শহীদ নবাব সিরাজউদ্দৌলা
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ১১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৮:৪১:২৮ রাত
মহানায়কের আবির্ভাব কালে-ভদ্রেও হয় না বরং এ জন্য শতাব্দীর পর শতাব্দীর অপেক্ষার প্রহর গুনতে হয়। তেমনি ইতিহাসের এক কালজয়ী মহানায়ক বাংলা-বিহার-উরিষ্যার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা। এই ক্ষণজন্মা ১৭২৭ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলার আকাশে উদিত হয়েছিলেন ভাগ্যাহত উল্কাপিন্ডের মত। কাকতালীয়ভাবে আবির্ভাব ঘটলেও স্থায়িত্ব ছিল খুবই কম। কিন্তু এই অতি অল্প সময়ের মধ্যে শহীদ এই নবাব আমাদেরকে যা দিয়ে গেছেন তা কখনো বিস্মৃত হবার নয়; ভোলাও যায় না। তিনি এই বাংলার মানুষের মনের মনিকোঠায় প্রেরণার বাতিঘর হিসেবে চির অম্লান; সদা ভাস্বর। তাই ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণক্ষরে লেখা আছে এই শহীদ নবাবের নাম। যা কখনোই মুছে ফেলা যাবে না।
কোন ষড়যন্ত্রই শহীদ সিরাজের নাম ইতিহাস থেকে মুছে ফেলতে পারেনি; পারবেও না। অতীতের ঘটনা প্রবাহ আমাদেরকে সে কথায় স্মরণ করিয়ে দেয়। ঐতিহাসিকরা যথাথই বলেছেন, পলাশীর যুদ্ধের একমাত্র নায়ক ও বীর হচ্ছেন নবাব সিরাজউদ্দৌলা। কারণ, তিনি নিজে দেশের স্বার্থেই ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন। তিনি যদি ইংরেজদের সাথে সমঝোতা করতেন তাহলে দীর্ঘ সময় নবাব থেকে সুখে-শান্তিতে জীবন যাপন করতে পারতেন। কিন্তু দেশ ও গণমানুষের ভালবাসায় নিজের সুখ-শান্তি বিসর্জন দিয়ে শাহাদাতকে হাসিমুখে বরণ করে নিয়েছেন। যা আমাদের প্রেরণার উৎস।
যে জাতি তাদের গুণীজন ও জাতীয় বীরদের সম্মান করে না সে জাতির মধ্যে গুণীজন ও বীর জন্মায় না। আমরা আমাদের জাতীয় বীর শহীদ নবাব সিরাজকে যথাযথভাবে সম্মান প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়েছি বলেই এখন বীরপ্রসু ও বীরদের অভাব অনুভূত হচ্ছে। নবাব সিরাজ বুকভরা অভিমান নিয়েই শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেছিলেন। কারণ, আমাদের চোখের সামনেই তাকে বিভিন্নভাবে লাঞ্চিত, নিগৃহীত এবং নির্মম-নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হলেও আমরা ছিলাম নিরব দর্শক। তাই বাংলার ভাগ্যাকাশে বারবার মীজ জাফর ও জগৎ শেঠদের সম্মিলিত পদচারণা লক্ষ্য করা গেলেও নবাব সিরাজদের দেখা খুব একটা মেলেনি। একজন ভিনদেশী ঐতিহাসিক যথার্থই বলেছেন, “দেশই বরঞ্চ তাকে তার মাটির কোলের সাথে আবদ্ধ রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি কখনও তার দেশের প্রজাদের সাথে কোনো অবস্থাতেই বিশ্বাসঘাতকতা করেন নি। কখনও স্বেচ্ছায় স্বদেশকে বিকিয়ে দেন নি। পলাশী প্রান্তরে মর্মান্তিক নাট্যমঞ্চে এক মাত্র তিনি ছিলেন মূল নায়ক।”
শহীদ সিরাজ মানেই এক দ্রোহ; চেতনার আলোকবর্তিকা, সত্য, সুন্দর ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় এক অকুতোভয় বীর সৈনিক। তিনি দেশ ও জাতির স্বার্থ রক্ষায় কখনো অন্যায় ও অসত্যের সাথে আপোষ করেন নি বরং মাতৃভূমির সম্মান রক্ষায় নিজের জীবনও অকাতরে বিলিয়ে দিয়েছন। তিনি ছিলেন লক্ষ্যে অবিচল, সংগ্রামে আপোষহীন, কর্তব্যে সত্যনিষ্ঠ, সংগ্রামে দুর্বার, সমরে অবিরাম, উপাসনায় একনিষ্ঠ এবং শত্রুপক্ষের কাছে মূর্তিমান আতঙ্ক। তার অকৃত্রিম দেশপ্রেম ও প্রজাবৎসলতা তার প্রতিপক্ষের ঈর্ষার প্রধান কারণ। ষড়যন্ত্রকারীরা মনে করেছিল যে, এই ন্যায়নিষ্ঠ যুবা যদি নিজের ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করতে পারেন তাহলে অনৈতিকভাবে সুবিধাভোগীদের কপাল পুড়বে। তাই তারা নবাবের অভিষেকের প্রারম্ভিক পর্যায় থেকেই নানাবিধ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। আর এই ষড়যন্ত্রের কারণেই বাংলার স্বাধীনতার লাল সূর্যটা প্রায় দু’শ বছরের জন্য অস্তমিত হয়।
শহীদ সিরাজের পিতা পাটনার গভর্নর জয়নুদ্দীন এক রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের ফলেই ১৭৫০ ইং সালে পাটনায় নিহত হন। তখন সিরাজের বয়স মাত্র ১৭ বছর। আলীবর্দী খানের মৃত্যুর পূর্বে এই ১৭৫০ ইং সাল থেকেই ৬ বছর ধরে সে লক্ষ্যেই আলীবর্দী খাঁ তার আদরের নাতি সিরাজকে নিজ সান্নিধ্যে রেখে যুদ্ধ বিদ্যা, অশ্ব চালনা ও প্রশাসনিক কাজে তাকে প্রশিক্ষণ দান করেন। মৃত্যুর আগেই তিনি সিরাজকে মসনদের উত্তরাধিকারী মনোনীত করেছিলেন। ১৭৫৬ সালের ৯ এপ্রিল নবাব আলীবর্দী খান মৃত্যুবরণ করলে তার প্রিয় দৌহিত্র মীর্জা মোহাম্মদ বাংলা-বিহার-উরিষ্যার নবাব হিসেবে অভিষিক্ত হন এবং মাত্র ১৪ মাস ১৪ দিনের মাথায় ১৭৫৭ সালে পলাশীর আ¤্রকানণের পাতানো যুদ্ধে পরাজয় বরণ করে ২রা জুলাই ঘাতকদের হাতে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে জাফরাগঞ্জ প্রাসাদের নির্জন কক্ষে শাহাদাত বরণ করেন। তার মৃত দেহের ওপরও পাশবিকতা চালানো হয়। ছিন্নভিন্ন লাশটা ফেলানো হয় ময়লার স্তুপে। বিশ্বের কোন জাতিই বোধহয় এমন আত্মপ্রতারণায় অবতীর্ণ হয়নি।
মূলত সিরাজ নবাব হিসেবে অভিষিক্ত হওয়ার পর থেকেই ষড়যন্ত্রকারীরা মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। নবাবের পিতা বেশ আগেই শহীদ হয়েছিলেন। তার দুই খালা মেহেরুন্নেসা ওরফে ঘষেটি বেগম ও মায়মুনার স্বামীও জীবিত ছিলেন না। তার ভাই ইকরামুদ্দৌলাও আগেই স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করেছিলেন। তাই মাতামহের মৃত্যুর পর তিনি পারিবারিকভাবে অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েন। যেকোন পরিস্থিতিতে তাকে সাহস যোগানো বা পরামর্শ দেয়ার মত পারিবারিকভাবে কেউ অবশিষ্ট ছিলেন না। তাই এই নবীন নবাবকে সীমাহীন প্রতিকুলতা ও নানাবিধ ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করেই অগ্রসর হতে হয়েছে। তার প্রজ্ঞা, অসীম সাহসিকতা, অক্লান্ত পরিশ্রম, কর্তব্য নিষ্ঠা ও দুদর্শিতা তাকে অনেক ক্ষেত্রেই সফল ও সার্থক করে তুলেছে। কিন্তু হেরে গেছেন তিনি নিজের মহানুভবতার কাছেই। কারণ, চিহ্নিত শত্রুদের বিরুদ্ধে তিনি যদি আগে থেকেই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারতেন তাহলে হয়তো নবাবকে পলাশী ট্রাজেডির মুখোমুখী হতে হতো না।
নবাবের নানাবিধ প্রতিকুলতার মোক্ষম সুযোগটা হাতিয়ে নিয়েছেন মীর জাফর, ইয়ার লতিফ, রাজা রাজবল্লভ, উমিচাঁদ ও জগৎ শেঠ গংরা। ইতিহাসের এসব বিশ্বাসঘাতকরা এই নবীন নবাবকে সহযোগীতা করার পরিবর্তে নানাবিধ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। আর এদের ঘাড়েই বন্দুক রেখে শিকার করেছে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী। এসব বিভিষণ মনে করেছিল যে, নবাব সিরাজের পতনের পর তারাই বাংলা-বিহার-উরিষ্যার ভাগ্য নিয়ন্তা হিসেবে আবির্ভূত হবে। কিন্তু তাদের সে উদ্দেশ্য সফল হয়নি বরং তাদেরকে লাঞ্চনা ও অপমানের জীবনই যাপন করতে হয়েছে। বাংলা হারিয়েছে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব।
