বন্দি স্বপ্ন
লিখেছেন লিখেছেন আরাফাত আমিন ১৯ আগস্ট, ২০১৬, ১১:৪৪:২৫ সকাল
তপু গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে।
ফোনের ওপাশে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছে মিনা।এই কান্নায় কোন স্বান্ত্বনা দেয়া যায় না।ফোন রেখে দিলাম।কাদুক।বুকটা হালকা হোক।
তপু মারা গেছে আজ ১৫ দিন।মিনাকে বিয়ে করে দুইমাস আগে।মাত্র ৪৫ দিনের সংসার ওদের।
দুইমাস আগে একদিন সন্ধ্যায় অফিস থেকে বেরুনোর প্রস্তুতি নিচ্ছি।আমার নতুন ফ্লাটে সাবলেট দরকার।অফিসের কলিগদের বলা আছে।সাকিব ভাই আমার সিনিয়র কলিগ।মিনা এবং তপুকে সাথে নিয়ে এলেন।ওনার এলাকার বলে পরিচয় হল।
পরিচয় সূত্রে জানতে পারলাম দুজনেই এবার এইচ,এস,সি পরীক্ষা দিয়েছে।তিন বছরের প্রেমের পর দুইজনেই বাড়ি ছেড়েছে।রেজাল্ট দেয়নি,তাই মেট্রিকের সার্টিফিকেট দিয়েই জব করবে।অপরিণত বয়সের আবেগি সিদ্ধান্ত।গার্মেন্টসে এই পড়াশুনায় ওয়ার্কার ছাড়া জব মেলা কঠিন।যাক দুজনকে জুনিয়র কোয়ালিটি হিসেবে জব ঠিক করে দিলাম।এখন থাকবে কোথায়?
ঠিক হল,আপাতত আমার সাথেই সাবলেট থাকবে।
সেদিন রাতেই দুজন বিয়ে করল।অল্প কিছু জিনিসপত্র যা বাড়ি থেকে নিয়ে আসা,এগুলো দিয়েই সংসার শুরু হল।অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আমার পরিবারের সাথে মিশে গেল ওরা দুজন।
বেলকনিতে বসে ভাবছি।আরেকবার ফোন দেয়া দরকার।মিনার রেজাল্ট টা জানা হয়নি।
ফোন দেয়া কি ঠিক হবে?
কান্না কি থেমেছে?
মেয়েরা কান্না শুরু করলে সাধারণত থামতে চায়না!
নাকি কান্না থামিয়ে বাবা-মায়ের সাথে নতুন জীবনের
পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছে!
কিছুই জিজ্ঞেস করা হল না।
দুজনের অনেক বড় স্বপ্ন।বাস্তবতার মুখোমুখিতে স্বপ্ন ফ্যাকাসে হয়ে যায়।দুজনেই জব করলে পড়াশুনা সম্ভব হবেনা।তপু আমাকে বলল,ভাইয়া আমি জব কন্টিনিউ করব।মিনাকে পড়াব।ও ডাক্তার হবে।
একসপ্তাহ আগে একবার মিনা এসেছিল ওর মামাকে নিয়ে।কিছু জিনিসপত্র বাসায় ছিল।ঘন্টাখানেক ছিল।যাওয়ার সময় কান্নাকাটি করে সব ফ্লাটের মানুষকে এক করল।আমাকে বলে গেল,'ভাইয়া মনে কষ্ট রাখিয়েন না,আমার জন্য আর তপুর জন্য দোয়া করিয়েন।'
তপুর লাশের সাথে বাড়ি গিয়েছিল।রুমের সবকিছু আগোছালো। ওরা দুজনেই খুব গুছালো ছিল।মানুষ মরে যাবার পর সবকিছু আগোছালো হয়ে যায়।
তপুর মৃত্যুটা হঠাত এল।মৃত্যু টের পাওয়া যায়।তার পদশব্দ ক্ষীন কিন্তু অত্যন্ত তীক্ষ্ণ।
সেদিন সকাল থেকে ভারী বর্ষণ। ফ্যাক্টরির সামনের এই জায়গাটা অনেক নীচু।অল্প বৃষ্টিতেই পানি জমে যায়।পানি সেচের জন্য পাম্প বসানো আছে।ভারী বর্ষণে হাটু পানি জমে। অনেকেই রিক্সায় করে পার হচ্ছে।তপু পার হচ্ছিল প্যান্ট ভাজ করে হাটু পর্যন্ত তুলে।সেচ পাম্পের ইলেক্ট্রিক ওয়্যার শর্ট সার্কিট হয়।দ্রুতই তপুকে হসপিটালে নেয়া হয়।
মিনাকে আবার ফোন করলাম।এখনো ফুপিয়ে কেদে চলেছে।মিনা শুধু এ প্লাস পেয়েছে।সকালে কবর জিয়ারত করতে চেয়েছিল।মেয়েদের অনুমতি নেই।
এক অভাগীর স্বপ্ন ৪৫ দিনের সংসারে আটকে গিয়েছে।সেখান থেকে বেরুবার পথ জানা নেই।
মৃত্যু হচ্ছে একটা শ্বাশত ব্যাপার।একে অস্বীকার করার কোন উপায় নেই।আমরা যে বেচে আছি এটাই একটা মিরাকল।মৃত মানুষদের জন্য আমরা অপেক্ষা করি না।আমাদের সমস্ত অপেক্ষা জীবিতদের জন্য।মৃত মানুষদের নিয়ে আমাদের কোন স্বপ্ন নেই।মানুষ তার অতীত কে স্বপ্নে দেখেনা।অতীত শুধুই হাহাকার আর বুকফাটা আর্তনাদ।
সকাল থেকে মুষলধারে বৃষ্টি।
কান্না বৃষ্টির সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে।
বিষয়: Contest_priyo
১০৩৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন