আইন রস আর রসের আইন
লিখেছেন লিখেছেন আরাফাত আমিন ২৮ নভেম্বর, ২০১৬, ০২:০০:২৪ দুপুর
আপনি যদি ইতালির মিলান শহরে থাকেন তবে বিপদে আছেন!কারণ এখানে গোমড়ামুখো থাকা যাবে না। শহরের বাসিন্দাদের সবসময় হাসিমুখে থাকতে হবে।কেবল অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া আর হাসপাতালে রোগী দেখার সময় ছাড় রয়েছে। অন্যসময় গোমড়ামুখে থাকলে আপনাকে রীতিমতো জরিমানা গুনতে হবে!
বায়ু ছাড়ার জন্যও আইন মানতে হবে আপনাকে। আপনি যদি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার বাসিন্দা হন আর কি! হয়তো রাস্তায় আছেন,পেটে প্রচণ্ড বাতাসের চাপ। বায়ু ছাড়তে হবে। ঠিক আছে ছাড়ুন তবে তার আগে ঘড়িটা দেখে নিন। কেননা বিকেল ৫টা ৫৯ মিনিটের মধ্যে এ কর্মটি করা যাবে! নইলে খবর আছে আপনার! এই শহরে ৬টা থেকে পাবলিক প্লেসে বায়ু ত্যাগ করা অপরাধ।
শুধু ফ্লোরিডায়ই নয়,যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অংগরাজ্যে আরো কয়েকটা মজার আইন আছে।ওকলাহোমা অঙ্গরাজ্যে সন্ধ্যা ৭টার পর গাধাকে গোসল করানো অপরাধ।অ্যারিজোনায় কেউ সাবান চুরি করে ধরা পড়লে তাকে সেই সাবান দিয়ে গোসল করতে হয়।এবং যতক্ষণ পর্যন্ত সাবান শেষ না হচ্ছে ততোক্ষণ পর্যন্ত গোসল করেই যেতে হবে।আরকানসাসে মাসে একবার বউ পেটানো যাবে। কিন্তু একই মাসে দুইবার বউ পেটালে তা হবে আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ!গুয়াম অংগরাজ্যে কোন কুমারী মেয়েকে বিয়ে করা দণ্ডনীয় অপরাধ।নেভাডায় কোন স্বামী যদি তার স্ত্রীকে পেটান। তবে আইন অনুসারে তাকে বেঁধে রাখা হবে ৮ ঘণ্টা। এবং বুকে সেঁটে দেয়া হবে একটি পোস্টার যাতে লেখা থাকবে 'ওয়াইফ বিটার' অর্থাৎ 'বউ পেটানো বিশেষজ্ঞ'।
মিশিগানের ডেট্রয়েটে বাথটাবে ঘুমানো অপরাধ।আরো আছে।চোর যদি কোনো ঘরে চুরি করতে গিয়ে আঘাত পায়, তাহলে সে ওই ঘরের মালিকের বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবে।এছাড়াও আপনি বিছানায় শুয়ে ধূমপান করতে পারবেন না এখানে,শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
এইবার বুঝেন,ট্রাম্প কি আর এমনিতেই এইদেশের প্রেসিডেন্ট হইছে!
এইবার আসেন ব্রিটেনে।মারা যাওয়াও এখানে শাস্তিযোগ্য অপরাধ! মরেও আপনি শান্তি পাবেন না! এ আইনটি ২০০৭ সালে ব্রিটেনের সবচেয়ে হাস্যকর আইন হিসেবে জনমত জরিপে ১ম হয়েছিল।আপনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারেন তবে আজরাইলকে সংসদ এলাকায় আসতে নিষেধ করতে হবে। কারণ ব্রিটিশ পার্লামেন্ট এলাকায় মারা যাওয়াটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ! পার্লামেন্ট ভবনের ভিতরে মারা গেলে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করতে হবে এই যুক্তিতে ভবনের ভিতরে মৃত্যু রহিত করে প্রণীত এই আইনটি সারা বিশ্বেই সবচেয়ে হাস্যকর আইন বলে প্রচার আছে! কথা হল মারা ই যদি যান,তখন শাস্তিটা আসলে দিবে কাকে!
কানাডার সরকার দেশের জনগণকে সংস্কৃতিপ্রেমী করতে দারুণ উদগ্রীব। তাইতো দেশটির রেডিও-টিভিতে প্রচারিত প্রতি পাঁচটি গানের একটি গাওয়া তার নাগরিকদের জন্য বাধ্যতামূলক।
জাপানের সুমো কুস্তিগিরদের দেখে আপনার হয়তো মনে হবে জাপানিরা মোটু হতে পছন্দ করেন। ব্যাপারটি তা নয়, কেবল সুমো কুস্তিগির ছাড়া অন্যদের মোটা হওয়া জাপানে আইনগতভাবে নিষিদ্ধ। ২০০৯ সালে একটি আইনে জাপানি নারী ও পুরুষদের কোমরের মাপ নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। এই আইন অনুযায়ী, ৪০ বছরের উর্ধ্বে পুরুষদের কোমর ৩১ ইঞ্চির বেশি হতে পারবে না, আর নারীদের বেলায় সর্বোচ্চ ৩৫ ইঞ্চি।এছাড়া জাপানে আপনি প্রেম করার অনুকূল পরিবেশ পাবেন!এখানে আপনি যদি কোন মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব দেন তবে আইন অনুসারে মেয়েটি না করতে পারবেন না যদি এতে তার 'মত' নাও থাকে।
মনে করুন গভীর রাতে আপনার টয়লেট চেপেছে। কিচ্ছু করার নেই। ভোরের আলো ফোটা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। কারণ সুইজারল্যান্ডে রাত ১০টার পর টয়লেটে ফ্ল্যাশ করা বেআইনি। সরকার একে শব্দ দূষণ বলে গণ্য করে।
হংকংয়ে আপনার স্ত্রী পরকীয়া করলে তাকে আপনি খুন করতে পারবেন। তবে শর্ত হচ্ছে অবশ্যই স্ত্রীকে খুন করতে হবে খালি হাতে!
এবার মনে করুন আপনি বাংলাদেশি!রসিক জাতি হিসেবে আমাদেরও বিশ্বে ব্যাপক নামডাক আছে।এখানে আইনপ্রনেতারা মনে করেন আর্মি বা পুলিশ চালানোর চেয়ে বউ চালানো বেশি কঠিন!আর তাই আর্মি বা পুলিশে চাকরি পেতে ১৮ বছর হওয়া লাগলেও বিয়ে করতে আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে ২১ হওয়া অবধি! যদি এর আগে বিয়ে করেই ফেলেন তবে তার জন্য আছে 'বিশেষ প্রেক্ষাপট' নামক আইনি ফাক!সেই বিশেষ প্রক্ষাপট টা যে কি তা আবার এই আইনে সংগায়িত নয়।মানে আইনটাই আসলে একটা 'বিশেষ প্রেক্ষাপট'!
আমি আইনজ্ঞ নই।নিজ আগ্রহে জানা পুরো লেখাটা একটা থিসিস বলতে পারেন এই বিষয়ে!
শেষ কথা হল,আইন কিন্তু অন্ধ! সো বিশেষ প্রেক্ষাপটে তাকে যা বুঝাবেন সে তাই বুঝবে!
যে চোখে দেখেনা তারে এত ভয় পাওয়ার কি আছে! :p
বিষয়: বিবিধ
১০০৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন