সেদিন ঝড়ের রাতে

লিখেছেন লিখেছেন আরাফাত আমিন ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ০৯:০৪:০৫ রাত

স্যার,একটা সুইসাইড কেস এসেছে।

আপনার একটু আসা দরকার। ডিউটি ডাক্তার নেই।থানা থেকে ওসি সাব এসেছেন।আপনি কি আসবেন স্যার?

রাত এখন ২ টা।কাজ হিসেবে সময়টা ঘুমের।ভাল ঘুমের জন্য মন প্রফুল্ল থাকা আবশ্যক।চেষ্টা হিসেবে ভাল কৌতুকের বই পড়া যেতে পারে।আমার হাতে সেরকম কোন বই নেই।এই মুহুর্ত্বে যে বইটা হাতে তাতে কৌতুক বলে কিছুনেই। আন্টনি মাসকারেনহাসের 'এ রেপ অব বাংলাদেশ' বইটাতে রেপের কোন ঘটনাই পাচ্ছিনা!বড়ই আজিব কিসিমের বই! দেশ যখন ধর্ষিত হয় লেখক তখনকার ঘটনা বর্ণনা করছেন।বেশ সাবলীল বর্ণনা।দেশের ধর্ষকেরা অতি উচ্চপর্যায়ে!

এত রাতে জরুরি বিভাগে রোগী আসা মানে সিরিয়াস কেস।দেরি করা যায় না।হাসপাতালের কোয়ার্টারে থাকা আবাসিক ডাক্তারদের নিস্তার নেই। বইটা পড়ে ঘুম আসছিলনা। এটেন্ডেন্টের ফোনের পর এখন বেশ ঘুম পাচ্ছে।ব্রেনের একটা অংশ বেশ উত্তেজিত।রোগী বাচবে নাকি মরবে তারচেয়েও বড় কথা পোস্ট মর্টেম করার জন্য হলেও হাসপাতালে যাওয়া লাগবে।আপাতত ঘুম বন্ধ।ওসি সাবকে বেশিক্ষণ দাড় করিয়ে রাখা উচিত হবেনা।

হাসপাতালের বাইরে বেশ গন্ডগোল।পরিবেশ ভারী।গুড়িগুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে।জরুরী বিভাগের বাইরে রোগীর আত্মীয় স্বজনের বেশ জটলা।সবার চোখে-মুখে ক্ষোভ আর উত্তেজনা লক্ষ্য করলাম।

লাশ মর্গে পাঠানোর কথা বলে বেড়িয়ে আসলাম।আত্মীয়স্বজনের ক্ষোভ এতক্ষনে বেশ বেড়ে গেছে।অতি উৎসাহি দুয়েকজন যুবক হাসপাতাল চত্ত্বরেই দোষীর ফাসি চেয়ে বিক্ষোভ শুরু করে দিয়েছেন।টায়ার পুড়ছে।

আমি রুমীর চেহারায় দ্বিতীয়বার তাকাতে পারিনি।বিষে মুখটা নীলবর্ণ ধারণ করেছে।লক্ষ্য করলাম আমি কাঁপছি। স্থির হতে হবে।চোখের কোনে জমা জল আড়াল করতে হবে।ডাক্তারদের চোখে জল আসতে নেই।রোগীর মনোবল দুর্বল হয়ে পড়ে।

রাত সাড়ে তিনটা।

ওসি সাহেব বসে আছেন আমার সামনে।কেস স্টাডি লিখতে হবে।লাশের পোস্টমর্টেমে আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে।সুইসাইড নাকি হত্যা? বিষয়টা আইনি,ওসি সাহেবের এই প্রশ্নে তাই মাথা কাজ করতে চাচ্ছেনা।রোগীর অভিভাবক জানালেন স্বামীর সাথে বনিবনা হচ্ছিল না।

জেলা সদরের এই হাসপাতালে রুমি এর আগেও এসেছে বেশ কবার।শেষবার এসে পুকুরঘাটে বসেছিল।বেশ উদাসীভাবে বলছিল,'তুমি কি ডাক্তার হলে আমার চিকিৎসা করবেনা?’

রুমির সাথে আমার পরিচয়টা আকষ্মিক ছিল।মেডিকেল কলেজ ছুটির সময় বাড়িতে যাবার বাসে পরিচয়।তারপর একসাথে দুজনার অনেক স্বপ্ন বোনা।সব স্বপ্ন ভেংগেছিল রুমির হঠাত বিয়েতে।

আজ আবার রুমি ফিরে এসেছে।জীবন মানুষকে নিয়ে খেলতে ভালবাসে।কখনো মানুষ খেলে কখনো জীবন খেলে।

হাসপাতালে এখন আর থাকতে মন চাচ্ছেনা।আকাশ কাল করে আসছে।বৃষ্টিভেজা জোছনা অস্তচাদে।ঘরে ফিরতেও মন সায় দিচ্ছেনা।পথে হাটতে পারলে ভাল লাগত।বৃষ্টিভেজা রাতে এই পথে রুমিকে নিয়ে হাটার স্বপ্ন ছিল।কিছু স্বপ্ন মানুষ তৈরি করে,এতে আনন্দ পায়।সে আনন্দ নেয়া দরকার।তাছাড়া বৃষ্টির জল চোখের জল আড়াল করতে বেশ কার্যকর।হাটতে হবে আজ।

রুমিকে নিয়ে পুকুরঘাটে হাটছি -গন্তব্যহীন হাটা।

ভরা চাঁদে ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে।

'ধীরে ধীরে ভেসে যায় চোখে শেষ প্রিয়মুখ

তবু যদি থেমে যায় সব কল্পনা

ছুঁয়ে দেখা স্মৃতি আর ছুঁয়ে দেখা আঁধার

ভেবে নেয়া শহরের ফেলে আসা পথ...

করিডর ধরে হেঁটে যায়

একা একা স্বপ্ন অচেনা

জানালার বুকে চোখ জুড়ে

সুদূরের আনন্দনগর ……

............................................

আরাফাত আমিন

টংগী,০২/২/১৭

বিষয়: সাহিত্য

১৩০৬ বার পঠিত, ৪ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

381662
০৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ রাত ০৯:২২
হতভাগা লিখেছেন : স্বামী হিসেবে রুমি হয়ত আপনাকেই চেয়েছিল। না পাওয়াতে স্বামীর সাথে তার খিটিমিটি লেগেই থাকতো । তারই কনসিকুয়েন্স হিসেবে এই হৃদয় বিদারক ঘটনা ।
৩১ মার্চ ২০১৭ রাত ১২:০২
316099
আরাফাত আমিন লিখেছেন : হয়ত! হতেও পারে!
381676
০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ রাত ১০:০৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : ভাল লাগল লিখাটি।
৩১ মার্চ ২০১৭ রাত ১২:০২
316098
আরাফাত আমিন লিখেছেন : ধন্যবাদ

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File