সদ্য অভিষিক্ত নবাব সিরাজকে ঘরে বাইরে শত্রুদের মোকাবেলা করতে হয়েছে। ক্ষমতার দ্বন্দ্ব ও পাওয়া-না পাওয়াকে কেন্দ্র করে খালা ঘষেটি বেগম ও খালাতো ভাই শওকত জং সাথে তিনি পারিবারিক বিরোধে অনাকাঙ্খিত ভাবেই তাকে জড়িয়ে পড়তে হয়। তাকে এ ক্ষেত্রে বেশ সতর্কতার সাথেই কঠোরতা অবলম্বন করতে হয়। আর আলীবর্দীর মৃত্যুর পর হিন্দু রাজন্যবর্গের ষড়যন্ত্রও বেশ সক্রিয় হয়ে ওঠে। তার সাথে যুক্ত হয় মীর জাফর ও তার পুত্র মিরনের ক্ষমতালিপ্সা। এদের পালে হাওয়া দেয় ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী। এরা বাণিজ্যের জন্য এদেশে কুটি স্থাপন করলেও সে সময় এসব বিদেশী বণিকদের রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষ পেয়ে বসে। নবাব তা উপলব্দি করতে পেরেই তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করেন। এজন্য নবাবকে কাসিম বাজার কুটি ও কোলকাতা দখল করতে ইংরেজ ও তাদের দোসরদের সাথে যুদ্ধে অবর্তীর্ণ হতে হয়। মূলত ইংরেজদের বিরুদ্ধে সিরাজের তিনটি নির্দিষ্ট অভিযোগ ছিল এবং তা একজন দেশপ্রেমিকের কাছে ন্যায়সঙ্গত।
১. ফোর্ট উইলিয়াম কেল্লার সংস্কার ও এটাকে দুর্ভেদ্য ও সুসংহত করার প্রচেষ্টা
২. দস্তকের বা বিনা শুল্কে বাণিজ্য করার অনুমতিপত্রের যথেচ্ছ ব্যবহার করা
৩. নবাবের অপরাধী ও শাস্তি প্রাপ্ত প্রজা ও কর্মচারীদের কলকাতায় বেআইনি আশ্রয় দেয়া।
মীর জাফর ও জগৎ শেঠ গংরা যে নবাব সিরাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিলেন এমন নয়। বরং নবাব আলীবর্দীর আমল থেকে এরা বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিলেন। নবাব সিরাজের সময়ে অতীতের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে। বারবার মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতা প্রমাণ হওয়ার পরও নবাব উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মীর জাফরের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে রাজ সদনে আহ্বান করেন। নবাব মনে করেছিলেন বাংলা-বিহার-উরিষ্যার স্বাধীনতা-সার্বভৌত্ব রক্ষায়, ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থে বিপথগামী মীর জাফর সঠিক পথে ফিরে আসবেন। কিন্তু সে উদ্দেশ্যে তিনি মোটেই সফল হননি।
নবাব তাকে বারবার ক্ষমা প্রদর্শন করে পরম করুণাময় আল্লাহর নামে, রাসুল (সা)-এর নামে, ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থে, নবাব আলীবর্দীর বংশ মর্যাদার দোহাই দিয়ে ফিরিঙ্গি সংসর্গ ত্যাগ করে তার সঙ্গে আসার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান। মীর জাফর পবিত্র কুরআন শরীফে হাত রেখে অঙ্গীকার পূর্বক বলেন, “রাসুল (সা.) নামে ধর্মশপথ করে এই মর্মে অঙ্গীকার করছি যে, যাবজ্জীবন মুসলমান সিংহাসন রক্ষা করবো, দেহে প্রাণ থাকতে বিধর্মী ফিরিঙ্গির সহায়তা করব না। কিন্তু মীর জাফর বিশ্বাস ঘাতকতা করলেন। বাংলা-বিহার-উরিষ্যার স্বাধীনতা অস্তমিত হলো। চোর যে ধর্মের কাহিনী শোনে না তা মীর জাফরের বিশ্বাস ঘাতকতায় প্রমাণ করে।
কোন মুসলমান কুরআন শরীফ মাথায় নিয়ে শপথের পর বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে নবারের কাছে তা কখনো বিশ্বাসযোগ্য ছিল না। এখানেই তরুণ নবাবের ধর্মানুরাগ, সরল বিশ্বাস ও মহানুভবতার বিষয়টি খুবই সুস্পষ্ট। তরুণ নবাব যে অতিশয় ধর্ম পরায়ণ ছিলেন তা তার ঈমামবারা ও মদীনা মসজিদ নির্মাণ থেকেই সুষ্পষ্ট হয়ে ওঠে। একজন উগ্র ও ইন্দ্রিয় পরায়ণ লোকের পক্ষে তা কখনোই সম্ভব নয়। মূলত পলাশীর যুদ্ধ ছিল পরিকল্পিত ও সাজানো। সেনাপতি মীর জাফর আলী খানের অধীনে ছিল নবাবের ৫০ হাজার সেনাবাহিনীর ৩৫ হাজার সৈন্য। তিনি পলাশীর যুদ্ধে একটি গুলি ছোড়ারও নির্দেশ দেননি। ইয়ার লতিফ, রায় দুর্লভও একই ভূমিকা পালন করেন। মীর মদন, সিনফ্রে ও মোহনলালের অধীনস্থ সৈন্যরা ক্লাইভের নেতৃত্বাধীন ইংরেজ সৈন্যের মোকাবেলায় এগিয়ে গেলে তাতেই ক্লাইভ রণে ভঙ্গ দিতে বাধ্য হন। মীর মদন মারাত্মকভাবে আহত হওয়ার সংবাদে ব্যাকুল হয়ে সিরাজ-উদ-দৌলা মীর জাফরকে ডেকে তার পদতলে উষ্ণীষ রেখে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করার আবেদন জানান। মীর জাফর সেদিন ষড়যন্ত্রমূলকভাবে নবাবকে যুদ্ধে বিরতি দেয়ার পরামর্শ দেন। আর এভাবেই বিনা যুদ্ধেই নবাবকে পরাজয় বরণ করতে হয়।
মূলত পবিত্র কুরআন শরীফ মাথায় নিয়ে শপথ করে শপথ ভঙ্গের জন্যই শপথ ভঙ্গ করায় যে তার উদ্দেশ্য ছিল একথা পরবর্তীতে প্রমাণিত হয়েছে। সিরাজউদ্দৌলার সাথে পবিত্র কোরআন নিয়ে শপথ করে বাংলার স্বাধীনতা রক্ষায় যে প্রতিশ্রুতি মীর জাফর দিয়েছিল সেই চক্রান্তের কর্নধার নিজেই ১৬ জুন ক্লাইভকে একটি পত্র লিখে জানিয়ে দেন যে, সিরাজের সাথে মৌখিক সখ্যতা স্থাপন করতে তিনি বাধ্য হয়েছেন। এর কারণে ইংরেজদেরকে দেয়া প্রতিশ্রুতি পালনে তিনি বিন্দু মাত্রও ত্রুটি করবেন না তাও লিখে পাঠান।
মীর জাফরের পাঠানো চিঠির সত্যতা যাছাইয়ের জন্য ক্লাইভ ১৮ জুন সকাল বেলা ২০০ ঘোড়া এবং ৩০০ সিপাহী নিয়ে মেজর কুটকে কাটোয়া অভিমুখে অগ্রসর হতে বললেন। কাটোয়া দুর্গ বীরবিক্রমের লীলাভুমি বলে চির বিখ্যাত। ষড়যন্ত্রের পরিপ্রেক্ষিতে এবার দুর্গদ্বারে কোন যুদ্ধ হলো না। নবাব সেনারা ইংরেজদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য কিয়ৎক্ষন যুদ্ধাভিনয়ের পর স্বহস্তে চালে চালে আগুন ধরিয়ে দিয়ে দুর্গ হতে পলায়ন করল। বিনা যুদ্ধে ক্লাইভ ধীরে ধীরে সসৈন্যে কাটোয়া অধিকার করে নেন।
মীর জাফরের এত সহযোগীতার পরেও ক্লাইভের তার প্রতি আস্থার সংকট ছিল। কারণ, বিশ্বাস ঘাতকদের কেউই বিশ্বাস করতে চায় না। তিনি অভিযান পরিচালনা নিয়ে দ্বীধা-দ্বন্দে ছিলেন। ক্লাইভ স্বীকার করে গেছেন তার কেবলই ভয় পেতে লাগলো যদি পরাজিত হই তবে আর একজনও সে পরাজয় কাহিনী বহন করার জন্য লন্ডনে প্রত্যাগমন করবার সময় পাবেনা। যখন ক্লাইভের মনে এমন উপলব্ধি জন্মেছিল তখনই ২১ শে জুন বিকালে মীর জাফরের নিকট হতে এক সঙ্গে দু’টি পত্র এসে পৌঁছলো। একটি পত্র ক্লাইভের নামে, অপরটি উমরবেগের নামে। উমরবেগ ছিলেন মীর জাফরের বিশ্বস্ত অনুচর। উভয় পত্রে ক্লাইভের সন্দেহের অপনোদন ঘটলো।
ক্লাইভের বিশ্বস্ত সহচর স্ক্রাফটন লিখেছেন ২১ জুন মীর জাফরের পত্র পেয়ে ক্লাইভ ঘুরে বসে ছিলেন এবং তাঁর আদেশে ২২ শে জুন সকাল ৫ঘটিকার সময় বৃটিশ বাহিনী গঙ্গা পার হয়েছিল।
In this doubtful interval the majority of our officers were against crossing the river and everything before the face of disappointment but on the 21st of June, the colonel received a letter from Meer Jaffor, which determined him to hazard a battle and he passed the river at five in the next morning Seraftion.
মীর জাফরের পত্র
That the Nabab had halted at Muncara, a village six Miles to the south of Cassimbazar and intended to entrench and wait the evening at that place, where jaffar proposed that the English should attack him by surprise, marching round by the inland part of the island.
ক্লাইভের উত্তর
That he should march to Plassey without delay and would that the next morning advance six miles further to the village of Daudpoor; but if Meer jaffor did not join him there he would make peace with the Nabab.
ক্লাইভের প্রত্যুত্তরে স্পষ্টই বুঝা যায় যে, তিনি ২১ জুন অপরাহ্ন যুদ্ধ যাত্রা করেননি। তবে পত্র পাবার পর যুদ্ধ যাত্রা করতে কৃত সংকল্প হয়ে মীর জাফরকে সংবাদ পাঠিয়েছেন। মীর জাফরের উপদেশ না পেয়ে, ইংরেজরা সসৈন্যে কাটোয়ায় অপেক্ষা করছিলেন এবং সিদ্ধান্ত নেবার জন্য সমর সভার অধিবেশন আহবান করেছিলেন। মীর জাফরের উপদেশ পাওয়া মাত্র আবার ইংরেজ সেনাপতির শৌয্যবীর্য্য জাগরিত হয়ে উঠেছিল। ক্লাইভ নিজেও স্বীকার করে গেছেন যে সমর সভার অধিবেশন শেষ হলে ২৪ ঘন্টার বিশেষ গবেষণার পরে তার মত পরিবর্তন হয়।
পলাশীর যুদ্ধ প্রকৃতপক্ষে কোনো যুদ্ধই ছিল না, ছিল ষড়যন্ত্রমূলক একটা যুদ্ধের নাট্যরূপ মাত্র। একটা পাতানো যুদ্ধের ছলনা, নির্মম প্রহসন। ঐতিহাসিক নিখিল নাথ রায়ের ভাষায়, “বিশ্বাসঘাতকতার জন্য পলাশীতে যে ইংরেজরা জয় লাভ করিয়াছিল, ইহা নিরপেক্ষ ঐতিহাসিক মাত্রেই এক মত। একজন ইংরেজ লেখকের উক্তি- Truth will ascribe the achievement to treachery. ঐতিহাসিকরা আরও বলেছেন, পলাশীর যুদ্ধ সত্যিকারার্থে কোনো যুদ্ধ ছিল না, এটা ছিল একটা গভীর ষড়যন্ত্র। প্রায় বিনা যুদ্ধেই নবাবের পতন হয়েছে। বিশ্বের যুদ্ধের ইতিহাসে পলাশীর যুদ্ধ একটি বিখ্যাত যুদ্ধ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। তাই কেউ কেউ বলেন, এটি যুদ্ধ ছিল না, ছিল ষড়যন্ত্রের কালো থাবা।
ঐতিহাসিক তপন মোহন চট্রোপাধ্যায় তাঁর পলাশীর যুদ্ধ গ্রন্থের ১৭৩ পৃষ্ঠায় লিখেছেন- “পলাশীর যুদ্ধকে একটা যুদ্ধের মত যুদ্ধ বলে কেউ স্বীকার করে না। কিন্তু সেই যুদ্ধের ফলেই আস্তে আস্তে একমুঠো কারবারী লোক গজকাঠির বদলে রাজদন্ড হাতে ধরলেন। প্রথম থেকেই তাঁরা রাজত্ব করলেন না বটে, কিন্তু বাংলাদেশের ভাগ্য নিয়ন্তা হয়ে দাঁড়ালেন। ”
তপন মোহন চট্রোপাধ্যায় খোলাখুলিই লিখেছেন , “ষড়যন্ত্রটা আসলে হিন্দুদেরই ষড়যন্ত্র” হিন্দুদের চক্রান্ত হলেও বড় গোছের মুসলমান তো অন্তত একজন চাই। নইলে সিরাজউদ্দৌলার জায়গায় বাংলার নবাব হবেন কে? ক্লাইভ তো নিজে নবাব হতে পারেন না। হিন্দু নবাব কেউ পছন্দ করবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ দেখা দেয়। জগৎশেঠরা তাদের আশ্রিত ইয়ার লতিফ খাঁকে সিরাজউদ্দৌলার জায়গায় বাংলার মসনদে বসাতে মনস্থ করেছিলো। উমিচাঁদেরও এতে সায় ছিল। কিন্তু ক্লাইভ মনে মনে মীরজাফরকেই বাংলার নবাবী পদের জন্য মনোনীত করে রেখেছিলো। কারণ, মীর জাফরেই তার আস্থাটা বেশি।
মূলত বাংলায় মুসলমানদের শক্তিকে খর্ব করে পরাধীন করতে ব্রিটিশ তরবারির সাথে হিন্দু ধনপতিদের অর্থভান্ডারও সমানভাবে সহযোগিতা করেছিল’। শেঠরা শুধু ইংরেজদেরকেই টাকা দেয়নি, সিরাজ-উদ-দৌলার অনেক সৈন্যকে পর্যন্ত অর্থ দিয়ে নিষ্ক্রিয় রেখে বাংলার ইতিহাসকে কলঙ্কিত করেছে। আরও দুঃখের কথা হলো বন্দী সিরাজ-উদ-দৌলাকে হত্যা করার প্রস্তাব এই জগৎশেঠই দিয়েছিল। আর তা কার্যকর করে বাংলার জমিনকে রক্তাক্ত ও কলঙ্কিত করা হয়েছিল। যে রক্তের দাগ এখনও শুকায়নি; আর কখনো শুকাবেও না।
ষড়যন্ত্রকারীরা নবাবের নির্মল ও নিষ্কলুষ চরিত্রে কালিমা লেপন করতে কসুর করেনি। তারা নবাবকে নিষ্ঠুর ও চরিত্রহীন বলে প্রচার-প্রপাগান্ডা চালিয়েছে। হিন্দু ঐতিহাসিকরা এক বাক্যে বলেই ফেলেছেন, সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন একটি দায়িত্ববোধহীন নিষ্ঠুর, দুশ্চরিত্র তরুণ। হিন্দুদের মধ্যে একমাত্র ব্যতিক্রম ছিলেন তৎকালীন ঐতিহাসিক শ্রী অক্ষয় কুমার মৈত্র। তিনি সিরাজউদ্দৌলার প্রচলিত ধারার প্রতিবাদ করে সর্বপ্রথম বলেছেন, সিরাজউদ্দৌলা মাত্র ১৪ মাস ১৪ দিন রাজত্ব করলেও দেশের শাসনকর্তা হিসাবে একাধারে তিনি ছিলেন ‘নিখাদ দেশপ্রেমিক’ অসম সাহসী যোদ্ধা, সকল বিপদে পরম ধৈর্য্যশীল, নিষ্ঠাবান, কঠোর নীতিবাদী, ধার্মিক, যে কোনো পরিণামের ঝুঁকি নিয়েও ওয়াদা রক্ষায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ব্যক্তিত্ব। কিন্তু তাঁর মন্ত্রীবর্গ, সেনাপতিমন্ডলী ও উচ্চপদস্থ কর্মচারীবৃন্দ সবাই ছিলেন তার বিরুদ্ধে ইংরেজের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত’।
শহীদ নবাব সিরাজের শাসনকালের স্থায়িত্ব ছিল মাত্র ১৪ মাস। এই অতি অল্প সময়েই পূর্ণিয়া থেকে কোলকাতা হয়ে পলাশীর প্রান্তর পর্যন্ত কমপক্ষে ১২০০ মাইল দূর্গম পথ অতিক্রম করতে হয়েছে তাকে। পাঁচ পাঁচটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন তিনি। দিন কাটাতে হয়েছে ব্যক্তিগতভাবে যুদ্ধ ক্ষেত্রে, অশ্বপৃষ্ঠে, রাত কাটাতে হয়েছে ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করে। নানাজীর উদ্যোগে সেই অল্প বয়সে বিবাহিত সিরাজের তখন আপন স্ত্রী লুৎফা, শিশু কন্যা উম্মে জোহরার প্রতি ফিরে তাকাবারও তো তার কোন ফুরসৎ ছিল না।
বস্তুত তাকে চতুর্দিকে ষড়যন্ত্রের মোকাবেলা করে টিকে থাকতে হয়েছে নবাবকে। আরাম, আয়েশ, আমোদ, প্রমোদ, লাম্পট্য-লীলার জন্য পরিমিত সময় তার হাতে ছিল না। আলীবর্দী খান বাংলার নবাবের গদীতে যখন বসেন তখন তার বয়স ছিল ৬৬ বছর এবং সিরাজউদ্দৌলা তখন ৬/৭ বছরের শিশু। ৬৬ বছর বৃদ্ধের জন্য তখন হেরেমের বাঈজী ও বারবনিতার প্রয়োজন ছিল না। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় আলীবর্দী খাঁন নির্মল ও পরিচ্ছন্ন চরিত্রের মানুষ। সর্বপরি তিনি অতিশয় ধর্মপ্রাণ মানুষ ছিলেন। তার দাম্পত্য জীবন ছিল সামাজিকভাবে সুনিয়ন্ত্রিত।
আলীবর্দী খার হেরেম ছিল তার পরিবার-পরিজন নিয়ে গঠিত অন্দরমহল। সেখানে বাঈজী বা বারবনিতা, হেরেম বালা ছিল না সুতরাং এ কথা সন্দেহাতীতভাবে বলা যায় শৈশব ও কৈশরে লাম্পট্যের প্রশিক্ষণ নেবার মত পরিবেশে গড়ে ওঠেননি নবাব সিরাজউদ্দৌলা। বরং নবাব সিরাজ একটি ধর্মীয়-আধ্যাত্মিক পরিবেশেই গড়ে উঠেছেন। মাতামহের হাত ধরে তিনি কালা মসজিদে নিয়োমিত নামাজে যেতেন বলেও ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়। নবাব সিরাজকে যখন মোহাম্মদী বেগ হত্যা করতে উদ্দত হয় তখন তিনি মৃত্যুভয়ে ভীত না হয়ে বা জীবন বাঁচানোর আকুতি না জানিয়ে অজু করে নামাজ পড়ার আকুতি জানিয়েছিলেন। একজন যুবার পক্ষে মৃত্যু ভয়ে শঙ্কিত না হয়ে মহানপ্রভূর সানিধ্য লাভের আকুতির প্রমাণ করে তিনি কখনো নীতি ও আদর্শচ্যুত বা ইন্দ্রিয়পরায়ণ ছিলেন না বরং তিনি অতিশয় ধর্মপ্রাণ ছিলেন।
শহীদ নবাবের বিরুদ্ধে অতিশয় চরিত্রহীনতার ও ষড়যন্ত্রের সমুচিত জবাব দিয়েছেন নবাবপত্মী লুৎফুন্নেসা বেগম। নবাব সিরাজের মৃত্যুর পরে তার তরুণী বিধবা স্ত্রী চরিত্রহীন মীরনের বিবাহ প্র্স্তার প্রত্যাখ্যান করেন। জানা যায়, মীর জাফরও তাকে তার হারেমে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। কিন্তু তিনি তা ঘৃণা ভরে প্রত্যাখান করেছিলেন। তিনি জীবনের বাকি সময় তার প্রিয়তম স্বামীর কবর “খোশবাগে” নামাজ আদায় ও কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করে পর্দা ও অত্যন্তশালীনতা বজায় রেখে অতিবাহিত করেছেন। কোন দুঃশ্চরিত্র, লম্পট স্বামীর জন্য কোন স্ত্রী পক্ষে এমন আত্মত্যাগ কোন ভাবেই বাস্তবসম্মত নয়। বরং তা ষড়যন্ত্রকারীদের অভিযোগের অসারতায় প্রমাণ করে।
সিরাজের বিরুদ্ধে অন্ধকুপ হত্যার অভিযোগ নিরপেক্ষ বিশ্লেষণে কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়নি। অভিযোগে বলা হয়, কলকাতা প্রথম যুদ্ধে বিজয়ী সিরাজউদ্দৌলা অতিক্ষুদ্র আয়তনের একটি জানালাবিহীন ছোট কামরায় ১৪৬ জন ইংরেজকে কারারুদ্ধ করে রাখেন এবং সেই রাতেই শ্বাসরুদ্ধ হয়ে তাদের মধ্য থেকে ১২৩ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। কিন্তু এই কাল্পনিক ঘটনাটি তারা ধামাচাপা দিয়ে রাখতে পারেনি। পরবর্তীতে অন্ধকূপের কক্ষে ঠাঁই নিয়ে বেঁচে যাওয়া একজন সৈনিকের ডায়রী ও বক্তব্য থেকে প্রমাণ মিললো যে, প্রকৃতপক্ষে কামরাটির আয়তন ছিল ১৮ফুট-১৫ ফুট-১০ ইঞ্চি আকাবের। যুদ্ধ সমাপ্তির রাতে সুস্থ ও আহত মিলে মাত্র ৩৯ জন ইংরেজ সৈনিককে সেখানে বন্দি করে রাখা হয়েছিল। কোন অবস্থাতেই কক্ষের দ্বার রুদ্ধ করা ছিল না। তবে সেখানে দক্ষ প্রহরী মোতায়েন করা হয়েছিল। সে রাতে মাত্র ১৮ জন সৈনিকের মৃত্যু হয়েছিল। এসব সৈন্যরা মারাত্মকভাবে যুদ্ধাহত ছিলেন।
বিহারীলাল সরকার ‘ইংরাজের জয়’ গ্রন্থে লেখেন, ‘অন্ধকূপের বিবরণ অলীক। তবে সিরাজদ্দৌলার যে কলিকাতা আক্রমণ করিয়া ইংরাজকে তাড়াইয়া ছিলেন ইহা সর্ববাদি সম্মত।’ কয়েকটি তথ্য উল্লেখ করে বিহারীলাল বলেন যে, সিরাজকে কালিমালিপ্ত করে ইংরেজের সাম্রাজ্যবাদী আকাঙ্খা প্রতিষ্ঠার কারণেই হলওয়েল মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিলেন।
ইতিহাসবিদ ভোলানাথ প্রমাণ করেছিলেন যে, অন্ধকূপের ২৬৭ বর্গফুট আয়তন ১৪৬ জন পূর্ণবয়স্ক ইউরোপীয় সৈন্যের ধারণ ক্ষমতার বাইরে ছিলো। তিনি ১৮ ফুট ও ১৫ ফুট আয়তন বিশিষ্ট একটি স্থানকে বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে সেখানে ইউরোপীয়দের তুলনায় অপেক্ষাকৃত ছোট আকৃতির ১৪৬ জন বাঙালি কৃষককে ঠাসাঠাসি করেও ঢোকাতে তিনি ব্যর্থ হন। আর হলওয়েল মনুমেন্ট ১৮১৮সালে ভেঙ্গে ফেলে আবার ১৯০২ সালে পুনঃস্থাপন এবং ১৯৪০ সালে পুনরায় প্রত্যাহারের মাধ্যমে ইংরেজরাও ঘটনার অসারতা মেনে নিয়েছেন।
নবাব সিরাজের বিরুদ্ধে তার সভাসদ ও পদস্থ ব্যক্তিদের সাথে অসদাচারণের অভিযোগ আনা হয়। কিন্তু ঘটনা পর্যালোচনায় তাও অসার প্রমাণ হয়। কারণ, যারা তার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উত্থাপন করেছিলেন তারা সকলেই নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী। কোন ষড়যন্ত্র ধরা পরার পর নবাব তাদেরকে হয়তো তিরস্কার করেছেন তিনি। এটা তার রাজ দায়িত্বেরই অন্তর্ভূক্ত। আর এতেই বিভিষণদের আঁতে ঘা লেগেছে। কিন্তু এসব অর্বাচীনরা ইতিহাসের প্রতিশোধ থেকে রেহাই পায়নি। ইংরেজদের সাথে ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে মীর কাসেম আলী খান ধনকুবের জগৎ শেঠসহ কয়েক কুচক্রীকে হত্যা করেছিলেন। কিন্তু সিরাজ সে কাজ না করে মহানুভবতা দেখিয়েছিলেন বলেই তারা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপন করার সুযোগ পেয়েছিল।
নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিচার বিশ্লেষণ করলে একথাই প্রমাণিত হয় যে, নবাব সিরাজউদ্দৌলা ছিলেন একজন মহান দেশপ্রেমিক, সাহসী যোদ্ধা, রাজনৈতিক চরিত্রে অত্যন্ত সাহসী ও সূক্ষ্ম কূটনীতিবিদ এবং ব্যক্তিগত চরিত্রে সহজ, সরল ও বলিষ্ঠ নবাব। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নবাব সিরাজউদ্দৌলা যদিও সাফল্য লাভ করেন নাই কিন্তু তিনি স্বদেশকে তুলে দেন নি বৃটিশ সা¤্রাজ্যবাদের হাতে। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীরা তাকে শান্তিতে থাকতে দেয়নি বরং তাকে এজন্য তাকে অকাতরে প্রাণ বিলিয়ে দিতে হয়েছে। ভারতের পশ্চিম বাংলার খোশবাগে আমাদের প্রেরণার উৎস হয়ে ইতিহাসের এই ক্ষণজন্মা মহানায়ক চিরনিদ্রায় শায়িত আছেন। আর আমাদের কন্যা-জায়া-জননীর আদর্শ হয়ে আছেন বেগম লুৎফুন্নেসা, আমেনা বেগম ও উম্মে জোহরার মত মহীয়সী নারীরা। কিন্তু আমরা বড়ই উদাসীন; বেখেয়াল।
বিষয়: বিবিধ
১০৭৪ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন