ইনু বিত্তান্ত-২
লিখেছেন লিখেছেন আরাফাত আমিন ১৯ জুন, ২০১৬, ০৭:৪৬:১০ সকাল
★
গত কিছুদিন ধরে কমরেড ইনু কে নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন আওয়ামীলীগ নেতারা।বারবার তারা মুজিব হত্যায় জাসদ গণবাহিনী আর নেতার প্রতি কাদা ছুড়ছেন।নেতার চরিত্রহননের এই হীন অপচেষ্টাকারীরাই তথাকথিত পাকি দালাল! নেতা আমার স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মানুষ।এর আগে একই অভিযোগ গতবছর শেখ সেলিম সাহেব করলে নেতা তখন বলেছিলেন-মুজিব হত্যায় আওয়ামীলীগ নেতারাই জড়িত।কিন্তু এবার নেতা প্রধানমন্ত্রীর উদ্ধৃতি দিয়েছেন।তিনি বলেন, 'মনে রাখতে হবে, খোদ শেখ হাসিনা বার বার বলেছেন, প্রতিক্রিয়াশীল, দেশবিরোধী, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী কর্তৃক নিহত হয়েছেন বঙ্গবন্ধু। সুতরাং বঙ্গবন্ধুর হত্যার জন্য কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলকে দায়ী করাটা ইতিহাসসম্মত কোনো বক্তব্য নয়।'তারপরেই আবার বলেছেন-'এখন ইতিহাস চর্চার সময় নয়'।
★
নেতা নিষেধ করেছেন।আমরা তাই ইতিহাস চর্চা করব না।শুধু একটু দেখে আসি কি হয়েছিল সেই সময়।
দৈনিক আমাদের সময় এক রিপোর্টে জানায়, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান নিহত হওয়ার পর হাসানুল হক ইনু শাহবাগস্থ বেতার ভবনে গিয়ে অভ্যুত্থানের নায়কদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন এবং রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রতি সর্বান্তকরণে সমর্থন জানিয়েছিলেন। তিনি অবশ্য একা যাননি, গিয়েছিলেন লে. কর্নেল (অব.) আবু তাহেরের সঙ্গে। তাহের তখন জাসদের গণবাহিনীর অধিনায়ক, নেতা ছিলেন গণবাহিনীর পলিটিক্যাল কমিশনার। শেখ মুজিব হত্যাকান্ডের আগে মেজর সৈয়দ ফারুক রহমান লে. কর্নেল (অব.) তাহেরের সঙ্গে তার নারায়ণগঞ্জের অফিসে গিয়ে দেখা করেছিলেন। তাহেরের নেতৃত্বে গণবাহিনী তখন রাষ্ট্রক্ষমতা দখল পরিবর্তন করতে তৎপর ছিল।তার সঙ্গে ছিলেন হাসানুল হক ইনু। বেতার ভবনে তাহের ও ইনুর সঙ্গে অভ্যুত্থানের সকল নেতার দেখা ও কথা হয়। বেতার ভবনেরই অন্য একটি কক্ষে খন্দকার মোশতাকের সঙ্গেও দেখা করে আলোচনা করেছিলেন তাহের ও ইনু।এদিকে সম্প্রতি প্রকাশিত মার্কিন গোপন দলিলপত্রেও কিছু চমকপ্রদ তথ্য জানা গেছে। এরকম একটি তথ্য হলো, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট অভ্যুত্থানের নায়করা কর্নেল তাহেরকে বঙ্গভবনে নিয়ে গিয়েছিলেন।তখন শেখ মুজিব হত্যাকান্ডসহ ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানের প্রতি কর্নেল তাহের ও আমার নেতা ইনু সমর্থন জানিয়েছিলেন। নেতা আমার জড়িত ছিলেন না, তবে খানিকটা যোগাযোগ রক্ষা করেছেন,আর কাজ শেষে সমর্থন দিয়েছিলেন!এই আর কি!
