✬ “ঈমানের জোর” ✬
লিখেছেন লিখেছেন মুহাঃ মাসউদুল হাসান মামুন ০৫ এপ্রিল, ২০১৬, ১১:০৩:২৮ সকাল
আজ থেকে কয়েক হাজার বছর আগের কথা । তখন মানুষ আল্লাহর নবীদের কথা মেনে চলতো। মানুষ সত্য কথা বলতো ।ওয়াদা পালন করতো। বনি ইসরাইলে এমনি এক লোক বাস করতো । নাম রুবায়া । সে দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়াতো আর বন্দরে বন্দরে ব্যবসা করতো একবার বাণিজ্যে যাবার আগে কিছৃু স্বর্ণমুদ্রার টান পড়লো। ভেবে দেখলো কারো কাছ থেকে ধার নেয়া ছাড়া গতি নেই। তখনি তার মনে পড়লো উদার হৃদয় সোলায়মানের কথা।
পরদিন সকালে সোলায়মানের বাড়ি গিয়ে হাজির হলো । সালাম বিনিময়ের পর সোলায়মান তার আগমনের কারন জানতে চাইলেন । রুবায় বলল, ‘ বাণিজ্যে যাচ্ছি , মালামাল কেনার জন্য কিছু স্বর্ণমুদ্রা ধার দেন তবে এক বছর পর তা শোধ করে দেবো।’ সোলায়মান বললেন , ’ধার দিতে সমস্যা নেই, তবে জামিনদার দরকার ।’ রুবায়া বলল,’আমার জামিনের জন্য একমাত্র আল্লাহই যথেষ্ট।’
রুবায়া যেমন পাক্কা ঈমানদার , সোলায়মানও তাই। রুবায়ার কথা শুনে বললেন,’আপনি ঠিকই বলেছনে , আল্লাহই যথেষ্ট।’
এ কথা বলে রুবায়াকে সোলায়মান এক হজার স্বর্ণমুদ্রা ধার দিল।
যথাসময়ে জাহাজে চড়ে বিদেশে পাড়ি জমালো রুবায়া। বন্দরে বন্দরে ব্যবসা করে প্রচুর লাভ করলো। ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে কাটলো প্রায় পুরোটা বছর। স্বর্ণমুদ্রা ফেরত দেয়াার দিন ঘনিয়ে এলো । বাড়ি ফেরার মত কোন জাহাজ পেলো না । জলপথ ছেড়ে স্থল পথে বাড়ি ফিরতে চাইল, কিন্তু কোন যানবাহন যোগার করতে পারলো না। অনেক চেষ্টা করেও সে যখন দেখলো সময় মত বাড়ি ফেরার কোন উপায় নেই তখন ওয়াদাভঙ্গের আশংকায় সে অস্থির হয়ে পড়লো। কি করা যায় ভাবতে গিয়ে তার মাথায় এক অভিনব বুুদ্ধি এলো্ রুবায়া একটুকরো কাঠ ছিদ্র করে তাতে এক হাজর স্বর্ণমুদ্রা ও একটি চিঠি ভরলো । এরপর শক্ত করে ছিদ্রমুখ বন্ধ করে সে গেল সাগর পাড়ে। তীরে দাঁড়িয়ে সে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলেন,’হে আল্লাহ, তুমি জানো সোলায়মানের কাছ থেকে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা ধার নিয়েছি। সে জামিন চাইলে আমি তোমাকেই জামিন মেনেছিলাম । নির্দিষ্ট দিনে বাড়ি যাওয়ার জন্য আমি কোন যানবাহন পাচ্ছি না। তাই তোমার ওপর ভরসা করে স্বর্ণমুদ্রা ভরা এই কাঠের টুকরাটি সমুদ্রে ফেলে দিচ্ছি। তুমি সময়মত এটিতার হাতে পৌঁছে দিও।’
রুবায়া একথা বলে কাঠের খন্ডটি সমুদ্রে ফেলে দিল। এরপর সে আবার বাড়ি ফেরা যানাবাহন খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।
এদিকে নির্দিষ্ট দিনে সোলায়মান বন্দরে এসে রুবায়কে তালাশ করলো। তাকে না পেয়ে মন খারাপ করে বাড়ি ফেরার পথে সমুদ্র তীরে একখন্ড কাঠ দেখতে পেলো। কাঠটি রান্নার কাজে লাগবে ভেবে সে ওটা নিয়ে বাড়ি ফিরল। কুড়াল দিয়ে কাঠটি কাটতে গেলে বেয়িয়ে এলো এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা ও চিঠি। সোলায়মান চিঠিটা পড়লো। জানতে পাড়লো রুবয়া তার জন্যই এ স্বর্ণমুদ্রা গুলো পাঠিয়েছে।
কিছুদিন পরের কথা। রুবায়া দেশে ফিরে এলো । বাড়ি ফিরেই সে গেল সোলায়মানের বাসায় । সোলায়মান তাকে সমাদর করে শরবত বা নাস্তা খেতে দিল। খেতে খেতে রুবায়া বলল,’বিশ্বাস করুন , নির্দিষ্ট দিনে আপনার পাওনা ফিরিয়ে দিতে আমি অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্ত কোন জাহাজ না পাওয়ায় সময়মত ফিরে আসতে পারিনি। এই নিন আপনার পাওনা স্বর্ণমুদ্রা। আমাকে দেনার দায় থেকে মুক্তি দিন।’ রুবায় স্বর্ণমু্দ্রার থলে সোলায়মানের দিকে বাড়িয়ে ধরলো। সোলায়মান বলল,’এক পা্ওনা আমি কয়বার নেবো? নির্দিষ্ট দিনেই আমি আপনার পাঠানো স্বর্ণমুদ্রা ও চিঠি পেয়েছি । আমি আল্লাহর শোকর করছি এজন্য যে , প্রকৃত ঈমানদারকে আল্লাহ এভাবেই সহায়তা করেন ।’ রুবায়াও আল্লাাহর শোকর আদায় করে খুশি মনে বাড়ির পথ ধরলো।
মুরালঃ আল্লাহর ওপর পরিপুর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস থাকলে আল্লাহ কাউকে নিরাশ করেন না। মুমিন কখনো ওয়াদা খেলাফ করেন না।
বিষয়: বিবিধ
৮৭১ বার পঠিত, ১ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন