আপনি ঘাম ঝরাতে পারেননি, আপনার সন্তানকে রক্ত দিতেই হবে
লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ০৫ মে, ২০১৬, ০৩:৩২:০৮ দুপুর
জামাল সুমেরী একজন সিরিয়ান সফল ব্যবসায়ী, আজ থেকে দুই বছর আগেও ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মুসলমানের জন্য লক্ষ লক্ষ ডলার ব্যয় করেছিলেন। ৪ সন্তান আর স্ত্রী নিয়ে ভালোই যাচ্ছিল দিনকাল। হঠাৎ একটি ঝড় তছনছ করে দিলো সেই সোনালী অতীত। দুই সন্তান আর স্ত্রী জীবন দিলো আরো দুই সন্তানের একজন নিখোঁজ আরেকজন বোমার আঘাতে পঙ্গু। সুমেরীর স্থান হয়েছে তুরস্কের একটি উদ্ধাস্তু শিবিরে। জামাল সুমেরী বেঁচে আছে শুধু একটি অতীতের স্বাক্ষ্য দেয়া জন্য। কিন্তু তিনি কি ভেবেছেন এরকম একটি সুনামি বয়ে যাবে তার উপর দিয়ে। স্বৈরশাসক বাশার যুগের পর যুগ সিরিয়া শাসন করে গেছে, সুমেরীর মত অনেকেই বাশারের উন্নতির ঘেরাটেপের সুবিধাভোগী। সেই স্বেরশাসনই কাল হয়ে আসলো অনেক সুবিধাভোগী আর অসুবিধাভোগীর জন্য। কিন্তু বাশারের পক্ষ নেবার পরও কেন এই পরিণতি হলো সুমেরীদের? হ্যাঁ ধনী গরিব ভালো মন্দ দেখে কোন প্রাকৃতিক দূর্যোগ আসেনা। সর্বত্রই যখন বোমার আঘাত চলছে তখন কে পক্ষ আর কে বিপক্ষ সেটা দেখার সময় কোথায়? সুমেরীর এখন অপেক্ষা কেবল নিরাপদ একটা মাতৃভূমি দেখার।
সামান্য টিয়ারশেল আর গুলির ভয়ে এখন যারা নিরাপদ জীবন খুঁজে বেড়াচ্ছেন কিংবা সাময়িক সুবিধা নিয়ে স্বৈশাসকের পক্ষাবলম্বন করছেন আপনার জন্য আদর্শ হতে পারে একজন সুমেরী। যে গুলির ভয়ে আপনি পালিয়ে বেড়াচ্ছেন আন্দোলন সংগ্রাম থেকে সেই গুলি আপনার সন্তানের বুক এপোড় ওপোড় করে দিবে, বোমার আঘাতে ধ্বংশ হয়ে যাবে এসি লাগানো সেই বিলাসবহুল বাসভবন। স্ত্রীর লাশ খুঁজে বেড়াতে হবে আপনাকে ধ্বংশস্তুপের নিচে। আপনি রক্ত দিতে পারেননি আপনার ভাগেরটা সুদে আসলে দিতে হবে আপনার রেখে যাওয়া প্রজন্মকে।
সুন্দরবনে আগুন লেগেছে, আপনার কাছে ডোন্ট কেয়ার কিন্তু পরিবেশের ভারসাম্য নষ্টের জন্য প্রলয়ংকারী টর্নেডো কত শত মানুষের জীবন কেড়ে নেয় তা দেখার জন্য অপেক্ষা করুন। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা তার একটি নমুনা দেখিয়েছে মাত্র।
বিনাভোটে নির্বাচন, আপনি ভাবছেন তাতে কি? এই অধিকার আদায়ের জন্যও হয়তো ঘরে বসে থেকেও জান চলে যাবে আপনার। যেমনটা ভাষা আন্দোলনের সময় বারান্দার আরাম কেদারায় বসে থাকা মানুষটিকেও প্রান দিতে হয়েছে।
দেশের টাকা লুটপাট হচ্ছে, আপনি নিশ্চিন্ত? ত্রানের এক কেজি চালের জন্য আপনাকে দৌঁড়াতে হবে মাইলের পর মাইল। যেমনটা দেখছি আমরা সাগরে ভাসা রোহিঙ্গাদের বেলায়।
পাঠ্য বই থেকে তুলে দেয়া হচ্ছে নৈতিক শিক্ষা, ধর্মীয় শিক্ষার জায়গান স্থান পেয়েছে বিধর্মী কৃষ্টি কালচারের শিক্ষা। আপনি মোটেই চিন্তিত নন, অপেক্ষা করুন আপনার সন্তান আপনাকে জবাই করবে, বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাবে। বৃদ্ধবয়সেও আপনাকে টানতে হবে সংসার জীবনের গ্লানি। কেউ কাউকে সম্মান করবেনা, শ্রদ্ধার স্থান হবে জাদুঘরে, মা সন্তানকে হত্যা করবে, সামান্য চুরির অপরাধে ধ্বংশ হবে জনপদের পর জনপদ। খুন, ধর্ষণ, রাহাজানি লুটপাট হবে আপনার সমাজের একমাত্র কর্ম।
প্রবাসে শ্রমিক যাচ্ছেনা, গার্মেন্টেসের মালামাল বিদেশীরা কিনছে না, আপনি নাকে তেল দিয়ে ঘুমাচ্ছেন তাতে আপনার ক্ষতিতো হচ্ছে না। ক্ষতিটা আপনি বুঝবেন না বুঝবে আপনার পরের প্রজন্ম, কর্ম করতে না পেরে চুরি করবে, অসামাজিক কাজ করবে, অবৈধ পথ বেছে নিবে বেঁচে থাকার জন্য।
দেশ এখন মাদকের স্বর্গরাজ্য, তাতে কি আপনি তো আর খাচ্ছেননা। আপনার আদরের সন্তান কিন্তু আপনার মত পরিবেশে বেড়ে উঠেনি, অতএব সে মাদকের আগ্রাসন থেকে রেহাই পাবেনা।
আরো অনেক কিছুই লিখার আছে কিন্তু আপনার ধের্য্য চ্যুতি ঘটতে পারে তাই লিখলাম না।
আপনার সামনে ধ্বংস, আর এক কদমও যদি আপনি অসচেতনভাবে পা পেলেন আপনাকে ভুক্তভোগির কাতারে আসতে হবে। আপনি ভাবছেন সরকার পরিবর্তনে তাতে কি আসে যায়। একটু ভাবুন, গাছ যদি শিকড় গেড়ে বসেই যায় তখন কিন্তু ডালপালা কেটেও নিধন করা যাবে না। পৃথিবীর সব স্বৈরশাসকই উন্নয়নের মূলো ঝুলিয়ে শিকড় গেড়েছে আসলে এসব উন্নয়ন ছিলো অন্তসার শূন্য। গাদ্দাপি, সাদ্দাম, বেনগাজি, মোবারক, মোশাররফ কেউই টিকেনি, দেশও টিকোতে পারেনি। তাদের উন্নয়ন এখন বোমার আঘাতে ধূলির মত উড়ছে। দেশ টিকে থাকলে আপনি টিকে থাকবেন, আপনার ব্যবসা বানিজ্য রুটি রুজি টিকে থাকবে। কিন্তু শকুনের হাতে দেশকে তুলে দিয়ে দেশ টিকানো যাবে না যতই তা মিডিয়ার ভেলকিতে দৃষ্টিনন্দন হোক না কেন।
আসুন নিজে বাঁচার জন্য দেশকে বাঁচাই। একটু একটু করে রক্ত ঢালি পরবর্তী প্রজন্মের পথচলাকে নির্বিঘ্ন করার জন্য
বিষয়: বিবিধ
৯৯৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন