ্বী, কয়েক ছেলে ঢাকায় আছে। দুই ছেলে প্রাণ কোম্পানিতে চাকরি করছে।

- কাদিয়ানী মসজিদে তো টিভি থাকে ডিসের লাইন থাকে, আপনাদের মসজিদে তো সেসব দেখছি না।

- আছে। এ পাশের ঘরে থাকে। মসজিদে আনার ব্যবস্থা এখনো হয়নি।

- মসজিদে টিভি থাকাটা কেমন? অনেকে তো আপনাদের মসজিদে টিভি থাকার কারণে কাদিয়ানী ধর্ম গ্রহণ করে না। সৈয়দপুরে এক লোকের কথা জানি। তিনি কাদিয়ানি হওয়ার দাওয়াত শুধু এজন্যে প্রত্যাখ্যান করেছেন যে, কাদিয়ানীদের মসজিদে টিভি থাকে।

- টিভিতে আসলে আমরা আমাদের খলীফার বক্তব্য আর কিছু ইসলামী অনুষ্ঠান দেখি।

- হাদীসে আছে ইমাম মাহদীর নাম হবে মুহাম্মাদ, পিতার নাম আব্দুল্লাহ। তিনি মদীনার লোক হবেন। মক্কাতে তার আবির্ভাব হবে। গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর নাম মুহাম্মাদ নয়, তার পিতার নাম গোলাম মুর্তজা এবং কোনোদিন তার মক্কা-মদীনা যাওয়ার সুযোগ হয়নি। তাহলে সে কীভাবে মাহদী হল?

- আমরা এগুলো বুঝি না। আমাদের হুযুর আছে, উনি আসলে তার সাথে কথা বলবেন। আমরা এ বিষয়ে কথা বলতে পারব না।

- আপনি কি আগে মুহাম্মাদী ছিলেন পরে কাদিয়ানী হয়েছেন?

- জ্বী।

- কতদিন আগে হয়েছেন।

- অনেক আগে প্রায় বিশ বছর।

- যখন কাদিয়ানী হয়েছেন তখন কাদিয়ানী হুযুরদের এ কথা বলেছেন যে, মুহাম্মাদী হুযুরদের জিজ্ঞাসা করেন, আমরা এগুলো বুঝি না।

- চুপ করে বসে রইল।

- আচ্ছা আপনি বলেছেন, আপনার দুই ছেলে প্রাণ কোম্পানিতে চাকরি করে, তারা কি এখনো সেখানে চাকরি করছে?

- জ্বী, প্রাণ কোম্পানীর মালিক আমজাদ চৌধুরী তো আমাদের এলাকার লোক। নাটোরে প্রাণের বিশাল কোম্পানী আছে। প্রায় আড়াই কিলোমিটার জায়গায় নিয়ে প্রাণের কোম্পানী। সেখানে আমাদের লোকরাও অনেকে চাকরী করে।

এরপর আমরা আমজাদ চৌধুরীর এক আত্মীয়ের সাথে সাক্ষাৎ করি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঐ ব্যক্তি তার বিষয়ে তথ্য দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করেন।

- সে আপনার কেমন আত্মীয়?

- ...

- আপনাদের সাথে তাদের সম্পর্ক আছে?

- না, তারা কাদিয়ানী হওয়ার কারণে আমরা তাদের সাথে সম্পর্ক রাখি না।

- সে কখন কাদিয়ানী হল?

- পাকিস্তান আমলে তার দাদা সর্বপ্রথম কাদিয়ানী হয়। এরপর থেকে সে বংশসূত্রে কাদিয়ানী।

- সে নামায পড়ে?

- সে তো সবসময় ঢাকায় থাকে, মাঝেমধ্যে এখানে আসে। যখন আসে তখন জুমা ছাড়া অন্য নামায পড়তে দেখা যায় না। আর জুমা সে কাদিয়ানী মসজিদে গিয়েই পড়ে।

- সে দলকে কী পরিমাণ আর্থিক সহযোগিতা করে তা বলতে পারেন কি?

- সুনির্দিষ্ট কোনো অংকের কথা বলতে পারব না। তবে কাদিয়ানীদের নিয়ম হল, প্রত্যেক কাদিয়ানীকে আয়ের একটা নির্দিষ্ট পার্সেন্ট দিয়ে দিতে হয় দলের সহযোগিতার জন্য। কারো থেকে ১৬%, কারো থেকে ১৫%, কারো থেকে ১০%। এ হিসেবে যদি আদায় করে থাকে তাহলে তো সে বহু টাকা দেয়। এবং বড় অংকের আর্থিক সহযোগিতা করে।

এরপর আমরা প্রাণ কোম্পানিটি দেখতে যাই। অন্যান্য কোম্পানীর মত ভেতরে ঢুকার অনুমতি সকলের জন্য নাই বিধায় আমরা ঢুকতে পারিনি। প্রধান ফটকের সামনে লেখা, R.F.L Group, since ১৯৮১। প্রাণ কোম্পানীর মালিক কাদিয়ানী, এটা আগে শুনেছি। তবে আর. এফ. এল.-এর মালিক একই ব্যক্তি তা আমার জানা ছিল না। কোম্পানিটির পাশে কিছুদূর ঘুরে দেখলাম। বিভিন্ন বিষয়ে এলাকার মানুষের সাথে কথা হল। আমজাদ চৌধুরী যে কাদিয়ানী এ বিষয়ে সকলেই একমত। কোম্পানীর চাকুরীজীবী এক মুসলমানের সাথে কথা হয়। তিনি বললেন, আমজাদ সাহেব মানুষ হিসেবে ভাল। মুসলমানদের অনেক মসজিদ নির্মাণের জন্য টাকা-পয়সা দেন। বিশেষভাবে প্রাণ কোম্পানীর আশেপাশে যে মসজিদগুলো আছে এগুলোতে তিনি বড় অংকের টাকা দিয়েছেন। তবে মূল সমস্যা হল, তিনি কাদিয়ানী। এছাড়া অন্য কোনো সমস্যা নাই। আমরা তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, শুনেছি, এ কোম্পানীতে কাদিয়ানীরাই বেশি চাকরী পায়? তিনি বললেন, না। মুসলমানরাই বেশি চাকরী করে। এখানে কাদিয়ানীরাও আছে, খুব কম। কারণ, কাদিয়ানী লোকই তো কম।

- আপনাদের কি ওরা কাদিয়ানী হতে দাওয়াত দেয়?

- না, এতো সাহস তারা পায় না। প্রত্যেকে যার যার মতো আমল করে। কোম্পানীতে এসব বিষয় নিয়ে কোনো আলোচনা হয় না। তবে কেউ যদি ব্যক্তিগতভাবে আলোচনা উঠায় সেটা ভিন্ন কথা।

