ময়মনসিংহে বকফুল
লিখেছেন লিখেছেন মনোনেশ দাস ১১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ০৯:৪০:৪২ সকাল
ময়মনসিংহে এক যুুগ আগেও গৃহস্থের বাড়ির আঙিনায় দেখা মিলতো বকফুল গাছের । ভোজন রসিক বাঙালির প্রতিটি ঘরে বিভিন্ন খাদ্য উপকরণের মাঝে খাবারে বিশেষ মাত্রা যোগ করতো বকফুলের বড়া বা ভাজা বকফুল । ফুল গোষ্ঠীর এই ফুল খাবারের উপকরণ ছাড়া কোলাচার বা পূজায় ব্যবহারের নজির নেই। ঘর সাজাতে কিংবা নারীদের খোঁপায় ফুলের ব্যবহার দেখা গেলেও বকফুল সেখানে অনুপস্থিত। এ ফুলের কদর খাবারের উপকরণ বড়াতেই।
ময়মনসিংহ অঞ্চলে প্রতিবাড়িতেই বক ফুলের বড়া একটি প্রচলিত খাবার। চালের গুড়ার পেষ্টকে পানি মিশিয়ে পাতলা করে এতে হলুদ ও লবন মিশিয়ে বকফুল চুবিয়ে বড়া করে তৈরী করা হয়। আকৃতিতে বকফুল গাছ বড় হয়।শিতে ফুল দেয় । অতিবৃষ্টিতে এই গাছ মারে যায়।
এক সময় ময়মনসিংহ অঞ্চলে এ ফুল বিক্রি হতো না । সংগ্রহকারীরা 'কুডা' (বড় লঅঠি)দিয়ে পেড়ে এফুল কুড়িয়ে সংগ্রহ করতেন। এখন মাঝে মধ্যে এফুল বাজারে দেখা মিলে ।ভালো দামেও তা বিক্রি হয়।
জানা যায়, বক ফুল শিম ও মটর গোত্রীয় গাছ। কিন্তু গাছ দেখতে মোটেই শিম বা মটরের মত নয়। ফুলের গড়নের কিছুটা মিল থাকলেও পাতা ও গাছের সাথে কোন মিল নেই। তবে ধৈঞ্চা গাছের সাথে কিছুটা মিল আছে। বক ফুল গাছ ধৈঞ্চা গাছের চেয়ে বড় ও মজবুত।
অঞ্চল ভেদে এ গাছের অনেক নাম আছে । তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য বক, বকে, বগ, বকফুল, বগফুল, অগন্তা, অগাতি ইত্যাদি। তবে এ গাছটি বকফুল নামেই বেশী পরিচিত। দক্ষিণ পুর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশে বকফুল গাছ জন্মে, বিশেষ করে বাংলাদেশে।
বকফুলের উদ্ভিদ তাত্ত্বিক নাম শেষবানিয়া গ্রেন্ডিফ্লোরা ।ফুলের রং বকের মত সাদা বলেই হয়ত এর নামকরণ করা হয়েছে বকফুল। এদেশে তিন রংয়ের বকফুল দেখা যায় - সাদা, লাল, গোলাপী। লাল রংয়ের বকফুলের জাত এসেছে থাইল্যান্ড থেকে। এজন্য একে থাই বকফুল বলা হয়। বিভিন্ন দেশে বকফুল সব্জি হিসেবে খাওয়া হয়। সাধারণত না ফোটা ফুল সব্জি হিসেবে খাওয়া হয়। বাংলাদেশে বহুকাল থেকে বকফুল ভেজে খাওয়ার প্রচলন আছে। বকপাখির মত আকৃতি হওয়ায় হয়তো এর নামকরণ করা হয়েছে বকফুল ।
অনেক গুলো ফুল সব্জির মত তেল, মরিচ, ও হলুদ ইত্যাদি দিয়ে রেঁধেও খাওয়া যায়। বকফুল গাছের প্রতিটি অংশই ভেষজ চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। জ্বর, ফোলা ও ব্যাথা বেদনা সারাতে এ গাছের মুল ব্যবহার করা হয়। বাতের ব্যথায় এ গাছের শিকড় চুর্ন জলের সাথে গুলে ব্যাথার জায়গায় ঘষলে বা লাগালে বা প্রলেপ দিলে উপকার পাওয়া যায়। এ গাছের বাকল বসন্ত রোগের চিকিৎসায় কাজে লাগে। চুলকানি ও পাঁচড়া সারাতে বাকল চুর্ণ ব্যবহার করা যায়। কৃমি ও জ্বর সাড়াতে এ গাছের পাতার রস খেলে উপকার পাওয়া যায় বলে কবিরাজদের দাবি।
বাঙালির পরম্পরার খাবারের উপকরণ এই বকফুল আর আগের মত দেখা না মিললেও কদর কমেনি মোটেও।
বিষয়: Contest_priyo
৮৯৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন