কাসেম বিন আবু বকর
লিখেছেন লিখেছেন সুজন কুতুবী ২৮ এপ্রিল, ২০১৭, ০২:৩৮:০০ রাত
ইস্যুকে আমি টিস্যু হিসেবেও গণ্য করি না। অন্তত ওয়াশরুমের জন্যও না । বাংলাদেশে একেরপর এক ইস্যুর আবির্ভাব হচ্ছে এবং হবে । এইপর্যন্ত কোনো ইস্যু নিয়ে লিখিনি। আমার বন্ধুরা লিখে লিখে টাইমলাইনভর্তি আর ডায়েরির পাতা একেরপর এক শেষ করছেন। এনিয়ে আমার কোনো মাথা ব্যথা নেই।
অস্বীকার করছি না সাম্প্রতিক সময়ে রমেল চাকমাকে নিয়ে একটি কবিতা লিখেছি। পাহাড়ী সন্ত্রাস রমেল চাকমার পক্ষ নিয়ে নয়, সে বাংলাদেশের একজন নাগরিক হিসেবে নূন্যতম অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে । একজন নাগরিক মৃত্যুপরবর্তী সময়ে তাঁর নিজনিজ ধর্মীয়রীতি অনুযায়ী সৎকারের অধিকার রাখে ।
সাম্প্রতিক সময়ে ইসলামী উপন্যাসিক কাসেম বিন আবুবকরকে নিয়ে একটি ইংলিশ মিড়িয়া প্রতিবেদন করে । এতেকরে অনেক ফেসবুক লেখক প্রচণ্ড ক্ষেপে যান। যে নিজে এখনো ক্রিয়াপদের শুদ্ধ ব্যবহার শিখেছে কিনা সন্দেহ আছে; তিনিও এর বিরুদ্ধাচারণ করে পাশবিক সুখ লাভ করছেন। নাকের পানি আর চোখের পানি এক করে ফেলেছেন। এ যেন স্রোতে গা ভাসিয়ে দেয়ার মতো।
বাংলাদেশের জনগণকে বইপড়া শিখিয়েছে চারজন লেখক। এইচারজন লেখকের হাতধরেই উঠে এসেছেন আরো অগণিত লেখক। ফেইসবুক আসার বদৌলতে সাহিত্যচর্চা নতুনমাত্রা লাভ করে। অনেক অনেক সাহিত্যগ্রুপ লেখক সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। আবার কিছু গ্রুপ আছে তারাও নিজেরা নিজেদের পুরষ্কার দিয়ে কবি ঘোষনা করছেন। নামের আগেও আকীকা ছাড়াই যোগ হচ্ছে কবি, সাহিত্যিক, ছড়াকার।
অনেকে স্বপ্রনোদিত হয়ে টাকা খরচ করে বের করে ফেলছেন বই। ৩০০ কপি বই বের করে ১০০ কপি সৌজন্য সংখ্যা ১০/২০ কপি বইমেলায় বিক্রি বাকিগুলো পড়ে থাকে খোয়াড়ে। এইপ্রকৃতির লোকেরাও বিরুদ্ধাচারণ করে কাসেম বিন আবু বকরের যা হাস্যকর ছাড়া আর কিছুই নই।
কাসেম বিন আবু বকর একবার বই প্রিন্ট করলে কয়েক হাজার প্রিণ্ট করে । একবই ৩০/৪০ বার প্রিণ্ট নিয়েছেন সেরকম রেকর্ডও আছে। তাহলে উনার পাঠক সংখ্যা কত তা হিসেব করে বলতে গেলে ক্যালকুলেটর লাগারই কথা । আমার আলোচ্য বিষয় কাসেম বিন আবু বকরের গান গাওয়া নয়।
বাংলাসাহিত্যে সাধুভাষার দাপট থেকে মুক্তি লাভের জন্য ভিন্নধারার সাহিত্যবিপ্লব ঘটে প্রমথ চৌধুরীর হাতধরে । 'সবুজপত্র' সাহিত্য পত্রিকার মাধ্যমেই চলিতভাষার পাঠক সৃষ্টিতে প্রমথ চৌধুরীর এই অবদান অনস্বীকার্য। বাংলাভাষাভাষী জনগণ নতুন আমাজে বই পড়া শুরু করেন। এইধারা দীর্ঘদিন চালু ছিল। কিন্তু পরবর্তীতে আস্তে আস্তে বেগ কমে আসে। এবং একসময় একেবারেই বইবিমুখ হয়ে পড়ে । ঠিক তখনই আবির্ভাব ঘটে চার নক্ষত্রের। এদের বই পড়েই মানুষ আবারো বইপ্রেমি হতে শুরু করে । হুমায়ুন আহমেদ, কাসেম বিন আবু বকর, আবুল আসাদের সাইমুম সিরিজ, আসাদ বিন হাফিজের ক্রুসেড় যে সংখ্যক পাঠক প্রিয়তা পায় সে সংখ্যক পাঠক প্রিয়তা আর কোনো লেখকের নেই। সাম্প্রতিক সময়ে ইমদাদুল হক মিলন আর সুমন্ত আসলাম এক্ষেত্রে কিছুটা এগিয়ে এসেছেন। উনারাও একটা পাঠক শ্রেণি ধরতে সক্ষম হয়েছেন।
আমার মনেপড়ে আমি যখন সপ্তম-অষ্টম শ্রেণিতে পড়ি তখন আমাদের এলাকার বড় আপুরা সিলেবাসের বাইরেও কিছুকিছু বই পড়ত। এই বইয়ের লেখক কাসেম বিন আবু বকর। একসময় নবম-দশম শ্রেণিতে উর্ত্তিণ হলে বাবা-মায়ের অগোচরে লুকিয়ে আমিও কাসেম বিন আবু বকর পড়া শুরু করি। কাসেম বিন আবু বকরের প্রথম উপন্যাস 'ফুটন্ত গোলাপ' থেকে শুরু করে অনেক উপন্যাস পড়েছি । পড়তে গিয়ে নেশার মতো হয়ে যায়। নেশা এতবেশি চেপে বসেছিল যে টেস্ট পরীক্ষায় দুই বিষয়ে ফেল করি । বাবা ঐবিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার সুবাদে ফরম ফিলাফ করতে তেমন অসুবিধা হয়নি । তবে বুঝতে পারি এস.এস.সি পাশ করতে হলে আমাকে এই বইপড়া ছাড়তে হবে। মূলত তখন থেকেই বইয়ের নেশা মাথায় চাপে। সেই শুরু হয়েছে এখনো বইয়ের নেশা ছাড়তে পারিনি ।
আজ যখন কাসেম বিন আবু বকরের বিরুদ্ধে প্রচার হচ্ছে দেখি তখন এই আহমকদের জন্য এক প্যাগ দুঃখ প্রকাশ করা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না ।
মূলত আমরা হুজুগে বাঙালি। কান নিয়েছে চিলে শুনার পরেই চিলের পেছনে ছুটতে আমরা অভ্যস্ত। কান ঠিক জায়গায় আছে কিনা দেখার চিন্তা আমরা করি না । দুই একজন যখন ইংলিশ মিড়িয়ার এই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধাচারণ করল তখন শুরু করে দিলাম আমাদের হা-হুতাশ, দৌড়-ঝাপ। কেউ বুঝে আর কেউ না বুঝে ।
বিষয়: রাজনীতি
১০৮৯ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
উনার সম্বন্ধে যা শুনেছি বুঝা গেল যে উনার লিখাগুলো রগরগে ছিল । এবং এসব লিখা টিন এজ বয়সের পোলাপানেরা বেশী খাবে ।
খুব কম লেখকই আছেন যে তাদের লিখা রগরগে হয় না । হুমায়ুন আজাদ সাহেব তো রগরগের উপরের ধাপে ছিলেন , তবুও তো তার লিখা মানুষ গিলেছে। তার মেয়ে তাকে বাবা বলে জেনে গেছে।
প্রয়াত হুমায়ুন আহমেদ এর লিখাগুলোও কি এসব থেকে মুক্ত ছিল ? তার লিখায় আজগুবি টাইপের আচরণও চলে আসতো যার তার নাটকে আমরা দেখতে পাই। উনার ভাই মিথ্যে সাইন্স ফিকশন নিয়ে লিখে তরুনদের বিপথে নিয়ে গেছেন ।
যারা কাসেম বিন আবু বকর - এজে- হিরো আলম- শাকিবদের নিয়ে অনলাইনে মজা নেয় তারা আসলে নিজেরা সেরকম স্থানে পৌছাতে পারে নি বলে আঙ্গুর ফল টক হয়ে গেছে ।
আবু বকরের ছেলে কাসেম যে পন্থায় উপরে উঠেছে সেটা বাংলাদেশের প্রায় সমস্ত কবি সাহিত্যিকের চির কালের আকাঙ্খা। পাঠকে আকৃষ্ট কারর ক্ষমতা কি সবার থাকে? একেকজনের লিখার স্টাইল একেক রকম। কথা হচ্ছে সেটা পাবলিক কেমন খাচ্ছে।
মন্তব্য করতে লগইন করুন