কাহীনিঃ ভয়ংকর লাশের কথা
লিখেছেন লিখেছেন 'আবদুর- 'রাজ্জাক' ২৯ জুলাই, ২০১৬, ১২:৪৩:৪৮ দুপুর
গভীর রাত থেমে থেমে দুই একটা নিশি
পাখি ডাকছে।
রাজ্জাক খালি গায়ে
কবরস্থানের এক কোণে বসে
আছে।
মেঘলা গুমোট আকাশ থেকে যে কোন
মুহূর্তেই বৃষ্টি নামতে পারে। নাহ আজও
যদি ফেরত যাই তাহলে নিজের কাছেই
নিজের মানইজ্জত বলে আর কিচ্ছু থাকবে
নাহ, মনে মনে ভাবছে রাজ্জাক। হাতের
সিগারেট টা ফেলে দিয়ে কোদাল টা
নিয়ে উঠে দাঁড়াল সে।
পরপর চারদিন
ফজরের নামাজ পড়ার পর কবর জিয়ারতের
বান ধরে, কবরস্থানের পাশে দাড়িয়ে
ঠিক করেছে কোন কবরটা
খুড়বে সে।
সব দেখে শুনে একটু উচু আর পুরানো একটা
কবর ঠিক করল খোড়াড়
জন্য।
বলা তো যায় না
সব খুড়ে টুড়ে শেষে যদি লাশ না পাওয়া
যায়।
আবার,
নতুন লাশ হলে ও সমস্যা রাতের বেলা
কবর খুড়তে আসলে
এমনিতেই ভয়ে আধমরা লাগবে , তার উপর
আধপচা বিকৃত লাশ দেখলে তো কথাই
নেই।
নিজেই লাশ হয়ে কবরে শুয়ে
থাকার বিশাল সম্ভাবনা
আছে।
শেষ বারের মত চারপাশটা ভালো মত
দেখে আয়াতুল কুরসী পড়ে বুকে থু থু দিয়ে
কবরের পাশে গিয়ে দাড়াল
রাজ্জাক।
সব কাজেরই ভাল খারাপ কিছু দিক আছে,
সেই ছোটবেলায় মক্তবে হুজুরের কাছে
শেখা আয়াতুল কুরসীর কিছু মনে ছিল। এই
উসীলাই আবার শিখে ফেলা হল।
বিদেশ থেকে এসে বিয়ে করেছিল
আবদুর রাজ্জাক।
যেমন সরল মেয়ে খুজেছিল ঠিক তেমনই
পেয়েছিল সে।
গ্রামের মানুষতো দুরে থাক মেয়ের
চেহারা নাকি পরিবারের
মানুষ জন ও ঠিক মত দেখতে পাই
না।
এমন কথা শুনিয়েছিল বন্ধুরা, দেশে এসে
কথার সততা যাচাই করে ভীষন সন্তুষ্ট
হয়ে সকল বন্ধুকে রাজ্জাক একটা করে
বিদেশী সাবান উপহার দিয়েছিল।
সেই সাবান ব্যবহার না করে বন্ধুরা
সাজিয়ে রেখেছিল, বিদেশী জিনিস
বলে কথা। সবকিছু
ঠিকঠাকই ছিল বাসর রাতের আগ পর্যন্ত।
রাজ্জাক বাসর রাতে ঘরে ঢুকে
আবিস্কার
করে তার বউ তখনও হিজাব পরা।
ভেবেছিল প্রথম দিন লজ্জা পাচ্ছে
হবে।
আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু
বিয়ের একসপ্তাহ পর ও বউর অবস্থা কোন
পরিবর্তন নেই। এইদিকে তার ছুটি ও শেষ
হয়ে আসছে। বন্ধু বান্ধবের মস্করায়
বাজারে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেল
রাজ্জাকের। চিন্তা দুশ্চিন্তায় রুপ নিল।
যখন দেখল
ঘরে গিয়ে কিছু না বলতেই বউ ফ্যাচফ্যাচ
করে কাঁদে।
তারপর এক রাত্রীতে বউর
মাথার ঘোমটা নামাতেই সে ভয়ে
চিৎকার দিয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়।
.
বউ এর সারা গায়ে আনারসের চামড়ার
মত ছোপ ছোপ দাগ, কিছু কিছু অংশে
চামড়া ও নেই।
লজ্জায় এই কথা সে কাউকে বলে
নিই।
বউকে নিয়ে কবিরাজের কাছে
গিয়েছে কয়েক বার কিন্তু চিকিৎসায়
কোন ফলাফল না পেয়ে, শেষমেশ এক
গুনীন এর কাছে গিয়ে হাজির হল। সব
দেখেশুনে গুনিন বলেছিল বিয়ের
আগে নিশ্চিত তার বউ সাপে ছোবল
দেয়া আনারস খেয়েছিল। তাই এই
অবস্থা হয়েছে।
মৃত মানুষের হাড় পুড়িয়ে ছাই বানিয়ে
যদি সারা শরীরে পরপর তিন দিন ঘষে খর
স্রোতা নদীতে গোসল করে তাহলেই এই
রোগ সেরে যাবে।
রাজ্জাক ভেবেছিল এ আর এমন কি কঠিন
কাজ।
দুই একদিনের ভিতরেই করে ফেলা
যাবে কিন্তু প্রথম দুদিন রাতে ঘর থেকে
বের হওয়ার কথা চিন্তা করলেই হাঁটু
কাপাকাপি শুরু হয়ে যেত।
আজ কাজটা
শেষ করতেই হবে। প্রায় আধঘণ্টা ধরে
কবর খুড়ছে সে।
শুরু করাটাই আসল
ঝামেলা ছিল।
কবরে প্রথম কোপ দিতেই
সমস্ত ভয় ডর কোথায় যেন
পালিয়ে গিয়েছে। একটা শব্দ করে শক্ত
কিছুর সাথে
কোদালটা যেন বাড়ি খেল। যাক কাজ
প্রায় শেষ, একটু ভালমত খেয়াল করতেই
দেখল তার কোদালের আঘাতে লাশটার
বাম পা হাঁটুর নিচ থেকে আলাদা হয়ে
গিয়েছে।
রাজ্জাক ভয়ে কোদাল ফেলে
লাফ দিয়ে উপরে উঠে গেল। লুঙ্গিটা
কখন খুলে কবরে পড়ে আছে খেয়ালই
করেনি সে।
ইচ্ছে করছে এক ছুটে ঘরে ফিরে
যেতে। কিন্তু আজকের মত সুযোগ আর
আসবে না, বউ টা আশা নিয়ে বসে আছে।
তাই আবার লাফ দিয়ে কবরে নেমে
শক্ত করে লুঙ্গিতে গিট্টু মেরে দুই হাতে
কোদাল তুলে সমস্ত শক্তি দিয়ে আর এক
কোপ দিয়ে সে অন্য পা টা ও আলাদা
করে
ফেলল।
কবরে মাটি ভরাট করার কাজ শেষ হতেই
মনে হল, আরে কবর টা তো বহু পুরানো।
সেই হিসেবে তো শুধু কংকাল থাকার
কথা।
কিন্তু এই লাশটা দেখে তো তেমন
মনে হচ্ছে না।
কেমন যেন তাজা লাশের
ঘ্রাণ পাওয়া যাচ্ছে। আয়াতুল কুরসীটা ও
মনে পড়ছে না, আর একটু ভালমত শেখা
উচিত ছিল।
রাজ্জাক এর হাত পা অবশ হয়ে
আসছে, অদ্ভুত কোন ভয় যেন চেপে
ধরেছে তাকে।
ঠিক জ্ঞান হারানোর
আগ মুহূর্তে হঠাৎ করে সব ভয় কেটে গেল।
দুই হাতে লাশের দুই পা নিয়ে সে বাড়ির
দিকে দৌড় দিল। রাজ্জাকের ঘরে ফিরে
দেখে বউ চুলায় আগুন জ্বেলে রেখেছে এর
মধ্যেই।
পা দুটোকে চুলায় দিতেই, পোড়া
মাংসের কটু
ঘ্রানে নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিল তার।
সেই রাতেই বউকে নিয়ে রাজ্জাক
নদীতে
গিয়েছিল। ঘরে ফিরে আসতে আসতে
প্রায় ভোর হয়ে গিয়েছিল। মিঠু
আলোয় বউটা কে অনেক সুন্দর লাগে।
শরীরের ছোপ ছোপ দাগগুলো ও যেন কমে
এসেছে একটু।
ঘরে ফিরেই রাজ্জাকের দুচোখ ঘুমে বন্ধ
হয়ে এল।
ঘুম একটু গভীর হতেই দেখল, ইয়া
লম্বা সাদা চুল দাড়ি বিশিষ্ট একজন
দরবেশ তার নাম ধরে ডাকছে এই
রাজ্জাক,
শোন!
সে একটু উহু,আহা করতেই লোকটা
কষিয়ে একটা বিশাল ধমক দিল যে স্বপ্নে
দুঃস্বপ্নে রুপ নিল শোন বেয়াদব আদমি,
তুই যে পা দুটো এনেছিস ওগুলো আমার।
আজ রাতের মধ্যেই পায়ের বাকী
অংশগুলো কবরে রেখে আসবি। না হয়
তোর সংসার করার সাধ আমি মিটিয়ে
দিব। তোর পায়ের হাড্ডি আমি ভেঙ্গে
গুড়িয়ে দিব।
আমি গালিগালাজ করি না, না হয় ঠিক
বলতাম তুই আসলে
কি?
ভয়ে চিৎকার দিয়ে ঘুম ভাঙল
রাজ্জাকের।
বাকী দিনটা শুধু আয়াতুল কুরসী মনে
করতে করতে পার হয়ে গেল কিন্তু
কিছুতেই আর মনে পড়ল না। গভীর রাতে
রাজ্জাক একটা বস্তায় পায়ের
অবশিষ্টাংশ ঢুকিয়ে নিল, বোরকা পরে
রওনা
দিল কবরস্থানের দিকে।
এত রাতে কুকুর আর চৌকিদার ছাড়া আর
কারো রাস্তায় থাকার কথা না।
কবরস্থানে পৌঁছান মাত্রই শীতল ভয়ের
একটা স্রোত বয়ে গেল রাজ্জাকের
মেরুদণ্ড বেয়ে।
অন্ধকারে কয়েক জোড়া চোখ জ্বল জ্বল
করছে।
কিন্তু,
টামটা গ্রামে তো কখনো
শেয়াল দেখা যায়নি। তাহলে এই
জানোয়ার গুলো কি কবর স্থানের
প্রহরী?
প্রথম দিন বাঁধা দেয়নি কেন
তাহলে?
কারণ টা বুঝতে পারা মাত্রই
আয়াতুল কুরসী পড়ার চেষ্টা করল কিন্তু
প্রথম লাইনটা ও মনে পড়ছে না। দরদর করে
ঘাম বেয়ে পড়ছে রাজ্জাকের শরীর
বেয়ে।
যা আছে কপালে এই ভেবে সে বোরকা
খুলে কবর খোড়া শুরু করল । আজ কষ্ট একটু
কম হচ্ছে।
গর্ত একটু গভীর হতেই সে
সাবধান হয়ে কোদাল ফেলে দুহাতে
মাটি সরান আরাম্ভ করলো।
আর একটু মাটি সরাতেই দেখল লাশের
কাফনের কাপড়টা প্রায় নতুনের মতই
আছে। সামান্য কাফন সরাতেই দেখল এই
লোকটার চেহারা ঠিক সেই স্বপ্নের
লোকটার মত কিন্তু স্বপ্নে তাকে অনেক
সুন্দর লাগছিল। এখন কেমন যেন দূঃখি
একটা ভাব আছে চেহারায়। সে ভেবে
কূলকিনারা পায়না একটা লাশ পা দিয়ে
কি করবে।
তার দুইটা পায়েরই বা কি প্রয়োজন।
একটা থাকলেই তো চলে।
কাফন দিয়ে আবার মুখটা ঢেকে দেয়ার
সময় লাশটা যেন একটু নড়ে চড়ে উঠলো।
রাজ্জাক ভাবলো হয়ত চোখের
ভুল।
হাতে সময় নেই। দেরী হয়ে যাচ্ছে, বউ
নদীর
তীরে অপেক্ষা করবে তার জন্য। আবার
চেষ্টা করতেই লাশটা হা হা হা করে
হেসে উঠল।
রাজ্জাক পালিয়ে যাওয়ার
চেষ্টা করতেই লাশটা তার পা টেনে ধরল
কবরের দিকে। কবরের চারপাশ ঘিরে
ফেলেছে জন্তুগুলো কারা যেন সুরে
যাত্রার বিলাপের সুরে বলছে বেইমান,
তুই বেইমান।
একটানা হা হা হা
করেই যাচ্ছে লাশটা আর বলছে
আমার আর এক পা ফেরত দিবি, আর এক
পা।রাজ্জাকের মুখ দিয়ে কোন শব্দ বের
হচ্ছে না। সে দুহাতে জোড়ে প্রান
ভিক্ষা করছে, বোঝাতে চাইছে আর
কখনো এমন হবে না।
উত্তরে শুনতে পাচ্ছে সেই প্রহরী
জন্তুগুলোর একটানা বিলাপ। লাশটা এক
হ্যাচকা টানে তার বাম পা
হাঁটুর নিচ থেকে আলাদা করে ফেলল।
রাজ্জাকের তীব্র আর্তনাদ শুধু
কবরস্থানের ভিতরেই ঘুরপাক খেল।
গাছের কাক গুলোই শুধু কা কা সুরে তার
সাথে একটুখানি সমবেদনা দেখাল।
সকাল প্রায় হয়ে এসেছে, আবছা আলোয়
রাজ্জাকের শেষ বারের মত চোখ মেলে
দেখল, মুখ
দিয়ে লালা ঝরা ভয়ঙ্কর জন্তুগুলো কবরের
উপর মাটি ফেলছে।
জীবনের শেষ ঘুমে তলিয়ে
যাওয়ার সময় রাজ্জাক চোখের সামনে
একটা চঞ্চল সুন্দরী মেয়ের হাসিমুখ
ভেসে আসছিল, যার সাথে তার বউ এর
বেশ মিল আছে।
.
[কত ভালবাসা বউর জন্য নিজের জীবন
টা শেষ করে দিলো, নিজের বউর জন্য আর
এখন কার ডিজিটাল সময়ের বউ অন্য রকম
হয়, স্বামী টাকা পাঠায় আর বউ অন্য
ছেলেদের সাথে ডেটিং মারে, কার
কেমন বউ কপালে আছে আল্লাহ জানে
হে আল্লাহ তুমি আমাকে একটা
ভাগ্যবান বউ দিও, বিয়ে করমু কোন দিন?
.
- আবদুর রাজ্জাক সাহেব এতো ব্যাস্ত
হবেন না, বিয়ের জন্য?
(স্যার)
-ঠিক আছে ধৈর্য্য দরে আছি বিয়ে
কিন্তু করমু, আপনার মেয়েকে!
(রাজ্জাক)
- হুমমম........
বিষয়: সাহিত্য
১৩৮৫ বার পঠিত, ২ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন