সব চোট কি বিদ্যুতের ওপরই ?
লিখেছেন লিখেছেন সৈয়দ মাসুদ ৩০ নভেম্বর, ২০১৭, ০৭:০২:৫৩ সন্ধ্যা
বেশ কিছু দিন ‘ঢাক গুড় গুড়’ খেলার পর শেষ পর্যন্ত আবারও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো। বিদ্যুতের মূল্য ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বৃদ্ধির ঘোষণায় আগামী মাস থেকে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের অনকুলে ৩৫ পয়সা বাড়বে। যা হতদরিদ্র জনগণের ওপর ‘মরার ওপর খাড়ার ঘা’ হিসেবেই দেখা দেবে বলেই মনে করা হচ্ছে। বর্তমান সরকার ইতোমধ্যেই বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি বিশ্ব রেকর্ড করে ফেলেছে। কারণ, অতীতে কোন সরকারের আমলেই বিদ্যুতের ওপর দিয়ে এতো চোট যায়নি। বর্তমান সরকারের আমলে সম্পূর্ণ অযৌক্তিভাবে দফায় দফায় বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়েছে। যা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওপর মারাত্মকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভোক্তা পর্যায়ে পাইকারি ও খুচরা মিলিয়ে এ পর্যন্ত ৮বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো। সর্বশেষ ২০১৫ সালে সেপ্টেম্বরে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়। মূলত ২০১০ সালের ১ মার্চ গ্রাহক পর্যায়ে বাড়ানো হয় ৫ শতাংশ। ২০১১ সালের ১ ফেব্রুয়ারি পাইকারি ও গ্রাহক দুই পর্যায়েই বাড়ানো হয়। এর মধ্যে পাইকারিতে ১১ শতাংশ ও গ্রাহক পর্যায়ে ৫ শতাংশ। একই বছরের ১ আগস্ট পাইকারি পর্যায়ে বাড়ানো হয় ৬ দশমিক ৬৬ শতাংশ। এছাড়া সে বছরের ১ ডিসেম্বর পাইকারিতে ১৬ দমমিক ৭৯ শতাংশ এবং গ্রাহক পর্যায়ে ১৩ দশমিক ২৫ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। ২০১২ সালে ১ ফেব্রুয়ারি পাইকারি পর্যায়ে ১৪ দশমিক ৩৭ শতাংশ এবং গ্রাহক পর্যায়ে ৭ দশমিক শূণ্য ৯ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। এরপর ওই বছররের ১ সেপ্টেম্বর পাইকারি পর্যায়ে ১৬ দশমিক ৯২ শতাংশ এবং খুচরা পর্যায়ে ১৫ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে পাইকারি পর্যায়ে ৬ দমমিক ৯৬ শতাংশ দাম বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ২০১৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর পাইকারি পর্যায়ে ২ দশমিক ৯ শতাংশ দাম বাড়ে।
এমনিতেই দেশের মূল্য পরিস্থিতি চরমে উঠেছে। জনগণের ক্রয় ক্ষমতা না বাড়লেও লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিষ-পত্রের দাম। গত কয়েক মাস ধরেই বাড়ছে চালের দাম। চালের মূল্য বৃদ্ধির এমন নজির বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বিতীয়টি নেই। এর পেছনে কার বা কাদের কারসাজি ছিল বা আছে তা এখন আর কারো অজানা নয়। কিন্তু সরকার চাল সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। অন্যদিকে আটার দামও বেড়েছে উদ্বেগজনকভাবে। সবজির দাম সাধারণের নাগালের বাইরে অনেকদিন থেকেই। যা অতীতের সকল রেকর্ডই ভঙ্গ করেছে। মূলত দেশের মূল্য পরিস্থিতি এখন রীতিমত গণদুর্ভোগ সৃষ্টি করেছে।
রাজধানীর বাজারগুলো তদারকি করলেই এর সত্যতা মিলবে সহজেই। যদিও শব্জীর বাজার এখন কিছুটা হলেও নি¤œমুখী। দ্রব্যমূল্যের এই আকাশচুম্বী বৃদ্ধির বিপরীতে সাধারণ মানুষের আয় কি বেড়েছে? এমন প্রশ্নের সদুত্তর মেলা কঠিন নয়। এমতাবস্থায় নিকট অতীতে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিট সাড়ে ১৪ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। অন্যদিকে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) গঠিত কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি গ্রাহক পর্যায়ে প্রতি ইউনিটের দাম ১০.৬৫ শতাংশ বা ৭২ পয়সা বাড়ানোর প্রস্তাব করে। ২৫ সেপ্টেম্বর বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির জন্য আয়োজিত ধারাবাহিক গণশুনানির দ্বিতীয় দিনে প্রস্তাবগুলো করা হয়।
বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্ট মহল লোকসানের অজুহাত তুলেছে। যা বাস্তবসম্মত বলে মনে হয় না। তারা বলছেন, বর্তমানে ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যে ঘাটতি থাকায় প্রতি ইউনিটে ৩ শতাংশ হারে লোকসান দেয়া হচ্ছে। শুধু ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫৩৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে। এ কারণে দাম বাড়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। বর্তমানে প্রতি ইউনিট পাইকারি বিদ্যুতের গড় সরবরাহ ব্যয় ৫ টাকা ৫৯ পয়সা। অথচ ২০১৬-১৭ অর্থবছরের হিসাবে পিডিবি পাইকারি পর্যায়ে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ৪ টাকা ৮৭ পয়সায় বিক্রি করে। এতে দেশের একক পাইকারি বিদ্যুৎ ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান পিডিবির ইউনিট প্রতি আর্থিক লোকসান ৭২ পয়সা।
চলতি অর্থ বছর বা ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে পিডিবি পাইকারি বিদ্যুতের প্রাক্কলিত সরবরাহ ব্যয় ধরেছে ইউনিট প্রতি ৫ টাকা ৯৯ পয়সা। এ হিসেবে ইউনিট প্রতি লোকসান হবে ১ টাকা ৯ পয়সা। এই বিপুল আর্থিক ক্ষতি সমন্বয় করার জন্যই পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানো উচিত বলে মনে করছেন তারা। অন্যদিকে ভোক্তা ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা বিদ্যুতের পাইকারি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব যৌক্তিক নয় বলে মনে করেন। তারা বলছেন, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড পিডিবি যেসব ব্যয় বিবেচনা করে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে সেগুলোর ভিত্তি নেই। আন্তর্জাতিক বাজারের চেয়ে বেশি দামে তেল কিনে, ভর্তুকিকে লোন বিবেচনা করে ও ব্যয়বহুল জ্বালানি ব্যবহারের মাধ্যমে রাজস্ব ব্যয় বৃদ্ধি করে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। তাদের মতে, বাড়তি ও অযাচিত ব্যয় বাদ দিলে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির পরিবর্তে কমবে।
বিদ্যুৎ খাতে লোকসান কমানোর উদ্দেশে বারবার গ্রাহক পর্যায়ে মূল্য বৃদ্ধির যুক্তি মোটেই বোধগম্য নয়। সরকারের অনেক প্রতিষ্ঠানের কাছে বিদ্যুতের বিল বাবদ হাজার হাজার কোটি টাকা অনাদায়ী রয়েছে। সে সব অর্থ আদায় করে কাজে লাগানোর প্রচেষ্টা কেন নেয়া হয় না এমন প্রশ্নও জনমনে রয়েছে। বছর শেষে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি সাধারণ মানুষকে বাড়তি অর্থনৈতিক চাপে ফেলবে। কারণ নতুন বছরের শুরুতে অভিভাবকদের ওপর সন্তানদের পড়াশোনা বাবদ এমনিতেই বাড়তি খরচের চাপে পড়তে হয়। বিদ্যুতের বাড়তি মূল্য এর সঙ্গে সংযুক্ত হলে তা বহন করা আরো কষ্টকর হয়ে উঠবে নিঃসন্দেহে। সুতরাং এই মুহূর্তে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি না করাকেই যৌক্তিক বলে মনে করছেন আত্মসচেতন মানুষ।
উল্লেখ্য, গত ৬ জুন পিডিবি বিইআরসি’র কাছে পাইকারি বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির একটি প্রস্তাব পাঠায়। প্রস্তাবে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি হিসেবে বিদ্যুতের উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির কথা বলা হয়। বলা হয় বিদ্যুতের পাইকারি মূল্যের বিক্রয় মূল্য প্রতি ইউনিট ৪.০২ টাকার বিপরীতে ২০১২-১৩ অর্থবছরে সম্ভাব্য সরবরাহ ব্যয় ইউনিট প্রতি ৬.৮৭ টাকা হবে ফলে ঘাটতি হবে ইউনিট প্রতি ২.৮৫ টাকা। এই ঘাটতি কমানোর জন্যই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেয় পিডিবি। বিইআরসি এ বিষয়ে কথিত গণশুনানি শেষে পাইকারি বিদ্যুতের দাম ২১.৮৯ শতাংশ বা ইউনিট প্রতি ৮৮ পয়সা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে। এই প্রস্তাব কবে থেকে কার্যকর হবে সে বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট কোন বক্তব্য না থাকলেও পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী রোযার মধ্যে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি ভালো দেখিয়ে রোযার পরে কোন এক দিন থেকে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব কার্যকর করা হতে পারে। কিন্তু সে যাত্রায় বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করা হয়নি।
