আশা-নিরাশার রাজনীতি

লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ০১ ডিসেম্বর, ২০১৭, ০৭:৩৫:০০ সকাল

রাজনীতিতে নাকি সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। এমনটিই দাবি করা হচ্ছে মহল বিশেষের পক্ষ থেকে। আর একথার দ্বারা প্রমাণ হয় যে, আমাদের দেশের প্রচলিত রাজনীতি ইতিবাচক ধারায় নেই বরং স্বাভাবিক শ্রোতের বিপরীতেই অবস্থান আমাদের দেশের রাজনীতির। তাই মহল বিশেষের এই দাবি। মূলত স্বার্থবাদী অপরানীতির কারণে আমাদের দেশের রাজনীতির কক্ষচ্যুতি ঘটেছে বলেই মনে হয়। রাজনীতি সেবামূলক কাজ হলেও ব্যক্তিস্বার্থ, আত্মস্বার্থ, গোষ্ঠীস্বার্থ ও শ্রেণি স্বার্থের কারণেই তা এখন খাদের কিনারে এসে দাড়িয়েছে। গণমানুষের স্বার্থ উপেক্ষা করে রাজনৈতিক শক্তির ক্ষমতায় গমন আর অবতরণের ঘুর্ণাবর্তে যখন রাজনীতি ঘুরপাক খায় তখন সে রাজনীতি আর গণমুখী থাকে না বরং শ্রেণি বিশেষ বা গোষ্ঠী বিশেষের আত্মবিনোদন ও মনোরঞ্জনের উপকরণ হয়ে দাঁড়ায়। আমাদের দেশের চলমান রাজনীতি বিষয়ে পর্যালোচনা করলে এমন রূঢ় চিত্র আমাদের চোখের সামনে ভেসে ওঠে।

দেশের চলমান রাজনীতি পর্যালোচনা করলে আশাবাদী হওয়ার তেমন একটা সুযোগ আছে বলে মনে হয় না বরং একগুচ্ছ হতাশায় আমাদেরকে আচ্ছন্ন করে রাখে। সম্প্রতি ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল একটা জনসভা আয়োজনে সক্ষম হয়েছে। যা রাজনীতিতে প্রচন্ড খড়ার মধ্যে এক পশলা বৃষ্টির মতই মনে হয়েছে কারো কারো কাছে। কিন্তু তা ¤্রয়িমান হতে খুব একটা সময়ের প্রয়োজন হয়নি। মূলত সরকার তথা পুলিশ প্রশাসন তাদেরকে এই সমাবেশ করার অনুমতি প্রদান করেছিল। কিন্তু তা মোটেই নির্বিঘœ ছিল না। সেদিন সম্পূর্ণ অঘোষিতভাবে পুরো রাজধানীতে হরতালের আমেজ বিরাজ করেছে।

সরকার সমাবেশ করতে দেয়ার উদারতা দেখালেও সংকীর্ণতা কিন্তু তাদের পিছু ছাড়েনি। সমাবেশে আগত জনতাকে পথে পথে হয়রানী করা হয়েছে। গ্রেফতারও করা হয়েছে অনেককে। পুরো রাজধানীই প্রায় গণপরিবহন মুক্ত ছিল। এতে সমাবেশগামী লোকজন যেমন ঠিকমত সমাবেশে আসতে পারেন নি, ঠিক তেমনিভাবে সাধারণ মানুষও বেশ ভোগান্তির শিকার হয়েছে। এমন অভিযোগ বিরোধীমহল থেকে করা হচ্ছে। যার বাস্তবতা অস্বীকার করার মত নয়।

সরকারের এমন দ্বৈতনীতি কেবল বিরোধী মহল ও সাধারণ মানুষকে ক্ষুব্ধ করেনি বরং যুগপৎভাবে সরকারের অংশ ও বিরোধী দলের পক্ষেও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে। অবশ্য এলজিআরডি প্রতিমন্ত্রীর ভাষায় গাড়ী পোড়ার ভয়ে পরিবহণ মালিকরা রাাস্তায় গাড়ী বের করেন নি বলে দাবি করা হয়েছে। অবশ্য এই ভয়টা কাদের পক্ষ থেকে তা স্পষ্ট করে বলেননি মাননীয় প্রতিমন্ত্রী। কিন্তু একথা তো বলা যায় যে, যারা নিজেরাই সমাবেশের ঢাক দিলেন তাদের পক্ষে গণপরিবহণের নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়ার অভিযোগ কোন বিচারেরই টেকে না। তাই এই দায়টা অন্যদের ওপরই বর্তায় বৈকি! বিএনপি অবশ্য এজন্য সরকারি দলকেই দায়ি করছে। যদি তাই হয় তাহলে এ ঘটনা সরকারের ‘নিজের নাক কেটে অন্যের যাত্রাভঙ্গ’ আখ্যা দিলে মোটেই অত্যুক্তি হবার কথা নয়। বাস্তবে তাই ঘটেছে বলেই মনে করেন দেশের আত্মসচেতন মানুষ।

যাহোক কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি, বাধা-প্রতিবন্ধকতা আসলেও বিএনপি’র এই সমাবেশকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। বিষয়টিকে টানেলের প্রান্তদেশে একটুখানি আলোর ঝলকানি বলেই মনে করা হচ্ছে। কারণ, দীর্ঘদিন পর্যন্ত সরকার বিরোধী দলকে রাজপথে সভা-সমাবেশ করতে দেয়নি। এমনকি বিরোধী দলগুলোর ঘরোয়া বৈঠকগুলোকে গোপন বৈঠক আখ্যা দিয়ে নেতাকর্মীদের গণহারে হয়রানীর অভিযোগ আছে বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে। তাই বিএনপির এই সমাবেশকে রাজনীতিতে সুবাতাস হিসেবেই দেখছেন কেউ কেউ। আর দীর্ঘদিন রাজপথের বাইরে থাকা বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যেও বেশ আশা-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিষয়টি কেউ কেউ বিএনপির পক্ষে গণজোয়ারের ফসল বলে আখ্যা দিলেও বিষয়টি নিয়ে ভিন্নমতও আছে। কেউ কেউ এটাকে সরকারের অনুগ্রহ হিসেবে দেখতেই বেশ পুলকবোধ করছেন।

যাহোক ১২ তারিখের বিএনপির সমাবেশ যে দেশের চলমান রাজনীতির বন্ধাত্বে কিছুটা ব্যবচ্ছেদ ঘটিয়েছে তা মোটামোটি বলা যায়। কাউকে কাউকে আবার বিষয়টি নিয়ে উচ্চাশা পোষণ করতেও দেখা গেছে। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে পুরোপুরি আশাবাদী হওয়ার সুযোগটা এখনও আসেনি। কারণ, আমাদের দেশের গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ এখনও প্রতিষ্ঠানিক রূপ পায়নি। আমরা নিজেরাও এখনও পুরোপুরি গণতন্ত্রমনা হয়ে উঠিনি। দেশে আইনের শাসন এখনও মজবুজ ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারেনি। দেশের বিচারবিভাগ এখন শৃঙ্খলমুক্ত নয়। এর প্রমাণ মেলে সদ্য পদত্যাগী প্রধান বিচারপতির বক্তব্য থেকেই। আর একটি রায়কে কেন্দ্র কর দেশে যা ঘটে গেল তা কোন গণতান্ত্রিক সমাজে তো নয়ই বরং সভ্য সমাজে বিরল ঘটনা। এমন অনাকাঙ্খিত ঘটনা না ঘটায় দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর ছিল।

বস্তত বিচারবিভাগ গণমানুষের শেষ ভরসাস্থল। রাষ্ট্র যখন নাগরিকদের জন্য ন্যায়বিচার বা মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়, তখনই নাগরিকরা সাংবিধানিক ও আইনী অধিকার আদায়ের জন্য বিচার বিভাগের স্মরণাপন্ন হন। দেশের মানুষ যাতে সাংবিধানিক অধিকার ভোগ করতে পারেন এই জন্য বিচারবিভাগের ব্যুৎপত্তি। তাই উন্নত বিশে^ বিচারবিভাগ স্বাধীন। আমাদের দেশে মাজদার হোসেন বনাম রাষ্ট্র রীট মামলার সূত্র ধরে বিগত জরুরি সরকার নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে আলাদা করে দেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো দীর্ঘকালের পরিক্রমায়ও এর আনুসঙ্গিকতা এখনও সম্পন্ন হয়নি। আর কবে সম্পন্ন হবে তা নিশ্চিত করে বলার সুযোগ এখনও আসেনি। এখনও স্বাধীন বিচারবিভাগীয় সচিবালয় এখনও প্রতিষ্ঠা করা যায়নি। বিচারকদের আচরণবিধিও এখনও সুনির্দিষ্ট নয়। তাই ঘোষণা দিয়ে বিচার বিভাগ স্বাধীন করা হলেও বিচার বিভাগের হাত-পা এখনও নির্বাহী বিভাগের কাছে বাধা। ক্ষমতাসীনরা বিচারবিভাগ স্বাধীন বলে আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুললেও বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। সাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহ তার বাস্তব প্রমাণ।

সম্প্রতি সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের একটি রায়কে কেন্দ্র করে দেশে একটা তুলকালাম কান্ড ঘটে গেল। বিষয়টি কারোই অজানা নয়। আদালতের কোন রায়ের প্রতি সংক্ষুব্ধ হওয়ার অধিকারও সংবিধান সম্মত। কিন্তু সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী সংক্রান্ত রায়ে সংক্ষুব্ধ হয়ে সরকার পক্ষ যে, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছি তা শুধু আমাদের দেশের বিচার বিভাগ নয় বরং আমাদের জাতিস্বত্ত্বার মর্মমূলে আঘাত হেনেছে বলেই মনে হয়। সরকার আইনী প্রক্রিয়ায় প্রতিকার চাইতে পারতো। সাংবিধানিকভাবেই সে পথ খোলা ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি। বরং একজন প্রধান বিচারপতিকে বাসভবনে অন্তরীণ রেখে তাকে কৃত্রিমভাবে অসুস্থ্য বানিয়ে দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে এবং পরে তিনি পদত্যাগও করেছেন। সরকার পক্ষ তার এই পদত্যাগকে স্বেচ্ছাপ্রণোদিত বললেও সাধারণ মানুষ এসব কথা বিশ^াস করতে রাজি নয়। কারণ, সরকার পক্ষ যখন দাবি করছিলেন যে, প্রধান বিচারপতি শারীরিক অসুস্থ্যতার জন্য ছুটি নিয়েছেন, তখন তিনি নিজেই তা অস্বীকার করেছিলেন।

তাই এতদসংক্রান্ত সরকার পক্ষের কোন কথায় আর দেশের মানুষ বিশ^াস করতে রাজী নয়। মূলত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর রায় সরকার পক্ষের মনোপুত না হওয়ায় নির্বাহী বিভাগ ও বিচারবিভাগের মধ্যে টানাপড়েন চরমে ওঠে। সরকার প্রধান বিচারপতির ১১ দফা গুরতর অভিযোগও উত্থাপন করে। আর সে সূত্র ধরেই একজন কর্মরত প্রধান বিচারপতিকে দেশ থেকে বিতাড়ন ও পরবর্তীতে পদত্যাগের ঘটনা ঘটেছে। আসলে প্রধান বিচারপতি যদি অভিযুক্তই হবেন তাহলে ষোড়শ সংশোধনী সংক্রান্ত রায় সরকারের বিপক্ষে যাওয়ার পর কেন উত্থাপিত হলো ? এ প্রশ্নে জবাব কি ?

বিরোধী দলের একটি সমাবেশকে কেন্দ্র করে জনমনে কিছুটা হলেও যে আশার সঞ্চার হয়েছে তা কতখানি বাস্তবসম্মত তা পর্যালোচনার দাবি রাখে। মূলত একটি সমাবেশকে কেন্দ্র করেই খুব বেশি আশাবাদী হওয়ার সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। বিশেষ করে আমাদের দেশের নেতিবাচক রাজনীতির রূঢ় বাস্তবতায়। কারণ, দেশে যে রাজনৈতিক সংকট চলছে তা নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে। মূলত নির্বাচনকালীন কী ধরনের সরকার প্রতিষ্ঠিত থাকবে তা নিয়েই চলমান রাজনৈতিক সংকট ঘুরপাক খাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তির অবস্থানও বিপরীত মেরুতে। বিএনপি কিছুদিন আগ পর্যন্ত নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের কথা বলে আসলেও গত ১২ নভেম্বরের জনসভায় দলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া নির্দলীয় তথা শেখ হাসিনাবিহীন সরকারের দাবি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। প্রত্যুত্তরে সরকারের পক্ষেও ২০ দলীয় জোট নেত্রীর দাবি প্রত্যাখ্যান করে দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচনের কথা বলা হয়েছে। মূলত নির্বাচনকালীন সরকারের বিষয়টি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত চলমান রাজনীতিতে আশাবাদী হওয়ার কোন সুযোগ আছে বলে মনে হয় না। আর এ সংকটের সুরাহার মধ্যেই আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে।

সরকার পক্ষ নির্বাচন কমিশন স্বাধীন বলে দাবি করে আসছে। তাদের ভাষায় যেহেতু নির্বাচন কমিশন স্বাধীন তাই নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার বা সহায়ক সরকারের কোন প্রয়োজন নেই। কিন্তু এ বিষয়ে অতীত রেকর্ড মোটেই সুখকর নয়। কারণ, রকিব কমিশন নির্বাচন কমিশনকে যেভাবে সরকারের আজ্ঞাবাহী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে গেছেন সে বৃত্ত থেকে বেড়িয়ে আশা বর্তমান কমিশনের জন্য খুব একটা সহজসাধ্য হবে না। কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনার সহ কমিশনাররা ব্যক্তিত্বের পরিচয় দিতে পারেন তাহলে তা কষ্টসাধ্য হলেও একেবারে অসাধ্য নয়। সে ক্ষেত্রে ঝুঁকির মাত্রাটাও নেহাত কম নয়। কারণ, মেরুদন্ড সোজা করতে গিয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতির ভাগ্যে যা জুটেছে তা মোটেই সুখকর ছিল না। আর এ ধরনের ঝুঁকি বর্তমান নির্বাচন কমিশন নেবে কি না তা এখন দেখার বিষয়।

তবে বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে নিয়েও কিছুটা হলেও অস্বস্তিত্বে পড়েছে ক্ষমতাসীনরা। এমনটিই মনে করা হচ্ছে সর্বসাম্প্রতিক ঘটনা প্রবাহে। হয়তো বর্তমান হুদা কমিশন এখনও রকিব কমিশনের মতো সরকারের কাছে আজ্ঞাবাহী ও আস্থাশীল হয়ে উঠতে পারেনি। তাই ক্ষমতাসীনদের পক্ষে বতর্মান কমিশনের বিরুদ্ধে উষ্মা প্রকাশ করা হচ্ছে প্রতিনিয়ত। মূলত গত ১৫ ফেব্রুয়ারি একটি সার্চ কমিটির মাধ্যমে সাবেক আমলা কে এম নুরুল হুদার নেতৃত্বে ৫ সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়। নির্বাচন কমিশন বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক বলেন। যা সরকারের মনোপুত হয়নি। নির্বাচন কমিশন রংপুর সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। নির্বাচনকে অবাধ ও নিরপেক্ষ করার জন্য ইতিমধ্যেই সেখানে এমন কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে যা পক্ষপাতপূর্ণ বলে অভিযোগ আওয়ামী লীগের নেতাদের।

উদাহরণ হিসেবে বলা হচ্ছে নির্বাচন কমিশন থেকে গত ৭ নভেম্বর এক পরিপত্র জারি করা হয়েছে। পরিপত্রে বলা হয়েছে ‘নির্বাচন সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় হতে নতুন ভিজিডি কার্ড ইস্যু কার্যক্রমসহ নতুন ধরনের কোনো প্রকার অনুদান/ত্রাণ বিতড়ণ কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে না।’ সিটি নির্বাচন উপলক্ষ্যে সরকারের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধের ঘটনা নজীরবিহীন বলে আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ মন্তব্য করেছেন। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের কাজের প্রতিক্রিয়ায় সরকার পক্ষের এমন মন্তব্যে জনমনে নানাবিধ প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। আসলে ক্ষমতাসীনরা অধাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায় কি না তাও নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

শুধু স্থানীয় সরকার নির্বাচন নয়,জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কমিশনের বেশ কিছু পদক্ষেপে আওয়ামী লীগ বিব্রত এবং উদ্বিগ্ন। নির্বাচন কমিশন, নিজেদের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বৈঠক ছাড়া এবং সেনাবাহিনীর মতামত না নিয়েই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে। যদিও প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। সম্প্রতি সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার বলেছেন ‘আগামী নির্বাচনে সেনা মোতায়েন করা হবে।’ তিনি আরও বলেছেন ‘আগামী নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের চিন্তা নেই।’

মূলত নির্বাচন কমিশনের যেসব সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনের সাথে সরকারের দুরত্ব সৃষ্টি করেছে তা বিশেষ কোন রাজনৈতিক দল তোষণ নয় বরং অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পূর্বশর্ত বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল। সরকার যদি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনে সত্যিই আন্তরিক হতো তাহলে নির্বাচন কমিশনের এসব সিদ্ধান্তে মোটেই উষ্মা প্রকাশ করতো না। তাই সম্প্রতি রাজধানীতে বিএনপির সমাবেশের পর জনমনে যে আশার সঞ্চার হয়েছে, সেখানে নিরাশার দিকটাও উপেক্ষা করার মত নয়। কারণ, নির্বাচন কমিশনকে যদি স্বাধীনভাবে কাজ করতে না দেয়া হয় বা দেশে যদি গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হতে না পারে তাহলে আমাদের কোন অর্জনই আর ইতিবাচক থাকবে না। তাই আমরা এখনও আশা-নিরাশার দোলাচলেই রয়ে গেছি। শেষটা দেখার জন্য এখন শুধু অপেক্ষার পালা।

প্রকাশঃ নয়াদিগন্ত, ২৬ নভেম্বর/২০১৭ইং।

বিষয়: বিবিধ

৮৬৩ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য


 

পাঠকের মন্তব্য:

মন্তব্য করতে লগইন করুন




Upload Image

Upload File