মিডল ইস্ট আই-এর সাথে এক সাক্ষাৎকারে তারিক রমাদান সন্ত্রাসবাদ কোনো ধর্মীয় আদর্শ নয়

লিখেছেন লিখেছেন awlad ২১ এপ্রিল, ২০১৬, ০৩:৪৯:৪৪ রাত

মিডল ইস্ট আই-এর সাথে এক সাক্ষাৎকারে তারিক রমাদান

সন্ত্রাসবাদ কোনো ধর্মীয় আদর্শ নয়

২০ এপ্রিল ২০১৬,বুধবার, ১৭:৩২

প্রিন্ট

18

0

0

Google

0

18

[তারিক রমাদান- সুইস শিক্ষাবিদ, বুদ্ধিজীবী ও লেখক। টাইম ম্যাগাজিনের জরিপ অনুযায়ী একুশ শতকে পৃথিবীর সেরা ১০০ বিজ্ঞানী ও চিন্তাবিদের মধ্যে অন্যতম একজন। এ ছাড়া ফরেন পলিসি ম্যাগাজিনের অনলাইন জরিপে সমসাময়িক ১০০ জন সেরা বুদ্ধিজীবীর তালিকায় তার অবস্থান ৪৯তম। তিনি অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ধর্মতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক। ত্রিশটির বেশি বই লিখেছেন এবং বিশ্বের অসংখ্য বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা করেছেন। তার লিখিত প্রবন্ধের সংখ্যা সাত শতাধিক।

তারিক রমাদান ১৯৬২ সালে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় জন্মগ্রহণ করেন। মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতিষ্ঠাতা হাসান আল বান্না ছিলেন তার নানা। তার বাবা সাইদ রমাদানও ব্রাদারহুডের একজন প্রথম সারির নেতা ছিলেন। মিসরের স্বৈরশাসক জামাল আবদুন নাসের সরকার তাকে দেশ থেকে বহিষ্কার করলে তিনি পরিবারসহ সুইজারল্যান্ডে চলে যান। সেখানে জন্ম হয় তারিক রমাদানের। তারিক রমাদান জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর এবং মিসরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ইসলামি শিক্ষা অর্জন করেন। তিনি তার লেখা ও বক্তৃতায় ইসলামি পুনর্জাগরণ, বিশেষ করে পাশ্চাত্য ও সমকালীন বিশ্বে ইসলাম সম্পর্কিত ভুল ধারণাগুলো দূর করতে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। তার শত্রু-মিত্র নির্বিশেষে সবাই স্বীকার করেন যে, ইসলামি পুনর্জাগরণে তার অবস্থান এখন মধ্যগগনে। সম্প্রতি তিনি মিডল ইস্ট আই (এমইই)-এর সাথে এক সাক্ষাৎকারে বর্তমান বিশ্বপরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন। তার ওই সাক্ষাৎকার অনুবাদ করেছেন আশরাফ হায়দার চৌধুরী।]

মিডল ইস্ট আই (এমইই) : বর্তমানে সন্ত্রাসবাদের যে ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে ইসলামের নামে, সমাজ সংস্কারের নামে এটা কি গ্রহণযোগ্য? অন্য কথায় ইসলাম ও সন্ত্রাসবাদ নিয়ে চলমান বিতর্কে অলিভার রয় ও গিলেস ক্যাপেলের মতে, প্রগতিবাদের নামে ইসলাম কি আরো বিচ্ছিন্নতাবাদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে?

তারিক রমাদান : আমি মনে করি তাদের কেউই শতভাগ সঠিক নন। আমাদের এটা স্বীকার করতে হবে যে, প্রতিটি বাস্তব বিষয়েরই বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা আছে। যখনই আমি বলেছিলাম যে, সন্ত্রাসীরা মুসলমান নয়, তখনই আমি স্বীকার করে নিলাম যে, তারা আসলে কী। আমি তাদেরকে যেভাবে চিহ্নিত করব তারা অন্যদের সেভাবেই চিহ্নিত করতে চাইবে। কোনো বিষয়ের অপব্যাখ্যার সঠিক জবাব হলো শাস্ত্রে ওই বিষয়ে কী ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে তা তুলে ধরা।

সর্বোপরি, যেসব যুবক জিহাদের মাধ্যমে মুক্তি আনতে চাইছে তারা তিনটি বিষয় মোকাবেলা করছে। প্রথমত, তারা বুঝতেই পারছে না যে, তাদের রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণের মধ্যেই ঝুঁকি রয়েছে। কেন তারা দলে দলে সিরিয়ায় যাচ্ছে? ফিলিস্তিনিদের রক্ষায় কেন তারা একইভাবে এগিয়ে আসছে না? অথচ সিরিয়া ইস্যুর চেয়ে ফিলিস্তিন ইস্যুটি অনেক প্রাচীন। সিরিয়ার মতো প্রতিরোধ ফিলিস্তিনে গড়ে তোলা গেলে এত দিনে নিশ্চিত বিজয় এসে যেত।

এরপর যে বিষয়টি হৃদয়ঙ্গম করা জরুরি তা হলো- সন্ত্রাসবাদ কোনো ধর্মীয় বিষয় নয়। ২০০৫ সালে লন্ডনে বোমা হামলার পর গঠিত ইউকে টাস্কফোর্সের মতে, ৯২ শতাংশ (বর্তমানে ৮৭ শতাংশ) মুসলমানের মতামত ছিল এ ধরনের হামলাকে জিহাদ বলে না। আমার মনে হয় যারা হামলার পরিকল্পনা করেছে তারা হতাশাগ্রস্ত ছিল। তাদের জীবন ছিল কুয়াশাচ্ছন্ন। তাদের সবাই হয়তো এমনটা ছিল না, তবে তাদের অনেকেই ছিল হতাশ ও বিরক্ত। মাঝে মধ্যে আমরা মানসিকভাবে চরম হতাশায় ভেঙে পড়ি। যুক্তরাষ্ট্রেও অনেকে ঋণের ভারে বা অন্য কোনো হতাশায় এ ধরনের পথে পা বাড়ায়। এটি কোনো ধর্মীয় আদর্শ নয়।

সবশেষে, তাদের নিয়োগকারীদের কথা ভুলে যাবেন না। কথিত জিহাদের ময়দানে যুবকদের আনার পেছনে উদ্বুদ্ধকারীরা কিন্তু পর্দার আড়ালেই থেকে যান। তারা খুবই দক্ষ এবং অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী। আমরা দুই তরুণীর কথা জানি কিভাবে তাদের সিরিয়া যেতে বাধ্য করা হয়েছিল। তাদের মধ্যে একজন তার বন্ধুর খোঁজে সেখানে গিয়েছিল। পরে বন্ধুটি সেখানে নিহত হলে বন্ধুর মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতে তরুণীটি আইএসে যোগ দেয়। এখানে ধর্মীয় বিশ্বাসের কিন্তু কোনো ভূমিকা নেই। এখানে একটি মৃত্যু তার ধর্মীয় বিশ্বাসকে কেবল প্রভাবিত করেছে।

এমইই : তিউনিসিয়ার রাজনৈতিক দল ‘অ্যানাহডা’ তাদের ‘তাকফিরি’ আন্দোলনের বিষয় বর্ণনা করতে গিয়ে ‘ইসলামিজম’ শব্দটি ব্যবহার করেছিল। এখন এই শব্দটি যত্রতত্র ব্যবহার হচ্ছে বলে মনে হয় না?

তারিক রমাদান : হ্যাঁ, সব কিছুরই একটি সঠিক নামকরণ হওয়া উচিত। নামকরণের বিভ্রান্তি বা পরিভাষাগত বিভ্রান্তি থেকে রাজনৈতিক বিভ্রান্তির সূচনা হতে পারে। ইসলামিজম হচ্ছে মুসলমানদের জন্য কিছু সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিকল্পনা। এতে আমরা বিভিন্ন ক্যাটাগরি দেখতে পাই। যেমন নীতিগত, ঐতিহ্যগত কিংবা বৈপ্লবিক। এর মধ্যে আবার কিছু বিপ্লবী আছে অহিংস, কিছু আছে চরম সহিংস। আবার এমনও আছে যারা এই শব্দটা আক্ষরিকভাবে ব্যবহার করতে চায়। যেমন মিসরের হিজব-আল-নূর পার্টি। তারা একসময় গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে। এখন তারা রাজনীতিতে আসতে চাইছে। বলা হয়ে থাকে যে, আইএসের উৎপত্তি নাকি মুসলিম ব্রাদারহুড থেকে এবং এখনো আইএসকে তারা মদদ দিচ্ছে। এ ধরনের প্রচারের উৎপত্তিস্থল আসলে ইসরাইল। ইসরাইলি সরকারের অভিযোগ আইএস ও হামাস একই গ্রুপ। এ ধরনের বক্তব্যের মাধ্যমে তারা মুক্তিকামী মুসলমানদের সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করতে চায়। বিষয়টি একেবারেই অনৈতিক।

এমইই : ইউরোপের সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলাগুলোর বিষয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠছে এসব বিষয়ে ইউরোপের মুসলমানদের পদক্ষেপ কী হওয়া উচিত? তারা কি শুধু নিন্দা জানিয়ে দুঃখ প্রকাশের মাধ্যমেই তাদের কর্তব্য শেষ করবে?

তারিক রমাদান : আমরা যদি মনে করি ওই সব সন্ত্রাসী হামলায় জড়িতরা প্রকৃত মুসলমান তাহলে নিন্দা জানাতে আমার কোনো সমস্যা নেই। কারণ এটি ভুল পন্থা। আমার দৃষ্টিকোণ থেকে আমি যদিও ক্ষমাপ্রার্থী হবো না তবে অবশ্যই ভুল পদক্ষেপের নিন্দা করব। আপনি যেকোনো বিষয়ের পক্ষে ও বিপক্ষে বিতর্কের অবসান করতে পারবেন না। দুই পক্ষই নিজ নিজ পক্ষে সীমাহীন যুক্তি দেখিয়ে যাবে। এর অবসান করা যাবে না। এটা খুবই জটিল। যখনই আপনি কোনো কিছুর নিন্দা করবেন, তখনই আপনাকে ওই কাজটির পরিণতি সম্পর্কে চিন্তা করতে হবে। আপনাকে বুঝতে হবে- আমি যার নিন্দা ও প্রতিবাদ করছি তার পরিণতি কী, ফলাফল কী? সাধারণভাবে কোনো সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর আমরা যখন তার নিন্দা জানাই তখন আমাদের আরেকটি দায়িত্ব এসে যায়। আর তা হলো এমন পদক্ষেপ নেয়া যাতে ওই ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে আর না ঘটে। কিন্তু ইউরোপে হামলার পর ফ্রান্সিসকো হলান্ডি কিংবা ম্যানুয়েল ভ্যালের মতো নেতারা যখন বলেন, ‘আর কিছু বোঝার দরকার নেই, আমাদের সব কিছু বোঝা হয়ে গেছে।’ তখন আমরা ২০১১ সালে দেয়া জর্জ ডব্লিউ বুশের বক্তব্যের প্রতিধ্বনিই শুনতে পাই। আমরা চিন্তা করি না মালি, আইভোরি কোস্ট, বাগদাদ কিংবা তুরস্কে হামলায় হতাহতদের কথা।

এমইই : আইএস সত্যিকার অর্থে কিসের জন্য লড়াই করছে? তারা কি শুধু আমাদের নিরাপত্তাকে হুমকি দিচ্ছে না?

তারিক রমাদান : আপনি কি মনে করেন ইরাক আর সিরিয়ায় এই সংগঠন ঘটনাচক্রে গড়ে উঠেছে। আলকায়েদা হচ্ছে এ ধরনের প্রথম সংগঠন। তেল এবং খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ এলাকাগুলোতে তাদের বিচরণ। তারা ঘাঁটি গেড়েছে আফগানিস্তানে। যেখানে মাটির নিচে রয়েছে তেল আর বহু মূল্যবান লিথিয়াম। উত্তর মালির মাটি পরিপূর্ণ ইউরেনিয়ামে। শুধু এ কারণেই সেখানে সন্ত্রাসীদের শ্যেন দৃষ্টি। এখন প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিকÑ এসব সংগঠনকে ওই সব এলাকায় কারা পাঠাচ্ছে? কারা তাদের মদদ দিচ্ছে? উত্তরটা সবারই জানা। কিছু ‘আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়’ নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য তাদের বিভিন্ন স্থানে পাঠাচ্ছে। পরে সন্ত্রাস দমনের নামে তারা সেখানে অভিযান চালিয়ে সব কিছু নিজেদের আয়ত্তে নিয়ে নিচ্ছে।

একইভাবে আইএস সিরিয়া ও ইরাকে গুরুত্বপূর্ণ খেলা খেলছে। সিরিয়ার অবস্থা এখন এমন দাঁড়িয়েছে যে, বাসার আল আসাদ বিদায় নিলেও সেখানকার পরিস্থিতির হয়তো খুব একটা পরিবর্তন হবে না। দেশটির রাজনৈতিক পরিস্থিতি সত্যিই খুব নাজুক অবস্থানে পৌঁছে গেছে।

এরপর যে সংগঠনটিকে বলা হচ্ছে ‘ইসলামিক স্টেট’ তারা আরো গভীর সমস্যার সৃষ্টি করছে। সত্যিকার অর্থে মিসর, ইরাক অথবা তিউনিসিয়ায় কোনো ইসলামি পার্টিই ইসলাম এবং মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব করছে না। বর্তমানে ইসলামি রাজনীতি একটি সঙ্কটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, যদিও এই সঙ্কটের দরকার ছিল। কেননা এর মাধ্যমে চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন আসতে পারে। বস্তুত এ মুহূর্তে ইসলামি রাজনীতির ইতিবাচক পর্যালোচনা জরুরি। সেকুলারিজম আর ইসলামিজম- মুসলিম সমাজকে এই দ্বৈত মতামতের সমর্থন পরিহার করতে হবে। ২০১১ সালে আরব বসন্তের সময় আমি চিন্তা করছিলাম- এটা কী হচ্ছে? এত আরব দুনিয়া থেকে রাজনীতি উচ্ছেদের মতো ক্ষতিকর দৃষ্টান্ত তৈরির পাঁয়তারা। শেষ পর্যন্ত আমার আশঙ্কাই সত্য হলো।

এমইই : ২০১১ সালের আরব বসন্তের পর মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে যে ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে তাকে আপনি সত্যিকার অর্থে কিভাবে মূল্যায়ন করবেন? উদাহরণ হিসেবে বলা যায় মিসরে সিসির রাজনীতিকে আপনি মুবারকের রাজনীতি থেকে কিভাবে আলাদা করবেন?

তারিক রমাদান : আমার মতে, ‘বিপ্লব’ খুব দ্রুত ঘটে গেছে। আরব বসন্তের পরপরই আমি আশাবাদী হয়েছিলাম। তবে তা ছিল ভয় মিশ্রিত। আমার মনে হয়েছে আমরা রাজনীতিকে খুব বেশি গুরুত্ব দিতে গিয়ে অর্থনীতিকে উপেক্ষা করেছি। যেমন- মিসরে কী ঘটল? মুবারক ও তার সন্তানের দুর্নীতিগ্রস্ত শাসনের বিরুদ্ধে একটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটল। এরপর মুবারক সরকার আরো খোলাখুলিভাবে চীন ও ভারতের সাথে যোগাযোগ শুরু করল। আরো ব্যাপকভাবে চিন্তা করলে দেখা যায়- মধ্যপ্রাচ্যে অস্থিতিশীলতার সুযোগে নিরাপত্তার অজুহাত দেখিয়ে পশ্চিমারাও এখানে ফিরে এলো। অর্থনৈতিক বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে এ অঞ্চলে চীন ও ভারত অন্যদের চেয়ে দক্ষতা দেখালেও নিরাপত্তার প্রশ্নে ইসরাইল যুক্তরাষ্ট্রকে ডেকে আনল। মধ্যপ্রাচ্যের যত্রতত্র তারা সামরিক ঘাঁটি স্থাপনে লেগে গেল। এটা বলা হয় যে, ওবামা প্রশাসন মধ্যপ্রাচ্যের বিষয়ে অতটা আগ্রহী নয়। কিন্তু আমি তা মনে করি না। এটা তাদের একটা কৌশল। তারা ভাব করছে বা অন্যদের বোঝাতে চাইছে যে, মধ্যপ্রাচ্য তাদের কাছে আর ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু নিরাপত্তা আর ক্ষমতার প্রশ্ন দেখা দিলে ঠিকই তারা মধ্যপ্রাচ্যকে গুরুত্ব দেয়।

এমইই : প্যারিস আর ব্রাসেলসে সন্ত্রাসী হামলা এবং বাগদাদ আর বৈরুতে বোমা হামলায় হতাহতের ঘটনায় মানুষের দুই ধরনের প্রতিক্রিয়াকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করবেন?

তারিক রমাদান : গ্লোবালাইজেশন মানে সব কিছু বিশ্বব্যাপী এতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু সেখানেই ক্ষমতার প্রশ্ন জড়িত, তা কিন্তু আর ‘গ্লোবাল’ থাকে না, হয়ে যায় ‘সেন্ট্রাল’। বিশেষ করে ক্ষমতাধরদের খবর যখন মিডিয়ায় আসে তখন তা আর গ্লোবাল থাকে না। আমরা জানি প্রভাবশালী মিডিয়া সবই প্রায় পশ্চিমাদের নিয়ন্ত্রণে। ফলে তাদের এলাকায় কোনো ঘটনা ঘটলে স্বাভাবিকভাবেই আবেগের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। অন্য দিকে মধ্যপ্রাচ্যের বিষয়গুলো তারা ততটা প্রকাশ করে না। ফলে মিডিয়া যেভাবে চায় প্রতিক্রিয়াও সেভাবে হয়।

এমইই : সম্প্রতি ফ্রান্সের বোরডক্সে একটি কনফারেন্সে আপনি যোগ দিয়েছিলেন। সেখানে বোরডক্সের মেয়র এলেইন জুপিও অংশ নিয়েছিলেন। এই ভদ্রলোক ২০১৭ সালে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন বলে শোনা যাচ্ছে। তিনি অভিযোগ করেছেন, ওই সম্মেলনে আপনি নাকি সন্ত্রাসীদের পক্ষে কথা বলেছেন। আপনার বক্তব্য কী?

তারিক রমাদান : এটা পুরনো খবর। এখানেও তারা একই কৌশল ব্যবহার করেছে। আমার বিরুদ্ধে তাদের নিয়ন্ত্রিত মিডিয়াকে কাজে লাগিয়েছে। তারা অভিযোগ করেছে আমি নাকি প্যারিস হামলার পর নিন্দা জানাইনি। আসলে আমি প্যারিস ও ব্রাসেলসে হামলার পরপরই ঘটনার নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছি। কিন্তু তা মিডিয়ায় সেভাবে আসেনি।

ফরাসিরা আমাকে একজন বিপজ্জনক ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করতে চায়। কেন তারা এটা করে আমি জানি না। আমার নানা মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রতিষ্ঠাতা আর আমার ভাই জেনেভায় ইসলামিক সেন্টারের চেয়ারম্যান- এগুলোই হয়তো আমার অপরাধ। আর এসব অপরাধের কারণেই হয়তো আমি ফ্রান্সের নাগরিক হওয়ার আবেদন করেও তা পাইনি।

তবে ফরাসিদের একটা বিষয় বুঝতে হবে। তা হলো, মুসলমানরা কিন্তু সে দেশের রাজনীতিতে একটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর। গত নির্বাচনে মুসলিম ভোটাররা সারকোজির দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার পরিণতি কী হয়েছিল তা কিন্তু বিশ্ববাসী দেখেছে।

এমইই : প্যারিস হামলার আগে আপনি দাবি করেছিলেন, ফ্রান্সে কোনো বর্ণ বৈষম্য বা ইসলামভীতি নেই। আপনি কি এখনো তা বিশ্বাস করেন?

তারিক রমাদান : হ্যাঁ, এখনো আমি আমার বিশ্বাসে অটল। আমার মনে হয়, ফ্রান্সে কিছু রাজনৈতিক দল অপপ্রচারের মাধ্যমে ইসলামভীতি ছড়াচ্ছে। যারা এমনটা করছে তাদের বোঝা উচিত এতে রাজনীতিরই ক্ষতি হচ্ছে। এ ধরনের অপপ্রচার থেকে বর্ণবাদী সহিংসতা সৃষ্টি হতে পারে। তবে আমার বিশ্বাস- মুসলমানরা তাদের আচার-আচরণ ও কর্মের দ্বারা ওই সব ভীতি দূর করতে পেরেছে।

এমইই : ফরাসি নাগরিকত্বের জন্য আপনি আবেদন করেছিলেন কেন?

তারিক রমাদান : ২৫ বছর ধরে আমার কিছু বন্ধু আমাকে এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করে আসছে। আমি প্রতিবারই তাদের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছি। কিন্তু এবার ফরাসি সরকার নাগরিকত্ব প্রদানের বিষয়ে কিছু শিথিলতা আনায় গত ফেব্রুয়ারিতে আমি আবেদন করি। এখানে বলে রাখা ভালো- ফরাসি রাজনীতি নিয়ে বিতর্ক করার ইচ্ছা আমার আছে কিন্তু রাজনীতি করার কোনো ইচ্ছা আমার নেই। সত্যি বলতে আমার কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা নেই।

- See more at: http://www.dailynayadiganta.com/detail/news/111774#sthash.coIl5CS9.dpuf

বিষয়: বিবিধ

১১২৫ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

366585
২১ এপ্রিল ২০১৬ সকাল ০৬:২৯
গাজী সালাউদ্দিন লিখেছেন : পুরো লেখাটাই পড়লাম। জাযাকাল্লাহু খাইর

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File