হেলাল হাফিজের অভিমান

লিখেছেন লিখেছেন সুজন কুতুবী ১৯ নভেম্বর, ২০১৬, ১০:৫৯:০৩ সকাল

'হেলাল হাফিজের কবিতায় হেলেন নাম্নী এক নারীর বহুল উপস্থিতি আছে, এই নারীকে কেন্দ্র করে তিনি বেশ কয়েকটি মর্মস্পর্শী কবিতা লিখেছেন। হেলেন ছিলেন তার প্রথম প্রেমিকা এবং হেলেনের ব্যাপারে তিনি অতিমাত্রায় সংবেদনশীলও ছিলেন, হেলেনপ্রসঙ্গ উঠলে তিনি আত্মনিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে একসময়ে কান্নাকাটিও করতেন। নেহাল হাফিজ আগেই আমাকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন আমি যেন হেলাল হাফিজকে হেলেনপ্রসঙ্গে কোনো প্রশ্ন না করি। প্রথম সাক্ষাতে তাকে আমি হেলেনপ্রসঙ্গে কিছু বলিওনি।

২০১২ সালের পহেলা মে নেহাল হাফিজকে আমি দ্বিতীয় দফায় কল করি এবং জানতে পারি হেলেনের মর্মান্তিক গল্প। হেলাল হাফিজের স্কুলজীবনে হেলেনের সাথে প্রেম হয়, তারা ছিলেন প্রতিবেশী। দীর্ঘ প্রেমের পর দুই পরিবারে ঘটনাটি জানাজানি হয়। হেলেনের বাবা ছিলেন দারোগা আর হেলাল হাফিজের বাবা স্কুলশিক্ষক। হেলাল হাফিজের বাবা দারোগার মেয়ের সাথে ছেলের বিয়ে দিতে চাননি, এ নিয়ে দুই পরিবারে বিরোধ ঘটে এবং হেলাল হাফিজ হেলেনকে বিয়ের ব্যাপারে কথাবার্তা বললে হেলেনও নির্বিকার থাকেন। পরে হেলেনের বিয়ে হয় ঢাকার একটি সিনেমা হলের (সম্ভবত মুন সিনেমা হল) মালিকের সাথে।

হেলেনের বিয়ে হয়ে যাবার পর হেলাল হাফিজ দশ-পনেরো দিন কারো সাথে কোনো ধরনের কথা বলেননি। তার ভাবি তার বিয়ের জন্য তাকে কোনো মেয়ের ছবি দেখালেই তিনি বলতেন— 'ভাবি, এই মেয়েটা দেখতে ঠিক আমার মায়ের মতো।' এর পর তার ভাবি তাকে আর কোনো মেয়ের ছবি দেখাতে সাহস করেননি।

তীব্র দুঃখ বুকে চেপে নেত্রকোনা থেকে ঢাকায় পাড়ি জমান হেলাল হাফিজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে লেখাপড়াও করেছেন। ব্যতিক্রমী ও সহজবোধ্য কবিতা লেখার ফলে তার খ্যাতি ক্যাম্পাস থেকে ক্রমশ ছড়িয়ে পড়ল দেশব্যাপী। ১৯৮৬ সালে প্রকাশিত হয় তার আলোড়ন-সৃষ্টিকারী কাব্যগ্রন্থ 'যে জলে আগুন জ্বলে'।

হেলেনের স্বামী বইমেলা থেকে অন্যান্য বইয়ের পাশাপাশি 'যে জলে আগুন জ্বলে' বইটিও কিনে বাসায় নিয়ে যান। হেলেন যখন দেখতে পেলেন বইটির পুরোটা জুড়ে বিধৃত আছে হেলেন-হেলাল প্রেমউপাখ্যান, আছে হেলালের কষ্টের ইতিবৃত্ত আর হেলেনের জন্য হেলালের শব্দে-শব্দে নিঃশব্দ হাহাকার; তখন ক্রমশ তার মস্তিষ্কবিকৃতি ঘটে, তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। হেলেনের স্বামী দেশে-বিদেশে হেলেনের উচ্চচিকিৎসার ব্যবস্থা করলেও হেলেন আর ভারসাম্য ফিরে পাননি। একপর্যায়ে স্বামীর কাছ থেকে হেলেন তালাকপ্রাপ্ত হন।

হেলেন এখন নেত্রকোনায় আছেন। এখন তিনি বদ্ধ-উন্মাদ। নেহাল হাফিজের ভাষ্যমতে— হেলেনকে এখন শেকল পরিয়ে ঘরে বেঁধে রাখতে হয়, ঘুম পাড়িয়ে রাখতে হয় ওষুধ খাইয়ে; অন্যথায় তিনি ঘরের আসবাবপত্র ভাংচুর করেন।

পঁয়ষট্টি পেরুনো হেলাল হাফিজ আজও বিয়ে করেননি। যখনই তাকে জিজ্ঞেস করেছি বিয়ে না করার কারণ, তিনি জবাবে বলেছেন— 'আমি যে কাউকে বিয়ে করিনি, তা নয়; বরং আমাকেই কেউ বিয়ে করেনি!'

© আখতারুজ্জামান আজাদ

( কবিকে ভালোবেসে আগলে রাখতে হয়, ছেড়ে যেতে হয় না )

বিষয়: Contest_priyo

১০৪৩ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

379808
১৯ নভেম্বর ২০১৬ বিকাল ০৪:৪৫
রিদওয়ান কবির সবুজ লিখেছেন : মর্মস্পর্শি বিষয়টি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
381435
২৪ জানুয়ারি ২০১৭ দুপুর ০১:২৫
দিল মোহাম্মদ মামুন লিখেছেন : ঘটনাটি যত সহজে পড়ে ফেললাম, তার গভীরতা ততটা সহজ ছিলনা....।
খুব খারাপ লাগলো।অভিভাবকদের বাড়াবাড়ির কারনেই দুইটা জীবন নষ্ট হয়ে গেলো।
ধন্যবাদ আপনাকে

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File