উৎপাদন মূল্য এবং বিক্রয় মূল্যের মধ্যে ঘাটতি থাকলেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানো যৌক্তিক কিনা সেই বিতর্কে যাওয়ার আগে দেখা দরকার উৎপাদন মূল্যের এই বৃদ্ধির কারণ কি এবং তা কতটা যৌক্তিক। পিডিবির প্রস্তাবনা থেকে দেখা যায় ২০১০-১১ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সরবরাহের ব্যয় ছিল প্রতি ইউনিট ৪.২০৫ টাকা, ২০১১-১২ সালে ছিল ৫.৪৭০ টাকা এবং ২০১২-১৩ অর্থ বছরে দাড়াবে ৬.৮৭ টাকা। প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের পেছনে পিডিবি’র এই খরচ বৃদ্ধির কারণ কি? পিডিবি’র মূল্য বৃদ্ধির প্রস্তবনাতেই স্পষ্ট বলা হয়েছে: “তরল জ্বালানির ব্যবহার, বেসরকারি খাত হতে বিদ্যুৎ ক্রয় এবং জ্বালানী ব্যয়ের অংশ বৃদ্ধির কারণে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে।”
দফায় দফায় বিদ্যুতের মূল্য বাড়িয়ে মূলত ডেসকো, ডিপিডিসি, পল্লীবিদ্যুৎ ও পিডিবি এবং বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে দুর্নীতি করার সুযোগ করে দেওয়া ছাড়া আর কিছু নয়। ২০১০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৮ বার পাইকারি এবং খুচরা গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। নেই কর্মসংস্থান, সাধারণ মানুষের বেতন বাড়েনি ঠিক এ মুহূর্তে বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানো হলে দেশের মানুষের কষ্ট, দুর্ভোগ বাড়বে। বিশ্বে যখন জ্বালানি তেলের দাম অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে, তখন বারবার বিদ্যুতের মূল্য বাড়িয়ে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন গণশুনানির নামে প্রতারণা করেছে।
মূলত বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধিকে একমাত্র সরকার ছাড়া অন্য কেউই যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য মনে করছেন না। সংসদের বাইরের বিরোধী বিরোধী দলগুলোর পক্ষে এই মূল্য বৃদ্ধির কঠোর সমালোচনা করা হচ্ছে। তারা বলছেন, ‘বিশ্ববাজারে তেলেন দাম কমলেও জনগণের রক্ত চুষে খেতে আবারও বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম । যেখানে বিদ্যুতের দাম কমানোর কথা, সেখানে আগের তুলনায় ৫ দশমিক ৩ শতাংশ দাম বৃদ্ধির ঘোষণা আসায় এখন বিদ্যুতের দাম প্রতি ইউনিটে বাড়বে ৩৫ পয়সা।’
তাদের অভিমত হলো, ‘ব্যাংক, বীমা, শেয়ারবাজারসহ সমস্ত অর্থনৈতিক খাতকে তিলে তিলে খেয়ে সরকারের স্বাদ মেটেনি। তাই বারবার গ্যাস বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে গরিবের রক্ত পান করাটাই যেন তাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। এর আগে গত মার্চে সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে সরকার। এর আগে ২০১০ সাল থেকে ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় বছরে পাইকারি পর্যায়ে ছয়বার এবং খুচরা পর্যায়ে সাতবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। শুধুমাত্র লুটপাটের জন্যই গরিবের সর্বশেষ সম্বলটুকু আত্মসাৎ করে সরকার আবার বিদ্যুতের দাম বাড়াল।’
তারা আরও বলেন, ‘বিদ্যুতের সঙ্গে সব কিছু সম্পর্কিত। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সবচেয়ে বিপাকে পড়বে সীমিত আয়ের মানুষ। শিল্প খাতেও পড়বে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রভাব। এমনিতে সরকারের লুটপাট আর ভয়াবহ দুঃশাসনে দেশে কোনো বিনিয়োগ নেই। এমন সময় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করা মানেই বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করা। এতে গোটা অর্থনীতি হুমকির মুখে পড়বে। প্রতিযোগী মূল্যে শিল্প উৎপাদন সক্ষমতা ব্যাহত হবে। এ ছাড়া বৃহৎ অবকাঠামো প্রকল্পগুলো, রফতানি সক্ষমতা, শিল্প বহুমুখীকরণ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি ব্যবসা পরিচালনা ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। অর্থাৎ ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থান হ্রাস পাবে। দেশে জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাবে বেকারত্ব্।
এমনিতেই এশিয়ার সবচেয়ে বেশি বেকারত্বের হারের দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। একই সঙ্গে শিল্পে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেলে বাড়বে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যও। বর্তমানে নিত্যপণ্যসহ সব কিছুর দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা। তার ওপর বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির মাশুলও দিতে হবে নিম্ন আয়ের মানুষদের। কৃষি খাতেও এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির ফলে কৃষি উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হবে। এমনকি কয়েক দফা বন্যায় দেশে তীব্র খাদ্য সংকট চলছে তার ওপর বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধিতে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়বে। নতুন করে বিদ্যুতের এই দাম বৃদ্ধিতে কৃষি ও শিল্প খাত ধ্বংস হয়ে যাবে।’
সরকার পক্ষ অবশ্য বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধিকে যৌক্তিকই মনে করছেন। প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিকে খুবই সামান্য এবং মামুলি ব্যাপার বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, এই বৃদ্ধির কারণে জনজীবনে কোনো প্রভাব পড়বে না। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, দাম খুব বেশি বাড়ানো হয়নি। ২০০ ইউনিট পর্যন্ত ব্যবহারকারীদের এখন থেকে মাসে অতিরিক্ত ২০ থেকে ২৫ টাকা বিল দিতে হবে। গ্রাহক পর্যায়ে যে প্রভাব পড়বে তা সহনীয় বলেই মনে করি।
সরকার পক্ষের এমন দাবিকে কোন পক্ষই যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য মনে করছেন না। কারণ, বর্তমান সরকারের আমলেই ৮ বার বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করে জনজীবনকে দুর্বিসহ করে তুলেছে বলেই মনে করছেন অভিজ্ঞ মহল। সরকার পক্ষ মূল্য বৃদ্ধিকে যৎসামান্য ও সহনীয় বলে উল্লেখ করলেও বাস্তবতা কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা। কারণ, ২০১০ সালে বিদ্যুতের মূল্য যে অবস্থায় ছিল এবং বর্তমানের মূল্য পর্যালোচনা করলে একটি ভয়াবহ চিত্রই আমাদের সামনে ভেসে ওঠে। তাই বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি সংক্রান্ত সরকার পক্ষের ব্যাখ্যা ও দাবিকে গ্রহণযোগ্য ও যৌক্তিক মনে করছেন না সচেতন মহল। আর সরকার পক্ষও বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধিতে ‘বিদ্যুৎ’ গতির যৌক্তিকতাও প্রমাণ করতে পারেনি।
একথা অনস্বীকার্য যে, গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি বিরূপ প্রভাব পড়বে জনজীবনে। এখন থেকে প্রতি মাসে নতুন করে বাড়তি টাকা গুনতে হবে ভোক্তাদের। এতে জীবনযাত্রার ব্যয় যেমন বাড়বে, তেমনি ব্যবসা বাণিজ্যসহ শিল্পখাতেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সার্বিকভাবে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই মুহূর্তে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি যৌক্তিক হয়নি। গণশুনানিতে ব্যবসায়ী, বিশেষজ্ঞ ও সাধারণ মানুষ দাম না বাড়ানোর পক্ষে মত দেন। বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাবের যৌক্তিকতাও প্রমাণিত হয়নি। গত ২৩ নভেম্বর বিইআরসি বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়ার পর থেকে সারা দেশেই এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। গ্রাহক শ্রেণি নির্বিশেষে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে গড়ে ৩৫ পয়সা । যা প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও নি¤œবিত্তের মানুষের জন্য মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
প্রকাশ ঃ দৈনিক নয়াদিগন্ত, ৩০ নভেম্বর, ২০১৭।
বিষয়: বিবিধ
৭০৭ বার পঠিত, ০ টি মন্তব্য
পাঠকের মন্তব্য:
মন্তব্য করতে লগইন করুন