এরপর আমরা এ অঞ্চলের উলামায়ে কেরামের সাথে সাক্ষাৎ করলাম এবং তাঁদের কাছে পরিস্থিতি জানালাম। বেলা তখন প্রায় আড়াইটা। খাওয়া দাওয়ার কোনো বিরতি ছাড়াই আমরা এক মাদরাসায় গিয়ে উঠি। মাদরাসার কর্তৃপক্ষের সাথে সাক্ষাতের পর বিষয়গুলো আলোচনা করি। তারা আমাদের খাওয়া-দাওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেন। আমরা চেয়েছিলাম, এ বিষয়টি আলোচনায় না আসুক। মাদরাসায় তখন বিরতি (ছুটি) চলছিল। হঠাৎ পড়ন্ত দুপুরে এত লোকের খাবারের আয়োজন তাদের জন্য কষ্ট হয়ে যাবে বলে আমরা চিন্তিত ছিলাম। বারবার অনুরোধ করেছি। এরপরও আল্লাহর বান্দারা আমাদের বেশ জোর করে রাজি করান এবং অল্প সময়ে এত ভাল আয়োজন করলেন, যা রীতিমত আশ্চর্যের। আল্লাহ তাআলা যাদের অন্তরকে প্রশস্ত করেছেন,তাদের দ্বারাই এটা সম্ভব। আল্লাহ তাআলা তাঁদেরকে জাযায়ে খায়ের দান করুন। দস্তরখান থেকে ফারেগ হওয়ার পর বিদায়ের মুহূর্তে এক ভাই বললেন, এখানে আলমারিতে কিছু বই দেখা যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে কয়েকটি বই হাতে নিলাম। বইগুলো দেখতে ‘ছোটদের ধারাপাত’ ‘আমার বাংলা বই’গুলোর মত। ভিতরের পৃষ্ঠাগুলো আর্টপেপারে পলি মোড়ানো। ভেতরে বাহিরে মানুষ বা প্রাণীর ঝকঝকে ছবি। কওমী মাদরাসার লাইব্রেরীতে ছবিসহ বই দেখে আমরা বেশ অবাক হলাম। মাদরাসা কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসা করলে তারা বললেন, বইগুলো একটি সংস্থার পক্ষ থেকে দিয়েছে। এরপর তিনি কয়েক পৃষ্ঠার পিনআপ করা একটি লেখা আমাদের হাতে দিলেন। লেখাটির শিরোনাম হল, ‘মাদরাসায় প্রতিভা প্রকল্প’। বাস্তবায়নকারী সংস্থা দুটি,

১. সেভ দ্যা চিলড্রেন।

২. আর. ডি. আর. এস. বাংলাদেশ।

চরম ইসলামবিদ্বেষী খ্রিস্টানদের এনজিও দুটি মাদরাসায় কাজ করছে দেখে আমরা আঁতকে উঠি। প্রকল্প-এলাকা হিসেবে চারটি এলাকার নাম দেওয়া আছে। ১. রাজশাহী ২. চাঁপাই ৩. নাটোর. ৪. বগুড়া।

সেখানে আরো আছে- এ বিষয়গুলো মাদরাসায় বাস্তবায়ন করার জন্য মাদরাসার শিক্ষক,অভিভাবক, ব্যবস্থাপনা কমিটি ও স্থানীয় জনগণের সম্মিলিত প্রয়াস নেওয়া।

এরপর লেখাটিতে আর. ডি. আর. এস. বাংলাদেশ- এদেশে কী কী কার্যক্রম পরিচালনা করে তার উল্লেখ রয়েছে। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি এই-

১. আদিবাসীদের উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন।

২. পরিবার পরিকল্পনা।

৩. নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা ও নারীর ক্ষমতায়ন।

৪. ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে দরিদ্রের জীবনমান উন্নয়ন।

এ শিরোনামগুলো দেখে একজন সাধারণ মানুষ বুঝতে পারবে না যে, দেশ ও ইসলামের বিরুদ্ধে কত বড় ষড়যন্ত্র লিপ্ত তারা। আদিবাসীদের উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের নামে তাদের ব্যাপকহারে খ্রিস্টান বানানো হচ্ছে। ২০৫০ সালের মধ্যে এদেশকে খ্রিস্টান রাজ্যে পরিণত করার যে ঘোষণা ছিল মাদার তেরেসার- তা বাস্তবায়নের দিকে এরা অগ্রসর হচ্ছে। আর পরিবার পরিকল্পনা ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা কথা দুটির বাস্তব উদ্দেশ্য কী, তা প্রায় সকলেরই জানা। আর ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে কত দরিদ্র যে নিস্ব হয়েছে, ভিটে-মাটি ছাড়া হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। আর এরা চক্রবৃদ্ধিহারে সুদ নিয়ে কয়েক শত পার্সেন্ট পর্যন্ত সুদ নিচ্ছে। যে সুদ আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরুদ্ধে স্পষ্ট বিদ্রোহ।

এরপর আমরা আর ডি. আর. এস.-এর নিজস্ব ওয়েবসাইট দেখলাম :তাদের অর্থায়ন কারা করে। সেখানে দেওয়া আছে বিভিন্ন চার্চের নাম। জেনেভা, নরওয়ে, ডেনমার্ক, জাপান এ সমস্ত দেশের বিভিন্ন চার্চ থেকে অর্থ আসে আর. ডি. আর. এসে।

আর সেভ দ্যা চিলড্রেনও একটি অতি পরিচিত খ্রিস্টান এনজিও, যারা ইসলাম বিরোধী নানা কর্ম-কাণ্ডের সাথে জড়িত। গত এপ্রিল ২০১৪ মাসিক পাথেয় পত্রিকায় ‘ধেয়ে আসছে সমকামিতার ছোবল’ শিরোনামে একটি লেখা ছাপা হয়েছে। পত্রিকাটির তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে সমকামিতা প্রসারের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকা এসেছে। যাদের মাধ্যমে নোংরা এ কাজটি এদেশে বিস্তার ঘটানো হবে, তাদের অন্যতম হল, সেভ দ্যা চিলড্রেন।

নোয়াখালীতে ‘মাদরাসা প্রকল্প’ নামে ট্রেনিং হচ্ছে। ব্যবস্থাপনা সংস্থা হল, সেভ দ্যা চিলড্রেন ও আরো দুটি সংস্থা। যাতে সরকারী মাদরাসার ছেলে-মেয়েরা অংশগ্রহণ করে। এ ট্রেনিং করেছে এমন এক ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করে বিভিন্ন তথ্য জানা গেল। সংক্ষেপে উল্লেখ করছি-

১. ট্রেনিংটি মাদরাসার ১৩-১৯ বছরের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে করা হয়। ২. পর্দা ছাড়া ছেলে-মেয়েদের পাশপাশি বসানো হয়। ৩. সেখানে এইড্স সচেতনতা বা এইড্স প্রতিরোধের পদ্ধতি শিখানো হয়। এক্ষেত্রে যৌন বিষয়ক আলোচনাগুলো খুব খোলামেলা করা হয়। এদেশের মানুষ যৌন আলোচনাগুলো খোলামেলা করতে লজ্জাবোধ করে। এজন্য তারা কুরআনের কিছু আয়াতের অপব্যাখ্যা করে একথা বুঝানোর চেষ্টা করে যে, কুরআন যৌন আলোচনা প্রকাশ করেছে (নাউযুবিল্লাহ) তো আমরা এতে লজ্জাবোধ করব কেন? এবং কুরআনের আয়াতের অপব্যাখ্যাগুলো বই আকারে সকল শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়। ৪. প্রজেক্টরের মাধ্যমে যৌন কর্মের চিত্র দেখিয়ে এইড্স সচেতনতা শেখানো হয় ইত্যাদি।

যাক পূর্বের প্রসঙ্গে ফিরে আসা যাক। এতটা প্রকাশ্যে ইসলাম-বিরোধী কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত,তারা মাদরাসায় বই দিচ্ছে, এতে আমরা খুবই আশ্চর্য হই। এরপর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে জানা গেল, তারা ঐ চার জেলার অনেক মাদরাসা-মক্তবে কাজ করছে। কাজের পদ্ধতি হল,প্রত্যেক মাদরাসার মক্তবের দুই শিক্ষককে তারা একটি ট্রেনিং দিয়ে থাকে। এ শিক্ষানুযায়ী তারা মক্তবের বাচ্চাদের শিখাবে এবং তাদের বেতনেরও কিছু অংশ (১৫০০) এ সংস্থা দুটি থেকে আসবে। এক্ষেত্রে তারা দু’ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে।

এক. যে মাদরাসাগুলো অংশগ্রহণ করবে সে মাদরাসার পরিচালকদের নিয়ে একটি প্রশিক্ষণ।

দুই. যারা বাচ্চাদের প্রশিক্ষণ দিবে তাদের নিয়ে একটি প্রশিক্ষণ।

প্রথমোক্ত প্রশিক্ষণের শিরোনাম ছিল ‘প্রতিভা সি এস। প্রশিক্ষণে ঐ চার জেলার মোট ৩১টি মাদরাসার মুহতামীম এবং সেভ দ্যা চিলড্রেন ও আর. ডি. আর, এস-এর সাতজন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি উপস্থিত ছিল। দ্বিতীয় প্রশিক্ষণের লিস্টে লেখা আছে ‘প্রাক প্রাথমিক বিষয়ে শিক্ষকদের মৌলিক প্রশিক্ষণ। মেয়াদকাল ০৮/১২/২০১৩ ঈ.। এতে মোট ৪২ জন শিক্ষকের নাম রয়েছে।

তাদের কারিকুলামের কিছু দেখা হল। তাতে এমন সব বিষয় রয়েছে, যার দ্বারা যে কেউ তাদের উদ্দেশ্য বুঝতে পারবেন। কিছু বইয়ের উপর লেখা ‘কুরআনের গল্প’, কিছু বইয়ের উপরে লেখা‘হাদীসের গল্প’। অথচ বইয়ের ভেতরে ঈমান-আকীদা ও দ্বীনী রুচি বিধ্বংসী তথ্য। যেমন, একটি বইয়ের নাম ‘মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও অন্ধ লোকটি’। এর নীচে লেখা, ‘কুরআনের গল্প’।

এর ১৫নং পৃষ্ঠায় লেখা, ‘কিন্তু অন্ধ লোকটির সাথে বিরূপ আচরণ করায় আল্লাহ নবীজীর উপর খুশী হতে পারলেন না। (নাউযুবিল্লাহ)

‘মাছের গল্প’ নামক বইয়ের শেষ পৃষ্ঠায় লেখা, প্রথমে ইউনুস নবী যে ভুলটি করেছিলেন,...’।‘হাদীসের গল্প’ নামক বইয়ে মূসা আ. ও খাযির-এর ঘটনার পূর্বের ঘটনা, যেখানে মূসা আ. তাঁর শিষ্যদের পক্ষ থেকে বর্তমান পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় জ্ঞানী কে- এ বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হয়েছিলেন এবং তিনি নিজের দিকে ইঙ্গিত করেছিলেন। ঐ ঘটনা লিখতে গিয়ে লেখা হয়েছে, ‘মূসার মনে যে এজন্য কিছু অহংকার ছিল না, একথা বলতে পারা যায় না। এই অহমিকার জন্যই একদিন তাকে যথেষ্ট লজ্জা পেতে হয়েছিল... তিনি বিনয় প্রকাশের জন্য উক্তিটির প্রতিবাদ করতে পারতেন। কিন্তু তা তো তিনি করলেনই না, অধিকন্তু সায় দিলেন বলে মনে হল। -পৃষ্ঠা ৩১

এক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয় হল, নবীদের ভুল প্রমাণের জন্য তাদের চেষ্টার শেষ নেই। নবীদের নামের পর সা. লেখার মত জায়গা তাদের অন্তরে নেই। যেমন আরো কয়েক জায়গায় আছে ‘মহান নবী’বইয়ে লেখা, যুবক নবী হযরত দাউদ (পৃষ্ঠা-৬)

‘নূহের নৌকা’ বইয়ে আছে, ‘সে সময় নূহ নামে একজন ধার্মিক লোক ছিলেন’ (পৃষ্ঠা ২)

এখানে নবীকে ধার্মিক বলার কারণ হল, বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী অনেক নবী বিধর্মী ছিলেন,কোনো নবী মূর্তিপূজারী ছিলেন। নাউযুবিল্লাহ

অথচ কুরআন আমাদের শিক্ষা দেয়, সকল নবী মাসূম। কুরআনের এ শিক্ষা রেখে মাদরাসার শিশুদেরকে নবীদের বিষয়ে ভুল শিক্ষা দেওয়ার এ চেষ্টা কেন? এর নামই কি ‘মাদরাসায় প্রতিভা প্রকল্প’?!

এ যে কুরআন-হাদীসের নামে বাইবেলের বিকৃত শিক্ষা বিস্তারের প্রয়াস- তা তো আর বলে দিতে হবে না। এটি আরো স্পষ্ট হয় আরেকটি বইয়ের টিকা থেকে। মূল বইয়ে কথাটি নেই, টিকায় তা জুড়ে দেওয়া হয়েছে। বইটির নাম ‘এক অলৌকিক ঘটনা’ নীচে লেখা, ‘কুরআনের গল্প’ ৩নং পৃষ্ঠার টিকায় লেখা, ‘ঈসা আ.-কে খ্রিস্টানরা যীশু নামে ডাকে। যীশুকে তারা মনে করে ঈশ্বরের পুত্র।’

এক্ষেত্রে প্রথম কথা হল, ঈসা আ.-কে খ্রিস্টানরা কী বলে, কোমলমতি শিশুদের জন্য তা এখানে উল্লেখের প্রয়োজন কী?

দ্বিতীয় কথা হল, বইয়ের উপরে লেখা ‘কুরআনের গল্প’ কুরআন তো এমন কথা বলেনি; বরং সূরা তওবার ৩০নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, (তরজমা) “খ্রিস্টানরা বলে মসীহ আল্লাহর ছেলে। এটা তাদের মুখের কথা। আগে যারা কুফরী করেছিল এরা তাদের মত কথা বলে। আল্লাহর ওদের ধ্বংস করুন”। (সূরা তাওবা (৯) : ৩০) যারা মসীহ ইবনে মারইয়ামকে আল্লাহর ছেলে বলে,উপরিউক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে কাফের আখ্যায়িত করেছেন। এটা ছিল এ কথার বিরুদ্ধে কুরআনের প্রতিবাদ। কিন্তু এ বইয়ে প্রতিবাদকে সমর্থনের ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে।

তৃতীয় কথা হল, ঈসা আ.-কে ‘যীশু’ নামে আখ্যায়িত করা হচ্ছে খ্রিস্টানদের পরিভাষা। তাদের‘রমযান ও কুরআন’ নামক বইয়ে কয়েকজন নবীর নামের পর ব্রাকেটে খ্রিস্টানদের পরিভাষা দেওয়া আছে। যেমন, নূহ আ. (নোয়াহ), ইব্রাহিম আ. (আব্রাহাম), ইউনুস আ. (যোসেফ), মুসা আ. (মুসেস)। নবীগণের এসমস্ত বিকৃত নাম মুসলিম শিশুদের শিক্ষা দেওয়ার কী উদ্দেশ্য? নামের এ পরিবর্তন ভাষার কারণে নয়, ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃতি করা হয়েছে। শিশুরা এ নামগুলো এখন শিখে গেলে নামগুলো তাদের নিকট পরিচিত হয়ে যাবে এবং এ সম্পর্কে তাদের সহনশীল মনোভাব তৈরি হবে। এটাই তাদের মূল উদ্দেশ্য।

বইগুলোতে আরো অনেক সমস্যা আছে, সব উল্লেখ করতে গেলে লেখা দীর্ঘ হবে। তবে এটুকু তথ্যও সচেতন পাঠকের উপলব্ধি ও অনুসন্ধিৎসার জন্য যথেষ্ট।

বাংলাদেশের এক দুটি অঞ্চলের সামান্য কিছু চিত্র ও অভিজ্ঞতা পাঠকের খেদমতে নিবেদন করলাম। এ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য শুধু আলিমদের তৎপরতা যথেষ্ট নয়। এ দেশের ঈমানদার দেশপ্রেমিক প্রত্যেকটি নাগরিকের এখনই অবস্থার ভয়াবহতা উপলব্ধি করা প্রয়োজন। আল্লাহ আমাদের উপর রহম করুন, এ দেশকে সকল প্রকার ষড়যন্ত্র থেকে হেফাযত করুন। আমীন!

সৌজন্যেঃ

লেখকঃ আবু মুহাম্মাদ

মাসিক আল কাউসারকিছুদিন আগে একটি দাওয়াত ও তাবলীগ জামাতের নুসরতে গিয়েছিলাম নাটোর। এলাকার সাথীরা আমাদেরকে জানালেন, নাটোরে খ্রিস্টান ও কাদীয়ানীদের অপতৎপরতা চলছে। আমরা কয়েকজন বিষয়টি সরেজমিনে জানার ইচ্ছা করলাম। প্রথমে গেলাম নাটোর বনপারার খ্রিস্টান পল্লীতে। যাওয়ার পথে চারদিকে গ্রামবাংলার চিরচেনা পরিবেশ। খেত-খামার, টিনের ঘর, মাটির ঘর। কিন্তু খ্রিস্টান পল্লীতে পৌঁছার পর মনে হল যেন উন্নত কোনো দেশের রাজধানীতে ঢুকে পড়েছি। চার দিকে পিচ ঢালা রাস্তা, সুউচ্চ প্রাচীরে ঘেরা আলীশান ভবন। বিশাল জায়গা জুড়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি এক গির্জা। চারদিকে অনেক জায়গা নিয়ে উঁচু দেয়ালে ঘেরা। গেটে দাঁড়িয়েই ভেতরে দেখার চেষ্টা করলাম, ভেতরে ঢোকার অনুমতি পাইনি। গির্জার সামনে বেশ উঁচু একটি মূর্তি। জিজ্ঞাসা করে জানতে পারলাম এটা মেরী (অর্থাৎ হযরত মারইয়াম আ.)-এর মূর্তি। স্থানীয় এক ভাই বললেন, ‘মূর্তিটি ছেচল্লিশ ফিট উঁচু; বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মূর্তি’। সামনে গিয়ে কিছু খ্রিস্টান তরুণের সাথে সাক্ষাৎ হল। দেখতে উপজাতি বা আদিবাসীদের মত। তাদের বাবা-মা হিন্দু থেকে খ্রিস্টান হয়েছে। তাদেরকে ত্রিত্ববাদ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম। উত্তরে বুঝা গেল এ ব্যাপারে তাদের ধারণা খুবই অস্পষ্ট। এ বিশ্বাস যে শিরক আমরা তাদের বুঝানোর চেষ্টা করলাম। বললাম, আপনাদের বাবা-মা তেত্রিশ কোটি দেবতায় বিশ্বাসের ধর্ম থেকে তিন উপাস্যে বিশ্বাসের ধর্ম গ্রহণ করেছেন, এবার আপনারা তিন উপাস্য থেকে এক আল্লাহয় বিশ্বাসের ধর্মে চলে আসুন, তাহলেই মুক্তি পাবেন। এভাবে আরো কিছু কথা হল। একপর্যায়ে বাইবেলের অসারতা সম্পর্কে বললাম। এ সময় পাশ থেকে ১২/১৩ বছরের একটি ছেলে বাইবেল নিয়ে আমাদের সাথে তর্ক জুড়ে দিল। আমরা কথা দাওয়াতের আন্দাজে রাখার চেষ্টা করলাম। বললাম,

- যীশুর উপর তোমাদের ঈমান আছে তো?

- জী আছে।

- বাইবেলের বর্ণনামতে যীশু বলে গেছেন, যারা তার উপর ঈমান আনে তাদের মধ্যে এ চিহ্নগুলো দেখা যাবে।

১. আমার নামে ভুত ছাড়াবে।

২. তারা নতুন নতুন ভাষায় কথা বলবে।

৩. তারা হাতে করে সাপ তুলে ধরবে।

৪. যদি তারা ভীষণ বিষাক্ত কিছু খায় তবে তাদের কোনো ক্ষতি হবে না।

৫. আর তারা রোগীদের গায়ে হাত দিলে রোগীরা ভাল হবে। -ইঞ্জিল, মার্ক ১৬ : ১৭-১৮

তো আমাদের মধ্যে কাউকে যেহেতু ভুতে ধরেনি তাই সেটা এখানে পরীক্ষা করা যাচ্ছে না। আশেপাশে সাপও নেই, ভীষণ বিষাক্ত কিছুও সাথে করে আমরা নিয়ে আসিনি। তবে নতুন ভাষায় কথা বলা সম্ভব। আপনাদের জন্য আরবী নিশ্চয়ই নতুন ভাষা, তাহলে আমাদের সাথে আরবীতে কথা বলুন! তারা কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে এরপর হেসে দিল। আমরা বললাম, হাসপাতালে কত রোগী শুয়ে আছে মানুষতো আপনাদের কাছে আসলেই ভাল হয়ে যেত। একজন বলে উঠল, ভাই দেখেন এটা বিশ্বাসের ব্যাপার। আমাদের সেরকম বিশ্বাস থাকলে সেটা সম্ভব হত। আমরা বললাম,আপনাদের এ চার্চে এমন কোনো লোক আছে কি যে এ পরীক্ষাগুলো দিতে পারবে?

- নাই।

- আচ্ছা, আপনাদের যীশুর উপর সামান্য পরিমাণ বিশ্বাস আছে তো!

- হাঁ, আছে।

- ইঞ্জিলের মথি ১৭ : ২০-এ আছে, ঈসা. আ. তার শিষ্যদিগকে বললেন, আমি তোমাদের সত্যি বলছি, যদি একটা সরিষার দানার মত বিশ্বাসও তোমাদের থাকে তবে তোমরা এই পাহাড়কে বলবে এখান থেকে সরে ওখানে যাও, তাতে ওটা সরে যাবে। তোমাদের পক্ষে কিছুই অসম্ভব হবে না।

আপনারা আমাদের সামনের গাছটিকে সরে যেতে বলুন, দেখি সরে কি না?

- মুচকি হাসি দিয়ে চুপ করে রইল।

- দেখুন, বাইবেল নামে কোনো কিতাব আল্লাহ তাআলা পৃথিবীতে অবতীর্ণ করেননি। আর এত আজগুবী কথাবার্তা এতে রয়েছে শুনলে লোম হর্ষে ওঠে। এজন্য এত আজগুবী কথাবার্তা এতে রয়েছে। বাইবেলের এক জায়গায় আছে, আল্লাহ তাআলা ইয়াকুব আ.-এর সাথে কুস্তি খেলেছেন এবং আল্লাহ তাআলা হেরে গেছেন। নাউযুবিল্লাহ! আরেক জায়গায় গল্প লিখতে গিয়ে এমন গল্পও লেখা হয়েছে যে, পিতার চেয়ে পুত্রের বয়স কয়েকবছর বেশি হয়ে গেছে। ইত্যাদি

দেখুন, বাইবেলের নতুন নিয়মে ২৭টি চ্যাপটারের মধ্যে ১৪টি পৌলের লেখা চিঠি, তিনি ধর্মের দাওয়াতের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন গোত্রের নিকট যে চিঠি লিখেছেন, তা বাইবেলে সংকলন করা হয়েছে। কারো হাতে লেখা চিঠি আল্লাহর বানী হয় কীভাবে?

একজন বললেন, তিনি তো চিঠিতে আল্লাহর বাণীই লিখেছেন। তাই সেটাকে আল্লাহর বাণী বলা হয়। আমরা বললাম, আপনাকে একটি উদাহরণ দেই, মনোযোগ দিয়ে শুনবেন- প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সরাসরি লিখিত পত্রের মাধ্যমে জনগণকে একটি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পত্রটি প্রধানমন্ত্রীর দস্তখত ও সীলসহ দেশের সকল জনপ্রতিনিধির নিকট পাঠিয়ে দেওয়া হল। এবং এ নির্দেশ বাস্তবায়নের জন্য প্রশাসনকে আদেশ করা হল এবং সকলের নিকট সেই লিখিত পত্রটিও পাঠানো হল। আপনি কোনো পরিচিত ব্যক্তিকে ঐ নির্দেশটি জানানোর উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রীর এ কথার উদ্ধৃতি দিয়ে একটি পত্র লিখলেন। আপনার লেখা পত্রটি কি প্রধানমন্ত্রীর লেখা পত্রের মত মর্যাদা পাবে?

- না।

- আপনি কি বলবেন এটা প্রধানমন্ত্রীর চিঠি।

- না।

- কারণ, এটা প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের উদ্ধৃতি, মূল বক্তব্য নয়। আপনার লেখা চিঠিটি যদি কোনো পুলিশকে দেখিয়ে বলেন, অমুক এ আদেশ অমান্য করেছে তাকে গ্রেফতার করুন। আপনার লেখার ভিত্তিতে সে তাকে গ্রেফতার করবে?

- না।

- কেন? এটা কি প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য নয়?

দেখুন, আমরা সকলেই মানুষ, আমরা আদম আ.-এর সন্তান। আপনাদের প্রতি আমাদের মহব্বত আছে, মানুষ খুবই ব্যস্ত। কেউ কাউকে সময় দিতে রাজি নয়। কিন্তু আমরা বহুদূর থেকে নিজ খরচে এসে আপনাদের সাথে কথা বলছি। আপনাদের সাথে হয়ত এটাই প্রথম এবং শেষ মুলাকাত। আর কোনোদিন হয়ত মুলাকাতের সুযোগ হবে না। আপনাদের একটি আমানত আমাদের কাছে গচ্ছিত রয়েছে, তা আমরা পৌঁছে দিচ্ছি। এরপর তাওহদি, রেসালাত ও আখেরাত সম্পর্কে দাওয়াত দেওয়া হল এবং বলা হল, দেখুন, বাইবেলে আপনাদের গুরুদের কথা অনুযায়ী পঞ্চাশ হাজার ভুল আছে, এর পরও বাইবেলের কোথাও এ কথা নেই যে, যীশু নিজেকে খোদা বলে দাবী করেছেন। বরং একাধিক জায়গায় যীশুর বর্ণনা আছে, তিনি নিজেকে আল্লাহ তাআলার বান্দা ও গোলাম বলে ঘোষণা করেছেন। আপনারা যদি বাইবেলকে মানেন তাহলে সেখানে কোথাও ত্রিত্ববাদের মত শিরকী আকীদা খুঁজে পাবেন না। এটা মূলত পৌলের বানানো ভ্রান্ত বিশ্বাস। শেষে আমরা তাদের মোবাইল নাম্বার চাইলাম, যেন পরবর্তীতে যোগাযোগ রক্ষা করা যায়। তারা বলল, আমরা মোবাইল ব্যবহার করি না।

এরপর আমরা গেলাম তেবাড়িয়া কাদিয়ানী এলাকায়। সেখানে একটি বড় কাদিয়ানী ‘মসজিদ’ (তাদের এবাদতখানা) রয়েছে। তিন তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে দুই তলা করা। ভেতরে ঢুকে দেখি দুইজন মানুষ। একজন মুয়াযযিন অপরজন স্থানীয় এক কাদিয়ানী। ইমাম সাহেব নেই, তিনি কোথাও গিয়েছেন। যোহর নামাযের দশ মিনিট বাকি। মুয়াযযিনকে বললাম, ইমাম যেহেতু নেই তাহলে আমাদের মধ্যে ভাল আলেম আছেন তাদের কেউ ইমামতি করতে পারেন। তার উত্তর,তাহলে আমরা নামায পড়ব না, আপনারা পড়েন। আমরা পরে পড়ব। বললাম, আচ্ছা, আমরা অযু করে আসি আপনারা নামায পড়ে ফেলুন। তাই হল। তাদের নামাযের পর মুয়াযযিন সাহেব বাহিরে গেল। অন্যজন বসা ছিল। তার সাথে কথা বললাম। দেখতে খুবই সহজ সরল। আমাদের মতই লম্বা দাড়ি। মধ্য বয়সী। জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কখন কাদিয়ানী ধর্ম গ্রহণ করেছেন।

- কিছুদিন আগে।

- বুঝে-শুনে হয়েছেন তো?

- চুপ করে হাসল।

- আপনারা মির্জা গোলাম আহমদকে কী জানেন?

- ইমাম মাহদী।

- নবী মানেন না?

- না, নবী তো মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

- আচ্ছা আপনি যেহেতু ইমাম মাহদী মানেন তো তিনি কখন আসবেন এ বিষয়ে কিছু জানেন?

- না।

- আমরা ছোট বেলায় মুরব্বীদের কাছে গল্প শুনতাম, মক্কাতে তাওয়াফ করা অবস্থায় ইমাম মাহদীর আবির্ভাব হবে। এমন গল্প কি আপনি শুনেছেন?

- জ্বী, শুনেছি।

- আমরা হাদীসের কিতাবে দেখেছি, হাদীসে এমন কথা আছে, তখন বুঝেছি আসলে এটা শুধু গল্প নয়, বাস্তবেই। আপনি কি মনে করেন এসব বিষয় ঘটে গেছে? আর গোলাম আহমদ কাদিয়ানী তো কখনো মক্কা যেতে পারেননি। এরপরও কীভাবে তাকে ইমাম মাহদী মানলেন?

- এলাকার অনেকে আহমদী তো, তাই আমিও সেটা গ্রহণ করেছি।

- হাদীসে নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের আলামতও বলে গেছেন। তা না পাওয়া সত্ত্বেও কাউকে ইমাম মাহদী মানলে হাদীস অমান্য হবে না?

কিছুক্ষণ নীচে তাকিয়ে চুপ করে রইলেন। এরপর বললেন, ভাই! আমাকে বাজারে যেতে হবে এখন সময় নাই পরে কথা বলব। ইতিমধ্যে ‘মুয়াযযিন’ সাহেব এলেন। তার চুল-দাড়ি সব সাদা হয়ে গেছে। জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার বয়স কত?

- একটা বয়স বলল, তা এ মুহূর্তে মনে নেই।

- আপনার সন্তান কতজন?

- নয় ছেলে।

- সবাই কি কাজ-কর্ম করে?

- জ্বী, কয়েক ছেলে ঢাকায় আছে। দুই ছেলে প্রাণ কোম্পানিতে চাকরি করছে।

- কাদিয়ানী মসজিদে তো টিভি থাকে ডিসের লাইন থাকে, আপনাদের মসজিদে তো সেসব দেখছি না।

- আছে। এ পাশের ঘরে থাকে। মসজিদে আনার ব্যবস্থা এখনো হয়নি।

- মসজিদে টিভি থাকাটা কেমন? অনেকে তো আপনাদের মসজিদে টিভি থাকার কারণে কাদিয়ানী ধর্ম গ্রহণ করে না। সৈয়দপুরে এক লোকের কথা জানি। তিনি কাদিয়ানি হওয়ার দাওয়াত শুধু এজন্যে প্রত্যাখ্যান করেছেন যে, কাদিয়ানীদের মসজিদে টিভি থাকে।

- টিভিতে আসলে আমরা আমাদের খলীফার বক্তব্য আর কিছু ইসলামী অনুষ্ঠান দেখি।

- হাদীসে আছে ইমাম মাহদীর নাম হবে মুহাম্মাদ, পিতার নাম আব্দুল্লাহ। তিনি মদীনার লোক হবেন। মক্কাতে তার আবির্ভাব হবে। গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর নাম মুহাম্মাদ নয়, তার পিতার নাম গোলাম মুর্তজা এবং কোনোদিন তার মক্কা-মদীনা যাওয়ার সুযোগ হয়নি। তাহলে সে কীভাবে মাহদী হল?

