বৃত্তি পরীক্ষা

লিখেছেন লিখেছেন আরাফাত আমিন ২৬ এপ্রিল, ২০১৭, ১০:২১:৫৭ রাত

'আমাদের নবীন তো রাত তিনটা পর্যন্ত পড়ে,আপনাদের বাবু কয়টা পর্যন্ত পড়ে?'

পড়ার ঘর থেকে স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি পাশের বাড়ির চাচীর কন্ঠ।আম্মুর সাথে কথা বলছেন।নবীন আমার ক্লাসমেট বন্ধু।ওর রোল ১০ আর আমার ১। এই মুহুর্ত্বে ওর মায়ের চাপাবাজি শুনে মেজাজ খারাপ হতে শুরু করল।বুঝতে পারছি ঠেলাটা এরপর এদিকেই আসছে।

'শুনছিস,নবীনের আম্মু কি বলে গেল? অইছেলে ঠিকই টেলেন্টপুলে বৃত্তি পাবে দেখিস।আমি বললাম তুই লিখে রাখ।আর রাত দশটা না বাজতেই ঘুমায় পড়স।রসগোল্লা আর গোলআলু দিয়ে পড়াচোর পালছি আমি একটা! ফাঁকিবাজ গাধা একটা।'

রসগোল্লা আর গোলালু দুটোই আমার খুব পছন্দের।তাই বলে আম্মু এইগুলো নিয়ে খোটা দিবে!বিষয়টা মেনে নেবার মত না!মেজাজ খুব খারাপ হয়ে আছে।অই শালা নবীনের বাচ্চারে কে বলছে তিনটা পর্যন্ত পড়তে!আর পড়বিই যদি তা আবার মহল্লাশুদ্ধ ঢোল পিটানোর কি আছে? ওর মাকে তো আর কিছু বলা যাবেনা শিক্ষাটা বদমাশটাকেই দিতে হবে!ভাবতে ভাবতে ঘুমায় পড়লাম।

সকালে স্কুলে গিয়েই রতনের বড় ভাই পিন্টুদাকে ঠিক করলাম।পিন্টুদা ক্লাস সেভেনে পড়েন।রোজ বিকেলে কু:ফু কারাতের ক্লাসে যান।তাকে শর্তসাপেক্ষে রাজি করানো হল।একটা টুনটুনি বাচ্চা সহ ধরে দিতে হবে, বিনিময়ে তিনি আমার হয়ে নবীনকে পিটিয়ে দিবেন!

রাতে বাসায় দাদুভাই আর মা আচ্ছামত পেটাল আমায়।একটা বিছানা ঝাড়ু,গুটিকয়েক প্ল্যাস্টিকের হেংগার আর পানির খালি বোতল ভাংগলেন আমার পিঠে!আমি নাকি বেশ বাড় বেড়েছি! পরের ছেলেকে পেটাতে ভাড়াটে নিয়োগ দিয়েছি!মার খাওয়ার পর যন্ত্রনায় কাতর নবীন আবার এসেছিল চাচীকে সাথে নিয়ে।আম্মুর কাছে বিচার দিয়ে গিয়েছে!আমাকে শেষবারের মত ওয়ার্নিং দেয়া হল বাসা থেকে।

না,এই নবীনকে শিক্ষা না দেয়া পর্যন্ত আমার শান্তি আসছেনা।ভিন্ন পরিকল্পনা আঁটলাম এবার।আমাদের স্কুলের পিছনেই একটা বদ্ধ পুরোনো ডোবা আছে।সবাই গু'য়ের ডোবা বলেই জানে এটাকে।নবীনকে এখানেই ফেলা হবে!

কিন্তু সমস্যা বাধল ওর সাথে আমার বর্তমান সম্পর্ক।যা চরম অবনতির দিকে।ওকে সাথে নিতে হলে দোস্তি পাতানো ছাড়া বিকল্প নাই!

স্কুল ছুটির পরে কাছে ডাকলাম।আমি, রতন আর নবীন একসাথে আইসক্রিম খেলাম।মালাই আইসক্রিম। দুইটাকা করে।নবীন প্রথমে নিতে চায়নি পরে বন্ধুত্ব করলাম হ্যান্ডশেক করে।আমরা আইসক্রিম খাচ্ছি আর খেতের আইল ধরে হাটছি।বদ্ধ ডোবার কাছে আসতেই ইয়া জোড়ে এক ধাক্কা। নবীন স্কুল ব্যাগসহ একদম গু'য়ের ডোবার মধ্যিখানে! আমি আর রতন দিলাম দৌড়!

রাত তিনটা পর্যন্ত পড়া যদি হয় ভালছাত্রের লক্ষণ একটা ধাক্কা তবে কেন হবেনা টেলেন্টপুলে বৃত্তি!

.........

আরাফাত আমিন

শ্রীপুর,মাওনা ২৬/০৪/১৭

বিষয়: সাহিত্য

১০৭২ বার পঠিত, ৩ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

382812
২৭ এপ্রিল ২০১৭ দুপুর ০২:০০
হতভাগা লিখেছেন : আপনার রোল ১ ছিল আর তার ১০ । তার পরেও জেলাস ছিলেন তার প্রতি !

আপনি বরং খুশি থাকতে পারতেন বা আপনার আম্মাকে বোঝাতে পারতেন যে ওর চেয়ে কম পড়েও তো আমার রোল ১ আর ওর ১০? রাত ৩ টা পর্যন্ত পরলেই যদি ভাল হওয়া যেত তাহলে ওর রোল তো মাইনাস ৫ হবার কথা !(আপনার চেয়ে ৫ ঘন্টা বেশী পড়ে বলে)

২৯ এপ্রিল ২০১৭ সকাল ০৭:৫২
316290
আরাফাত আমিন লিখেছেন : বিষয়টা যতটা না ছিল জেলাসি তারচেয়ে বেশি ছিল প্রতিশোধস্পৃহা! মাকে দিয়ে কথা শুনানোর প্রতিশোধস্পৃহা থেকে পুরো ঘটনা। Happy ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
২৯ এপ্রিল ২০১৭ সকাল ১০:০১
316291
হতভাগা লিখেছেন : আমাদের পাড়াতেও ছোট বেলায় একটা পরিবার ছিল, তারা ৭/৮ জন ভাইবোন ছিল । অনেক রাত পর্যন্ত তারা পড়াশুনা করতো - এটা পাড়ায় খুব প্রভাব ফেলতো অন্য পোলাপানদের উপর।

আপনার বন্ধুর তো রোল ১০ , এদের পাশ করতেই ঠেলা বের হয়ে যেত এত রাত পর্যন্ত পড়েও । এটাও পড়শিরা জান তো ।

খুব বেশী রাত করে পড়াই যে ভাল ছাত্রের লক্ষণ সেটা আমার মনে হয় না । পড়ার জন্য দরকার মনোযোগ । মনোযোগ দিয়ে দৈনিক ৩/৪ ঘন্টা পড়লে পড়া খুব একটা বেশী থাকে না ।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File