ভ্রাতৃত্ব বন্ধন ইসলামের বৈশিষ্ট

লিখেছেন লিখেছেন মুফতি মুহাম্মাদ শোয়াইব ১৮ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:২৯:০৭ রাত



ইসলামের অন্যতম বৈশিষ্ট হলো, তা মানুষের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠা প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়। মুমিনদের পরষ্পর বিবাদ-বিসংবাদ দূর করে তাদের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠা করা ইসলামের অন্যতম শ্রেষ্ঠ গুণ। মুমিনদের পরষ্পর ভ্রতৃত্ববোধ যত দৃঢ় ও মজবুত হবে ততই তাদের পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে শান্তি বিরাজ করবে। ভ্রাতৃত্বের এই বন্ধন ইসলামি সমাজের মূল ভিত্তি। এই ভ্রাতৃত্বে যখন ফাটল ধরবে, তখন ইসলামি সমাজ আপন স্বকীয়তা হারাবে।

ইসলামে ভ্রাতৃত্বের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই ইসলাম মুমিনদের পরষ্পর বিবাদে লিপ্ত হওয়াকে অত্যন্ত খারাপ মনে করে। তাদের মাঝে যখনই কোনো বিবাদ বিসংবাদ সৃষ্টি হয়, তৎক্ষণাত তা নিরসনের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে নির্দেশ দেয়। এ প্রসঙ্গে কোরআনে বলা হয়েছে, ‘মুমিনদের দুই দল লড়াইয়ে লিপ্ত হলে তোমরা তাদের মাঝে মীমাংসা করে দিবে। অতঃপর যদি তাদের মাঝে একদল অপর দলের ওপর সীমালঙ্গন করে তাহলে তোমরা সীমালঙ্গনকারী দলের বিরুদ্ধে লড়াই করবে, যতক্ষণ না তারা আল্লাহর হুকুমের দিকে ফিরে আসে। যদি তারা ফিরে আসে, তাহলে তোমরা উভয় দলের মাঝে ন্যায়ের সাথে মীমাংসা করবে। নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা সুবিচারকারীদেরকে ভালোবাসেন। মুমিনগণ পরষ্পর ভাই ভাই। সুতরাং তোমরা তোমাদের ভাইদের মাঝে মীমাংসা কর আর আল্লাহ তায়ালাকে ভয় কর, যাতে তোমরা রহমত লাভ করতে পার’। এই আয়াতে মুমিনদের দুটি দল যখন বিবাদে লিপ্ত হয়, তাদের মধ্যের বিবাদ নিরসনে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহিক ওয়াসাল্লাম সকল মুমিন মুসলমানের মাঝে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করার ঘোষণা করেন, ‘এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই’। রাসুল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে জীবদ্দশায় কেরামের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠা করে তার বাস্তব নমুনা তার দেখিয়ে দিয়ে গেছে। মুহাজির সাহাবাগণ যখন মদিনায় হিজরত করেন, তখন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনসার ও মুহাজিরদের মাঝে ভ্রাতৃত্বের সম্পর্ক সৃষ্টি করে দেন। সেই ভ্রাতৃত্ব বন্ধন এত দৃঢ় ছিল যে, আনসার সাহাবিগণ মুহাজিরদেকে আপন ব্যবসা ও সম্পদে অংশীদার করে নেন। আনসারদের কারো কারো একাধিক স্ত্রী ছিল, তারা তাদের মুহাজির ভাইদের জন্য কোনো কোনো স্ত্রীকে পরিত্যাগ করেন, যাতে মুহাজির ভাইয়েরা বিবাহ করতে পারে।

মুমিনগণ পরষ্পর যদি বিবাদ বিসংবাদে লিপ্ত হয় তাহলে অতিদ্রুত তা নিরসণ করতে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তারা যদি একে অপরকে ভুল বুঝে বিবাদে লিপ্ত হয়ে থাকে তাহলে তাদেরকে বুঝিয়ে যাবতীয় ভ্রান্তি দূর করতে হবে। এই পদক্ষেপে তারা যদি ইতিবাচক সাড়া না দেয় তাহলে কঠোরতার পথ অবলম্বন করতে হবে। তবুও মুমিনদের মাঝে পারষ্পরিক দ্বন্দ্ব রাখা যাবে না। প্রয়োজন হলে তাদেরকে সাামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে।

আমাদের সমাজে মুমিনগণ আজ শতধা বিভক্ত। তারা আজ অতি নগন্য বিষয়ে পারষ্পরিক দ্বন্দ্বে লিপ্ত। বিশেষত ওলামায়ে কেরামের মাঝে এই ব্যধি অত্যন্ত প্রকাটভাবে দেখা যায়। বিরাজমান দ্বন্দ্ব জাতির জন্য যে অত্যন্ত অশনি সংকেত, সেটা আশা করি কারো বুঝতে বাকি থাকেনি। তাদের পারষ্পরিক দ্বন্দ্বের কারণে সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষ বিভ্রান্ত। তারা বুঝে উঠতে পারছে না, কোন দল হক ও সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত, আর কারা ভ্রান্ত। আত্যন্ত পরিতাপের বিষয় হলো, ঈমানের ও প্রশ্নেও ওলামায়ে কেরাম এক প্লাটফর্মে আসতে পারেনি। রাজনৈতিক পরিচয় বাদ দিয়ে অন্তত ঈমানের প্রশ্নে সকলকে এক হওয়া উচিত ছিল। কেউ নাস্তিকদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছে আর কেউ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নীরব ভূমিকা পালন করছে। আবার কেউবা ভিন্ন দল বা ব্যানার নিয়ে আন্দোলন করছে। প্রত্যেক দলের দাবী বা আন্দোলন ইস্যূ যদি অভিন্ন হয় তাহলে ভিন্ন আন্দোলনের প্রয়োজন কোথায়? আর যখন আন্দোলন আলাদা প্লাটফর্মে থেকেই করতে হয় তাহলে কাদা ছোড়াছুড়ি কেন? এটা কোনো আলেমের প্রকৃত পরিচয় হতে পারে না। মুমিন পরষ্পর ভাই ভাই। এখানে রক্তের ভ্রাতৃত্বের চেয়ে দ্বীনি ভ্রাতৃত্ব বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাই দ্বীনি কাজে বিভিন্ন ফেরকা থাকা উচিত নয়। বরং সকলকে এক প্লাটফর্মে এসে কাজ করা উচিত। যদি দ্বীনের দিক থেকে ভ্রাতৃত্ব বন্ধ না থাকে তাহলে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের কোনো মূল্য থাকে না। রাসুল সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘মুমিগণ পরষ্পর মায়া মমতা ও সম্পর্কের দিক থেকে একটি দেহের ন্যায়। যার একটি অঙ্গ ব্যথিত হলে সকল অঙ্গ জরাক্রান্ত নিদ্রাহীন হয়ে পড়ে’। অন্য হাদিসে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, মুমিনগণ প্রাচীরের ন্যায়, যার একটি গাথুনি অপরটিকে আকড়ে থাকে। পারষ্পরিক বিরোধ নিষ্পত্তির মূল সূত্র হলো ভ্রাতৃত্ব বন্ধন। ভ্রাতৃত্বের এই সূত্রই মূলত মুমিনের জীবনের চালিকা শক্তি। তাই এই শক্তিকে সচল রাখতে হবে।

শিক্ষক, জামিয়া রহমানিয়া সওতুল হেরা মাদরাসা,

পূর্ব আরিচপুর, টঙ্গী, গাজীপুর।

رئيس التحرير لمجلة الحراء الصادرة من بنغلاديش شهريا

বিষয়: বিবিধ

১৪২৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File