- আমরা এগুলো বুঝি না। আমাদের হুযুর আছে, উনি আসলে তার সাথে কথা বলবেন। আমরা এ বিষয়ে কথা বলতে পারব না।

- আপনি কি আগে মুহাম্মাদী ছিলেন পরে কাদিয়ানী হয়েছেন?

- জ্বী।

- কতদিন আগে হয়েছেন।

- অনেক আগে প্রায় বিশ বছর।

- যখন কাদিয়ানী হয়েছেন তখন কাদিয়ানী হুযুরদের এ কথা বলেছেন যে, মুহাম্মাদী হুযুরদের জিজ্ঞাসা করেন, আমরা এগুলো বুঝি না।

- চুপ করে বসে রইল।

- আচ্ছা আপনি বলেছেন, আপনার দুই ছেলে প্রাণ কোম্পানিতে চাকরি করে, তারা কি এখনো সেখানে চাকরি করছে?

- জ্বী, প্রাণ কোম্পানীর মালিক আমজাদ চৌধুরী তো আমাদের এলাকার লোক। নাটোরে প্রাণের বিশাল কোম্পানী আছে। প্রায় আড়াই কিলোমিটার জায়গায় নিয়ে প্রাণের কোম্পানী। সেখানে আমাদের লোকরাও অনেকে চাকরী করে।

এরপর আমরা আমজাদ চৌধুরীর এক আত্মীয়ের সাথে সাক্ষাৎ করি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঐ ব্যক্তি তার বিষয়ে তথ্য দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করেন।

- সে আপনার কেমন আত্মীয়?

- ...

- আপনাদের সাথে তাদের সম্পর্ক আছে?

- না, তারা কাদিয়ানী হওয়ার কারণে আমরা তাদের সাথে সম্পর্ক রাখি না।

- সে কখন কাদিয়ানী হল?

- পাকিস্তান আমলে তার দাদা সর্বপ্রথম কাদিয়ানী হয়। এরপর থেকে সে বংশসূত্রে কাদিয়ানী।

- সে নামায পড়ে?

- সে তো সবসময় ঢাকায় থাকে, মাঝেমধ্যে এখানে আসে। যখন আসে তখন জুমা ছাড়া অন্য নামায পড়তে দেখা যায় না। আর জুমা সে কাদিয়ানী মসজিদে গিয়েই পড়ে।

- সে দলকে কী পরিমাণ আর্থিক সহযোগিতা করে তা বলতে পারেন কি?

- সুনির্দিষ্ট কোনো অংকের কথা বলতে পারব না। তবে কাদিয়ানীদের নিয়ম হল, প্রত্যেক কাদিয়ানীকে আয়ের একটা নির্দিষ্ট পার্সেন্ট দিয়ে দিতে হয় দলের সহযোগিতার জন্য। কারো থেকে ১৬%, কারো থেকে ১৫%, কারো থেকে ১০%। এ হিসেবে যদি আদায় করে থাকে তাহলে তো সে বহু টাকা দেয়। এবং বড় অংকের আর্থিক সহযোগিতা করে।

এরপর আমরা প্রাণ কোম্পানিটি দেখতে যাই। অন্যান্য কোম্পানীর মত ভেতরে ঢুকার অনুমতি সকলের জন্য নাই বিধায় আমরা ঢুকতে পারিনি। প্রধান ফটকের সামনে লেখা, R.F.L Group, since ১৯৮১। প্রাণ কোম্পানীর মালিক কাদিয়ানী, এটা আগে শুনেছি। তবে আর. এফ. এল.-এর মালিক একই ব্যক্তি তা আমার জানা ছিল না। কোম্পানিটির পাশে কিছুদূর ঘুরে দেখলাম। বিভিন্ন বিষয়ে এলাকার মানুষের সাথে কথা হল। আমজাদ চৌধুরী যে কাদিয়ানী এ বিষয়ে সকলেই একমত। কোম্পানীর চাকুরীজীবী এক মুসলমানের সাথে কথা হয়। তিনি বললেন, আমজাদ সাহেব মানুষ হিসেবে ভাল। মুসলমানদের অনেক মসজিদ নির্মাণের জন্য টাকা-পয়সা দেন। বিশেষভাবে প্রাণ কোম্পানীর আশেপাশে যে মসজিদগুলো আছে এগুলোতে তিনি বড় অংকের টাকা দিয়েছেন। তবে মূল সমস্যা হল, তিনি কাদিয়ানী। এছাড়া অন্য কোনো সমস্যা নাই। আমরা তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, শুনেছি, এ কোম্পানীতে কাদিয়ানীরাই বেশি চাকরী পায়? তিনি বললেন, না। মুসলমানরাই বেশি চাকরী করে। এখানে কাদিয়ানীরাও আছে, খুব কম। কারণ, কাদিয়ানী লোকই তো কম।

- আপনাদের কি ওরা কাদিয়ানী হতে দাওয়াত দেয়?

- না, এতো সাহস তারা পায় না। প্রত্যেকে যার যার মতো আমল করে। কোম্পানীতে এসব বিষয় নিয়ে কোনো আলোচনা হয় না। তবে কেউ যদি ব্যক্তিগতভাবে আলোচনা উঠায় সেটা ভিন্ন কথা।

এরপর আমরা এ অঞ্চলের উলামায়ে কেরামের সাথে সাক্ষাৎ করলাম এবং তাঁদের কাছে পরিস্থিতি জানালাম। বেলা তখন প্রায় আড়াইটা। খাওয়া দাওয়ার কোনো বিরতি ছাড়াই আমরা এক মাদরাসায় গিয়ে উঠি। মাদরাসার কর্তৃপক্ষের সাথে সাক্ষাতের পর বিষয়গুলো আলোচনা করি। তারা আমাদের খাওয়া-দাওয়ার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলেন। আমরা চেয়েছিলাম, এ বিষয়টি আলোচনায় না আসুক। মাদরাসায় তখন বিরতি (ছুটি) চলছিল। হঠাৎ পড়ন্ত দুপুরে এত লোকের খাবারের আয়োজন তাদের জন্য কষ্ট হয়ে যাবে বলে আমরা চিন্তিত ছিলাম। বারবার অনুরোধ করেছি। এরপরও আল্লাহর বান্দারা আমাদের বেশ জোর করে রাজি করান এবং অল্প সময়ে এত ভাল আয়োজন করলেন, যা রীতিমত আশ্চর্যের। আল্লাহ তাআলা যাদের অন্তরকে প্রশস্ত করেছেন,তাদের দ্বারাই এটা সম্ভব। আল্লাহ তাআলা তাঁদেরকে জাযায়ে খায়ের দান করুন। দস্তরখান থেকে ফারেগ হওয়ার পর বিদায়ের মুহূর্তে এক ভাই বললেন, এখানে আলমারিতে কিছু বই দেখা যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে কয়েকটি বই হাতে নিলাম। বইগুলো দেখতে ‘ছোটদের ধারাপাত’ ‘আমার বাংলা বই’গুলোর মত। ভিতরের পৃষ্ঠাগুলো আর্টপেপারে পলি মোড়ানো। ভেতরে বাহিরে মানুষ বা প্রাণীর ঝকঝকে ছবি। কওমী মাদরাসার লাইব্রেরীতে ছবিসহ বই দেখে আমরা বেশ অবাক হলাম। মাদরাসা কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসা করলে তারা বললেন, বইগুলো একটি সংস্থার পক্ষ থেকে দিয়েছে। এরপর তিনি কয়েক পৃষ্ঠার পিনআপ করা একটি লেখা আমাদের হাতে দিলেন। লেখাটির শিরোনাম হল, ‘মাদরাসায় প্রতিভা প্রকল্প’। বাস্তবায়নকারী সংস্থা দুটি,

১. সেভ দ্যা চিলড্রেন।

২. আর. ডি. আর. এস. বাংলাদেশ।

চরম ইসলামবিদ্বেষী খ্রিস্টানদের এনজিও দুটি মাদরাসায় কাজ করছে দেখে আমরা আঁতকে উঠি। প্রকল্প-এলাকা হিসেবে চারটি এলাকার নাম দেওয়া আছে। ১. রাজশাহী ২. চাঁপাই ৩. নাটোর. ৪. বগুড়া।

সেখানে আরো আছে- এ বিষয়গুলো মাদরাসায় বাস্তবায়ন করার জন্য মাদরাসার শিক্ষক,অভিভাবক, ব্যবস্থাপনা কমিটি ও স্থানীয় জনগণের সম্মিলিত প্রয়াস নেওয়া।

এরপর লেখাটিতে আর. ডি. আর. এস. বাংলাদেশ- এদেশে কী কী কার্যক্রম পরিচালনা করে তার উল্লেখ রয়েছে। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি এই-

১. আদিবাসীদের উন্নয়ন ও ক্ষমতায়ন।

২. পরিবার পরিকল্পনা।

৩. নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা ও নারীর ক্ষমতায়ন।

৪. ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে দরিদ্রের জীবনমান উন্নয়ন।

এ শিরোনামগুলো দেখে একজন সাধারণ মানুষ বুঝতে পারবে না যে, দেশ ও ইসলামের বিরুদ্ধে কত বড় ষড়যন্ত্র লিপ্ত তারা। আদিবাসীদের উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের নামে তাদের ব্যাপকহারে খ্রিস্টান বানানো হচ্ছে। ২০৫০ সালের মধ্যে এদেশকে খ্রিস্টান রাজ্যে পরিণত করার যে ঘোষণা ছিল মাদার তেরেসার- তা বাস্তবায়নের দিকে এরা অগ্রসর হচ্ছে। আর পরিবার পরিকল্পনা ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা কথা দুটির বাস্তব উদ্দেশ্য কী, তা প্রায় সকলেরই জানা। আর ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে কত দরিদ্র যে নিস্ব হয়েছে, ভিটে-মাটি ছাড়া হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। আর এরা চক্রবৃদ্ধিহারে সুদ নিয়ে কয়েক শত পার্সেন্ট পর্যন্ত সুদ নিচ্ছে। যে সুদ আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরুদ্ধে স্পষ্ট বিদ্রোহ।

এরপর আমরা আর ডি. আর. এস.-এর নিজস্ব ওয়েবসাইট দেখলাম :তাদের অর্থায়ন কারা করে। সেখানে দেওয়া আছে বিভিন্ন চার্চের নাম। জেনেভা, নরওয়ে, ডেনমার্ক, জাপান এ সমস্ত দেশের বিভিন্ন চার্চ থেকে অর্থ আসে আর. ডি. আর. এসে।

আর সেভ দ্যা চিলড্রেনও একটি অতি পরিচিত খ্রিস্টান এনজিও, যারা ইসলাম বিরোধী নানা কর্ম-কাণ্ডের সাথে জড়িত। গত এপ্রিল ২০১৪ মাসিক পাথেয় পত্রিকায় ‘ধেয়ে আসছে সমকামিতার ছোবল’ শিরোনামে একটি লেখা ছাপা হয়েছে। পত্রিকাটির তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে সমকামিতা প্রসারের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকা এসেছে। যাদের মাধ্যমে নোংরা এ কাজটি এদেশে বিস্তার ঘটানো হবে, তাদের অন্যতম হল, সেভ দ্যা চিলড্রেন।

নোয়াখালীতে ‘মাদরাসা প্রকল্প’ নামে ট্রেনিং হচ্ছে। ব্যবস্থাপনা সংস্থা হল, সেভ দ্যা চিলড্রেন ও আরো দুটি সংস্থা। যাতে সরকারী মাদরাসার ছেলে-মেয়েরা অংশগ্রহণ করে। এ ট্রেনিং করেছে এমন এক ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করে বিভিন্ন তথ্য জানা গেল। সংক্ষেপে উল্লেখ করছি-

১. ট্রেনিংটি মাদরাসার ১৩-১৯ বছরের ছেলে-মেয়েদের নিয়ে করা হয়। ২. পর্দা ছাড়া ছেলে-মেয়েদের পাশপাশি বসানো হয়। ৩. সেখানে এইড্স সচেতনতা বা এইড্স প্রতিরোধের পদ্ধতি শিখানো হয়। এক্ষেত্রে যৌন বিষয়ক আলোচনাগুলো খুব খোলামেলা করা হয়। এদেশের মানুষ যৌন আলোচনাগুলো খোলামেলা করতে লজ্জাবোধ করে। এজন্য তারা কুরআনের কিছু আয়াতের অপব্যাখ্যা করে একথা বুঝানোর চেষ্টা করে যে, কুরআন যৌন আলোচনা প্রকাশ করেছে (নাউযুবিল্লাহ) তো আমরা এতে লজ্জাবোধ করব কেন? এবং কুরআনের আয়াতের অপব্যাখ্যাগুলো বই আকারে সকল শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়। ৪. প্রজেক্টরের মাধ্যমে যৌন কর্মের চিত্র দেখিয়ে এইড্স সচেতনতা শেখানো হয় ইত্যাদি।

যাক পূর্বের প্রসঙ্গে ফিরে আসা যাক। এতটা প্রকাশ্যে ইসলাম-বিরোধী কর্মকাণ্ডে যারা জড়িত,তারা মাদরাসায় বই দিচ্ছে, এতে আমরা খুবই আশ্চর্য হই। এরপর বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে জানা গেল, তারা ঐ চার জেলার অনেক মাদরাসা-মক্তবে কাজ করছে। কাজের পদ্ধতি হল,প্রত্যেক মাদরাসার মক্তবের দুই শিক্ষককে তারা একটি ট্রেনিং দিয়ে থাকে। এ শিক্ষানুযায়ী তারা মক্তবের বাচ্চাদের শিখাবে এবং তাদের বেতনেরও কিছু অংশ (১৫০০) এ সংস্থা দুটি থেকে আসবে। এক্ষেত্রে তারা দু’ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে।

এক. যে মাদরাসাগুলো অংশগ্রহণ করবে সে মাদরাসার পরিচালকদের নিয়ে একটি প্রশিক্ষণ।

দুই. যারা বাচ্চাদের প্রশিক্ষণ দিবে তাদের নিয়ে একটি প্রশিক্ষণ।

প্রথমোক্ত প্রশিক্ষণের শিরোনাম ছিল ‘প্রতিভা সি এস। প্রশিক্ষণে ঐ চার জেলার মোট ৩১টি মাদরাসার মুহতামীম এবং সেভ দ্যা চিলড্রেন ও আর. ডি. আর, এস-এর সাতজন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি উপস্থিত ছিল। দ্বিতীয় প্রশিক্ষণের লিস্টে লেখা আছে ‘প্রাক প্রাথমিক বিষয়ে শিক্ষকদের মৌলিক প্রশিক্ষণ। মেয়াদকাল ০৮/১২/২০১৩ ঈ.। এতে মোট ৪২ জন শিক্ষকের নাম রয়েছে।

তাদের কারিকুলামের কিছু দেখা হল। তাতে এমন সব বিষয় রয়েছে, যার দ্বারা যে কেউ তাদের উদ্দেশ্য বুঝতে পারবেন। কিছু বইয়ের উপর লেখা ‘কুরআনের গল্প’, কিছু বইয়ের উপরে লেখা‘হাদীসের গল্প’। অথচ বইয়ের ভেতরে ঈমান-আকীদা ও দ্বীনী রুচি বিধ্বংসী তথ্য। যেমন, একটি বইয়ের নাম ‘মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও অন্ধ লোকটি’। এর নীচে লেখা, ‘কুরআনের গল্প’।

এর ১৫নং পৃষ্ঠায় লেখা, ‘কিন্তু অন্ধ লোকটির সাথে বিরূপ আচরণ করায় আল্লাহ নবীজীর উপর খুশী হতে পারলেন না। (নাউযুবিল্লাহ)

‘মাছের গল্প’ নামক বইয়ের শেষ পৃষ্ঠায় লেখা, প্রথমে ইউনুস নবী যে ভুলটি করেছিলেন,...’।‘হাদীসের গল্প’ নামক বইয়ে মূসা আ. ও খাযির-এর ঘটনার পূর্বের ঘটনা, যেখানে মূসা আ. তাঁর শিষ্যদের পক্ষ থেকে বর্তমান পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় জ্ঞানী কে- এ বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হয়েছিলেন এবং তিনি নিজের দিকে ইঙ্গিত করেছিলেন। ঐ ঘটনা লিখতে গিয়ে লেখা হয়েছে, ‘মূসার মনে যে এজন্য কিছু অহংকার ছিল না, একথা বলতে পারা যায় না। এই অহমিকার জন্যই একদিন তাকে যথেষ্ট লজ্জা পেতে হয়েছিল... তিনি বিনয় প্রকাশের জন্য উক্তিটির প্রতিবাদ করতে পারতেন। কিন্তু তা তো তিনি করলেনই না, অধিকন্তু সায় দিলেন বলে মনে হল। -পৃষ্ঠা ৩১

এক্ষেত্রে লক্ষণীয় বিষয় হল, নবীদের ভুল প্রমাণের জন্য তাদের চেষ্টার শেষ নেই। নবীদের নামের পর সা. লেখার মত জায়গা তাদের অন্তরে নেই। যেমন আরো কয়েক জায়গায় আছে ‘মহান নবী’বইয়ে লেখা, যুবক নবী হযরত দাউদ (পৃষ্ঠা-৬)

‘নূহের নৌকা’ বইয়ে আছে, ‘সে সময় নূহ নামে একজন ধার্মিক লোক ছিলেন’ (পৃষ্ঠা ২)

এখানে নবীকে ধার্মিক বলার কারণ হল, বাইবেলের বর্ণনা অনুযায়ী অনেক নবী বিধর্মী ছিলেন,কোনো নবী মূর্তিপূজারী ছিলেন। নাউযুবিল্লাহ

অথচ কুরআন আমাদের শিক্ষা দেয়, সকল নবী মাসূম। কুরআনের এ শিক্ষা রেখে মাদরাসার শিশুদেরকে নবীদের বিষয়ে ভুল শিক্ষা দেওয়ার এ চেষ্টা কেন? এর নামই কি ‘মাদরাসায় প্রতিভা প্রকল্প’?!

এ যে কুরআন-হাদীসের নামে বাইবেলের বিকৃত শিক্ষা বিস্তারের প্রয়াস- তা তো আর বলে দিতে হবে না। এটি আরো স্পষ্ট হয় আরেকটি বইয়ের টিকা থেকে। মূল বইয়ে কথাটি নেই, টিকায় তা জুড়ে দেওয়া হয়েছে। বইটির নাম ‘এক অলৌকিক ঘটনা’ নীচে লেখা, ‘কুরআনের গল্প’ ৩নং পৃষ্ঠার টিকায় লেখা, ‘ঈসা আ.-কে খ্রিস্টানরা যীশু নামে ডাকে। যীশুকে তারা মনে করে ঈশ্বরের পুত্র।’

এক্ষেত্রে প্রথম কথা হল, ঈসা আ.-কে খ্রিস্টানরা কী বলে, কোমলমতি শিশুদের জন্য তা এখানে উল্লেখের প্রয়োজন কী?

দ্বিতীয় কথা হল, বইয়ের উপরে লেখা ‘কুরআনের গল্প’ কুরআন তো এমন কথা বলেনি; বরং সূরা তওবার ৩০নং আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, (তরজমা) “খ্রিস্টানরা বলে মসীহ আল্লাহর ছেলে। এটা তাদের মুখের কথা। আগে যারা কুফরী করেছিল এরা তাদের মত কথা বলে। আল্লাহর ওদের ধ্বংস করুন”। (সূরা তাওবা (৯) : ৩০) যারা মসীহ ইবনে মারইয়ামকে আল্লাহর ছেলে বলে,উপরিউক্ত আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাদেরকে কাফের আখ্যায়িত করেছেন। এটা ছিল এ কথার বিরুদ্ধে কুরআনের প্রতিবাদ। কিন্তু এ বইয়ে প্রতিবাদকে সমর্থনের ভাষায় উল্লেখ করা হয়েছে।

তৃতীয় কথা হল, ঈসা আ.-কে ‘যীশু’ নামে আখ্যায়িত করা হচ্ছে খ্রিস্টানদের পরিভাষা। তাদের‘রমযান ও কুরআন’ নামক বইয়ে কয়েকজন নবীর নামের পর ব্রাকেটে খ্রিস্টানদের পরিভাষা দেওয়া আছে। যেমন, নূহ আ. (নোয়াহ), ইব্রাহিম আ. (আব্রাহাম), ইউনুস আ. (যোসেফ), মুসা আ. (মুসেস)। নবীগণের এসমস্ত বিকৃত নাম মুসলিম শিশুদের শিক্ষা দেওয়ার কী উদ্দেশ্য? নামের এ পরিবর্তন ভাষার কারণে নয়, ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃতি করা হয়েছে। শিশুরা এ নামগুলো এখন শিখে গেলে নামগুলো তাদের নিকট পরিচিত হয়ে যাবে এবং এ সম্পর্কে তাদের সহনশীল মনোভাব তৈরি হবে। এটাই তাদের মূল উদ্দেশ্য।

বইগুলোতে আরো অনেক সমস্যা আছে, সব উল্লেখ করতে গেলে লেখা দীর্ঘ হবে। তবে এটুকু তথ্যও সচেতন পাঠকের উপলব্ধি ও অনুসন্ধিৎসার জন্য যথেষ্ট।

বাংলাদেশের এক দুটি অঞ্চলের সামান্য কিছু চিত্র ও অভিজ্ঞতা পাঠকের খেদমতে নিবেদন করলাম। এ পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য শুধু আলিমদের তৎপরতা যথেষ্ট নয়। এ দেশের ঈমানদার দেশপ্রেমিক প্রত্যেকটি নাগরিকের এখনই অবস্থার ভয়াবহতা উপলব্ধি করা প্রয়োজন। আল্লাহ আমাদের উপর রহম করুন, এ দেশকে সকল প্রকার ষড়যন্ত্র থেকে হেফাযত করুন। আমীন!

সৌজন্যেঃ

লেখকঃ আবু মুহাম্মাদ

মাসিক আল কাউসার

null

বিষয়: বিবিধ

৯৯৬ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File