বাঙালী মুসলিমদের দুর্দশা; নেপথ্যে কিছু ওভার জ্ঞানী

লিখেছেন লিখেছেন মুহাম্মদ মামুন ১২ এপ্রিল, ২০১৬, ০৫:০৭:৪৪ বিকাল



ভূমিকা:

মা-বাবার দেওয়া নাম ছিল আবুল খায়ের (উত্তম বা ভালোর জনক)। ব্যাকডেটেড মনে করে নাম পরিবর্তন করলাম মি. পারফেক্ট। আপডেটেড নামের সাথে কর্মযজ্ঞও উন্নত হওয়া চাই। শুরু করলাম গবেষনা এবং গবেষনার জন্য বিষয়বস্তুও নির্বাচন করলাম; আমার দু’টি পা’য়ের একটি পা। সবার মত আমার পা’ টিতে অনেকগুলো চুল আছে, পাঁচটি আঙুল আছে, একটি গোড়ালী আছে, একটি হাটু আছে যেটাকে বাকা করার মাধ্যমে হাটা-চলা করি, দৌড়াই, এবং উঠেতে বসতে এই হাটুর বাজ আমাকে অনেক সাহায্য করে। এত উপকারী একখানা পা যদি না থাকতো তবে কেমন হতো! পরীক্ষা করে দেখা উচিত। পা’ টিকে কেটে ফেল্লাম! কত মানুষই তো এক পায়ে হাটে, আমিও না হয় এক পায়ে হাটবো!! জীবনের সব থেকে বড় সর্বনাশের দেখা নিজের হাতেই পেলাম ! একবারের জন্যও ভাবিনি যে, সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যাবো।

কাল্পনিক হলেও সত্য যে এমন হাজারো ওভার জ্ঞানী আমাদের বাংলাদেশের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। তারা এতটাই ওভার জ্ঞানী যে ভুলেও তারা বুঝতে পারেনা; আসলে তারা আউট অব জ্ঞানের বাইরে চলে গেছে!

ওভার জ্ঞানীদের দলসমূহ:

১। মুক্তমনা (স্বঘোষিত): যাদের মন মুক্ত চিন্তা করতে পারে তারাই মুক্ত মনা! তাদের চিন্তা চেতনায় কোন বাধার অবকাশ থাকেনা। চিন্তা থেকে চেতনা, চেতনায় কর্মযজ্ঞ। চেতনায় যা আসবে তাই করার স্বাধীনতাও থাকতে হবে। চক্ষুলজ্জা কিংবা জবাবদিহীতার কোন প্রশ্ন এখানে অবান্তর। নির্দিষ্ট কোন নিয়ম নীতির বাইরে গিয়ে মন যা চাইবে তাই বলে বেড়ানো এবং কর্মে পরিনত করাই মুক্তমনার পূর্বশর্ত। সে অর্থে শিশু এবং পাগল ছাড়া আর কেউ মুক্তমনা হতে পারে না।

২। ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ (স্বঘোষিত): সহজে বলা যায় নির্দিষ্ট কোন ধর্মের প্রয়োজন নাই। বেঁচে থাকার সুবিধার্থে যে কোন একটি কিংবা একাধিক ধর্মের অনুসরন করা যাবে। মানুষের জন্য ধর্ম, ধর্মের জন্য মানুষ না! কাজেই মানুষের ফায়দা হাসিলে যে ধর্ম বেশি কার্যকরি তাকেই অনুসরন করো। আর যদি ধর্ম কারো ক্ষতির কারণ হয় তবে ধর্মকে ত্যাগ করাই উত্তম। ধনাঢ্য ব্যক্তির খাবারের কোন অভাব নেই, বিরাট অট্টালিকায় তার বসবাস, বেঁচে থাকার জন্য যত প্রকার ভোগ বিলাশ দরকার সবই তার আছে। প্রকৃত অর্থে সেও এক জন মানুষ। আবার হতদরিদ্র ব্যক্তিটিও একজন মানুষ অথচ তার খাবারের কোন ব্যবস্থা নাই, থাকার মত কোন ঘর নাই। ধর্ম বলে, যার কিছু নাই তাকে যেন যার আছে সে সাহায্য করে। ধর্ম তাহলে একজন মানুষের বিপক্ষে চলে গেল আর একজন মানুষের পক্ষে চলে আসল। এখন প্রশ্ন হচ্ছে কে আসল মানুষ? ধর্ম মানুষকে স্বেচ্ছাচারি হতে নিষধ করে, কারো প্রতি যুলুম অবিচার করতে বারন করে। আর ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ মানুষের অবাদ স্বাধিনতাকে উস্কে দেয়। মানুষ স্বেচ্ছাচারি হতে বাধ্য হয়। প্রকৃত সত্য হলো, ভন্ডামীর চরম পর্যায় হচ্ছে এই ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ! আর মানবতার জন্যই ধর্ম।

৩। ধর্মব্যাবসায়ী (স্বঘোষিত নয়): সমাজের শীর্ষে ওঠার জন্য ধার্মিক সেজে, ধর্মকে ঢাল বানিয়ে অপরের সাথে বিবাদে জড়িয়ে ধর্মীয় বক্তিতার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের সমর্থন আদায়ে এরা খুবই পারদর্শি। এরা গ্রাম থেকে শুরু করে বড় বড় শহরের আনাচে কানাচে পঙ্গপালের মত ছড়িয়ে রয়েছে। এমনকি রাজনৈতিকবীদরাও আজকাল বড় বড় ধর্মব্যবসায়ী রূপে আবির্ভূত হচ্ছেন। ধর্মীয় অবস্থানে এরা যাযাবরের মত। ধর্মভীত্তিক কোন একটি দলের সাথে এরা বেশি দিন থাকতে পারে না। অর্থাৎ ব্যক্তি স্বার্থই এদের কাছে বিবেচ্য, ধর্ম নয়। তারা আদৌ বুঝতে পারে কিনা যে, ধর্মের দোহাই দিয়ে অনেক কিছুই করা সম্ভব তবে মানবতাকে টিকিয়ে রাখা সম্ভব না।

৪। অন্ধবিশ্বাসী (স্বঘোষিত নয়): বংশ পরম্পরায় যা চলে আসছে তা আজ কেন ছাড়তে হবে? অন্ধবিশ্বাসীদের প্রথম প্রশ্ন। আমার দাদা করতো, বাবা করতো; তারা কি ভুল করেছে? তারা যদি ভুল করে থাকে তাহলে আমাদের ভুল করতে কোন অসুবিধা নাই। তাদের বোঝা উচিত ছিল পরীক্ষা সবাই ই দেয় কিন্তু সবাই পাশ করতে পারেনা। সবাই মানুষ হয়েই জন্মায় কিন্তু মরার আগে সবাই মানুষ থাকে না।

৫। চরমপন্থী (স্বঘোষিত নয়): মানুষ কোন ভুল করতে পারবে না। ভুল করলেই শাস্তি পেতে হবে। পান থেকে চুল খসলেই সে আর মানুষের কাতারে থাকতে পারে না। নতুন করে তওবার মাধ্যমে তাকে আবার মানুষের কাতারে প্রবেশ করতে হবে। নয়তো সে সোজা নরকে চলে যাবে। ফেরেশ্তার মত মানুষ ছাড়া অন্য কারো সাথে কোন প্রকার আত্নীয়তার সম্পর্ক রাখা যাবে না। তারা জেনেও যেন বুঝতে পারেনা যে, মানুষ মাত্রই ভুল করে থাকে। একমাত্র ইবলিশের কোন ভুল হয় না।

৬। জঙ্গি: (স্বঘোষিত নয়): এরা হচ্ছে স্বঘোষিত ধর্মযোদ্ধা! সরকার বা প্রশাসনের প্রতি ক্ষুব্ধ হয়ে সাধারণ, নিরীহ মানুষকে হত্যার মাধ্যমে এরা প্রতিবাদ জানিয়ে ধর্মীয় উম্মাদনা প্রতিষ্ঠীত করতে চায়। যারা ধর্মকে পূর্ণভাবে পালন করবে না তাদের বেঁচে থাকাও যা আবার মরে যাওয়াও তাই। তাদের মৃত্যুতে যদি প্রশাসন চাপে পড়ে কিছুটা হলেও জঙ্গিদের দাবি মেনে নেয় তো খুবই ভালো। সরকার ধর্মবিরোধী তাই সরকার উৎখাত করতে হবে। সে জন্য সাধারণ জনগণকে অস্ত্র বানিয়ে এরা সরকারের সাথে ধর্মীয় যুদ্ধ করবেই করবে। বিনিময়ে তারা জান্নাতে যেতে পারবে। জান্নাত যেন তাদের জন্যই বরাদ্ধ! তারা হয়ত জেনেও জানেনা যে, পৃথিবীর মানুষকে বোকা বানানো গেলেও স্রষ্টাকে কখনো বোকা বানানো যায়না।

৭। শিক্ষিত পন্ডিত: এরা জন্ম থেকেই পন্ডি টাইপের মানুষ। এরা হয়ত বড় বড় ডিগ্রিও অর্জন করেছে। কখনও যদি এদের কে বলা হয় ভাই, আপনার একাজটি করা উচিৎ হয়নি; হাসিমুখে বলবে আমাকে জ্ঞান দিতে আসবেন না। অনেক দেখেছি অনেক শুনেছি। আর কত শিখব? আসলেই এরা অনেক শিখেছে কিন্তু ভুলে গেছে, শিক্ষার কোন শেষে নেই।

শেষ কথা: আমাকে কেউ ওভার জ্ঞানী ভাবলেও ভাবতে পারেন। যাই করুন না কেন আপনার জ্ঞানের মাত্রা থেকেই তো করবেন! তবে জেনে রাখবেন ওভার জ্ঞানীরাই দিন দিন ইসলামকে কলুষিত করছে। এদের থেকে নিজে বাঁচুন এবং আপনার পরিবারকেও বাঁচিয়ে রাখুন।

বিষয়: বিবিধ

৮১৮ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

365509
১২ এপ্রিল ২০১৬ সন্ধ্যা ০৬:৪৮
শেখের পোলা লিখেছেন : কথাতো ঠিক কিন্তু পরখ করারতো কোন মিটার নেই৷ এখানেই যত সমস্যা৷ধন্যবাদ৷

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File