ইখলাস
লিখেছেন লিখেছেন ইসলাম কিংডম ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১১:২৪:২১ রাত
ইখলাস একটি মহৎ বিষয়, আমল কবুল হওয়ার অন্যতম এক স্তম্ভ। কেননা আল্লাহ তাআলা বান্দার কোনো আমলই কবুল করেন না যদি তা একমাত্র তাঁরই উদ্দেশ্যে, একমাত্র তাঁকেই রাযি-খুশী করার জন্য সম্পাদিত না হয়। যে আমলে আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে উদ্দেশ্য করা হয়, অন্য কাউকে শরীক করা হয়, যে আমলে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও রেযামন্দী তালাশ করা হয়, সে আমল যত বড়োই হোক বাহ্যিকভাবে যত সুন্দরই হোক আল্লাহর কাছে আদৌ গ্রহণযোগ্য হয় না। আমলের পিছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য নয়, বরং একমাত্র লা-শরীক আল্লাহ তাআলাকে উদ্দেশ্য করা, লোক দেখানো এবং মানুষের প্রশংসা কুড়ানোর মানসিকতা পরিহার করে একমাত্র আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি অর্জনকে উদ্দেশ্য করার নামই হল ইখলাস। আল্লাহ তায়া’লা বলেন: নিশ্চয় আমি তোমার কাছে যথাযথভাবে এই কিতাব নাযিল করেছি অতএব আল্লাহর ইবাদাত কর তাঁরই আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে। জেনে রেখ, বিশুদ্ধ ইবাদাত-আনুগত্য আল্লাহরই প্রাপ্য (সূরা আয যুমার:৩)।
আমল যদি ইখলাসশূন্য হয়, ইখলাস থেকে বিচ্যুত হয় তাহলে তা বান্দার পক্ষে না গিয়ে তার বিরুদ্ধে চলে যায়। আবূ হুরাইরা রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: কিয়ামতের দিন সর্বপ্রথম যার বিচার করা হবে, সে হলো এমন ব্যক্তি, যে শহীদ হয়েছিল। তাকে হাজির করা হবে এবং আল্লাহ তার নিয়ামতের কথা তাকে বলবেন। আর সে তাকে দেয়া সকল নিয়ামতের কথা স্বীকার করবে। তখন আল্লাহ তাকে বলবেন, তুমি কী কাজ করে এসেছ? সে বলবে, আমি আপনার পথে যুদ্ধ করেছি, শেষ পর্যন্ত শহীদ হয়েছি। আল্লাহ বলবেন: তুমি মিথ্যা বলেছ। তুমি তো যুদ্ধ করেছ লোকে তোমাকে বীর বলবে, এ উদ্দেশ্যে। আর তা বলা হয়েছে। অতঃপর নির্দেশ দেয়া হবে, এবং তাকে টেনে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
তারপর এমন ব্যক্তির বিচার করা হবে, যে নিজে জ্ঞান অর্জন করেছে ও অন্যকে শিক্ষা দিয়েছে এবং কুরআন তিলাওয়াত করেছে। তাকে হাজির করা হবে। আল্লাহ তাকে তাঁর নিয়ামতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। সে তা স্বীকার করবে। অতঃপর তিনি তাকে জিজ্ঞেস করবেন, কী কাজ করে এসেছ? সে বলবে, আমি জ্ঞান অর্জন করেছি, অন্যকে শিখিয়েছি এবং আপনার জন্য কুরআন তিলাওয়াত করেছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছ। তুমি জ্ঞান অর্জন করেছ এ জন্য যে লোকে তোমাকে জ্ঞানী বলবে। কুরআন তিলাওয়াত করেছ এ উদ্দেশ্যে যে, লোকে তোমাকে কারী বলবে। আর তা বলা হয়েছে। অতপর আল্লাহর নির্দেশে তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
তারপর বিচার করা হবে এমন ব্যক্তির, যাকে আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতে সকল ধরনের সম্পদ দান করেছিলেন। তাকে হাজির করে আল্লাহ তার নিআমতের কথা স্মরণ করিয়ে দিবেন। সে সকল নেয়ামত স্বীকার করবে। আল্লাহ তাআলা বলবেন, কী করে এসেছ? সে বলবে, আপনি যে সকল খাতে খরচ করা পছন্দ করেন আমি তার সকল খাতে সম্পদ ব্যয় করেছি, কেবল আপনারই জন্য। আল্লাহ তাআলা বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছ। তুমি সম্পদ এ উদ্দেশ্যে খরচ করেছ যে, লোকে তোমাকে দানশীল বলবে। আর তা বলা হয়েছে। এরপর নির্দেশ দেয়া হবে এবং তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে (মুসলিম)।
অন্য এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি অন্যদেরকে শুনানোর উদ্দেশ্যে নেক-আমল করল, আল্লাহ তা শুনিয়ে দিবেন। আর যে ব্যক্তি অন্যদের দেখানোর উদ্দেশ্যে নেক-আমল করল আল্লাহ তা দেখিয়ে দিবেন (বুখারী)।
অর্থাৎ এ ব্যক্তির নিয়ত অনুযায়ী মানুষদেরকে তার আমল দেখিয়ে দেয়া হবে এবং সে মানুষের প্রশংসাও কুড়াবে, তবে পরকালে তার আমলের বিনিময়ে আদৌ কোনো ছাওয়াব পাবে না। ইখলাসসম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানার জন্য: bn.islamkingdom.com/s2/46689
বিষয়: বিবিধ
৯৮০ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন