পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার
লিখেছেন লিখেছেন ইসলাম কিংডম ০৬ জুলাই, ২০১৭, ১০:২৬:৪১ রাত
পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার এমন এক হক যা আল্লাহ তাআলা আল কুরআনের অনেক জায়গায় নিজের হকের সাথে সংযুক্ত করে উল্লেখ করেছেন। এমন হক, যা সবার জন্য অবশ্য পালনীয়, যা পালন না করলে সফলতা আসে না। আল্লাহ তা’আলা বলেন :‘তোমরা ইবাদত কর আল্লাহর,তাঁর সাথে কোন কিছুকে শরীক করো না। আর সদ্ব্যবহার কর মাতা-পিতার সাথে। (সূরা আন-নিসা:৩৬)।
পিতা-মাতার প্রতি সদ্ব্যবহার একটি আবশ্যিক বিষয় এবং তাদের অধিকার সংরক্ষণ করা ওয়াজিব। এমনকি যদি তারা অমুসলিম হন তবুও। তাদের মুসলিম হওয়ার সাথে সদ্ব্যবহারের প্রশ্ন জড়িত নয়। মাতা-পিতার সদ্ব্যবহারের নির্দেশ এখানেই শেষ নয়। বরং, তারা যদি আল্লাহর সাথে কুফরী করার নির্দেশও দেন এবং শিরক করতে বাধ্য করেন, তবু তাদের সাথে ভালো ব্যবহার অব্যাহত রাখতে হবে।
জিহাদের চেয়েও পিতার-মাতার সেবার গুরুত্ব বেশি:
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পিতা-মাতার অধিকারকে জিহাদের ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন। বুখারী ও মুসলিমে আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাযি. হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেনঃ ‘ আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলাম, আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় আমল কোনটি? তিনি বললেন, ‘সময়মতো নামায আদায় করা’। আমি বললাম, এরপর? তিনি বললেন, ‘পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার’। আমি বললাম, এরপর? তিনি বললেন, ‘আল্লাহর পথে জিহাদ করা’ (বুখারী)।
অনুরূপভাবে আব্দুল্লাহ বিন আমর রাযি. হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন: ‘ এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে জিহাদে যাওয়ার অনুমতি চাইলে উত্তরে তিনি বলেন, তোমার পিতা-মাতা কি জীবিত? লোকটি বলল, ‘জ্বি’। তিনি বললেন, তাহলে তাদের মাঝেই জিহাদ করো’-অর্থাৎ,তাদের সেবায় শ্রম দাও’ (বুখারী)।
মুয়াবিয়া বিন জাহিমা রাযি বলেন: এক লোক রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এসে বলল, আমি যুদ্ধে যেতে চাই। আপনার কাছে পরামর্শের জন্য এসেছি। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমার মা আছে? লোকটি বলল, জ্বি আছে। তিনি বললেন, ‘তাহলে তাকে সঙ্গ দাও। কেননা জান্নাত তার পদতলে’ (নাসায়ী ও ইবনে মাজাহ)।
পূর্বসূরীদের জীবনীতে পিতা-মাতার সদ্ব্যবহার:
আমাদের সালাফগণ যখন পিতা-মাতার হক ও তাদের সাথে সদাচারের বিষয়টি বুঝেছেন, তখন তাঁরা পূর্ণভাবে পিতা-মাতার সেবায় আত্মনিয়োগ করেছেন। মুহাম্মদ বিন সিরীন র. এর নামতো আপনারা শুনেছেন। তিনি যখন তাঁর মাতার সঙ্গে কথা বলতেন, তখন মনে হত তিনি অনুনয় করছেন। ইবনে আওফ বলেন, একবার এক লোক মুহাম্মদ বিন সিরীন এর বাড়িতে এলেন। তখন তিনি তার মায়ের সাথে কথা বলছিলেন। লোকটি বলল, তিনি কি কোনো সমস্যায় পড়েছেন? তখন অন্যরা বললেন, না, এভাবেই তিনি তার মায়ের সাথে কথা বলেন।
হাইওয়াহ বিন শুরাইহ রহ.। তিনি একজন বড় মাপের প্রসিদ্ধ আলেম ছিলেন। তাঁর কাছ থেকে ইলম শেখার জন্য সব অঞ্চল থেকে মানুষ আসত। তিনি তাদেরকে শেখাতেন। এরই মধ্যে কখনো তার মা বলতেন, হাইয়াহ, ওঠো, মুরগীকে খাবার দাও। সাথে সাথে তিনি ক্লাস থেকে ওঠে যেতেন।
পিতা-মাতাকে কষ্ট দেয়ার নানা প্রকৃতির হতে পারে। যেমন-
-তাদের কথায় ভ্রু কুঁচকানো বা বিরক্তি প্রকাশ।
-তাদের সাথে উচ্চস্বরে কথা বলা।
-তাদের ধমক দিয়ে কথা বন্ধ করে দেয়া।
-তাদের ওপর কোনো মতামত চাপিয়ে দেয়া।
আর এসব আচরণ তো সাধারণ জ্ঞানী-গুণীরাই অপছন্দ করেন। পিতা-মাতার সাথে তো আরো অধিক অপছন্দনীয় বিষয় হবে।
-তাদের দিকে ক্ষিপ্তদৃষ্টিতে তাকানো, যেন তার এক সন্তানের দিকে শাসন করার উদ্দেশ্যে তাকাচ্ছে, বা শত্রুর দিকে তাকাচ্ছে।
-তাদের প্রয়োজন মেটাতে বিলম্ব করা।
“পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার” প্রবন্ধটি বিস্তারিত পড়ার জন্য: ••► bn.islamkingdom.com/s2/46646
বিষয়: বিবিধ
৮৩০ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন