অতৃপ্ত পরাবাস্তবতা
লিখেছেন লিখেছেন আরাফাত আমিন ১০ জুন, ২০১৬, ১১:১৩:০৬ রাত
.........কাকার লাশ এসেছে জেদ্দা থেকে।
বাড়ির সামনের এই ঘরটাকে কাছারিঘর বলে।একপাশে লাশের কফিন।তার ঠিক পাশেই বড় পাত্রে জিলাপি রাখা।ভিতরের বাড়িতে মহিলাদের আলাদা বসার ব্যবস্থা।পরিচিত অপরিচিত অনেকেই আসে। দেখে যাওয়ার সময় দুটো জিলাপি নিয়ে যায়।
বিদেশ থেকে কফিন আসলে সাথে পাড়াপড়শির জন্য খেজুরের ব্যবস্থা রাখতে হয়।কাকার কফিনের সাথে খেজুর আসেনি।তাই জিলাপির ব্যবস্থা।
বেলা গড়িয়ে যাচ্ছে।এদিকে আকাশও মুখভার করে আছে।লাশের জানাজা,দাফন যত তাড়াতাড়ি করা যায় তত উত্তম।তাছাড়া একসপ্তাহ আগের লাশ।ধর্মমতে দেরি করতে নেই।বড় প্লেটের জিলাপিও প্রায় শেষ।
কবর খোড়া হয়ে গেছে।এলাকার মসজিদে সকাল থেকে একটু পরপর শোকসংবাদ প্রচার হচ্ছে।মানুষজনের মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া নেই।একসপ্তাহ আগে সড়ক দূর্ঘটায় কাকা মারা যান।তখন থেকেই বাড়িতে মানুষের আনাগোনা বেশি।এতদিন লাশ ছিল না,তাই মরা বাড়ি মনে হয়নি।আজ লাশ এসেছে কিন্তু আজও মরা বাড়ি মনে হচ্ছেনা! সবাই কান্নাকাটি যা করার আগেই করে ফেলছে।নতুন করে শুধু আগের কান্নাকাটি রিভিশন দিচ্ছে কেউকেউ।সবারি চোখে পানি,কিন্তু অল্প!
বিবাহ এবং মৃত্যু-এই দুই বিশেষ দিনে লতা পাতা আত্মীয়দের দেখা যায়।সামাজিক মেলা মেশা হয়।আন্তরিক আলাপ হ্য়।যে বাড়িতে মানুষ মারা যায় সে বাড়িতে মৃত্যুর আট থেকে নয় ঘন্টা পর একটা শান্তি শন্তি ভাব চলে আসে।আত্মীয় স্বজনরা কান্নাকাটি করে চোখের পানির স্টক ফুরিয়ে ফেলে।চেষ্টা করেও তখন কান্না আসে না।তবে বাড়ির সবার মধ্যে দুঃখী দুঃখী ভাব থাকে।সবাই সচেতন ভাবেই হোক বা অচেতন ভাবেই হোক দেখানোর চেষ্টা করে মৃত্যুতে সেই সব চেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছে।মূল দুঃখের চেয়ে অভিনয়ের দুঃখই প্রধান হয়ে দড়ায়।একমাত্র ব্যাতিক্রম সন্তানের মৃত্যুতে মায়ের দুঃখ।
দাদি ভিতরের বাড়িতে বড় ঘোমটা দিয়ে বসে আছেন।তাকে ঘিরে চেনা অচেনা অনেক মহিলাদের জটলা।গিয়ে কাশি দিয়ে নিজের অবস্থান জানালাম।লাশ নিয়ে যাবার অনুমতি চাইলাম।কোন সাড়া পেলাম না।একটু দূরে দাড়ান বড় কাকী ইশারায় জানতে চাইলেন,জিলাপি খেয়েছি কিনা? দুদিকে মাথা ঘোরালাম।তিনি ইশারায় ঘরের ভিতরে ডাকলেন।
গরুর মাংস রান্না করা হয়েছে।সাথে মোটা চালের ভাত।প্লেটে দিয়ে বড় কাকী বললেন,চারটা খেয়ে নে।দাফন করে আসতে অনেক দেরি হয়ে যাবে।
মুখে দিব, এই সময়ে বউ ডাকছে।এই...এই....উঠ।আছরের সময় চলে যাচ্ছে।তড়িঘড়ি করে উঠলাম।যাক,সময়মত ডাক টা দিয়েছিল।আরেকটু হলে আজকে গেছিলো রোজাটা।
ইফতারের আগের এই সময়টা প্রতিদিন বেশ ঘুম পায়।আছর পড়ে ইফতার আনতে বাসার বাইরে যাওয়া দরকার।আকাশের অবস্থাও ভাল না।
আজকে খুব জিলাপি খেতে মন চাচ্ছে।
ভোর রাতে সেহরিতে গরুর মাংস,খারাপ হয় না!
বাইরে আকাশ অন্ধকার হয়ে আসছে।বৃষ্টি আসার আগেই বেরোতে হবে।
বিষয়: Contest_priyo
১১৬৮ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন