বৃক্ষ তোমার নাম কি?

লিখেছেন লিখেছেন আরাফাত আমিন ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ০৩:৫২:৫৬ দুপুর

খাটের নীচে লুকিয়ে আছেন কবির সাহেব।

স্ত্রী খাটে বসে কাদছেন।মরা কান্না।এই একটা বিষয়ে কবির সাহেবের মনে কোন দ্বন্দ্ব নেই।বউর কান্নাকাটি আর অভিনয় দক্ষতা বেশ প্রশংসনীয়।কান্নার কারণ আপাত পরিস্কার না।আচলে মুখ ঢেকে সুরে সুরে বিলাপ করছেন সখিনা বিবি।ছেলেরা বাড়িতেই আছে।বাইরে খেলাধুলা করছে বন্ধু-বান্ধবের সাথে।মায়ের কান্নার আওয়াজ পেয়ে ঘরে ঢুকল বড় ছেলে-

-মা,কাদছো কেন?

:আর বলিস না বাবা,তোর বাপে আমারে মারছে!

-বলো কি!আব্বা মারছে!থাক মা কাইন্দোনা। তোমার স্বামী তোমারে মারছে এটা সবাইরে কাইন্দা শুনানোর কিচ্ছু নাই।চুপ করো মা।

বড় ছেলে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল।বেশ বাস্তববাদী ও আত্নসম্মানবোধে বলিয়ান ছেলে।

-মা,কি হয়েছে?

:তোর আব্বা আমারে মারছে।বিলাপ করে কাদছেন সখিনা বিবি মেঝ ছেলেকে শুনিয়ে।

-ও,আব্বা মারছে! তো এতে কান্দনের কি হইল!নিশ্চয়ই তুমি কিছু করছো,আব্বা তো খালি খালি মারার কথা না!

মেঝ ছেলে বেশ লজিকাল।মাকে লজিকে সান্তনা দিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল!

খানিকবাদে ছোট ছেলে ঘরে ঢুকে দেখে মা কাদছে-

-মা কি হইছে?কান্দোস কেন?

:তোর আব্বায় মারছে!

-হালারপুতে গেছে কই? কই গিয়া পলাইছে?

২.

কবির সাহেবের হিসেব মিলছেনা,কিছুতেই!

তার এক বউ তিন ছেলে।এটা সমস্যা না।সমস্যা হল তিনছেলে প্রত্যেকে আলাদা বৈশিষ্ট্যের।একই মাতার গর্ভে জন্ম নেয়া এরা প্রত্যেকে একেক রকম কেমন করে হল! পিতা যে তিনি একাই এই বিষয়টা তিনি নিশ্চিত হয়েছেন বউর কাছ থেকে!

বেশ কিছুদিন ধরে তিনি কাজে অমনোযোগী। একদিন আমতা আমতা করে আমার কাছে আসলেন।ফ্যাকাসে মুখ।আরে কবির সাহেব যে! নিন বসুন।নতুন কোন সমস্যা?কি নিয়ে এত ভাবছেন?

আমিন সাহেব,আপনি তো একজন বাস্তববাদী মানুষ।আমার এই সমস্যার একটা ব্যাখ্যা দিন।আপনার কথামত কাল রাতে ছেলেদের টেস্ট করেছি।ওদের মা কাদছিল আর আমি তখন খাটের নীচে লুকিয়ে ছিলাম।

বিষয়টার কি ব্যাখ্যা হতে পারে আপনার কাছে?

সব শুনলাম মন দিয়ে।নিজের সন্তানদের নিয়ে তিনি বেজায় নাখোশ। সব খুলে বললেন।ঘটনার বিত্তান্ত বড়ই চমকপ্রদ ছিল। সিদ্ধান্তে আসতে আরো ভাবা দরকার।ঠিক আছে আপনি যান,আমি আরেকটু ভাবি।

মানুষের সমস্যা সমাধান অনেকটা লবনের মত।পরিমিত পরিমানে প্রশান্তি,আধিক্যে অশান্তি।একটা সমস্যা সমাধান করবেন আরেকটা নিয়ে হাজির হবে।সমস্যার এই লবন ফর্মুলা এসময়ের ভারতীয় টিভি সিরিয়ালগুলোয় বেশ কার্যকর।সারাক্ষন এতে কিছু বেকার পুরুষ আর মহিলা ড্রয়িংরুমে দাঁড়িয়ে লবন মাখাবে।এতে সমস্যা শুধু বাড়তেই থাকবে। চুইংগামের মত।লবনাক্ত চুইংগাম।অবাক করা বিষয় হল সমাধান হঠাত করেই চোখের পলকে হয়ে যায়।

৩.

বৃহস্পতিবারে এলেই হয় গানের নয়তো ওয়াজ মাহফিলের আসর বসে।গাজীপুরে এই অদ্ভুত ঘটনাটা প্রায়ই ঘটে!শীতের এই সময়টা ওয়াজ মাহফিলের মৌসুম।ধানের খড়ের উপর বসে চাদর মুড়ি দিয়ে ওয়াজ শুনে মানুষজন।যারা একটু শীতে কাতর ঘরে শুয়ে লেপ মুড়ি দিয়েই শুনে নেয়।আজো ওয়াজ হচ্ছে।ওয়াজের বিষয় বড়ই চমৎকার।মৌলানা সাহেব বলছেন,ডাক্তারের ছেলে ডাক্তার কিংবা হাজীর ছেলে হাজী হতেও পারে আবার নাও হতে পারে!মানুষের পরিচয় তার কর্মে-আমলে, নামে বা পিতৃপরিচয়ে নহে!

রাতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি মনে নেই।কবির সাহেব আজ অফিসে আসেননি।খোজ নেয়া দরকার।রাতের মৌলানা সাহেবের পরিচয় বের করতে হবে।দেখা করে কিছু বিষয় পরিস্কার হতে পারলে ভাল হত।

৪.

কবির সাহেব কে টি-কর্নারে ডেকে নিলাম।একটাভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।

বিষয়টা আসলে তেমন কিছুনা।আপনার প্রথম সন্তানের জন্মের সময় ওদের মা ছিল আপনার বাড়ির নতুন বউ?

-হ্যা,ঠিক তাই।

আপনার বউ তখন নতুন পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছিল।তারমধ্যে সবার সাথে মানিয়ে চলার একটা অভ্যাস গড়ে উঠছিল।লাজুকতা,নতুন পরিবেশ সবকিছু মিলিয়ে তিনি তখন বেশ শান্ত,শিষ্ট ও ধীরস্বভাব ছিলেন।যা আপনার বড় সন্তান পেয়েছে!

দ্বিতীয় সন্তানের জন্মের সময়টায় আপনার স্ত্রী আপনাদের বাড়িতেই ছিল?

-হ্যা,আমাদের বাড়িতেই ছিল।

কিছুটা মিশে গিয়েছে সবার সাথে।এ বাড়িতে নিজের একটা অবস্থান তিনি বুঝে নিয়েছেন ততদিনে।সবার সাথে মেপে কথা বলেন।মানুষগুলোর সাথে মিশে যুক্তি দিয়ে নিজের অধিকার ও অবস্থান মজবুত করছেন।আপনার মেঝ ছেলেটা সেই গুনাবলী পেয়েছে!

-আর ছোট ছেলেটা কেন এমন হল?

:কেন আবার,সে যখন পেটে ততদিনে আপনার স্ত্রী এই বাড়ির কর্তৃত্ব নিয়ে নিয়েছে।তাকে আর পায় কে! না শ্বশুর-শ্বাশুড়ি না স্বামী-ননদ-ভাসুর! তিনি তো তখন বাড়ির প্রধানমন্ত্রীত্ব নিয়ে নিয়েছেন!

শুনুন,জন্মসূত্রে সন্তান তার পিতা-মাতা থেকেই চারিত্রিক গুনাবলী পায়,এটা সায়েন্স।

কিন্তু মানুষের সেই গুণাবলী তার পারিপার্শ্বিক অবস্থা দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।পরিবার,সমাজ,পরিবেশ,রাষ্ট্র এসব কিছুই মানুষের চরিত্র গঠনে নিয়ামক।বুজা গেল বিষয়টা? Happy

অফিস আজকের মত ছুটি।মাওলানা সাহেবের খোজে বেড়িয়ে পড়া দরকার।কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে।

.....................................

আরাফাত আমিন

টংগী,০৬/০২/২০১৭

বিষয়: সাহিত্য

১২৯৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File