কওমি মাদরাসা শিক্ষার অগ্রগতির জন্য কিছু প্রস্তাব ---শাহ্ আব্দুল হান্নান
লিখেছেন লিখেছেন সুজন কুতুবী ২৭ মে, ২০১৬, ১২:৫২:৪৫ দুপুর
এ প্রবন্ধে যেসব মাদরাসা ‘কওমি
মাদরাসা’ বলে পরিচিত সেগুলোর মান
উন্নয়নের জন্য কিছু প্রস্তাব রাখার চেষ্টা
করব। ঊনবিংশ শতাব্দীতে দেওবন্দ
মাদরাসা প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পদ্ধতির
মাদরাসা এ উপমহাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। এর
পর থেকে এ পদ্ধতির মাদরাসাগুলোর ব্যাপক
কোনো সংস্কার এখন পর্যন্ত হয়নি। এ
পদ্ধতির মাদরাসা থেকে যারা পাস করেন,
তারা সাধারণত অন্যান্য মাদরাসায় কাজ
করেন কিংবা মসজিদে ইমামতির দায়িত্ব
নেন। দেশের শিল্প-বাণিজ্য, ব্যাংক
ব্যবসায়ে বা প্রশাসনে তাদের সাধারণত
কোনো স্থান হয় না; হলেও তা খুবই কম।
কওমি মাদরাসাগুলোর পরিচালকেরা
তাদের মাদরাসা কোর্সের কী ধরনের
সংশোধনের চিন্তাভাবনা করছেন, তা
আমাদের জানা নেই। এ ধরনের কোনো
রিপোর্টও আছে কি না তা-ও অবগত নই। যদি
থেকে থাকে তাহলে তার ওপর ভিত্তি করে
পদক্ষেপ নেয়া সঙ্গত।
এ নিবন্ধে কওমি মাদরাসার
শিক্ষাব্যবস্থাকে ইসলামের জন্য আরো
কল্যাণকর করার লক্ষ্যে কিছু পরামর্শ দেয়া
হচ্ছে। ইসলামের স্বার্থেই এটা প্রয়োজন,
যাতে মাদরাসা শিক্ষার্থীরা যেন
সমাজের সর্বস্তরের প্রয়োজন মেটাতে
পারেন। তারা যেন ইমাম ও
মাদরাসাশিক্ষক ছাড়াও ব্যাংকার,
প্রশাসক ও অর্থনীতিবিদ হতে পারেন।
বেশির ভাগ বড় মাদরাসাকে জামেয়া বলা
হয়। জামেয়া অর্থ বিশ্ববিদ্যালয় বা
ইউনিভার্সিটি। জামেয়া বা
বিশ্ববিদ্যালয়ের তাৎপর্য হচ্ছে, এখানে
প্রয়োজনীয় সব বিষয়ে শিক্ষা দেয়া হবে।
সব ছাত্র সব কিছু শিখবেন তা নয়; প্রতিটি
বিষয় কিছু ছাত্র শিখবেন। এ
পরিপ্রেক্ষিতে বর্তমানে যে দাওরাহ
ডিগ্রি আছে তার সাথে যদি আমরা আর
মাত্র দু’টি দাওরাহ কোর্স সব জামেয়ায়
চালু করতে পারি তাহলে মাদরাসার
ছাত্ররা যেকোনো স্থানে প্রশাসক এবং
সব অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা
হতে পারবেন। বিষয় দু’টি হচ্ছে- অর্থনীতি
(ইকতিসাদ) এবং জনপ্রশাসন বা পাবলিক
অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। যদিও সব বিষয়ে
দাওরাহ খোলা সম্ভব নয়; কিন্তু দু’টি নতুন
বিষয়ে দাওরাহ খোলা খুবই সম্ভব। এর ফলে
সারা দেশে প্রশাসনে এসব ছাত্র যেতে
পারবেন এবং গোটা জাতির ইসলামায়নে
তারা ভূমিকা রাখতে পারবেন। ইতোমধ্যে
ইসলামি অর্থনীতি একটি নতুন বিজ্ঞানে
পরিণত হয়েছে। পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রে
শনে অনেক কাজ হয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে
কওমি মাদরাসাগুলোয় দু’টি নতুন দাওরাহ
খোলার প্রস্তাব করছি। ফলে নিচের
ক্লাসগুলোয় কোর্স পরিকল্পনায় কিছু
পরিবর্তন আনতে হবে। কওমি মাদরাসায়
একাদশ-দ্বাদশ ক্লাসে অর্থনীতি এবং
পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের দু’টি পত্র
বা পেপার যোগ করতে হবে। যে কেউ
যেকোনো একটি গ্রহণ করতে পারবেন। দু’টি
বিষয় একত্রে নেয়া যাবে না। যারা এ
পর্যায়ে অর্থনীতি বা পাবলিক
অ্যাডমিনিস্ট্রেশন নেবেন, কেবল তারাই
দাওরাহপর্যায়ে এসব বিষয় পড়তে পারবেন।
আর যে ক’টি বিষয় পরিবর্তন করা প্রয়োজন
তা হচ্ছে- আরবি ভাষা শিক্ষা আরো
শক্তিশালী করা দরকার।
বাংলা ভাষা শিক্ষাকেও পুরোপুরি
অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন, যাতে মাদরাসার
ছাত্ররা এ দেশে বিশিষ্ট লেখক হতে
পারেন। ইংরেজি ভাষাকেও উপযুক্তভাবে
সবপর্যায়ে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, তাহলে
তারা কেবল জাতীয়পর্যায়ে নয়,
আন্তর্জাতিকপর্যায়ে দেশের ও ইসলামের
খেদমত করতে পারবেন বলেই আমাদের দৃঢ়
বিশ্বাস। এ ছাড়া খুব ভালো হবে যদি
দাওরাহ কোর্সে আধুনিককালে তাফসির,
হাদিস ও ফিকাহর ওপর যেসব মহৎ কাজ
সম্পন্ন হয়েছে, সেগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করা
হয়। তাদের সব কোর্স রিভিউ বা
পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। পুরনো কিছু বই
বাদ দিয়ে নতুন কিছু বই অন্তর্ভুক্ত করা
সমীচীন। তাহলে তাদের কোর্সগুলো এ যুগে
ইসলাম ও সমাজের চাহিদা পূরণ করতে
পারবে।
আমাদের মাদরাসাগুলোয় যে আরবি
শেখানো হয় তাতে শিক্ষার্থীরা
আরবিতে দক্ষ হন না, তারা আরবিতে
বলতে-লিখতে পুরোপুরি সক্ষম হন না।
আরবি শেখার আধুনিক পদ্ধতি অনুসরণ করতে
হবে। আশা করি, সংশ্লিষ্ট সবাই আমার
প্রস্তাবগুলো বিবেচনা করবেন।
লেখক : সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার
বিষয়: বিবিধ
৯২২ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন