সিরাম চিনিখোর

লিখেছেন লিখেছেন আরাফাত আমিন ২৫ জুন, ২০১৬, ০৫:৪৪:৩৪ বিকাল

ইফতারের পর এক রেস্তোরাঁয় বসে চা খাচ্ছিলাম। চা এমনিতে আট টাকা কাপ। রেস্তোরাঁর টিভিতে সন্ধ্যার সংবাদে চিনির দাম বাড়ার খবরটা প্রচারিত হলো। চায়ের বিল দিতে গিয়ে অবাক। চায়ের দাম এরই মধ্যে বেড়ে গেছে প্রতি কাপে দুই টাকা!

.

আমাদের অর্থমন্ত্রী বাজেটের আগে জানালেন দেশে আখ চাষ বন্ধ করে দিতে চান তিনি।চিনিকল বন্ধ করে দিবেন।কারন বিদেশ থেকে আমদানি করা চিনি ২৫ টাকা আর দেশে উৎপাদিত চিনি খরচ পড়ে ৪৫ টাকা!তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করলেন এবং বন্ধ করে দিলেন।আজকে চিনি কিনলাম ৭০ টাকা কেজি!

.

আমাদের সোনার বাংলাদেশে আমাদের ক্রয়ক্ষমতা বেড়েছে, জিনিসপত্রের দামও বাড়তে বাধ্য। আমাদের হয়তো খাদ্যগুদামের সংখ্যা ও ধারণক্ষমতাও বেড়ে গেছে। না হলে একদিন দেখা গেল, বাজার থেকে চিনি উধাও। অত চিনি ওরা গেল কোথায়? পরের দিন সেই চিনি বেরিয়ে পড়ল, ফিরে এল বাজারে। কারণ কী? গোয়েন্দারা নাকি পিঁপড়ের মাথায় ছোট্ট গোপন ক্যামেরা লাগিয়ে দিয়েছিলেন, ফলে সহজেই উদ্ঘাটন করা সম্ভব হয়েছে, চিনি কোথায়।

.

রবীন্দ্রনাথ চিনি নিয়ে গান লিখেছেন, আমি চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী। তুমি থাকো সিন্ধুপারে...। এই গান যে চিনি বা সুগার নিয়ে লেখা, তা স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ দাবি করেছিলেন। শান্তিনিকেতনের বিদেশি গবেষক এন্ড্রুজ সাহেব একদিন এক অধ্যাপককে বলছেন, জানেন, গুরুদেব সুগার নিয়ে একটা গান লিখেছেন। কী গান? আমি চিনি গো চিনি তোমারে ওগো বিদেশিনী। অধ্যাপক বললেন, কে বলল আপনাকে এই গান চিনি নিয়ে লেখা। কেন? স্বয়ং গুরুদেব বলেছেন! আমাকে তিনি গানটা শোনালেন। আমি বললাম, গানটা ভীষণ মিষ্টি। গুরুদেব বললেন, চিনি নিয়ে গান লিখেছি, মিষ্টি হতে বাধ্য।

.

চিনির লোভে পিঁপড়া আসে। দিন পাল্টেছে। ইদানীং চিনি ব্যবসায়ীরাই সুন্দরী বউ পায়। এ থেকে দেশের তরুণসমাজের কিছু শেখার আছে। তা হলো, শুধু শুধু প্রেম করে, ভ্যালেন্টাইনস ডে পালন করে, ফুল কিনে প্রেমিকার পেছনে ছুটে ছুটে সময় নষ্ট না করে চিনির ব্যবসায় নামুন; প্রেমিকাই আপনাকে খুঁজে বের করবে।

.

অনেক দিন আগের কথা। কর্ণফুলী নদীর পানি একবার নাকি মিষ্টি হয়ে গিয়েছিল। ঘটনা আর কিছুই না। চিনিবাহী একটা জাহাজ ডুবে গিয়েছিল কর্ণফুলীতে। তখন অনেকেই নাকি কর্ণফুলীর পানি বাসায় নিয়ে চা বানিয়ে খেয়েছেন।

.

যে দেশের পানিতে চিনি আর নেতাদের কণ্ঠে বারো মাস মিষ্টি ঝরে, সে দেশের জনগণ চিনি কেনে দ্বিগুণ দামে, মেনে নেওয়া সত্যি একটু কঠিন। ‘চিনি জাফর’ নামে জাতীয় পার্টির একজন নেতাও আছেন। তিনি চিনি নিয়ে একসময় ছিনিমিনি করতে গিয়ে কেলেঙ্কারি বাধিয়েছিলেন। এর পর থেকেই তাঁর নাম হয়ে যায় চিনি জাফর। একজন চিনি জাফরই সব নয়, দেশে এখন ভূরি ভূরি চিনিব্যক্তিত্ব। তাঁদের সবার নাম কি আর আমরা জানি? সেদিন পত্রিকায় ছাপা হলো, একটি গুদাম থেকে হাজার হাজার বস্তা চিনি আটক করেছে র্যাব। এর পরদিন খবর পেলাম, পুলিশি পাহারায় চিনি বিক্রি হয়েছে অনেক বেশি দামে। পুলিশ বলেছে, তাদের কাজ বিক্রি নিশ্চিত করা, চিনির দাম কমানো নয়। আসলে দাম বাড়ানো নিশ্চিত করতে পারলেই আমাদের প্রশাসনের দায়িত্ব শেষ, কমানোর দায়িত্বটা যে কার, সেটা একটা রহস্য।

বিষয়: বিবিধ

১০৯২ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

373115
২৫ জুন ২০১৬ রাত ০৮:২৫
শেখের পোলা লিখেছেন : এমন হাজারো রহস্যের মাঝে বোকা বাঙ্গালী হাবুডুবু খাচ্ছে আশ মুখে শুকনা হাঁসি ফুটিয়ে বলছে 'ভাল আছি'। আপনিও ভাল থাকেন।

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File