★
-১৯৯১ সনের কুষ্টিয়া- ২ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন না পেয়ে নেতা বিএনপির মনোনয়ন চেয়েছিলেন-এই তথ্য জানান গোলাম মাওলা রনি।
-আমার নেতার কপাল খুলে যায় এক/এগারো সরকারের সময়।এরপর নেতা নিজ প্রতীকে ভোট পাবেন না দেখে নৌকা প্রতীকে পরের ধনের পোদ্দারি করতে নেমে যান।
-প্রতিপক্ষকে কঠোর ভাষায় আক্রমন করা নেতার একটি বিশেষ গুন।এই গুনেই পেয়ে যান সরকারের তথ্যমিডিয়া নিয়ন্ত্রনের দায়িত্ব।অত্যন্ত সফলতার পরিচয় দেন-শাহবাগের উত্থানে এবং হেফাজত দমনে। দলীয় ছাত্রসংগঠনগুলো এবং মিডিয়া নিয়ন্ত্রনের মাধ্যমে তিনি এই আন্দোলন নিয়ন্ত্রন করে নেতা হিসেবে সরকারের পছন্দের তালিকায় উপরের দিকে চলে আসেন।
-দ্বিতীয় মেয়াদে মন্ত্রী হবার পর নেতা তার স্বরুপে ফিরেন।খালেদা জিয়াকে 'খালেদা' বলে সম্বোধন করে জাতিকে জানান-'খালেদা ইসলাম, জাতি ও গণতন্ত্রের শত্রু।'
-মানসিক ডাক্তার হিসেবে 'পাগল থিওরি' এবং জ্যোতিষী হিসেবেও নেতার সুনাম চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে।তার বিখ্যাত 'পাগল থিওরি'- 'ক্ষমতা দখলের জন্য খালেদা জিয়া উম্মাদ-পাগল হয়ে গেছেন। যে কোনো ভাবেই ক্ষমতা দখলের জন্য চেষ্টা করছেন। শেখ হাসিনার হাতে উন্নয়নের চাবি। খালেদার হাতে রক্তের দাগ, গায়ে মানুষ পোড়ানোর গন্ধ।'
-ষাটের দশকের ঢাকার মাঠ কাপানো একসময়ের দেশসেরা এই গোলকিপার এরপর তার বিখ্যাত 'গোল' থিওরি প্রদান করেন।তিনি বলেন-'২০১৯ সালের নির্বাচনে খালেদা অংশ গ্রহন না করলে আবারো ফাঁকা মাঠে আমরা গোল দিয়ে সরকার গঠন করবো।'
-অর্থনীতিতেও রয়েছে নেতার সফল পদচারনা।২০১৫ সালের বাজেট পরবর্তী প্রেস কনফারেন্সে তিনি বলেন-'প্রস্তাবিত বাজেট ‘গোল্ডেন জিপিএ-৫’ এবং রাজনৈতিক ঘাটতি মোকাবিলার সক্ষমতা হল ‘জিপিএ-৫’। তার এই তত্ত্বের উপর ভিত্তি করে পরে মাছরাঙা টিভি জিপিএ৫ তত্ত্ব আবিষ্কার করে তাক লাগিয়ে দেয়!
-হজ্জের পর আমার নেতা ধর্মকর্মে মনোনিবেশ করেন!ধার্মিকতায় রোল মডেল তিনি।সারাজীবন কম্যুনিজমের ঝাণ্ডা উড়ালেও কাফনের কাপড়ে মৃত্যু হুমকির ব্যপারে বলেন,'আমি মৃত্যুভয়ে ভীত নই। একজন মুসলমান হিসেবে মনে করি, হায়াত-মউত আল্লাহর হাতে। যারা আমার মৃত্যুর দিনক্ষণ ঠিক করে দিচ্ছেন, তারা খোদার উপর খোদাগিরি করছেন। জঙ্গিদের হাতে মৃত্যু থাকলে আমি সেটা ঠেকাতে পারব না।'
-ধর্মের ব্যপারে নেতার অগাধ পাণ্ডিত্য প্রকাশ পায় গত পহেলা বৈশাখে।কমরেড বলেন, 'পহেলা বৈশাখ ও চৈত্র সংক্রান্তির সাথে ইসলাম ধর্মের কোনো বিরোধ নেই। এগুলো পালনে মুসলমানিত্ব যায় না। কিন্তু কিছু মুর্খ লোক এটা বোঝে না, তারা এটাকে ধর্মের লেবাস পরানোর চেষ্টা করে এবং বিরোধ করে।ইসলামের কোনো বিধান নেই দেশীয় সংস্কৃতিকে ধ্বংস করা। বরং যার যার ভাষা, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি রক্ষা করা ঈমানি কর্তব্য।'
অনেকে অবশ্য এর পরে কমরেড কে বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন,শায়খুল ঈমান,আল্লামা ইনু এসব পদবি দেয়ার দাবি তুলেছিলেন।তবে আমি মহান নেতার একজন সাধারন শুভাকাঙ্ক্ষী হিসেবে তা সমর্থন করি না।যারা এসব দাবি করেন-তারাই জংগি,যুদ্ধাপরাধী আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী!
.
আসুন সবাই মিলে মহান এই ক্ষনজন্মা প্রবাদপুরুষের রাজনীতি অনুসরণ করি।
বিষয়: রাজনীতি
৯৩৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন